কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে
জামা‘আতে সালাত আদায়
[বিধান, ফযীলত, ফায়েদা ও নিয়ম-কানূন]
[Bengali - বাংলা - بنغالي]
মোস্তাফিজুর রহমান ইবন আব্দুল আযীয আল-মাদানী
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মাদ মানজুরে ইলাহী
صلاة الجماعة في ضوء ما ورد في الكتاب والسنة
مستفيض الرحمن بن عبد العزيز المدني
مراجعة: د/ محمد منظور إلهي
সূচীপত্র
ক্র শিরোনাম পৃষ্ঠা
১ অবতরণিকা
২ জামা‘আতে সালাত আদায়ের অর্থ
৩ জামা‘আতে সালাত আদায়ের বিধান
৪ জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফায়েদাসমূহ
৫ জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলত
৬ জামা‘আতে সালাত আদায় করতে যাওয়ার ফযীলত
৭ জামা‘আতে সালাত আদায় করতে যাওয়ার নিয়ম-কানূন
৮ জামা‘আত সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল
৯ যে যে কারণে জামা‘আতে সালাত পড়া ছাড়া যায়
ভূমিকা
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে যিনি আমাদেরকে নিখাদ তাওহীদের দিশা এবং সুন্নাত ও বিদ‘আতের পার্থক্যজ্ঞান দিয়েছেন। অসংখ্য সালাত ও সালাম তাঁর জন্যে যিনি আমাদেরকে তা-কিয়ামত সফল জীবন অতিবাহনের পথ বাতলিয়েছেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের প্রতিও রইল অসংখ্য সালাম।
প্রতিনিয়ত মসজিদে গমনকারী প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমই মসজিদের এই করুণ মুসল্লীশূন্যতা অবলোকন করে কমবেশি মর্মব্যাথা অনুভব না করে পারেন না। আমি ও তাদেরই একজন। এ মহাগুরুত্বপূর্ণ মুসলিম জাতির বাহ্যিক নিদর্শনের প্রতি চরম অবহেলা থেকে উত্তরণের জন্য যে কোনো সঠিক পন্থা অনুসন্ধান করা নিজস্ব ধর্মীয় কর্তব্য বলে জ্ঞান করি। তাই প্রথমতঃ সবাইকে মৌখিকভাবে জামা‘আতে উপস্থিতির প্রতি উৎসাহ প্রদান ও তা থেকে পিছিয়ে থাকার ভয়ঙ্করতা বুঝাতে সচেষ্ট হই, কিন্তু তাতে আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায় নি। ভাবলাম হয়তো বা কেউ মনোযোগ দিয়ে শুনছেন না অথবা তা দীর্ঘক্ষণ ক্রিয়াশীল থাকার জন্য যথাযোগ্য কোনো প্রকল্প এখনো হাতে নেওয়া হয় নি। তাই লেখালেখিকে দ্বিতীয় মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি, অথচ আমি এ ক্ষেত্রে নবাগত। কতটুকু সফলকাম হতে পারবো তা আল্লাহ মালুম। তবুও প্রয়োজনের খাতিরে ভুল-ত্রুটির প্রচুর সম্ভাবনা পশ্চাতে রেখে ক্ষুদ্র কলম খানা হস্তে ধারণের দুঃসাহসিকতা দেখাচ্ছি। সফলতা তো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই হাতে। তবে ‘নিয়্যাতের ওপরই সকল কর্মের ফলাফল নির্ভরশীল’ রাসূল মুখনিঃসৃত এ মহান বাণীই আমার দীর্ঘ পথসঙ্গী।
অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই যে, এ পুস্তিকাটিতে রাসূলুল্লাহ @ সম্পৃক্ত যতগুলো হাদীস উল্লিখিত হয়েছে সাধ্যমত এর বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা নাসেরুদ্দীন আল্বানী রহ.-এর হাদীস শুদ্ধাশুদ্ধনির্ণয়ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সকল যোগ্য গবেষকদের পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি হাদীসের সাথে তার প্রাপ্তিস্থাননির্দেশ সংযোজন করা হয়েছে। তবুও সম্পূর্ণরূপে নিরেট নির্ভুল হওয়ার জোর দাবি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি না।
শব্দ ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকবর্গের চক্ষুগোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ভুল গুরুসামান্য যতটুকুই হোক না কেন লেখকের দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবো। যে কোনো কল্যাণকর পরামর্শ দিয়ে দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিত করণে সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আল্লাহ তা‘আলা সবার সহায় হোন।
এ পুস্তিকা প্রকাশে যে কোনো জনের যে কোনো ধরণের সহযোগিতার জন্য সমুচিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকুও কোতাহী করছি না। ইহপরকালে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেককে আকাঙ্ক্ষাতীত কামিয়াব করুন তাই হচ্ছে আমার সর্বোচ্চ প্রত্যাশা। আমীন সুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
সর্বশেষে জনাব শাইখ আব্দুল হামীদ ফায়যী সাহেবের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছিনে। যিনি অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমার আবেদনক্রমে পান্ডুলিপিটি আদ্যপান্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছেন এবং তাঁর অতীব মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে এর উত্তম প্রতিদান দিন এবং তাঁর জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দিন এ আশা রেখে এখানেই শেষ করলাম।
লেখক
জামা‘আতে সালাত আদায়ের অর্থ:
“সালাত” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দো‘আ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡ﴾ [التوبة: ١٠٣]
“আর তুমি তাদের জন্য দো‘আ করো। নিশ্চয় তোমার দো‘আ তাদের জন্য শান্তি স্বরূপ”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৩]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ فَلْيُجِبْ، فَإِنْ كَانَ صَائِماً فَلْيُصَلِّ، وَإِنْ كَانَ مُفْطِراً فَلْيَطْعَمْ».
“তোমাদের কাউকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া হলে সে যেন উক্ত দাওয়াতে উপস্থিত হয়। অতঃপর সে যদি সাওম পালনকারী হয়ে থাকে তাহলে সে যেন মেজবানের জন্য বরকত, কল্যাণ ও মাগফিরাতের দো‘আ করে। আর যদি সে সাওম পালনকারী না হয়ে থাকে তাহলে সে যেন উক্ত খাবার গ্রহণ করে”।
কারোর ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার “সালাত” মানে ফিরিশতাগণের নিকট তার ভূয়সী প্রশংসা করা। আর ফিরিশতাগণের পক্ষ থেকে কারোর জন্য “সালাত” মানে তার জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট দো‘আ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [الاحزاب: ٥٦]
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ফিরিশতাগণের নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দো‘আ করেন। অতএব, হে মুমিনগণ তোমরাও তাঁর জন্য দো‘আ করো এবং তাঁর ওপর সালাম পাঠাও”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬]
শরী‘আতের পরিভাষায় “সালাত” বলতে এমন এক ইবাদাতকে বুঝানো হয় যা হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি ও তাঁর সাওয়াবের আশায় এবং যাতে রয়েছে বিশেষ কিছু কথা ও কাজ যার শুরু তাকবীর দিয়ে এবং শেষ সালাম দিয়ে। যা আমাদের নিকট সালাত নামেই অধিক পরিচিত।
উক্ত সালাতকে সালাত এ জন্যই বলা হয় কারণ, তাতে উভয় প্রকারেরই দো‘আ রয়েছে। তার একটি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কোনো ফায়েদা হাসিল কিংবা কোনো ক্ষতি ও লোকসান অথবা বিপদ থেকে রক্ষা তথা যে কোনো প্রয়োজন পূরণের দো‘আ। যাকে সরাসরি প্রার্থনা তথা চাওয়া-পাওয়ার দো‘আই বলা হয়। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইবাদাতের দো‘আ তথা ক্বিয়াম, কিরাত, রুকু’ ও সাজদাহ’র মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নিকট সাওয়াবের আশা করা। যার মূল লক্ষ্যও আল্লাহ তা‘আলার মাগফিরাতই হয়ে থাকে।
“জামা‘আত” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোনো জিনিসের আধিক্য। তেমনিভাবে কিছু সংখ্যক মানুষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কোথাও একত্রিত হওয়াকেও “জামা‘আত” বলে আখ্যায়িত করা হয়।
শরী‘আতের পরিভাষায় “জামা‘আত” বলতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে দু’ (ইমাম ও মুক্তাদি) বা ততোধিক ব্যক্তির মসজিদ অথবা সেরূপ কোনো জায়গায় একই সময়ে একত্রিত হওয়াকে বুঝানো হয়।
জামা‘আতে সালাত আদায়ের বিধান:
মূলতঃ সালাত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন যার মাহাত্ম্য কুরআন ও হাদীসে বিষদভাবে আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে সালাত প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বার বার তাগিদ দিয়েছেন। এমনকি তিনি প্রতি বেলা সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করার ব্যাপারেও পূর্ণ যত্নবান হতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [البقرة: ٢٣٨]
“তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও বিশেষ করে আসরের সালাতের প্রতি এবং তোমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহ তা‘আলার জন্য দণ্ডায়মান হও”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৮]
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সালাতের প্রতি যত্নবান হতে আদেশ করেছেন। আর যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করে না সে সালাতের প্রতি কতটুকু যত্নবান তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
তেমনিভাবে তিনি সালাত আদায়ের প্রতি অবহেলা প্রদর্শনকে মুনাফিকী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের চরিত্র বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন:
﴿إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَهُوَ خَٰدِعُهُمۡ وَإِذَا قَامُوٓاْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ قَامُواْ كُسَالَىٰ يُرَآءُونَ ٱلنَّاسَ وَلَا يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ إِلَّا قَلِيلٗا ١٤٢ مُّذَبۡذَبِينَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ لَآ إِلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِ وَلَآ إِلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِۚ وَمَن يُضۡلِلِ ٱللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُۥ سَبِيلٗا ١٤٣﴾ [النساء: ١٤٢، ١٤٣]
“মুনাফিকরা আল্লাহ তা‘আলাকে ধোকা দেয়। আল্লাহ তা‘আলা উহার প্রতিদান দিবেন। তারা অলস মনে সালাত আদায় করতে দাঁড়ায় লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে। তারা সর্বদা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে নিমজ্জিত থাকে। না এদিক না ওদিক। যাকে আল্লাহ তা‘আলা পথভ্রষ্ট করেন আপনি কখনো তাকে সুপথ দেখাতে পারেন না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪২-১৪৩]
দৈনিক পাঁচ বেলা সালাত জামা‘আতে পড়া প্রতিটি সক্ষম ও সাবালক পুরুষের ওপরই ওয়াজিব। চাই সে সফরে থাকুক অথবা নিজ এলাকায়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣ ﴾ [البقرة: ٤٣]
“তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত আদায় করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো। অর্থাৎ সালাত আদায়কারীদের সাথে সালাত আদায় করো”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৪৩]
উক্ত আয়াত জামা‘আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট। কারণ, আয়াতের শেষাংশ থেকে সালাত প্রতিষ্ঠাই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে তা আয়াতের প্রথমাংশের সাথে প্রকাশ্য সামঞ্জস্যহীনই মনে হয়। কেননা, আয়াতের প্রথমাংশে সালাত প্রতিষ্ঠার আদেশ রয়েছে। তাই আয়াতের শেষাংশে তা পুনরুল্লেখের আর কোনো প্রয়োজন থাকে না। তাই বলতে হবে, আয়াতের শেষাংশে জামা‘আতে সালাত আদায়েরই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ وَإِذَا كُنتَ فِيهِمۡ فَأَقَمۡتَ لَهُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَةٞ مِّنۡهُم مَّعَكَ وَلۡيَأۡخُذُوٓاْ أَسۡلِحَتَهُمۡۖ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلۡيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمۡ وَلۡتَأۡتِ طَآئِفَةٌ أُخۡرَىٰ لَمۡ يُصَلُّواْ فَلۡيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلۡيَأۡخُذُواْ حِذۡرَهُمۡ وَأَسۡلِحَتَهُمۡۗ ﴾ [النساء: ١٠٢]
“যখন আপনি তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতে যান তখন তাদের এক দল যেন অস্ত্রসহ আপনার সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ায়। অতঃপর তারা সাজদাহ সম্পন্ন করে যেন আপনার পেছনে চলে আসে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় দলটি যারা পূর্বে সালাত পড়ে নি আপনার সাথে যেন সালাত পড়ে নেয়। তবে তারা যেন সতর্কতা ও অস্ত্রধারণাবস্থায় থাকে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০২]
উক্ত আয়াতে যুদ্ধাবস্থায় জামা‘আতে সালাত আদায়ের পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে। যদি পরিবেশ শান্ত থাকাবস্থায় জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে কোনো ছাড় থাকতো তথা তা সুন্নাত কিংবা মুস্তাহাব হতো তা হলে যুদ্ধাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের পদ্ধতি শেখানোর কোনো প্রয়োজনই অনুভূত হতো না। বরং তারা উক্ত ছাড় পাওয়ার বেশি উপযুক্ত ছিলো। যখন তা হয় নি তখন আমাদেরকে বুঝতেই হবে, জামা‘আতে সালাত আদায় করা নিহায়েত গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব। তাই ওযর ছাড়া কারোর জন্য ঘরে সালাত পড়া জায়িয নয়।
তেমনিভাবে উক্ত আয়াতে উভয় দলকেই জামা‘আতে সালাত আদায় করতে আদেশ করা হয়েছে। যদি কেউ কেউ জামা‘আতে সালাত পড়লে অন্যদের পক্ষ থেকে উক্ত দায়িত্ব আদায় হয়ে যেতো তাহলে উভয় দলকেই এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে আদেশ করা হতো না। তাই জামা‘আতে সালাত পড়া প্রতিটি ব্যক্তির ওপরই ওয়াজিব। চাই সে সফরে থাকুক অথবা নিজ এলাকায়।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿يَوۡمَ يُكۡشَفُ عَن سَاقٖ وَيُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ فَلَا يَسۡتَطِيعُونَ ٤٢ خَٰشِعَةً أَبۡصَٰرُهُمۡ تَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۖ وَقَدۡ كَانُواْ يُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ وَهُمۡ سَٰلِمُونَ ٤٣﴾ [القلم: ٤٢، ٤٣]
“স্মরণ করো সে দিনের কথা যে দিন জঙ্ঘা (হাঁটুর নিম্নাংশ) উন্মোচিত করা হবে এবং তাদেরকে আহ্বান করা হবে সাজদাহ করার জন্য তখন তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি থাকবে তখন অবনত এবং লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখবে অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিলো তখন তাদেরকে সাজদাহ করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিলো। (কিন্তু তারা তখন সে আহ্বানে সাড়া দেয় নি)”। [সূরা আল-ক্বালাম, আয়াত: ৪২-৪৩]
আল্লামা ইবরাহীম তাইমী রহ. উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন: তাদেরকে আযান ও ইক্বামতের মাধ্যমে ফরয সালাতগুলো জামা‘আতে আদায়ের জন্য ডাকা হতো।
বিশিষ্ট তাবঈ আল্লামা সা‘য়ীদ ইবন মুসাইয়িব রহ. বলেন: তারা “হাইয়া ‘আলাস-সালাহ, হাইয়া ‘আলাল-ফালাহ” শুনতো অথচ তারা সুস্থ থাকা সত্ত্বেও মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় করতো না।
কা‘ব আল-আহবার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আল্লাহর কসম! উক্ত আয়াতটি জামা‘আতে সালাত না পড়া লোকদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে।
উক্ত আয়াতে আহ্বানে সাড়া দেওয়া মানে মুআয্যিনের আযানে সাড়া দিয়ে মসজিদে এসে জামা‘আতে সালাত পড়া। যা নিম্নোক্ত হাদীস থেকেই বুঝা যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:
«أَنَّ رَجُلاً أَعْمَى قَالَ: يَارَسُوْلَ اللهِ! لَيْسَ لِيْ قَائِدٌ يُلاَئِمُنِيْ إِلَى الْـمَسْجِدِ فَهَلْ لِيْ رُخْصَةٌ أَنْ أُصَلِّيَ فِيْ بَيْتِيْ؟ فَقَالَ لَـهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلاَةِ؟ قَاْلَ: نَعَمْ، قَاْلَ: فَاَجِبْ».
“জনৈক অন্ধ সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন: আমাকে মসজিদে নিয়ে আসার মতো কোনো লোক নেই। তাই আমাকে ঘরে সালাত আদায় করতে অনুমতি দিবেন কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি কি আযান শুনতে পাও? সে বললো: জি হাঁ! তিনি বললেন: তাহলে তোমাকে মুআয্যিনের ডাকে সাড়া দিয়ে মসজিদে এসে সালাত আদায় করতে হবে”।
উক্ত হাদীসে মুআয্যিনের ডাকে সাড়া দেওয়া মানে যদি শুধু সালাত পড়াই হতো চাই তা যেখানেই পড়া হোক না কেন তা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত সাহাবীকে তার ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি চাওয়ার পর আর তাকে আযান শুনার প্রশ্ন ও মুআয্যিনের ডাকে সাড়া দেওয়ার আদেশই করতেন না। কারণ, সে তো ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতিই চাচ্ছিলো।
এ ছাড়াও নিম্নোক্ত হাদীসটি আলোচ্য বিষয়ে আরো অত্যন্ত সুস্পষ্ট বক্তব্যই প্রদান করে।
আব্দুল্লাহ ইবন উম্মু মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো অন্ধ এবং আমার ঘরও মসজিদ থেকে অনেকখানি দূরে অবস্থিত। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মদীনা তো একটি সাপ-বিচ্চু ও হিংস্র প্রাণীর এলাকা। আবার অনেক সময় আমাকে মসজিদে নিয়ে আসার মতো কোনো লোকও পাওয়া যায় না। তাই কি আমি এমন পরিস্থিতিতে ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি পেতে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কি আযান শুনতে পাও? অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তুমি কি “হাইয়া ‘আলাস-সালাহ, হাইয়া ‘আলাল-ফালাহ” শুনতে পাও? তিনি বললেন: জি হাঁ! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন:
«لاَ أَجِدُ لَكَ رُخْصَةً».
“আমি তোমার জন্য ঘরে সালাত আদায়ের কোনো অনুমতিই খুঁজে পাচ্ছি না”।
যখন এক জন অন্ধ ব্যক্তি ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি পাচ্ছে না তাহলে এক জন চক্ষুষ্মান ব্যক্তি কীভাবে ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি পেতে পারে?! এতেই বুঝা গেলো, জামা‘আতে সালাত আদায় করা প্রতিটি ব্যক্তির ওপর নিহায়েত গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব। তাই ওযর ছাড়া কারোর জন্য ঘরে সালাত পড়া কোনোভাবেই সঠিক নয়।
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কিন্তু জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে কম তাগিদ দেন নি; বরং তিনি যারা জামা‘আতে উপস্থিত হচ্ছে না তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনিবলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِالصّلاَةِ فَتُقَامَ، ثُمَّ آمُرَرَجُلاً فَيُصَلِّيَ بِالنَّاسِ ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِيْ بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَىْ قَوْمٍ لاَيَشْهَدُوْنَ الصَّلاَةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوْتَهُمْ بِالنَّارِ».
“আমার ইচ্ছে হয় কাউকে সালাত পড়ানোর দায়িত্ব দিয়ে লাকড়ির বোঝাসহ কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে তাদের পিছু নেই যারা জামা‘আতে উপস্থিত হয় না এবং তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেই”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামা‘আতে সালাত ত্যাগকারীদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো এতো বড়ো জঘন্য কাজ করার ইচ্ছা কখনোই পোষণ করতেন না যদি না জামা‘আতে সালাত পড়া একান্ত গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব হতো। আর যদি কেউ কেউ জামা‘আতে সালাত পড়লে অন্যদের পক্ষ থেকে উক্ত দায়িত্ব আদায় হয়ে যেতো তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কিছু সাহাবীগণ জামা‘আতে সালাত আদায় করলেই অন্যদের পক্ষ থেকে উক্ত দায়িত্ব আদায় হয়ে যেতো।
যে ব্যক্তি শরঈ অজুহাত ছাড়াই ঘরে সালাত পড়লো তার সালাত আদায় বা কবুল হবে না।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ سَمِعَ الـمُنَادِىَ بِالصَّلاَةِ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنِ اتِّبَاعِهِ عُذْرٌ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلاَةُ الَّتِيْ صَلَّى، قِيْلَ: وَمَا الْعُذْرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ: خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ».
“যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনের আযান শুনেও মসজিদে না গিয়ে ঘরে সালাত পড়লো অথচ তার নিকট মসজিদে উপস্থিত না হওয়ার শরঈ কোনো ওযর নেই তাহলে তার আদায়কৃত সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ওযর বলতে কী ধরণের ওযর বুঝাতে চাচ্ছেন? তিনি বললেন: ভয় অথবা রোগ”।
উক্ত হাদীসটিতে কবুল ও ওযরের ব্যাখ্যা চাওয়া ছাড়া তার বাকী অংশটুকু শুদ্ধ।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ ثُمَّ لَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».
“যে ব্যক্তি আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযর নেই। তাহলে তার সালাতই হবে না”।
উক্ত হাদীসদ্বয়ে জামা‘আতে সালাত না পড়লে সালাত কবুল বা শুদ্ধই হবে না বলতে কমপক্ষে জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব হওয়াকেই বুঝানো হচ্ছে।
কোনো জায়গায় সালাতের সময় হলে এবং সেখানে তিন বা তিনের অধিক ব্যক্তি একত্রিত থাকলে তাদেরকে অবশ্যই উক্ত সালাত জামা‘আতে আদায় করতে হবে। এটিই হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত আদেশ। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ সাধারণত ওয়াজিব হওয়াকেই বুঝায়।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا كَانُوْا ثَلاَثَةً فَلْيَؤُمُّهُمْ أَحَدُهُمْ، وَأَحَقُّهُمْ بِالْإِمَامَةِ أَقْرَؤُهُمْ».
“যখন তারা তিনজন কোথাও একত্রিত হয় তখন তাদের কোনো এক জন যেন সালাতের ইমামতি করে। তবে ইমামতির উপযুক্ত তাদের মধ্যে যে কুরআন সম্পর্কে বেশি জানে”।
মালিক ইবন হুওয়াইরিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা আমার বংশের আরো কিছু মানুষসহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। আমরা তাঁর নিকট বিশ রাত্রি অবস্থান করলাম। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু প্রকৃতির। যখন তিনি আমাদের মধ্যে বাড়ি ফেরার আকর্ষণ অনুভব করলেন তখন তিনি আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«ارْجِعُوْا فَكُوْنُوْا فِيْهِمْ، وَعَلِّمُوْهُمْ، وَصَلُّوْا، فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ، وَلْيَؤُمُّكُمْ أَكْبَرُكُمْ».
“তোমরা বাড়ি ফিরে যাও। নিজ স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারবর্গের মাঝে অবস্থান করো। তাদেরকে শিক্ষা দাও এবং সালাত পড়ো। সালাতের সময় হলে তোমাদেরই কেউ আযান দিবে এবং তোমাদের মাঝে যে বয়স্ক সেই ইমামতি করবে”।
কোনো এলাকায় তিন বা তিনের অধিক ব্যক্তি অবস্থান করা সত্ত্বেও তারা যদি আযান-ইক্বামত দিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় না করে তাহলে শয়তান তাদের ওপর ভালোভাবে জেঁকে বসবে।
আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:
«مَا مِنْ ثَلاَثَةٍ فِي قَرْيَةٍ لاَ يُؤَذَّنُ وَلاَ تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلاَةُ إِلاَّ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّ الذِّئْبَ يَأْكُلُ الْقَاصِيَةَ».
“কোনো গ্রাম বা এলাকায় যদি তিনজন মানুষ থাকে অথচ সেখানে আযান-ইক্বামত দিয়ে ফরয সালাত আদায় করা হলো না তা হলে তাদের ওপর শয়তান জেঁকে বসবে। তাই তুমি জামা‘আতে সালাত পড়বে। কারণ, নেকড়ে বাঘ তো একমাত্র দলছুট ছাগলটিকেই খেয়ে ফেলে”।
উক্ত হাদীসে জামা‘আতে সালাত আদায়ের আদেশ করা হয়েছে যা জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব হওয়াই প্রমাণ করে।
কোনো মসজিদে অবস্থানরত অবস্থায় যে কোনো সালাতের আযান দেওয়া হলে তা জামা‘আতে আদায় না করে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ বিরোধী।
আবুশ-শাসা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় মুআয্যিন আযান দিলে জনৈক ব্যক্তি বসা থেকে দাঁড়িয়ে সোজা হাঁটতে শুরু করলো। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন। ইতোঃমধ্যে সে মসজিদ থেকে একেবারেই বের হয়ে গেলো। তখন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন:
«أَمَّا هَذَا فَقَدْ عَصَى أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ».
“আরে! এ তো আবুল-ক্বাসিম তথা রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্য হলো”।
উক্ত হাদীসে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আযানের পর জামা‘আতে সালাত না পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়া ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত অবাধ্য বলে আখ্যায়িত করেন। যদি সালাত জামা‘আতে পড়া না পড়ার ব্যাপারে লোকটির স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ থাকতো তাহলে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে জামা‘আতে সালাত না পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত অবাধ্য বলে আখ্যায়িত করতেন না। অতএব, বুঝা গেলো জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব।
এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় মানুষকে মুনাফিক বলেও আখ্যায়িত করেছেন। আর শরী‘আতের দৃষ্টিতে সাধারণত কোনো সুন্নাত বা মুস্তাহাব কাজ ছাড়া কিংবা কোনো মাকরূহ কাজ করার দরুন কাউকে মুনাফিক বলা হয় না; বরং তা বলা হয় কোনো ফরয-ওয়াজিব ছাড়লে অথবা কোনো হারাম কাজ করলে। অতএব বুঝা গেলো জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব।
উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَدْرَكَهُ الأَذَانُ فِيْ الْـمَسْجِدِ ثُمَّ خَرَجَ لَمْ يَخْرُجْ لِحَاجَةٍ وَهُوَ لاَ يُرِيدُ الرَّجْعَةَ فَهُوَ مُنَافِقٌ».
“কেউ মসজিদে অবস্থানরত অবস্থায় যদি কোনো সালাতের আযান হয়ে যায় অথচ সে কোনো প্রয়োজন ছাড়াই মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলো এবং তার দ্বিতীবার মসজিদে ফিরে আসারও ইচ্ছে নেই তাহলে সে মুনাফিক”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো ওযর ছাড়া সালাত আদায়কারীদের সারির পেছনে একা দাঁড়িয়ে জামা‘আতে সালাত পড়ুয়া ব্যক্তির সালাত বাতিল বলে আখ্যায়িত করে তাকে উক্ত সালাতটুকু দ্বিতীয়বার পড়ার আদেশ করেন। তাহলে বিনা ওযরে ঘরে সালাত পড়ুয়া ব্যক্তির সালাতটুকু কীভাবে শুদ্ধ হতে পারে?! তা একেবারে অশুদ্ধ না হলেও কমপক্ষে জামা‘আতে সালাত পড়া তো ওয়াজিব বলতে হবে।
আলী ইবন শাইবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জনৈক ব্যক্তিকে সালাত আদায়কারীদের সারির পেছনে একা সালাত আদায় করতে দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন লোকটি সালাতটুকু শেষ করলো তখন তিনি তাকে বললেন:
«اسْتَقْبِلْ صَلاَتَكَ فَلاَ صَلاَةَ لِرَجُلٍ فَرْدٍ خَلْفَ الصَّفِّ».
“তুমি তোমার সালাতটুকু আবার পড়ো। কারণ, সালাত আদায়কারীদের সারির পেছনে একা সালাত পড়ুয়ার সালাতটুকু শুদ্ধ হয় না”।
যে ব্যক্তি শরঈ কোনো অজুহাত ছাড়াই ঘরে সালাত পড়লো সে মুনাফিক। আর শরী‘আতের দৃষ্টিতে সাধারণত কোনো সুন্নাত বা মুস্তাহাব কাজ ছাড়া কিংবা কোনো মাকরূহ কাজ করার দরুন কাউকে মুনাফিক বলা হয় না। বরং তা বলা হয় কোনো ফরয-ওয়াজিব ছাড়লে অথবা কোনো হারাম কাজ করলে। অতএব বুঝা গেলো জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلاَةُ إِلاَّ مُنَافِقٌ عُلِمَ نِفَاقُهُ أَوْ مَرِيْضٌ، إِنْ كَاْنَ الْـمَرِيْضُ لَيَمْشِىْ بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتَّى يَأْتِيَ الصَّلاَةَ، وَقَاْلَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَنَا سُنَنَ الْـهُدَى وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى الصَّلاَةُ فِي الْـمَسْجِدِ الَّذِيْ يُؤَذَّنُ فِيْهِ».
“আমাদের মধ্যে নিশ্চিত মুনাফিক ও রুগ্ন ব্যক্তি ছাড়া কেউই জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতো না। এমনকি আমরা দেখতাম রুগ্ন ব্যক্তি ও দু’ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে জামা‘আতে উপস্থিত হতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর জামা‘আতে সালাত আদায়ের নির্দেশ সঠিক পথের দিশা বৈ কি”?
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন:
«حُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً، وَلَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلاَّ مُنَافِقٌ مَعْلُوْمُ النِّفَاقِ، وَلَقَدْ كَاْنَ الرَّجُلُ يُؤْتَى بِهِ يُهَادَي بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ فِي الصَّفِّ».
“যার ইচ্ছে হয় পরকালে আল্লাহর সাথে মুসলিম রূপে সাক্ষাৎ দিতে সে যেন জামা‘আতে সালাত আদায় করতে সযত্ন হয়। আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর জামা‘আতে সালাত পড়া তারই অন্তর্ভুক্ত। তোমরা যদি ঘরে সালাত পড়ুয়া অলসের ন্যায় ঘরে সালাত পড়ো তা হলে নিশ্চিতভাবে তোমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামপ্রদর্শিত সঠিক পথ থেকে সরে পড়লে। আর তখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে। যে কেউ সুন্দরভাবে পবিত্রতার্জন করে মসজিদগামী হয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রতি কদমের বদৌলতে একটি করে পুণ্য দিবেন ও একটি করে মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং একটি করে গুনাহ মুছে দিবেন। তিনি বলেন: আমাদের মধ্যে নিশ্চিত মুনাফিক ছাড়া কেউ জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতো না। এমনকি কেউ কেউ দু’জনের কাঁধে ভর দিয়েও জামা‘আতে উপস্থিত হতো”।
উক্ত হাদীসে কেউ পরকালে আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুসলিম রূপে সাক্ষাৎ দিতে হলে তাকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সযত্ন হতে বলা হয়েছে এবং তাতে ঘরে সালাত আদায়কারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ও তাঁর আনীত শরী‘আত বিরোধী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উক্ত আদর্শ বলতে এমন আদর্শকে বুঝানো হয় নি যা ইচ্ছে করলে ছাড়াও যায়; বরং এমন আদর্শকে বুঝানো হয়েছে যা ছাড়লে পথভ্রষ্ট ও মুনাফিক রূপে আখ্যায়িত হতে হয়। অতএব বুঝা গেলো জামা‘আতে সালাত পড়া প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব ও ফরয।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামইরশাদ করেন:
«إِنَّ لِلْمُنَافِقِيْنَ عَلاَمَاتٍ يُعْرَفُوْنَ بِهَا، تَحِيَّتُهُمْ لَعْنَةٌ، وَطَعَامُهُمْ نُهْبَةٌ، وَغَنِيْمَتُهُمْ غُلُوْلٌ، وَلاَ يَقْرَبُوْنَ الْـمَسَاجِدَ إِلاَّ هَجْراً، وَلاَ يَأْتُوْنَ الصَّلاَةَ إِلاَّ دَبْــراً مُسْتَكْبِرِيْنَ، لاَ يَأْلَفُوْنَ وَلاَ يُؤْلَفُوْنَ، خُشُبٌ بِاللَّيْلِ، صُخُبٌ بِالنَّهَارِ ».
“মুনাফিকদের এমন কিছু আলামত রয়েছে যা দিয়ে তাদেরকে সহজেই চেনা যায়। সেগুলো হলো: তাদের সম্ভাষণই হচ্ছে অভিসম্পাত। তাদের খাবারই হচ্ছে কোথাও থেকে লুট করা বস্তু। তাদের যুদ্ধলব্ধ সম্পদই হচ্ছে তা বন্টনের পূবেই চুরি করা বস্তু। তারা মসজিদের ধারেকাছেও যায় না। সালাতে কখনো আসলেও তারা অহঙ্কারী ভাব নিয়ে দেরিতে আসে। তারা কারোর সাথে গভীরভাবে মিশতে চায় না এবং তাদের সাথেও গভীরভাবে মিশা যায় না। রাতে তারা কাষ্ঠখন্ড স্বরূপ নিঃসাড় নিঃশব্দ। দিনে সরব”।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كُنَّا إِذَا فَقَدْنَا الرَّجُلَ فِيْ صَلاَةِ الْعِشَاءِ وَصَلاَةِ الْفَجْرِ أَسَأْنَا بِهِ الظَّنَّ».
“আমরা যখন কাউকে ইশা ও ফজরের সালাতে মসজিদে না দেখতাম তখন তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা করতাম তথা তাকে মুনাফিক ভাবতাম”।
এমনকি লাগাতার জামা‘আতে সালাত না পড়া ব্যক্তির অন্তরকে সীল-গালা করা তথা তার অন্তরের ওপর মোহর মেরে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আর শরী‘আতে সাধারণত কোনো ফরয-ওয়াজিব ছাড়া ব্যতীত কাউকে এ ধরণের হুমকি দেওয়া হয় না।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বারের উপর বসে বলেন:
«لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجَمَاعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللهُ عَلَى قُلُوْبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُوْنَنَّ مِنَ الْغَافِلِيْنَ».
“কয়েকটি সম্প্রদায় যেন জামা‘আতে সালাত পরিত্যাগ করা থেকে অবশ্যই ফিরে আসে তা না হলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের হৃদয়ের ওপর মোহর মেরে দিবেন। অতঃপর তারা নিশ্চিত গাফিল তথা ধর্ম বিমুখ হয়েই জীবন যাপন করতে বাধ্য হবে”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সাহাবাগণের খবরদারি করতেন। আর কোনো ব্যাপারে কারোর খবরদারি করা সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথা অবশ্য করণীয় ওয়াজিব হওয়াকেই বুঝায়।
উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তিনি আবারো জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তখন তিনি বললেন:
«إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ أَثْقَلُ الصَّلَوَاتِ عَلَى الْـمُنَافِقِينَ وَلَوْ تَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَيْتُمُوهُمَا وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الرُّكَبِ وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلَ عَلَى مِثْلِ صَفِّ الْـمَلَائِكَةِ وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فَضِيْلَتُهُ لَابْتَدَرْتُمُوهُ وَإِنَّ صَلَاةَ الرَّجُلِ مَعَ الرَّجُلِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ وَحْدَهُ وَصَلَاتُهُ مَعَ الرَّجُلَيْنِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ مَعَ الرَّجُلِ وَمَا كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى».
“এ দু’টি সালাত তথা ইশা ও ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা সত্যিই মুনাফিকদের জন্য খুবই কষ্টকর। তোমরা যদি জানতে তা জামা‘আতের সাথে আদায়ে কী পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে তাহলে তোমরা তা আদায়ের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে উপস্থিত হতে। সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারি ফিরিশতাগণের সারির ন্যায়। তোমরা যদি জানতে প্রথম সারিতে সালাত আদায়ের কি ফযীলত রয়েছে তা হলে তোমরা খুব দ্রুত সেখানে অবস্থান করতে। একা সালাত আদায়ের চাইতে দু’জন মিলে জামা‘আতে পড়া অনেক ভালো। আবার একজনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায়ের চাইতে দু’জনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় করা আরো অনেক ভালো। জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের সংখ্যা যতোই বেশি হবে ততোই তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট বেশি পছন্দনীয়”।
জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের ঐকমত্য রয়েছে যা নিম্নের বাণীগুলো থেকে বুঝা যায়।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাণী যা উপরে উল্লিখিত হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:
«مَنْ سَمِعَ الْـمُنَادِيَ فَلَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».
“যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে তার সালাতই হবে না”।
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَنْ سَمِعَ الْـمُنَادِيَ فَلَمْ يُجِبْ بِغَيْرِ عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».
“যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে তার সালাতই হবে না”।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لاَ صَلاَةَ لِجَارِ الْـمَسْجِدِ إِلاَّ فِـيْ الْـمَسْجِدِ، قِيْلَ : وَمَنْ جَارُ الـْمَسْجِدِ؟ قَالَ : مَنْ سَمِعَ الـْمُنَادِيَ».
“মসজিদের প্রতিবেশীর সালাত মসজিদ ছাড়া আর কোথাও হবে না। তাঁকে বলা হলো: মসজিদের প্রতিবেশী কে? তিনি বললেন: যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনে”।
তিনি আরো বলেন:
«مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ مِنْ جِيْرَانِ الْـمَسْجِدِ فَلَمْ يُجِبْ وَهُوَ صَحِيْحٌ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».
“মসজিদের কোনো প্রতিবেশী আযান শুনে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় না করলে অথচ সে সুস্থ-সবল এবং তার কোনো ওযর নেই তা হলে তার সালাতই হবে না”।
তিনি আরো বলেন:
«مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ لَمْ تُجَاوِزْ صَلاَتُهُ رَأْسَهُ إِلاَّ مِنْ عُذْرٍ».
“যে ব্যক্তি আযান শুনেও মসজিদে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে আসেনি তার সালাতটুকু তার নিজ মাথাই অতিক্রম করবে না। আকাশ পর্যন্ত পৌঁছা তো অনেক দূরের কথা। তবে এ ব্যাপারে তার কোনো ওযর থাকলে তা ভিন্ন”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«لأَنْ تَمْتَلِئَ أُذُنا ابْنِ آدَمَ رَصَاصاً مُذَاباً خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْمَعَ الْـمُنَادِيَ ثُمَّ لاَ يُجِيْبُهُ».
“আদম সন্তানের উভয় কান গলানো সিসা দিয়ে ভর্তি থাকা তার জন্য অনেক ভালো মুআয্যিনের আযান শুনে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামা‘আতে সালাত না পড়ার চাইতে”।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَنْ سَمِعَ الـُمنَادِىَ فَلَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ، لَمْ يَجِدْ خَيْراً وَلَمْ يُرَدْ بِهِ».
“যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে সে কল্যাণপ্রাপ্ত নয় অথবা তার সাথে কোনো কল্যাণ করার ইচ্ছেই করা হয় নি”।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَنْ سَمِعَ الْـمُنَادِيَ فَلَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».
“যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে তার সালাতই হবে না”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিযুক্ত মক্কার গভর্ণর আত্তাব ইবন আসীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি একদা মক্কাবাসীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
«وَاللهِ لاَ يَبْلُغُنِيْ أَنَّ أَحَداً مِنْكُمْ تَخَلَّفَ عَنِ الصَّلاَةِ فِيْ الْـمَسْجِدِ مَعَ الْـجَمَاعَةِ إِلاَّ ضَرَبْتُ عُنُقَهُ».
“আল্লাহর কসম! কোনো ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত পড়ছে না এমন খবর আমার কানে আসলে আমি তাকে হত্যা করবো”।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا بَالُ أَقْوَامٍ يَتَخَلَّفُوْنَ عَنِ الصَّلاَةِ فَيَتَخَلَّفُ لِتَخَلُّفِهِمْ آخَرُوْنَ لأَنْ يَحْضُرُوْا الصَّلاَةَ أَوْ لأَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ مَنْ يُجَافِيْ رِقَابَهُمْ».
“তাদের কী হলো! যারা জামা‘আতে সালাত পড়ছে না এবং তাদেরকে দেখে অন্যরাও জামা‘আতে উপস্থিত হচ্ছে না। তারা যেন জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য উপস্থিত হয় তা না হলে আমি তাদের নিকট এমন লোক পাঠাবো যারা তাদের গর্দান উড়িয়ে দিবে”।
এ ছাড়া অন্য কোনো সাহাবী এদের বিপরীত মত পোষণ করেন নি। অতএব, বুঝা গেলো এ ব্যাপারে তাদের সবার ঐকমত্য রয়েছে।
হাসান বাসরী রহ. বলেন:
«إِنْ مَنَعَتْهُ أُمُّهُ عَنِ الْعِشَاءِ فِيْ الْـجَمَاعَةِ شَفَقَةً لَمْ يُطِعْهَا».
“কারোর মা যদি সন্তানের ওপর দয়া করে তাকে ইশার সালাত জামা‘আতে পড়তে নিষেধ করে তা হলে সে তাঁর আনুগত্য করবে না। কারণ, গুনাহ’র কাজে মাতা-পিতার আনুগত্য করতে হয় না”।
আরো যাঁরা জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব বলেছেন তারা হলেন, আত্বা ইবন আবী রাবাহ, ইমাম আহমদ, ইমাম শাফেঈ, আওযাঈ, খাত্ত্বাবী, ইবন খুযাইমাহ, ইমাম বুখারী, ইবন হিব্বান, আবু সাউর, ইবন হাযম, ইমাম দাউদ আয-যাহেরী, ইবন ক্বুদামাহ, আল্লামা আলাউদ্দীন আস-সামারক্বান্দী, আবু বাকার আল-কাসানী, ইবনুল্-মুনযির, ইবরাহীম আন-নাখা‘য়ী ও ইমাম ইবন আব্দিল-বার প্রমুখ।
আর একটি ব্যাপার হচ্ছে, যে জামা‘আতে সালাত আদায় করা থেকে পিছিয়ে থাকে সে পরবর্তীতে সম্পূর্ণরূপে সালাতই ছেড়ে দেয়।
তাই প্রতিটি মুসলিমের একান্ত কর্তব্য হবে, জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে আরো বেশী যত্নবান হওয়া এবং নিজ ছেলে-সন্তান, পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এমনকি সকল মুসলিম ভাইদেরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা। আর তখনই আমরা মুনাফিকী থেকে মুক্তি পাবো।
জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফায়েদাসমূহ:
জামা‘আতে সালাত আদায়ের অনেকগুলো ফায়েদা রয়েছে যার কিয়দংশ নিম্নরূপ:
১. আল্লাহ তা‘আলা নিজ দয়ায় এ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য সময়ে সময়ে পরস্পর একত্রিত হওয়ার কিছু বিশেষ সুযোগ ও সুব্যবস্থা রেখেছেন। যেন তারা একে অপরের খবরাখবর নিতে পারে। প্রয়োজনে একে অপরের সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে। যাতে করে ধীরে ধীরে তাদের পরস্পরের সম্পর্কের বিশেষ উন্নতি ঘটে এবং একে অপরকে কথায় ও কাজে আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত বিধানের দিকে আহ্বান করার প্রচুর সুযোগ পায়। আর এ জাতীয় পরস্পর একত্রিত হওয়ার সুযোগ কখনো হয় দৈনিক। যেমন, দৈনিক পাঁচ বেলা সালাত মসজিদে গিয়ে জামা‘আতের সাথে আদায় করা। আবার কখনো তা হয় সাপ্তাহিক। যেমন, জুমাবার মসজিদে গিয়ে সবার একত্রে জুমু‘আর সালাত আদায় করা। আবার কখনো তা হয় বাৎসরিক ও আঞ্চলিক। যেমন, এক অঞ্চলের সবাই বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে নিজেদের নির্দিষ্ট ঈদগাহে একত্রিত হয়ে দু’ ঈদের সালাত আদায় করা। আবার কখনো তা হয় বাৎসরিক ও আন্তর্জাতিক। যেমন: বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র থেকে সচ্ছল মুসলিমদের বৎসরে একবার হজ্জের উদ্দেশ্যে আরাফার ময়দানে একত্রিত হওয়া।
২. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়া বিশেষ সাওয়াবের কাজও বটে।
৩. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে মুসলিম সমাজের প্রতিটি লোক একে অপরের অবস্থা সম্যকরূপে জানতে পারে। এতে করে সমাজের রুগ্ন ব্যক্তিদের শুশ্রূষা করার এক বিরাট সুযোগ পাওয়া যায় এবং সমাজের মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফন করাও সহজে সম্ভবপর হয়। তেমনিভাবে এরই মাধ্যমে সমাজের গরীব-দুঃখীদের প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতাও করা যায়। আর এতে করে মুসলিমদের পরস্পরের মাঝে গভীর ভালোবাসা জন্ম নেয়।
৪. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে নিজের সকল আত্মীয়-স্বজনকেও সহজে চেনা সম্ভবপর হয়। তেমনিভাবে এলাকায় নবাগত যে কোনো মুসাফির ব্যাক্তিকেও সহজে চেনা যায়। আর এতে করে একের পক্ষ থেকে অন্যের পাওনা ন্যায্য অধিকারটুকু সহজে আদায় করার বিশেষ সুবর্ণ সুযোগও পাওয়া যায়।
৫. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে ইসলামের একটি বিশেষ নিদর্শন তথা জামা‘আতে সালাত পড়া বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়। কারণ, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি যদি নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে তা হলে উক্ত সমাজে সালাত পড়া হয়েছে কি না বলা মুশকিল।
৬. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে কাফির ও মুনাফিকদের সামনে মুসলিমদের দাপট, শক্তি ও পরাক্রমশালিতা বিশেষভাবে ফুটে উঠে। তাতে করে কাফির ও মুনাফিকরা মানসিকভাবে পর্যুদস্ত হয়।
৭. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে মূর্খ ব্যক্তিরা আলিমদের কাছ থেকে ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছুই জানার সুযোগ পায়। এমনকি তারা বিশেষ করে সালাতের বিধি-বিধানগুলো ভালোভাবে রপ্ত করারও সুযোগ পায়।
৮. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে উপস্থিত হয় না এমন ব্যক্তিদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য বিশেষভাবে উপদেশ দেওয়া যেতে পারে।
৯. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্কে বার বার ঐক্য ও ঐকমত্যের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে করে তারা একই ইমামের নেতৃত্বে জামা‘আতে সালাত আদায়ের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজ রাষ্ট্রের কর্ণধারের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য টিকিয়ে রাখার প্রশিক্ষণ পায়।
১০. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্কে বার বার নিজ কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে করে তারা একই ইমামের পুঙ্খানুপুঙ্খ আনুগত্যের মাধ্যমে নিজ কু-প্রবৃত্তি দমনের বিশেষ সুযোগ পায়।
১১. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হয়ে সারিবদ্ধভাবে সালাত আদায়ের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্কে বার বার সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো সারিবদ্ধভাবে জিহাদ করার বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
আল্লাহ তা‘আলা জিহাদ সম্পর্কে বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلَّذِينَ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِهِۦ صَفّٗا كَأَنَّهُم بُنۡيَٰنٞ مَّرۡصُوصٞ ٤﴾ [الصف: ٤]
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো সারিবদ্ধভাবে তাঁর পথে যুদ্ধকারীদের ভালোবাসেন”। [সূরা সাফ্ফ, আয়াত: ৪]
১২. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হয়ে ধনী গরীবের সাথে, আমীর মা’মূরের সাথে, শাসক শাসিতের সাথে, বড়ো ছোটর সাথে সারিবদ্ধভাবে সালাত আদায়ের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্কে বার বার নিজেদের মধ্যকার সামাজিক অবস্থানের দৃশ্যমান বিস্তর পার্থক্য ভুলে গিয়ে মুসলিম উম্মাহ’র সবাই যে একই সমান এমন মানসিকতা পোষণের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে করে মুসলিমদের পরস্পরের মাঝে গভীর ভালোবাসা জন্ম নেয়। আর এ জন্যই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা সাহাবায়ে কিরামগণকে সালাতে একান্তভাবে সারিবদ্ধ হয়ে সালাত আদায়ের আদেশ করতেন।
আবু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামা‘আতে সালাতের জন্য দাঁড়ানোর সময় আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেন:
«اِسْتَوُوْا، وَلاَ تَخْتَلِفُوْا فَتَخْتَلِفَ قُلُوْبُكُمْ».
“তোমরা সারিবদ্ধভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াও। এলোমেলোভাবে দাঁড়িও না তাহলে তোমাদের অন্তরগুলোও এলোমেলো হয়ে যাবে”।
১৩. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে সমাজের গরীব-দুঃখী ও অসুস্থদের খবরাখবর নিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা যায় এবং সমাজের ধর্মবিমুখদেরকে ধর্মের ওপর উঠিয়ে আনার জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায়।
১৪. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কিরামের যুগের শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যায়। কারণ, সে যুগে সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে জামা‘আতে সালাত আদায়ের সুবাদেই তারা ধর্ম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান শেখার সুযোগ পেতো।
১৫. একান্ত সাওয়াবের আশায় জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়া মুসলিম উম্মাহ’র ওপর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ধারাবাহিক বরকত নাযিল হওয়ার একটি বিরাট মাধ্যমও বটে।
১৬. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে সমাজের নিরলস ইবাদতকারীদের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের প্রতি অদম্য উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে অলসদের মাঝেও নতুন করে ইবাদতের ইচ্ছা ও স্পৃহা জন্ম নেয়।
১৭. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে সালাত ছাড়া আরো অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে বহুগুণ সাওয়াবও অর্জন করা যায়।
১৮. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে কথা ও কাজে আল্লাহ তা‘আলার দিকে মানুষকে আহ্বান করা যায়।
১৯. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্কে সময়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলত:
জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব হওয়ার পাশাপাশি তাতে অনেকগুলো ফযীলতও রয়েছে। যা নিম্নরূপ:
১. একা সালাত আদায়ের চাইতে জামা‘আতে সালাত পড়ায় সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব রয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صَلاَةُ الْـجَمَاعَةِ أَفْضَلُ مِنْ صَلاَةِ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِيْنَ دَرَجَةً».
“জামা‘আতে সালাত পড়া একা সালাত আদায়ের চাইতে সাতাশ গুণ বেশি উত্তম”।
কোনো কোনো হাদীসে আবার পঁচিশ গুণ সাওয়াবের কথাও বলা হয়েছে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صَلاَةٌ مَعَ الْإِمَامِ أَفْضَلُ مِنْ خَمْسٍ وَعِشْرِيْنَ صَلاَةً يُصَلِّيْهَا وَحْدَهُ».
“ইমাম সাহেবের সাথে সালাত পড়া একা সালাত আদায়ের চাইতে পঁচিশ গুণ বেশি উত্তম”।
কেউ কেউ উভয় হাদীসের মধ্যে এভাবে সমন্বয় সাধন করেন যে, পঁচিশ গুণের হাদীসে শুধু একা ও জামা‘আতে সালাত আদায়ের মধ্যকার সাওয়াবের ব্যবধানটুকুই উল্লিখিত হয়েছে। আর সাতাশ গুণের হাদীসে একা সালাতের সাওয়াব এবং উভয় সালাতের মধ্যকার সাওয়াবের ব্যবধানটুকু একত্রেই উল্লিখিত হয়েছে।
আল্লামা ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. উভয় হাদীসের মধ্যে নিম্নে বর্ণিত তিনভাবেই সমন্বয় সাধন করেন:
ক. উভয় হাদীসের মধ্যে কোনো ধরণের বৈপরীত্য নেই। কারণ, কম সংখ্যা তো বেশি সংখ্যার বিপরীত নয়। বরং কম সংখ্যা বেশি সংখ্যার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে।
খ. হয়তো বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম কমের কথা জেনেই তা নিজ উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন অতঃপর তাঁকে আবার বেশির কথাই জানানো হলো।
গ. হয়তো বা জামা‘আতে সালাত পড়ুয়া মুসল্লীদের অবস্থার পরিবর্তন তথা সালাতে তাদের ধীরস্থীরতা ও আন্তরিকতা, মুসল্লীদের আধিক্য ও তাদের মর্যাদা এমনকি স্থানের মর্যাদার পার্থক্যের কারণে সাওয়াবেরও পার্থক্য হয়।
জামা‘আতে সালাত পড়া অত্যন্ত সাওয়াবের বিষয় হওয়া তা ওয়াজিব না হওয়া বুঝায় না। কারণ, শরী‘আতে ফরয কিংবা ওয়াজিব কাজ আদায়েরও বিশেষ সাওয়াব রয়েছে। তবে কেউ কোনো ফরয সালাত একা পড়লেও তার সালাতটুকু অবশ্যই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সে ইচ্ছাকৃত ওয়াজিব ছাড়ার দরুন অবশ্যই গুনাহ্গার হবে। আর তাতে অন্তত পঁচিশ সাওয়াবের ঘাটতি তো আছেই। তবে কেউ শরী‘আত সম্মত কোনো ওযরের কারণে জামা‘আতে উপস্থিত না হতে পারলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের সাওয়াব অবশ্যই দিবেন।
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيْماً صَحِيْحاً».
“যখন আল্লাহ তা‘আলার কোনো বান্দা অসুস্থ কিংবা সফররত অবস্থায় থাকে তখন তার জন্য তার সুস্থ কিংবা মুক্বিম থাকাবস্থার সকল আমলের সমপরিমাণ সাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়”।
২. আল্লাহ তা‘আলা জামা‘আতে সালাত পড়ুয়াদেরকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করেন।
আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:
«مَا مِنْ ثَلاَثَةٍ فِي قَرْيَةٍ لاَ يُؤَذَّنُ وَلاَ تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلاَةُ إِلاَّ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّ الذِّئْبَ يَأْكُلُ الْقَاصِيَةَ».
“কোনো গ্রাম বা এলাকায় যদি তিন জন মানুষ থাকে অথচ সেখানে আযান-ইক্বামত দিয়ে ফরয সালাত আদায় করা হলো না তাহলে তাদের ওপর শয়তান জেঁকে বসবে। তাই তুমি জামা‘আতে সালাত পড়বে। কারণ, নেকড়ে বাঘ তো একমাত্র দলছুট্ ছাগলটিকেই খেয়ে ফেলে”।
৩. জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের উপস্থিতি যতোই বাড়বে ততোই সাওয়াব বেশি পাওয়া যাবে।
উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তিনি আবারো জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তখন তিনি বললেন:
«إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ أَثْقَلُ الصَّلَوَاتِ عَلَى الْـمُنَافِقِينَ وَلَوْ تَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَيْتُمُوهُمَا وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الرُّكَبِ وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلَ عَلَى مِثْلِ صَفِّ الْـمَلَائِكَةِ وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فَضِيْلَتُهُ لَابْتَدَرْتُمُوهُ وَإِنَّ صَلَاةَ الرَّجُلِ مَعَ الرَّجُلِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ وَحْدَهُ وَصَلَاتُهُ مَعَ الرَّجُلَيْنِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ مَعَ الرَّجُلِ وَمَا كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى».
“এ দু’টি সালাত তথা ইশা ও ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা সত্যিই মুনাফিকদের জন্য খুবই কষ্টকর। তোমরা যদি জানতে তা জামা‘আতের সাথে আদায়ে কি পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে তা হলে তোমরা তা আদায়ের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে উপস্থিত হতে। সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারি ফিরিশতাদের সারির ন্যায়। তোমরা যদি জানতে প্রথম সারিতে সালাত আদায়ের কি ফযীলত রয়েছে তা হলে তোমরা খুব দ্রুত সেখানে অবস্থান করতে। একা সালাত আদায়ের চাইতে দু’জন মিলে জামা‘আতে পড়া অনেক ভালো। আবার একজনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায়ের চাইতে দু’জনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় করা আরো অনেক ভালো। জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের সংখ্যা যতোই বেশি হবে ততোই তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট বেশি পছন্দনীয়”।
৪. চল্লিশ দিন একান্ত নিষ্ঠা ও প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত পড়লে দু’টি মুক্তির সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ : بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ».
“যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য চল্লিশ দিন যাবৎ প্রথম তাকবীর সহ জামা‘আতে সালাত আদায় করবে তার জন্য দু’টি মুক্তির সার্টিফিকেট লেখা হবে। একটি জাহান্নাম থেকে মুক্তির। আর আরেকটি মুনাফিকী থেকে মুক্তির”।
৫. ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করলে আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া যায়।
জুন্দাব ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ فَلَا يَطْلُبَنَّكُمُ اللهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ فَإِنَّهُ مَنْ يَطْلُبْهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ يُدْرِكْهُ ثُمَّ يَكُبَّهُ عَلَى وَجْهِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ».
“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত (জামা‘আতের সাথে) আদায় করলো সে আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ নিরাপত্তায় চলে গেলো। তাই কেউ যেন আল্লাহ তা‘আলার নিরাপত্তাধীন কোনো কিছুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে। কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার নিরাপত্তাধীন কোনো কিছুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে তাকে তিনি পাকড়াও করবেন। অতঃপর তাকে চেহারা নীচু করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন”।
হাদীসটির কোনো কোনো বর্ণনায় জামা‘আতের সাথে কথাটি উল্লিখিত হয়েছে।
৬. ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করে সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করলে অতঃপর দু’ রাকাত সালাত পড়লে একটি পূর্ণ হজ ও একটি পূর্ণ উমরার সাওয়াব পাওয়া যায়।
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ».
“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করে সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করে অতঃপর দু’ রাকাত সালাত পড়ে তাকে একটি হজ ও একটি উমরার সাওয়াব দেওয়া হবে। বর্ণনাকারী বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: একটি পরিপূর্ণ হজ ও একটি পরিপূর্ণ উমরাহ’র সাওয়াব। একটি পরিপূর্ণ হজ ও একটি পরিপূর্ণ উমরাহ’র সাওয়াব। একটি পরিপূর্ণ হজ ও একটি পরিপূর্ণ উমরাহ’র সাওয়াব”।
৭. ইশা ও ফজরের সালাত অথবা শুধু ফজরের সালাত জামা‘আতে পড়লে পুরো রাত্রি নফল সালাত আদায় করার সাওয়াব পাওয়া যায়।
উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِيْ جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ».
“যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামা‘আতে আদায় করলো সে যেন অর্ধ রাত পর্যন্ত নফল সালাত পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করলো সে যেন পুরো রাত নফল সালাত পড়লো”।
উক্ত হাদীস থেকে মুহাদ্দিসীনদের কেউ কেউ এ কথা বুঝেছেন যে, শুধুমাত্র ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করলেই পুরো রাত নফল সালাত আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যায়। যা দেওয়া আল্লাহ তা‘আলার জন্য অসম্ভব কিছু নয়। কারণ, তিনি হচ্ছেন পরম করুণাময় অত্যন্ত দয়ালু। যিনি অল্প কাজে মানুষকে অনেক বেশি প্রতিদান দিয়ে থাকেন।
আবার কেউ কেউ উক্ত হাদীস থেকে এ কথা বুঝেছেন যে, ইশা ও ফজর উভয় সালাত জামা‘আতে আদায় করলেই কেবল পুরো রাত নফল সালাত আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যায়। শুধুমাত্র ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করলেই নয়। এ ব্যাপরে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি একেবারেই সুস্পষ্ট।
উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِىْ جَمَاعَةٍ كَانَ كَقِيَامِ نِصْفِ لَيْلَةٍ وَمَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ فِىْ جَمَاعَةٍ كَانَ كَقِيَامِ لَيْلَةٍ».
“যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামা‘আতে আদায় করলো সে যেন অর্ধ রাত পর্যন্ত নফল সালাত পড়লো। আর যে ব্যক্তি ইশা ও ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করলো সে যেন পুরো রাত নফল সালাত পড়লো”।
৮. দিন ও রাতের ফিরিশতাগণ আসর ও ফজরের সালাত চলাকালীন সময় সবাই একত্রিত হোন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ».
“দিন ও রাতের ফিরিশতাগণ পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ হয়ে ফজর ও আসরের সময় তোমাদের মাঝে একত্রিত হোন। অতঃপর যারা তোমাদের মাঝে রাত্রি যাপন করেছেন তারা আকাশে উঠে গেলে তাদের প্রভু তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে সব চাইতে বেশি জানেন। তবুও তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা আমার বান্দাহ্দেরকে কি অবস্থায় রেখে আসলে? তারা বলেন, আমরা তাদেরকে সালাতরত অবস্থায় রেখে আসলাম যেমনিভাবে আমরা তাদের নিকট গিয়েছিলাম সালাতরত অবস্থায়”।
আসর ও ফজরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলে পরকালে মহান আল্লাহ তা‘আলার দর্শন মিলবে।
জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন:
«لَبُوا عَلَى صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا يَعْنِي الْعَصْرَ وَالْفَجْرَ ثُمَّ قَـرَاَ جَـرِيرٌ : {وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الغُرُوبِ}».
“তোমরা নিশ্চয় তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে যেমনিভাবে তোমরা দেখতে পাও এ পূর্ণিমার চন্দ্র। তা দেখতে তোমাদেরকে কোনো ধরণের ভিড় জমাতে হবে না। অতএব, তোমরা যদি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগের দু’ বেলা সালাত তথা ফজর ও আসরের সালাত যথা সময়ে পড়তে পারো তা হলে তোমরা তা অবশ্যই পড়বে। আর তা হলেই তোমরা আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভে ধন্য হবে। অতঃপর জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু উক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। যার অর্থ- “আর তুমি তোমার রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে”।
আসর ও ফজরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলে পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
উমারাহ ইবন রুআইবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا يَعْنِي الْفَجْرَ وَالْعَصْرَ».
“এমন কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না যিনি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগের দু’ বেলা সালাত তথা ফজর ও আসরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলো”।
আসর ও ফজরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলে পরকালে জান্নাত পাওয়া যাবে।
উমারাহ ইবন রুআইবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْـجَنَّةَ».
“যে ব্যক্তি ঠাণ্ডার সময়ের দু’ বেলা সালাত তথা ফজর ও আসরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলো সে ব্যক্তি অচিরেই জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
ঠিক এরই বিপরীতে যে ব্যক্তি আসরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলো না তার সকল আমল পন্ড হয়ে যাবে। এমনকি সে এমন এক ক্ষতির সম্মুখীন হবে যেন তার কাছ থেকে তার সকল পরিবারবর্গ ও ধনসম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হলো।
বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ».
“যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দিলো তার সকল আমল পণ্ড হয়ে গেলো”।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الَّذِي تَفُوتُهُ صَلَاةُ الْعَصْرِ فَكَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَهُ وَمَالَهُ».
“যার আসরের সালাত পড়া হলো না তার যেন সকল পরিবারবর্গ ও ধনসম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হলো”।
৯. আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের জামা‘আতে সালাত পড়া দেখে বিস্মিত হোন। কারণ, তিনি তা অত্যন্ত ভালোবাসেন। আর স্বভাবতই কেউ কোনো জিনিসকে বেশি ভালোবাসলে এবং তা সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হতে দেখলে তাতে সে অধিক আনন্দিত ও বিস্মিত হয়। তবে কোনো জিনিস নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার বিস্মিত হওয়া তা তাঁর মতোই একান্ত অতুলনীয়।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهُ لَيَعْجَبُ مِنْ الصَّلَاةِ فِي الْـجَمِيعِ».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের জামা‘আতে সালাত পড়া দেখে বিস্মিত হোন”।
১০. জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষমান থাকলে ততক্ষণ নফল সালাত আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا يَزَالُ الْعَبْدُ فِي صَلَاةٍ مَا كَانَ فِي مُصَلَّاهُ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ وَتَقُولُ الْـمَلَائِكَةُ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ حَتَّى يَنْصَرِفَ أَوْ يُحْدِثَ قُلْتُ : مَا يُحْدِثُ ؟ قَالَ: يَفْسُو اَوْ يَضْرِطُ».
“যে কোনো ব্যক্তিকে সালাতরত বলে ধরে নেওয়া হয় যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে সালাতেরই অপেক্ষায় থাকে। আর ফিরিশতাগণ তার জন্য এ বলে দো‘আ করেন- হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন। যতক্ষণ না সে উক্ত জায়গা থেকে সরে যায় অথবা অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়। বর্ণনাকারী হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম: অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটানো মানে? তিনি বললেন: যেমন, বায়ু ত্যাগ করা”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য আরেকটি বর্ণনায় বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فَإِذَا دَخَلَ الْـمَسْجِدَ كَانَ فِيْ الصَّلاَةِ مَا كَانَتِ الصَّلاَةُ هِيَ تَحْبِسُهُ، وَالْـمَلَائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ يَقُولُونَ : اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ».
“আর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে তখন তাকে সালাতরত বলেই ধরে নেওয়া হয় যখন একমাত্র সালাতই তাকে সেখানে আটকে রাখলো। এমনকি ফিরিশতাগণ তোমাদের কারোর জন্য যতক্ষণ সে সালাত শেষে সালাতের জায়গায় বসে যিকির করতে থাকে এ বলে দো‘আ করেন- হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন। হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি এর তাওবা কবুল করুন। যতক্ষণ না সে মানুষ ও ফিরিশতাগণ কষ্ট পায় এবং অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়”।
১১. জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষমান থাকলে অথবা সালাত শেষে সালাতের জায়গায় বসে থাকলেও ফিরিশতাগণের দো‘আ পাওয়া যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا يَزَالُ الْعَبْدُ فِي صَلَاةٍ مَا كَانَ فِي مُصَلَّاهُ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ وَتَقُولُ الْـمَلَائِكَةُ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ حَتَّى يَنْصَرِفَ أَوْ يُحْدِثَ قُلْتُ: مَا يُحْدِثُ؟ قَالَ: يَفْسُو اَوْ يَضْرِطُ».
“যে কোনো ব্যক্তিকে সালাতরত বলে ধরে নেওয়া হয় যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে সালাতেরই অপেক্ষায় থাকে। আর ফিরিশতাগণ তার জন্য এ বলে দো‘আ করেন: হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন। যতক্ষণ না সে উক্ত জায়গা থেকে সরে যায় অথবা অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়। বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি বললাম: অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটানো মানে? তিনি বললেন: যেমন, বায়ু ত্যাগ করা”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য আরেকটি বর্ণনায় বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فَإِذَا دَخَلَ الْـمَسْجِدَ كَانَ فِيْ الصَّلاَةِ مَا كَانَتِ الصَّلاَةُ هِيَ تَحْبِسُهُ، وَالْـمَلَائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ يَقُولُونَ : اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ».
“আর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে তখন তাকে সালাতরত বলেই ধরে নেওয়া হয় যখন একমাত্র সালাতই তাকে সেখানে আটকে রাখলো। এমনকি ফিরিশতাগণ তোমাদের কারোর জন্য যতক্ষণ সে সালাত শেষে সালাতের জায়গায় বসে থাকে এ বলে দো‘আ করেন- হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন। হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি এর তাওবা কবুল করুন। যতক্ষণ না সে মানুষ ও ফিরিশতাগণ কষ্ট পায় এবং অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়”।
১২. জামা‘আতের প্রথম সারিতে অথবা যে কোনো সারির ডান দিকে সালাত পড়ায় কিংবা জামা‘আতে একে অপরের সাথে মিলে মিলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোয় অনেকগুলো ফযীলত রয়েছে। যা নিম্নরূপ:
ক. জামা‘আতের প্রথম সারি সম্মানিত ফিরিশতাগণের সারির সাথে তুলনীয়।
উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلَ عَلَى مِثْلِ صَفِّ الْـمَلَائِكَةِ وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فَضِيْلَتُهُ لَابْتَدَرْتُمُوهُ
“সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারি ফিরিশতাগণের সারির ন্যায়। তোমরা যদি জানতে প্রথম সারিতে সালাত আদায়ের কী ফযীলত রয়েছে তাহলে তোমরা খুব দ্রুত সেখানে অবস্থান করতে।
জাবির ইবন সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَلَا تَصُفُّونَ كَمَا تَصُفُّ الْـمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا ؟! فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ : وَكَيْفَ تَصُفُّ الْـمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا ؟ قَالَ : يُتِمُّونَ الصُّفُوفَ الْأُوَلَ وَيَتَرَاصُّونَ فِي الصَّفِّ».
“তোমরা কি সারিবদ্ধ হবে না যেমনিভাবে সারিবদ্ধ হোন ফিরিশতাগণ তাদের প্রভুর নিকটে। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! ফিরিশতাগণ কি ভাবে তাদের প্রভুর নিকট সারিবদ্ধ হোন? তিনি বললেন: তারা প্রথম সারিগুলো পুরো করে নেন এবং সারিতে সোজা হয়ে একে অপরের সাথে লেগে লেগে দাঁড়ান”।
খ. প্রথম সারিতে সালাত পড়ায় এতো বেশি সাওয়াব রয়েছে তা যদি সবাই জানতে পারতো তাহলে তাতে জায়গা পাওয়ার জন্য লটারি দেওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকতো না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لَاسْتَبَقُوا إِلَيْهِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا».
“আযান ও প্রথম সারিতে সালাত পড়ায় এতো বেশি সাওয়াব রয়েছে তা যদি মানুষ জানতে পারতো অতঃপর তা পাওয়ার জন্য লটারি দেওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর না থাকতো তাহলে তারা তা পাওয়ার জন্য অবশ্যই লটারি দেওয়ারই আয়োজন করতো। আর যদি তারা জানতো তড়িঘড়ি সালাত আদায় করতে আসায় কি সাওয়াব রয়েছে তাহলে তারা তা পড়ার জন্য দ্রুত মসজিদের দিকে ছুটে আসতো। আর যদি তারা জানতো ইশা ও ফজরের সালাত জামা‘আতে পড়ায় কি সাওয়াব রয়েছে তাহলে তারা তা পড়ার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে উপস্থিত হতো”।
গ. জামা‘আতের প্রথম সারি সর্বোত্তম সারি।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا».
“পুরুষদের সর্বোত্তম সারি হচ্ছে তাদের সর্বপ্রথম সারি। আর তাদের সর্বনিকৃষ্ট সারি হচ্ছে তাদের সর্বশেষ সারি। তেমনিভাবে মহিলাদের সর্বোত্তম সারি হচ্ছে তাদের সর্বশেষ সারি। আর তাদের সর্বনিকৃষ্ট সারি হচ্ছে তাদের সর্বপ্রথম সারি”।
ঘ. আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট জামা‘আতের প্রথম সারিগুলোতে সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম সারির সালাত পড়ুয়াদের ভাগটুকু একটু বড়ো।
আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصَّفِّ الْأَوَّلِ، قَالُـوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ! وَعَلَى الثَّانِيْ؟ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصَّفِّ الْأَوَّلِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ! وَعَلَى الثَّانِيْ؟ قَالَ: وَعَلَى الثَّانِيْ».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট প্রথম সারিতে সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! দ্বিতীয় সারির সালাত পড়ুয়াদের মর্যাদাও কি একই রকম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট প্রথম সারিতে সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! দ্বিতীয় সারির সালাত পড়ুয়াদের মর্যাদাও কি একই রকম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ। দ্বিতীয় সারির সালাত পড়ুয়াদের মর্যাদাও একই রকম।
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصَّفِّ الْأَوَّلِ أَوْ الصُّفُوفِ الْاُولَى».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট প্রথম সারি কিংবা প্রথম সারিগুলোতে সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন”।
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصُّفُوفِ الْـمُتَقَدِّمَةِ».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট আগের সারিগুলোতে সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন”।
ঙ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামপ্রথম সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তিন তিন বার ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। আর দ্বিতীয় সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য শুধুমাত্র এক বার।
ইরবায ইবন সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عَلَى الصَّفِّ الْأَوَّلِ ثَلَاثًا وَعَلَى الثَّانِي وَاحِدَةً».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তিন তিন বার ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করতেন। আর দ্বিতীয় সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য শুধুমাত্র এক বার”।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَغْفِرُ لِلصَّفِّ الْـمُقَدَّمِ ثَلاَثًا وَلِلثَّانِىْ مَرَّةً».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তিন তিন বার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। আর দ্বিতীয় সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য শুধুমাত্র এক বার”।
চ. আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট জামা‘আতের সারিগুলোতে একে অপরের সাথে মিলে মিলে দাঁড়ানো লোকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الَّذِينَ يَصِلُونَ الصُّفُوفَ وَمَنْ سَدَّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট জামা‘আতের সারিগুলোতে একে অপরের সাথে মিলে মিলে দাঁড়ানো লোকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। আর কেউ সারিগুলোর কোনো খালিস্থান পূরণ করলে আল্লাহ তা‘আলা তার সম্মান আরো বাড়িয়ে দেন”।
ছ. জামা‘আতের সারিগুলোতে একে অপরের সাথে মিলে মিলে দাঁড়ালে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক রক্ষা করবেন। আর দূরে দূরে দাঁড়ালে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক ছিন্ন করবেন।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَمَنْ وَصَلَ صَفًّا وَصَلَهُ اللهُ وَمَنْ قَطَعَ صَفًّا قَطَعَهُ الله».
“জামা‘আতের সারিগুলোতে একে অপরের সাথে মিলে মিলে দাঁড়ালে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক রক্ষা করবেন। আর দূরে দূরে দাঁড়ালে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক ছিন্ন করবেন”।
১৩. কারোর “আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে গেলে আল্লাহ তা‘আলা তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে ভালোবাসবেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْـمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».
“যখন ইমাম সাহেব “আমীন” বলবেন তখন তোমরাও “আমীন” বলবে। কারণ, যার “আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে”।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«إِذَا قَالَ الْإِمَامُ {غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ} فَقُولُوا آمِينَ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْـمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».
“যখন ইমাম সাহেব غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলবেন তখন তোমরা “আমীন” বলবে। কারণ, যার “আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিয়ে তিনি আমাদেরকে সালাত ও সুন্নাত শিক্ষা দিয়েছেন তিনি তাঁর খুৎবায় বলেন:
«إِذَا صَلَّيْتُمْ فَأَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ ثُمَّ لْيَؤُمَّكُمْ أَحَدُكُمْ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّـرُوا وَإِذَا قَالَ : {غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ} فَقُولُوا آمِينَ يُجِبْكُمْ الله».
“যখন তোমরা সালাত আদায় করতে যাবে তখন তোমরা সালাতের সারিগুলো সোজা করে নিবে অতঃপর তোমাদের মধ্যকার যে কোনো একজন ইমামতি করবেন। যখন তিনি “আল্লাহু আকবার” বলবেন তখন তোমরাও “আল্লাহু আকবার” বলবে। আর যখন তিনিغَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলবেন তখন তোমরা “আমীন” বলবে। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।
জামা‘আতে সালাত আদায় করতে যাওয়ার ফযীলত:
জামা‘আতে সালাত আদায় করতে যাওয়া একটি মহান ইবাদাত। যার অনেকগুলো ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যার কিয়দংশ নিম্নরূপ:
১. সর্বদা মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে নামাজ পড়তে ব্যাকুল ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার আর্শের নিচে ছায়া পাবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللهُ تَعَالَى فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ : إِمَامٌ عَدْلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِيْ الـْمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِيْ اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ: إِنِّيْ أَخَافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ».
“সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন আর্শের নিচে ছায়া দিবেন যে দিন আর কোনো ছায়া থাকবে না। প্রথম শ্রেণি হচ্ছে এমন রাষ্ট্রপতি যিনি সর্বদা ইন্সাফের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয় শ্রেণি হচ্ছে এমন যুবক যে ছোট থেকেই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাতের ওপর বেড়ে উঠেছে। তৃতীয় শ্রেণি হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথেই লাগানো। চতুর্থ শ্রেণি হচ্ছে এমন দু’ ব্যক্তি যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালোবেসেছে। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই তারা পরস্পর একত্রিত হয় এবং তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়। পঞ্চম শ্রেণি হচ্ছে এমন পুরুষ যাকে কোনো প্রভাবশালী সুন্দরী মহিলা ব্যভিচারের জন্য ডাকছে অথচ সে বলছেঃ আমি তা করতে পারবো না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় পাচ্ছি। ষষ্ট শ্রেণি হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে এরূপ লুক্কায়িতভাবে সাদাকা করেছে যে, তার বাম হাত জানছে না তার ডান কি সাদাকা করছে। সপ্তম শ্রেণি হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে একাকীভাবে আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করে দু’ চোখের পানি প্রবাহিত করছে”।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«وَرَجُلٌ مُعَلَّقٌ بِالْـمَسْجِدِ إِذَا خَرَجَ مِنْهُ حَتَّى يَعُودَ اِلَيْهِ».
“তৃতীয় শ্রেণি হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথেই লাগানো থাকে যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় যতক্ষণ না সে মসজিদে ফিরে আসে”।
মসজিদের সাথে অন্তর লেগে থাকা মানে মসজিদকে অধিক ভালোবাসা এবং তাতে জামা‘আতে সালাত আদায়ের প্রতি অধিক নিষ্ঠাবান হওয়া। এর মানে দুনিয়ার সকল কাজ বাদ দিয়ে মসজিদে সর্বদা বসে থাকা নয়।
২. জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়া মসজিদগামী ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি, গুনাহ মাফ ও অধিক সাওয়াব লাভের একটি বিশেষ মাধ্যম।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُوْرَ ثُمَّ يَعْمَدُ إِلَى مَسْجِدٍ مِنْ هَذِهِ الـْمَسَاجِدِ إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ يَخْطُوْهَا حَسَنَةً وَيَرْفَعَهُ بِهَا دَرَجَةً، وَيَحُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً».
“যে কেউ সুন্দরভাবে পবিত্রতার্জন করে মসজিদগামী হয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রতি কদমের বদৌলতে একটি করে পুণ্য দিবেন ও একটি করে তার মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং একটি করে তার গুনাহ মুছে দিবেন”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَذلِكَ أنَّ أحَدَكُمْ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الـمَسْجِدَ لاَ يُرِيدُ إلاَّ الصَلاَة لَمْ يَخْطُ خَطْوَةً إلاَّ رَفَعَهُ الله بِهَا دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةً».
“আর তা এ ভাবে যে, তোমাদের কেউ যদি ভালোভাবে অযু করে শুধুমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে তা হলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার প্রতি কদমের বদৌলতে একটি করে মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং একটি করে গুনাহ মুছে দিবেন”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ مَشَى إِلَى بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ لِيَقْضِيَ فَرِيضَةً مِنْ فَرَائِضِ اللَّهِ كَانَتْ خَطْوَتَاهُ إِحْدَاهُمَا تَحُطُّ خَطِيئَةً وَالْاُخْرَى تَرْفَعُ دَرَجَةً».
“যে ব্যক্তি নিজ ঘরে পবিত্রতার্জন করে কোনো ফরয সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে গেলো তার প্রতি দু’ কদমের একটি এক একটি করে তার গুনাহ মুছে দিবে আর অপরটি এক একটি করে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবে”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُوْ اللهُ بِهِ الْـخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ قَالُوْا: بَلَى، يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: إِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْـرَةُ الْـخُطَا إِلَى الـْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ».
“আমি তোমাদেরকে এমন কিছু আমলের সংবাদ দেবো কি? যা সম্পাদন করলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন ও মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। সাহাবীগণ বললেন: হাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! উত্তরে তিনি বললেন: কষ্টের সময় অযুর অঙ্গগুলো ভালভাবে ধৌত করবে, মসজিদের প্রতি অধিক পদক্ষেপণ করবে এবং এক সালাত শেষে অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষায় থাকবে। পরিশেষে তিনি বলেন: এগুলো যেন একটি প্রতিরক্ষা বাহিনীরই কাজ। এগুলো যেন একটি প্রতিরক্ষা বাহিনীরই কাজ”।
৩. জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে গেলে যেমনিভাবে মসজিদগামী ব্যক্তির মসজিদে যাওয়ার প্রতিটি কদম তার আমলনামায় লেখা হবে তেমনিভাবে তার মসজিদ থেকে ঘরে ফেরার প্রতিটি কদমও তার আমলনামায় লেখা হবে।
উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি যার বাড়ি ছিলো মসজিদ থেকে সব চাইতে বেশি দূরে অথচ তার কোনো জামা‘আতের সালাতই কখনো হাত ছাড়া হতো না। তাকে বলা হলো অথবা আমিই তাকে একদা বললাম: তুমি যদি একটি গাধা কিনে নিতে তা হলে রাতের অন্ধকারে এবং দিনের প্রখর তাপে তাতে চড়ে মসজিদে আসতে পারতে। উত্তরে সে বললো: আমি চাই না যে আমার ঘরটি মসজিদের পাশেই হোক। বরং আমি চাই যে, আমার মসজিদে আসা-যাওয়ার প্রতিটি কদম আমার আমলনামায় লিখা হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«قَدْ جَمَعَ اللَّهُ لَكَ ذَلِكَ كُلَّهُ».
“আল্লাহ তা‘আলা তোমার প্রতিটি কদমই তোমার আমলনামায় সংরক্ষণ করেছেন”।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«إِنَّ لَكَ مَا احْتَسَبْتَ».
“তুমি সাওয়াবের আশায় যতগুলো কদম ফেলেছো তার সাওয়াব অবশ্যই পাবে”।
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ أَعْظَمَ النَّاسِ أَجْرًا فِي الصَّلَاةِ أَبْعَدُهُمْ إِلَيْهَا مَمْشًى فَأَبْعَدُهُمْ وَالَّذِي يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ حَتَّى يُصَلِّيَهَا مَعَ الْإِمَامِ أَعْظَمُ أَجْرًا مِنْ الَّذِي يُصَلِّيهَا ثُمَّ يَنَامُ».
“সে ব্যক্তিই জামা‘আতে সালাত আদায়ের সাওয়াব সব চাইতে বেশি পাবে যাকে জামা‘আতের সালাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য সব চাইতে বেশি দূরের পথ পাড়ি দিতে হয়। অতঃপর যাকে আরো দূরের পথ পাড়ি দিতে হয় তার সাওয়াব আরো বেশি। আর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায়ের অপেক্ষায় থাকে তার সাওয়াব অনেক বেশি ওর চাইতে যে ঘরে একাকী সালাত পড়েই ঘুমিয়ে পড়ে”।
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা মসজিদের আশপাশের এলাকাগুলো খালি হয়ে গিয়েছিলো। তখন সালিমাহ গোত্রের লোকেরা মসজিদের পাশেই স্থানান্তরের চিন্তা-ভাবনা করছিলো। উক্ত ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ণগোচর হলে তিনি তাদেরকে বললেন:
«إِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّكُمْ تُرِيدُونَ أَنْ تَنْتَقِلُوا قُرْبَ الْـمَسْجِدِ قَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ أَرَدْنَا ذَلِكَ فَقَالَ يَا بَنِي سَلِمَةَ دِيَارَكُمْ تُكْتَبْ آثَارُكُمْ دِيَارَكُمْ تُكْتَبْ آثَارُكُمْ».
“আমার কাছে খবর এসেছে তোমরা না কি মসজিদের আশপাশেই স্থানান্তর হতে চাচ্ছো? তারা বললো: জি হ্যাঁ। হে আল্লাহর রাসূল আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা তাই চাচ্ছিলাম। তখন তিনি বললেন: হে সালিমাহ গোত্রের লোকেরা! তোমরা নিজ স্থানেই অবস্থান করো। সেখান থেকে কোথাও স্থানান্ততির হয়ো না। তোমাদের প্রতিটি কদমই তোমাদের আমলনামায় লেখা হবে। তোমরা নিজ স্থানেই অবস্থান করো। সেখান থেকে কোথাও স্থানান্তরিত হয়ো না। তোমাদের প্রতিটি কদমই তোমাদের আমলনামায় লেখা হবে”।
৪. ভালোভাবে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে মসজিদগামী ব্যক্তির সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়:
উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَوَضَّأَ لِلصَّلَاةِ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ مَشَى إِلَى الصَّلَاةِ الْـمَكْتُوبَةِ فَصَلَّاهَا مَعَ النَّاسِ أَوْ مَعَ الْـجَمَاعَةِ أَوْ فِي الْـمَسْجِدِ غَفَرَ اللهُ لَهُ ذُنُوبَهُ».
“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গিয়ে মানুষের সাথে অথবা জামা‘আতে অথবা মসজিদে সালাত আদায় করলো আল্লাহ তা‘আলা তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন”।
৫. যে ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে আসা-যাওয়া করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে সকাল ও সন্ধ্যায় এক বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করবেন:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ غَدَا إِلَى الْـمَسْجِدِ أَوْ رَاحَ أَعَدَّ الله لَهُ فِي الْـجَنَّةِ نُزُلًا كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ».
“যে ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সকাল-সন্ধ্যায় মসজিদে আসা-যাওয়া করলো আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে সকাল ও সন্ধ্যা বেলায় এক বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করবেন”।
৬. ভালোভাবে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে জামা‘আত না পেলেও জামা‘আতের সাওয়াব অবশ্যই পাওয়া যাবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوْءَهُ ثُمَّ رَاحَ فَوَجَدَ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا أَعْطَاهُ الله جَلَّ وَعَزَّ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّاهَا وَحَضَرَهَا لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجْرِهِمْ شَيْئًا».
“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে মসজিদে গেলো অতঃপর দেখলো মানুষ সালাত পড়ে ফেলেছে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সালাত পড়ুয়াদের ন্যায় জামা‘আতের সাওয়াব দিয়ে দিবেন। এমনকি তাদের সাওয়াবে একটুও ঘাটতি করা হবে না”।
৭. কেউ নিজ ঘরে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে তাকে সালাতরত বলেই গণ্য করা হবে যতক্ষণ না সে আবার নিজ ঘরে ফিরে আসে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فِيْ بَيْتِهِ ثُمَّ أَتَى الْـمَسْجِدَ كَانَ فِيْ صَلاَةٍ حَتَّى يَرْجِعَ فَلاَ يَقُلْ هَكَذَا : وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ».
“যখন তোমাদের কেউ নিজ ঘরে অযু করে মসজিদের দিকে রওয়ানা করে তখন তাকে সালাতরত বলেই গণ্য করা হয় যতক্ষণ না সে আবার ঘরে ফিরে আসে। সুতরাং সে যেন হাতের আঙ্গুলগুলোকে একটির মধ্যে আরেকটি ঢুকিয়ে না দেয়”।
৮. কেউ নিজ ঘর থেকে পবিত্রতার্জন করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে তাকে একজন ইহরামরত হাজীর সাওয়াব দেওয়া হবে:
আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْحَاجِّ الْـمُحْرِمِ».
“যে ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে পবিত্রতার্জন করে কোনো ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয় তার সাওয়াব হবে একজন ইহ্রামরত হাজীর ন্যায়”।
৯. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে নিজ ঘর থেকে বের হওয়া ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার জিম্মায় থাকেন:
আবু উমামাহ বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثَلَاثَةٌ كُلُّهُمْ ضَامِنٌ عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ رَجُلٌ خَرَجَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللَّهِ حَتَّى يَتَوَفَّاهُ فَيُدْخِلَهُ الْـجَنَّةَ أَوْ يَرُدَّهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ وَغَنِيمَةٍ وَرَجُلٌ رَاحَ إِلَى الْـمَسْجِدِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللَّهِ حَتَّى يَتَوَفَّاهُ فَيُدْخِلَهُ الْـجَنَّةَ أَوْ يَرُدَّهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ وَغَنِيمَةٍ وَرَجُلٌ دَخَلَ بَيْتَهُ بِسَلَامٍ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ».
“তিন জাতীয় ব্যক্তির দায়-দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা সরাসরি নিজ হাতেই নিয়ে থাকেন। তার মধ্যে একজন হচ্ছে যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধের জন্য বের হয় সে আল্লাহ তা‘আলার জিম্মায় থাকে যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয় অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে সাওয়াব ও যুদ্ধলব্ধ মাল সহ ঘরে ফিরিয়ে দেন। আর দ্বিতীয় জন হচ্ছে যে ব্যক্তি (জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) মসজিদের দিকে বের হয় সেও আল্লাহ তা‘আলার জিম্মায় থাকে যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয় অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে সাওয়াব ও লাভ সহ ঘরে ফিরিয়ে দেন। আর তৃতীয় জন হচ্ছে যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে অথবা ফিতনার ভয়ে ঘরের বাইরে না গিয়ে একান্ত নিজ ঘরেই সর্বদা অবস্থান করে ইবাদাতে নিমগ্ন থাকে সেও আল্লাহ তা‘আলার জিম্মায় থাকে”।
১০. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে পায়ে হেঁটে যাওয়ার আমলটুকু দ্রুত লেখা ও আকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকটবর্তী ফিরিশতাগণ পরস্পর প্রতিযোগিতা করে, উহার মর্যাদা ও ফযীলত নিয়ে পরস্পর কথোপকথন করে এবং তা নিয়ে তারা মানুষের সাথে ঈর্ষা করে:
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَتَانِي اللَّيْلَةَ رَبِّيْ تَبَارَكَ وَتَعَالَى فِيْ أَحْسَنِ صُوْرَةٍ، قَالَ: أَحْسَبُهُ قَالَ: فِيْ الْـمَنَامِ، فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ! هَلْ تَدْرِي فِيْـمَ يَخْتَصِـمُ الْـمَلَأُ الْأَعْلَى؟ قَالَ: قُلْتُ: لَا، قَالَ: فَوَضَعَ يَدَهُ بَيْـنَ كَتِفَـيَّ، حَتَّى وَجَدْتُ بَـرْدَهَا بَيْنَ ثَدْيَيَّ أَوْ قَالَ: فِي نَحْــرِيْ، فَعَلِمْتُ مَا فِـيْ السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ قَالَ: يَا مُحَمَّدُ! هَلْ تَدْرِي فِيْمَ يَخْتَصِمُ الْـمَلَأُ الْأَعْلَى؟ قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: فِيْ الْكَفَّارَاتِ، وَالْكَفَّارَاتُ: الْـمُكْثُ فِي الْمَسَاجِدِ بَعْدَ الصَّلَوَاتِ، وَالْـمَشْيُ عَلَى الْأَقْدَامِ إِلَى الْجَمَاعَاتِ، وَإِسْبَاغُ الْوُضُوءِ فِيْ الْـمَكَارِهِ، وَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ عَاشَ بِخَيْرٍ وَمَاتَ بِخَيْرٍ وَكَانَ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَيَوْمَ وَلَدَتْهُ اُمُّهُ».
“আমার রব এক সুন্দর অবয়বে গত রাত্রিতে আমার নিকট আসলেন। বর্ণনাকারী বলেন: আমার ধারণা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তা ছিলো একান্ত স্বপ্ন যোগে। অতঃপর আমার প্রভু বললেন: হে মুহাম্মাদ! তুমি কি জানো? কি নিয়ে আমার নিকটবর্তী সম্মানিত ফিরিশতাগণ প্রতিযোগিতা, আলোচনা ও ঈর্ষা করে। আমি বললাম: না। আমি জানি না। তখন তিনি নিজ হাতখানা আমার দু’ কাঁধের মাঝখানে তথা পিঠে রাখলেন। এমনকি আমি উহার ঠান্ডাটুকু আমার বুকেও অনুভব করলাম। অতঃপর আমি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সব কিছুই জানতে পারলাম। তখন আমার প্রভু বললেন: হে মুহাম্মাদ! তুমি কি জানো? কি নিয়ে আমার নিকটবর্তী সম্মানিত ফিরিশতাগণ প্রতিযোগিতা, আলোচনা ও ঈর্ষা করে। আমি বললাম: হ্যাঁ। আমি এখন তা জানি। বর্ণনাকারী বলেন: তিনি বললেন: কাফ্ফারা তথা ব্যক্তির গুনাহ্গুলো মুছে দেওয়ার বিষয় সমূহ নিয়ে। কাফ্ফারার বিষয়গুলো হলো: ফরয সালাতগুলো শেষ হওয়ার পর মসজিদে কিছুক্ষণ অবস্থান করা, জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং অযুর সময় পানি পৌঁছানো কষ্টকর এমন অঙ্গগুলো ভালোভাবে ধৌত করা। যে ব্যক্তি এ কাজগুলো ভালোভাবে সম্পাদন করলো সে তার জীবদ্দশায় কল্যাণকর জীবন যাপন করবে এবং তার মৃত্যুও হবে কল্যাণকর। তদুপরি সে তার পাপ সমূহ থেকে এমনিভাবে মুক্ত হবে যেন সে আজ নিজ মায়ের গর্ভ থেকে নিষ্পাপ ভূমিষ্ঠ হলো”।
১১. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদগামী হওয়া দুনিয়া ও আখিরাতের সমূহ কল্যাণ প্রাপ্তির এক বিশেষ মাধ্যম।
উপরোক্ত হাদীসটি এর বিশেষ প্রমাণ। যাতে বলা হয়েছে,
«وَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ عَاشَ بِخَيْرٍ وَمَاتَ بِخَيْرٍ».
“যে ব্যক্তি এ কাজগুলো ভালোভাবে সম্পাদন করলো সে তার জীবদ্দশায় কল্যাণকর জীবন যাপন করবে এবং তার মৃত্যুও হবে কল্যাণকর”।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٧ ﴾ [النحل: ٩٧]
“যে কোনো পুরুষ ও নারী ঈমানদার অবস্থায় সৎ কাজ করে তাকে আমি নিশ্চয় পবিত্র ও আনন্দময় জীবন দান করবো এমনকি তাদেরকে দেবো তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ প্রতিদান”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৭]
১২. নিজ ঘরে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আগমনকারীকে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে সম্মানিত করেন:
সালমান ফার্সী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَوَضَّأَ فِيْ بَيْتِهِ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ أَتَى الْـمَسْجِدَ فَهُوَ زَائِرُ اللهِ، وَحَقٌّ عَلَى الْـمَزُوْرِ أَنْ يُكْرِمَ الزَّائِرَ ».
“যে ব্যক্তি নিজ ঘরে ভালোভাবে অযু করে (জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) মসজিদে আসে সে আল্লাহ তা‘আলার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসি। আর যার সাক্ষাৎ কামনা করা হচ্ছে তার দায়িত্ব হবে তার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসির সম্মান করা”।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«الْـمَسَاجِدُ بُيُوتُ اللهِ فِي الأَرْضِ، وَحَقٌّ عَلَى الْمَزُورِ أَنْ يُكْرِمَ زَائِرَهُ».
“মসজিদগুলো পৃথিবীতে আল্লাহর ঘর। আর যার সাক্ষাৎ কামনা করা হচ্ছে তার দায়িত্ব হবে তার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসির সম্মান করা”।
১৩. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে কেউ ভালোভাবে অযু করে মসজিদে গেলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দেখে অত্যন্ত খুশি হোন যেমনিভাবে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে দেখে তার পরিবার খুশি হয়:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَتَوَضَّأُ أَحَدُكُمْ فَيُحْسِنُ وُضُوْءَهُ وَيُسْبِغُهُ ثُمَّ يَأْتِيْ الـْمَسْجِدَ لاَ يُرِيْدُ إِلاَّ الصَّلاَةَ فِيْهِ إِلاَّ تَبَشْبَشَ اللهُ إِلَيْهِ كَمَا يَتَبَشْبَشُ أَهْلُ الْغَائِبِ بِطَلْعَتِهِ».
“কেউ সুন্দরভাবে পরিপূর্ণ অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দেখে অত্যন্ত খুশি হোন যেমনিভাবে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে দেখে তার পরিবার খুশি হয়”।
১৪. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে অন্ধকারে মসজিদের দিকে রওয়ানা করলে কিয়ামতের দিন প্রয়োজনের সময় পরিপূর্ণ আলোর সন্ধান মিলবে:
বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«بَشِّرْ الْـمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْـمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ».
অন্ধকারে মসজিদগামী ব্যক্তিদেরকে কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ আলোর সুসংবাদ দাও”।
জামা‘আতে সালাত আদায় করতে যাওয়ার নিয়ম-কানূন:
জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার অনেকগুলো নিয়মকানুন রয়েছে যা নিম্নরূপ:
১. নিজ ঘর থেকেই ভালোভাবে অযু করে নিবে:
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُوْرَ ثُمَّ يَعْمَدُ إِلَى مَسْجِدٍ مِنْ هَذِهِ الـْمَسَاجِدِ إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ يَخْطُوْهَا حَسَنَةً وَيَرْفَعَهُ بِهَا دَرَجَةً، وَيَحُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً».
“যে কেউ সুন্দরভাবে পবিত্রতার্জন করে মসজিদগামী হয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রতি কদমের বদৌলতে একটি করে পুণ্য দিবেন ও একটি করে তার মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং একটি করে তার গুনাহ মুছে দিবেন”।
২. মসজিদে আসার আগে দুর্গন্ধময় যে কোনো জিনিস খাওয়া বা ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে:
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَكَلَ ثُومًا أَوْ بَصَلًا فَلْيَعْتَزِلْنَا أَوْ لِيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا وَلْيَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ».
“যে ব্যক্তি রসুন অথবা পিয়াজ খেলো সে যেন আমরা কিংবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে। তথা ঘরে বসে থাকে”।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّومَ وَالْكُرَّاثَ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْـمَلَائِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو ادَمَ».
“যে ব্যক্তি পিয়াজ, রসুন ও কুর্রাস (পিয়াজ জাতীয় সমঘ্রাণের এক প্রকার উদ্ভিদ) খেলো সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ, আদম সন্তান যে জিনিসে কষ্ট পায় তাতে ফিরিশতাগণও কষ্ট পান”।
৩. সাধ্য মতো সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ পরেই মসজিদে আসবে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ﴾ [الاعراف: ٣١]
“হে আদম সন্তানরা! তোমরা (জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) যে কোনো মসজিদের নিকটবর্তী হতে চাইলে সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহণ করবে”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْـجَمَالَ».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকেই ভালোবাসেন”।
৪. ঘর থেকে বের হওয়ার দো‘আগুলো পড়ে নিবে এবং শুধুমাত্র সালাতের নিয়্যাতেই ঘর থেকে বের হবে:
ঘর থেকে বের হওয়ার দো‘আগুলো নিম্নরূপ:
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا خَرَجَ الرَّجُلُ مِنْ بَيْتِهِ فَقَالَ بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ قَالَ: يُقَالُ حِينَئِذٍ : هُدِيتَ وَكُفِيتَ وَوُقِيتَ، فَتَتَنَحَّى لَهُ الشَّيَاطِيْنُ فَيَقُولُ لَهُ شَيْطَانٌ اخَرُ : كَيْفَ لَكَ بِرَجُلٍ قَدْ هُدِيَ وَكُفِيَ وَوُقِيَ».
“যখন কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে: بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ যার অর্থ: আল্লাহ তা‘আলার নামে এবং তাঁর ওপর ভরসা করেই ঘর থেকে বের হচ্ছি। কোনো অন্যায় কাজ থেকে বাঁচার শক্তি এবং কোনো পুণ্যময় কাজ করার ক্ষমতা একমাত্র তিনিই দিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তখন (উক্ত দো‘আ পড়ে ঘর থেকে বের হওয়া ব্যক্তিকে) বলা হয়: তুমি হিদায়াতপ্রাপ্ত, তোমার জন্য তা একেবারেই যথেষ্ট ওপরন্তু তুমি একান্ত নিরাপদ। তখন শয়তানগুলো তার কাছ থেকে সরে যায়। আর তখন অন্য শয়তান তাকে বলে: এমন ব্যক্তিকে নিয়ে তোমার আর কিই বা করার আছে যে হিদায়াতপ্রাপ্ত, যার জন্য উক্ত দো‘আই যথেষ্ট এবং যে নিরাপদ”।
উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا خَرَجَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْتِىْ قَطُّ إِلاَّ رَفَعَ طَرْفَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ : اللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ اَوْ يُجْهَلَ عَلَىَّ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আমার ঘর থেকে বেরিয়েছেন তখনই তিনি আকাশের দিকে চোখ উঁচিয়ে বলেছেন: اللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ اَوْ يُجْهَلَ عَلَىَّ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আমি নিশ্চয় আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি পথ ভ্রষ্টতা থেকে কিংবা অন্যকে পথ ভ্রষ্ট করানো থেকে, পদস্খলন থেকে কিংবা অন্যকে পদস্খলন করানো থেকে, যুলুম থেকে কিংবা অন্যের ওপর যুলুম করা থেকে এবং মূর্খতা থেকে কিংবা অন্যের সাথে মূর্খতা প্রদর্শন থেকে”।
একদা আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা তাঁর খালা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী মাইমূনাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে রাত্রি যাপন করেছেন। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘর থেকে সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে বের হওয়ার সময় নিম্নোক্ত দো‘আ পড়তে শুনেছেন:
«اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِيْ قَلْبِيْ نُوْرًا، وَفِيْ لِسَانِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِيْ سَمْعِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِيْ بَصَرِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِيْ نُوْرًا، وَمِنْ أَمَامِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِيْ نُوْرًا، وَمِنْ تَحْتِيْ نُوْرًا، وَعَنْ يَمِينِيْ نُوْرًا، وَعَنْ شِمَالِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِي نَفْسِيْ نُوْرًا، وَأَعْظِمْ لِيْ نُوْرًا، وَعَظِّمْ لِيْ نُـوْرًا، وَاجْعَلْ لِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْنِيْ نُوْرًا، اللَّهُمَّ أَعْطِنِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِيْ عَصَبِيْ نُوْرًا، وَفِيْ لَـحْمِي نُوْرًا، وَفِيْ دَمِي نُوْرًا، وَفِيْ شَعَرِيْ نُوْرًا، وَفِيْ بَشَرِيْ نُوْرًا».
“হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে আলো দিন, আমার জিহবায় আলো দিন, আমার শ্রবণ শক্তিতে আলো দিন, আমার দৃষ্টি শক্তিতে আলো দিন, আমার পেছনে আলো দিন, আমার সামনে আলো দিন, আমার উপরে আলো দিন, আমার নিছে আলো দিন, আমার ডানে আলো দিন, আমার বাঁয়ে আলো দিন, আমার প্রবৃত্তিতে আলো দিন, আমার আলো আরো অনেক বাড়িয়ে দিন, আমার জন্য আলো দিন, আমাকে আলোময় বানিয়ে দিন, আমাকে আলো দিন, আমার স্নায়ুতে আলো দিন, আমার গোস্তে আলো দিন, আমার রক্তে আলো দিন, আমার চুলে আলো দিন, এমনকি আমার শরীরের চামড়ায়ও আলো দিন”।
৫. মসজিদের দিকে যাওয়ার সময় আঙ্গুলগুলোর একটিকে অপরটিতে ঢুকিয়ে দিবে না এমনকি সালাতেও নয়:
কা‘ব ইবন উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ ثُمَّ خَرَجَ عَامِدًا إِلَى الـْمَسْجِدِ فَلَا يُشَبِّكَنَّ بَيْنَ أَصَابِعِهِ فَإِنَّهُ فِيْ صَلَاةٍ».
“তোমাদের কেউ ভালোভাবে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে বেরুলে সে যেন আঙ্গুলগুলোর একটিকে অপরটিতে ঢুকিয়ে না দেয়। কারণ, সে তো তখন যেন সালাতেই রয়েছে”।
৬. ধীরে-সুস্থে মসজিদের দিকে রওয়ানা করবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا سَمِعْتُمْ الْإِقَامَةَ فَامْشُـوْا إِلَـى الصَّلَاةِ وَعَلَيْكُـمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ وَلاَ تُسْرِعُوا فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا».
“যখন তোমরা সালাতের ইক্বামত শুনো তখন তোমরা ধীরে-সুস্থে তথা ভদ্রতার সাথে সালাতের দিকে রওয়ানা করো। তোমরা অতি দ্রুত সালাতের দিকে যেও না। অতঃপর তোমরা যতোটুকু সালাত ইমাম সাহেবের সাথে পাও পড়ে নাও। আর বাকিটুকু পুরা করে নাও”।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«إِذَا أُقِيمَتْ الصَّلَاةُ فَلَا تَأْتُوْهَا تَسْعَوْنَ وَأْتُوْهَا تَمْشُوْنَ وَعَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا».
“যখন সালাতের ইক্বামত দেওয়া হয় তখন তোমরা সালাতের দিকে দৌড়ে এসো না। বরং ধীরে-সুস্থে হেঁটে এসো। অতঃপর ইমাম সাহেবের সাথে যতোটুকু সালাত পাও পড়ে নাও। আর বাকিটুকু পুরা করে নাও”।
৭. মসজিদে ঢুকার আগে নিজের জুতা-জোড়া ভালোভাবে দেখে নিবে এবং তাতে নাপাক দেখলে মাটি দিয়ে ঘষে নিবে:
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْـمَسْجِدِ فَلْيَنْظُرْ فَإِنْ رَأَى فِيْ نَعْلَيْهِ قَذَرًا أَوْ أَذًى فَلْيَمْسَحْهُ وَلْيُصَلِّ فِيهِمَا».
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আসে তখন সে যেন তার জুতা জোড়া ভালোভাবে দেখে নেয়। অতঃপর সে যদি তাতে কোনো নাপাক বা ময়লা দেখতে পায় তা হলে সে যেন তা কোনো কিছু দিয়ে মুছে ফেলে এবং উক্ত জুতা পরেই সালাত পড়ে”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا وَطِئَ أَحَدُكُمْ بِنَعْلَيْهِ الأَذَى فَإِنَّ التُّرَابَ لَهُ طَهُورٌ».
“যখন তোমাদের কেউ নিজ জুতা দিয়ে নাপাক মাড়ায় তখন মাটিই তার জন্য পবিত্রতা”।
৮. মসজিদে ঢুকার সময় ডান পা আগে বাড়িয়ে দিবে এবং নিম্নোক্ত দো‘আগুলো পড়ে নিবে:
«بِسْمِ اللهِ، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ».
আবু হুমাইদ কিংবা আবু উসাইদ সাঈদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الْـمَسْجِدَ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لِيَقُلْ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ فَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ».
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায়। অতঃপর বলে: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহ্মতের দরোজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন বলে: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ কামনা করি”।
ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْـمَسْجِدَ يَقُولُ: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ».
“যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন তিনি বলতেন: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি এবং আল্লাহর রাসূলের ওপর যথাযোগ্য সালাম বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আপনি আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার রহ্মতের সকল দরোজা খুলে দিন”।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন:
«أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ».
“মহান আল্লাহ, তাঁর সম্মানিত সত্তা ও চির ক্ষমতার আশ্রয় চাচ্ছি বিতাড়িত শয়তান থেকে”।
৯. মসজিদে ঢুকে আশপাশের লোকগুলো শুনতে পায় এমন স্বরে তাদেরকে সালাম করবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تَدْخُلُونَ الْـجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ؟ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ».
“তোমরা কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা খাঁটি ঈমানদার হবে। আর কখনো তোমরা খাঁটি ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমাদের মাঝে পরস্পর ভালোবাসা ও সৌহার্দ জন্ম নিবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ শিখিয়ে দেবো না যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে। তোমরা নিজেদের মাঝে সালামের বিপুল বিস্তার ঘটাও”।
আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন:
«ثَلَاثٌ مَنْ جَمَعَهُنَّ فَقَدْ جَمَعَ الْإِيمَانَ : الْإِنْصَافُ مِنْ نَفْسِكَ وَبَذْلُ السَّلَامِ لِلْعَالَمِ وَالْإِنْفَاقُ مِنْ الْإِقْتَارِ ».
“তিনটি জিনিস যার মধ্যে এর সবগুলোই থাকবে সেই হচ্ছে পরিপূর্ণ ঈমানদার। সেগুলো হচ্ছে, নিজের ব্যাপারে ইন্সাফ প্রতিষ্ঠা করা, সবাইকে সালাম দেওয়া এবং নিজের প্রচুর প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ধন-সম্পদ আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করা”।
১০. মসজিদে ঢুকার সময়টি কোনো ফরয সালাতের সময় না হয়ে থাকলে অন্ততপক্ষে দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত পড়ে নিবে: আর তা কোনো ফরয সালাতের সময় হয়ে থাকলে তদুপরি নিজ ঘরে সে সালাতের নিয়মিত সুন্নাতটুকু না পড়ে থাকলে উক্ত সুন্নাতটুকু মসজিদেই পড়ে নিবে। এতে করে মসজিদে ঢুকে দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত আদায়ের দায়িত্বটুকু আদায় হয়ে যাবে। আর সে সালাতের নিয়মিত সুন্নাতটুকু নিজ ঘরে পড়ে থাকলে মসজিদে এসে শুধু দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাতই পড়ে নিবে। এমনকি সে সালাতের আগে কোনো নিয়মিত সুন্নাত না থাকলে কমপক্ষে সে সালাতের আযান ও ইক্বামতের মধ্যকার দু’ রাকাত নফল সালাতই আদায় করে নিবে। এতে করে মসজিদে ঢুকে দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত আদায়ের দায়িত্বটুকুও আদায় হয়ে যাবে।
আবু ক্বাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْـمَسْجِدَ فَلَا يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ».
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন
অন্ততপক্ষে দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত আদায় না করে না বসে”।
১১. মসজিদে ঢুকে পায়ের জুতা জোড়া পা থেকে খুলে ফেললে তা দু’ পায়ের মাঝখানে কিংবা জুতা রাখার নির্দিষ্ট জায়গায় রাখবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَخَلَعَ نَعْلَيْهِ فَلَا يُؤْذِ بِهِمَا أَحَدًا لِيَجْعَلْهُمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَوْ لِيُصَلِّ فِيهِمَا».
“যখন তোমাদের কেউ (মসজিদে) সালাত আদায় করতে এসে নিজ জুতা জোড়া পা থেকে খুলে ফেলে তখন সে যেন তা দিয়ে কাউকে কষ্ট না দেয়। সে যেন জুতা জোড়া নিজ দু’ পায়ের মাঝখানে রাখে অথবা তা পরেই সালাত পড়ে”।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلَا يَضَعْ نَعْلَيْهِ عَنْ يَمِينِهِ، وَلَا عَنْ يَسَارِهِ ؛ فَتَكُونَ عَنْ يَمِينِ غَيْرِهِ ؛ إِلَّا أَنْ لَا يَكُونَ عَنْ يَسَارِهِ أَحَدٌ، وَلْيَضَعْهُمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ».
“যখন তোমাদের কেউ (মসজিদে) সালাত আদায় করতে আসে তখন সে যেন নিজ জুতা জোড়া পা থেকে খুলে নিজের ডানে কিংবা বাঁয়ে না রাখে। কারণ, তা সে ব্যক্তির বাঁ দিক হলেও তা কিন্তু অন্য মুসল্লির ডান দিক। তবে তার বাঁ দিকে কোনো মুসল্লি না থাকলে তা আর অন্য মুসল্লির ডান হচ্ছে না। বরং সে যেন তার জুতা জোড়া নিজ দু’ পায়ের মাঝখানেই রাখে”।
কারোর পায়ে ফিতা বিশিষ্ট কোনো জুতা কিংবা মোজো পরা থাকলে যা পা থেকে খোলা খানিকটা কষ্টকর তা হলে তা পরেই সালাত পড়া সুন্নাত: তবে মসজিদে ঢুকার পূর্বে নিজ জুতা জোড়া ভালোভাবে দেখে নিবে। তাতে কোনো নাপাক বা ময়লা দেখলে তা অতি সত্বর ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবে। যাতে করে মসজিদের কার্পেট, পাটি ইত্যাদি নষ্ট না হয়। অতঃপর তা পরেই সালাত পড়বে।
শাদ্দাদ ইবন আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَالِفُوا الْيَهُودَ ؛ فَإِنَّهُمْ لَا يُصَلُّونَ فِي نِعَالِهِمْ، وَلَا خِفَافِهِمْ».
“তোমরা ইয়াহূদীদের বিরোধিতা করো। তথা জুতা কিংবা মোজা পরেই সালাত পড়ো। কারণ, ইয়াহূদীরা জুতা কিংবা মোজা পরে কখনো সালাত পড়ে না”।
১২. সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারিতে বিশেষ করে ইমাম সাহেবের ডান দিকে বসার যারপরনাই চেষ্টা করবে। তবে এতে করে কোনো মুসলিমকে সামান্যটুকুও কষ্ট দিবে না:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِيْ النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا».
“আযান ও প্রথম সারিতে সালাত পড়ায় এতো বেশি সাওয়াব রয়েছে তা যদি মানুষ জানতে পারতো অতঃপর তা পাওয়ার জন্য লটারি দেওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর না থাকতো তা হলে তারা তা পাওয়ার জন্য অবশ্যই লটারি দেওয়ারই আয়োজন করতো”।
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْبَبْنَا أَنْ نَكُونَ عَنْ يَمِينِهِ، يُقْبِلُ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ قَالَ: فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ أَوْ تَجْمَعُ عِبَادَكَ».
“আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে সালাত পড়তাম তখন আমরা তাঁর ডান দিকে দাঁড়ানো পছন্দ করতাম। তিনি সালাত শেষে আমাদের দিকে ফিরে বসতেন। আমি একদা তাঁর মুখ থেকে শুনতে পেলাম তিনি বলছেন: رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ أَوْ تَجْمَعُ عِبَادَكَ যার অর্থ: হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে কিয়ামতের দিনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। যে দিন আপনি আপনার সকল বান্দাহ্কে পুনরুত্থিত তথা কিয়ামতের মাঠে একত্রিত করবেন”।
১৩. ক্বিব্লামুখী হয়ে বসে কুর’আন মাজীদ তিলাওয়াত কিংবা যিকির-আয্কার করবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ سَيِّداً وَإِنَّ سَيِّدَ الْـمَجَالِسِ قُبَالَةَ الْقِبْلَةِ».
“প্রত্যেক জিনিসেরই একটি উত্তম বা শ্রেষ্ঠ দিক রয়েছে। অতএব, বৈঠকের মধ্যে উত্তম বা শ্রেষ্ঠ বৈঠক হচ্ছে ক্বিব্লামুখী বৈঠক”।
১৪. ইমাম সাহেব আসা পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষার নিয়্যাতেই বসে থাকবে। এমন সময় দীর্ঘক্ষণ অযু রাখারই চেষ্টা করবে:
কারণ, জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষমান থাকলে ততক্ষণ নফল সালাত আদায়েরই সাওয়াব পাওয়া যায়। এমনকি সালাতের পূর্বে কিংবা পরে সালাতের জায়গায় বসে থাকলে ফিরিশতাগণের দো‘আও পাওয়া যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا يَزَالُ الْعَبْدُ فِي صَلَاةٍ مَا كَانَ فِي مُصَلَّاهُ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ وَتَقُولُ الْـمَلَائِكَةُ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ حَتَّى يَنْصَرِفَ أَوْ يُحْدِثَ قُلْتُ: مَا يُحْدِثُ ؟ قَالَ: يَفْسُو اَوْ يَضْرِطُ».
“যে কোনো ব্যক্তিকে সালাতরত বলে ধরে নেওয়া হয় যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে সালাতেরই অপেক্ষায় থাকে। আর ফিরিশতাগণ তার জন্য এ বলে দো‘আ করেন: হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন। যতক্ষণ না সে উক্ত জায়গা থেকে সরে যায় অথবা অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়। বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি বললামঃ অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটানো মানে? তিনি বললেন: যেমন, বায়ু ত্যাগ করা”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য আরেকটি বর্ণনায় বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فَإِذَا دَخَلَ الـْمَسْجِدَ كَانَ فِيْ الصَّلاَةِ مَا كَانَتِ الصَّلاَةُ هِيَ تَحْبِسُهُ، وَالْـمَلَائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ يَقُولُونَ : اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ».
“আর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে তখন তাকে সালাতরত বলেই ধরে নেওয়া হয় যখন একমাত্র সালাতই তাকে সেখানে আটকে রাখলো। এমনকি ফিরিশতাগণ তোমাদের কারোর জন্য যতক্ষণ সে সালাত শেষে সালাতের জায়গায় বসে থাকে এ বলে দো‘আ করেন: হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন। হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি এর তাওবা কবুল করুন। যতক্ষণ না সে মানুষ ও ফিরিশতাগণ কষ্ট পায় এবং অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়”।
১৫. কোনো ফরয সালাতের ইক্বামত দেওয়া হলে তখন শুধু উক্ত ফরয সালাতই আদায় করতে হবে। অন্য কোনো সুন্নাত বা নফল সালাত নয়:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْـمَكْتُوبَةُ».
“যখন কোনো ফরয সালাতের ইক্বামত দেওয়া হয় তখন উক্ত ফরয সালাত ছাড়া অন্য কোনো সালাত পড়া যাবে না”।
আব্দুল্লাহ ইবন সারজিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত পড়ছিলেন। লোকটি মসজিদে ঢুকেই তার এক পার্শ্বে গিয়ে দু’ রাকাত সালাত আদায় করে অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জামা‘আতে শরীক হলো। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরালেন তখন তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«يَا فُلَانُ بِأَيِّ الصَّلَاتَيْنِ اعْتَدَدْتَ؟ أَبِصَلَاتِكَ وَحْدَكَ أَمْ بِصَلَاتِكَ مَعَنَا».
“হে অমুক! তুমি কোনো সালাতটিকে ফজরের সালাত বলে গণ্য করলে? তোমার একা পড়া দু’ রাকাত না কি আমাদের সাথে পড়া দু’ রাকাত”?
১৬. মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে বাড়িয়ে দিবে অথচ ঠিক এরই বিপরীতে মসজিদে ঢুকার সময় ডান পাই আগে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ التَّيَمُّنَ مَا اسْتَطَاعَ فِي شَاْنِهِ كُلِّهِ : فِي طُهُورِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَتَنَعُّلِهِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাসাধ্য প্রতিটি কাজ ডান দিক থেকে শুরু করাই পছন্দ করতেন। পবিত্রতার্জন, মাথা আঁছড়ানো এমনকি জুতা পরায়ও”।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مِنَ السُّنَّةِ إِذَا دَخَلْتَ الْـمَسْجِدَ أَنْ تَبْدَأَ بِرِجْلِكَ الْيُمْنَى، وَإِذَا خَرَجْتَ أَنْ تَبْدَأَ بِرِجْلِكَ الْيُسْرَى».
“সুন্নাত হচ্ছে, যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে তখন ডান পা আগে বাড়িয়ে দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখন বাম পা আগে বাড়িয়ে দিয়ে বের হবে”।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করবে:
«بِسْمِ اللهِ، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ، اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ ... اللَّهُمَّ اعْصِمْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ».
«بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ».
আবু হুমাইদ্ কিংবা আবু উসাইদ্ সা’ঈদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الـْمَسْجِدَ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لِيَقُلْ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ فَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ».
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন প্রথমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায়। অতঃপর বলে: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহ্মতের দরোজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন বলে: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ কামনা করি”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الْـمَسْجِدَ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَإِذَا خَرَجَ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ اعْصِمْنِيْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ».
“তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন প্রথমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায় অতঃপর বলে: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরোজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন প্রথমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায় অতঃপর বলে: اللَّهُمَّ اعْصِمْنِيْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষা করুন”।
ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْـمَسْجِدَ يَقُولُ: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ».
“যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন তিনি বলতেন: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি এবং আল্লাহর রাসূলের ওপর যথাযোগ্য সালাম বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আপনি আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের সকল দরোজা খুলে দিন”।
জামা‘আত সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল:
সর্বনিম্ন শুধু দু’ জন দিয়েই জামা‘আত সংঘটিত হয়। একজন ইমাম ও একজন মুক্তাদি। চাই উক্ত মুক্তাদি কোনো নাবালক ছেলেই হোক অথবা কোনো মাহ্রাম মহিলা:
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بِتُّ عِنْدَ خَالَتِيْ مَيْمُونَةَ بِنْتِ الـْحَارِثِ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهَا فِي لَيْلَتِهَا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيْ مِنْ اللَّيْلِ فَقُمْتُ أُصَلِّي مَعَهُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِرَأْسِيْ فَأَقَامَنِيْ عَنْ يَمِينِهِ».
“আমি একদা আমার খালা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হযরত মাইমূনা বিনতে আল-হারিস-এর নিকট রাত্রি যাপন করেছি। সে রাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরেই ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রি বেলায় সালাত আদায় করতে উঠলে আমিও তাঁর সাথে সালাত আদায়ের জন্য উঠলাম। অতঃপর আমি তাঁর বাঁয়েই দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে আমার মাথা ধরে তাঁর ডানেই দাঁড় করিয়ে দিলেন”।
মালিক ইবন হুওয়াইরিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَتَى رَجُلَانِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرِيدَانِ السَّفَرَ، فَقَالَ النَّبِـيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَنْتُمَا خَرَجْتُمَا، فَأَذِّنَا، ثُمَّ أَقِيمَا، ثُمَّ لِيَؤُمَّكُمَا أَكْبَرُكُمَا».
“একদা দু’ ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সফরের মানসিকতা নিয়েই দেখা করতে আসলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: যখন তোমরা সফরের উদ্দেশ্যে বের হবে তখন তোমরা (জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য) আযান-ইক্বামত দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যিনি বয়স্ক তিনিই তোমাদের ইমামতি করবেন”।
প্রয়োজনবশতঃ একজন পুরুষ ও একজন মহিলা নিয়ে যে কোনো সালাতের জামা‘আত সংঘটিত হয়:
আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا اسْتَيْقَظَ الرَّجُلُ مِنْ اللَّيْلِ وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلَّيَا رَكْعَتَيْنِ كُتِبَا مِنْ الذَّاكِرِينَ اللهُ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ».
“যখন কোনো পুরুষ রাত্রি বেলায় জাগে এবং নিজ স্ত্রীকেও জাগায় অতঃপর উভয়ে দু’ রাকাত সালাত পড়ে তখন তাদের উভয়কে আল্লাহর অত্যধিক যিকিরকারী পুরুষ ও অত্যধিক যিকিরকারিণী মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়”।
মূলতঃ দু’ জন পুরুষে যেমন জামা‘আত হয় তেমনিভাবে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা নিয়েও জামা‘আত হবে। এটিই হচ্ছে একটি মৌলিক বিধান। আর এর বিপরীত কোনো প্রমাণ নেই। যে ব্যক্তি তা নিষেধ করবে তাকে অবশ্যই এর বিপরীত প্রমাণ দিতে হবে। তবে মহিলাটি উক্ত পুরুষের কোনো মাহরম মহিলা না হলে একান্তে তাদের উভয়ের জামা‘আত শুদ্ধ হবে না।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! امْرَأَتِيْ خَرَجَتْ حَاجَّةً، وَاكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا، قَالَ: ارْجِعْ فَحُجَّ مَعَ امْرَاَتِكَ».
“কোনো পুরুষ কোনো বেগানা মহিলার সাথে কখনো একান্তে অবস্থান করবে না। তবে কোনো মাহরাম মহিলাকে নিয়ে একান্তে অবস্থান করা যায়। জনৈক ব্যক্তি তখন দাঁড়িয়ে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী তো একাকী হজ করতে বেরিয়েছে অথচ আমার নামটুকু অমুক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য লেখা হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: তুমি চলে যাও। তোমার স্ত্রীর সাথে হজ করো”।
একজন নাবালক ছেলে যেমন ফরয বা নফল সালাতের ইমাম হতে পারে তেমনিভাবে তাকে নিয়ে জামা‘আতের একটি সারিও হতে পারে:
আমর ইবন সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমার পিতা বলেন:
«جِئْتُكُمْ وَاللَّهِ مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَقًّا فَقَالَ: صَلُّوا صَلَاةَ كَذَا فِيْ حِينِ كَذَا وَصَلُّوا صَلَاةَ كَذَا فِيْ حِينِ كَذَا فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا، فَنَظَرُوْا فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَكْثَرَ قُرْآنًا مِنِّيْ، لِمَا كُنْتُ أَتَلَقَّى مِنَ الرُّكْبَانِ فَقَدَّمُوْنِيْ بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ، وَأَنَا ابْنُ سِتٍّ أَوْ سَبْعِ سِنِينَ، وَكَانَتْ عَلَيَّ بُرْدَةٌ كُنْتُ إِذَا سَجَدْتُ تَقَلَّصَتْ عَنِّي فَقَالَتْ امْرَأَةٌ مِنَ الْحَيِّ أَلَا تُغَطُّوا عَنَّا اسْتَ قَارِئِكُمْ فَاشْتَرَوْا فَقَطَعُوْا لِيْ قَمِيصًا فَمَا فَرِحْتُ بِشَيْءٍ فَرَحِيْ بِذَلِكَ الْقَمِيصِ».
“আল্লাহর কসম! আমি সত্যিই তোমাদের নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এসেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন: তোমরা এ সালাত এ সময়ে পড়বে এবং ও সালাত ও সময়ে পড়বে। যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের কোনো একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে কুর’আন বেশি জানে সে ইমামতি করবে। যখন তারা গোত্রের সবার ওপর চোখ বুলিয়ে দেখলো তখন তারা আমার চেয়ে বেশি কুরআন জানে এমন কাউকে খুঁজে পায় নি। কারণ, আমি তো ইতোমধ্যেই পথচারী আরোহীদের থেকে অনেক কিছুই শিখে ফেলেছি। তখন তারা আমাকে ইমামতির জন্য সামনে বাড়িয়ে দিলো। আমার বয়স ছিলো তখন ছয় বা সাত বছর। আমার গায়ে ছিলো তখন একটি চাদর। আমি যখন সাজদায় যেতাম তখন আমার চাদর খানা একটু উপরে চলে আসতো। তখন পাড়ার এক মহিলা বললো: তোমরা কি তোমাদের ইমাম সাহেবের পাছা খানা ঢেকে দিবে না। তখন তারা কাপড় কিনে আমাকে একটি জামা সেলাই করে দিলো। তাতে আমি এতো বেশি খুশি হলাম যা ইতোপূর্বে আর কখনো হই নি”।
উক্ত মজার ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায়ই ঘটেছিলো। তিনি অবশ্যই তা জেনেছেন ও সমর্থন করেছেন। তা না হলে আল্লাহ তা‘আলা তো তা অবশ্যই জানতেন। যদি তা সঠিকই না হতো তাহলে তিনি অবশ্যই তা ওহী মারফত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানিয়ে দিতেন। কারণ, তখন তো ছিলো বিধান নাযিল হওয়ার যুগ। আর কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কিরাম দীর্ঘ সময় একটি ভুলের ওপর থাকবেন অথচ আল্লাহ তা‘আলা তা দেখেও নীরব থাকবেন তা কখনোই হতে পারে না।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَمَا هُوَ إِلَّا أَنَا وَأُمِّيْ وَأُمُّ حَرَامٍ خَالَتِيْ فَقَالَ: قُومُوا فَلِأُصَلِّيَ بِكُمْ - فِي غَيْرِ وَقْتِ صَلَاةٍ - فَصَلَّى بِنَا، فَقَالَ رَجُلٌ لِثَابِتٍ: أَيْنَ جَعَلَ أَنَسًا مِنْهُ؟ قَالَ: جَعَلَهُ عَلَى يَمِينِهِ، ثُمَّ دَعَا لَنَا أَهْلَ الْبَيْتِ بِكُلِّ خَيْرٍ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِــرَةِ، فَقَالَتْ أُمِّيْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! خُوَيْدِمُكَ ادْعُ اللَّهَ لَهُ، قَالَ: فَدَعَا لِي بِكُلِّ خَيْرٍ، وَكَانَ فِيْ آخِـرِ مَا دَعَا لِيْ بِهِ أَنْ قَالَ: اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيهِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএকদা আমাদের ঘরে আসলেন। তখন আমাদের ঘরে ছিলাম আমি, আমার আম্মা ও আমার খালা উম্মু হারাম। তখন তিনি বললেন: তোমরা দাঁড়িয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়বো। তখন কোনো ফরয সালাতের সময় ছিলো না। অতঃপর তিনি আমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়লেন। জনৈক ব্যক্তি বর্ণনাকারী হযরত সাবিত রহ. কে জিজ্ঞাসা করলো: আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো পার্শ্বে ছিলেন? তিনি বলেন: তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান পার্শ্বে ছিলেন। অতঃপর তিনি আমাদের ঘরের সকলের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের সমূহ কল্যাণের দো‘আ করলেন। আমার আম্মু বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার ছোট খাদেমটির জন্য বিশেষভাবে দো‘আ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য সমূহ কল্যাণের দো‘আ করলেন। তিনি আমার জন্য সর্ব শেষ যে দো‘আটি করলেন তা হলো: হে আল্লাহ! আপনি এর সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দিন এবং সেগুলোর মধ্যে বরকত দিন”
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:
«أَنَّ جَدَّتَهُ مُلَيْكَةَ دَعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِطَعَامٍ صَنَعَتْهُ فَأَكَلَ مِنْهُ ثُمَّ قَالَ: قُومُوا فَأُصَلِّيَ لَكُمْ قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ: فَقُمْتُ إِلَى حَصِيرٍ لَنَا قَدْ اسْوَدَّ مِنْ طُولِ مَا لُبِسَ فَنَضَحْتُهُ بِمَاءٍ فَقَامَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَفَفْتُ أَنَا وَالْيَتِيمُ وَرَاءَهُ وَالْعَجُوزُ مِنْ وَرَائِنَا فَصَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ انْصَرَفَ».
“একদা তার দাদী মুলাইকাহ রাদিয়াল্লাহ আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কিছু খানা বানিয়ে তা খাওয়ার জন্য তাঁকে দাওয়াত করলেন। তখন তিনি এসে তা খেলেন অতঃপর বললেন: তোমরা দাঁড়িয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়বো। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি একটি পুরাণ পাটির উপর যা দীর্ঘ দিন থাকতে থাকতে কালো হয়ে গিয়েছিলো তার ওপর পানি ছিঁটিয়ে দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর দাঁড়ালেন এবং আমি ও একজন এতিম তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। আর আমার দাদী আমাদের পেছনে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদেরকে নিয়ে দু’ রাকাত সালাত পড়লেন। অতঃপর চলে গেলেন”।
কেউ কোনো সালাতের একটি রাকাত জামা‘আতের সাথে পেলেই সে পুরো জামা‘আত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে রুকু’ পেলেই কোনো রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। নতুবা নয়:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنْ الصَّلَاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ».
“যে ব্যক্তি কোনো সালাতের একটি রাকাত (ইমামের সাথে) পেলো সে যেন পুরো সালাতই ইমামের সাথে পেলো”।
আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকু অবস্থায় পেলে তিনি তখন সালাতের সারিতে না পৌঁছেই সারির পেছনেই রুকু’ করে ফেললেন। ব্যাপারটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলে তিনি তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«زَادَكَ اللهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ».
“আল্লাহ তা‘আলা তোমার সালাতের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এ কাজ তুমি আর কখনো করবে না। তথা সারিতে না পৌঁছেই সারির পেছনে কখনো দ্রুত রুকু’ করবে না”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ وَنَحْنُ سُجُوْدٌ فَاسْجُدُوْا وَلَا تَعُدُّوْهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ».
“যখন তোমরা আমাদেরকে সালাতের সেজ্দাহ্রত অবস্থায় পাও তখন তোমরাও সাজদাহ করো। তবে উহাকে রাকাত হিসেবে ধরবে না। আর যে ব্যক্তি রুকু’ তথা রাকাত পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেলো”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلاَةِ فَقَدْ أَدْرَكَهَا قَبْلَ أَنْ يُقِيمَ الإِمَامُ صُلْبَهُ».
“যে ব্যক্তি ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে নিজ পিঠ উঠানোর আগেই তাঁর সাথে রুকু’ পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেলো”।
তবে কোনো ব্যক্তি ওযরবশতঃ সালাতে হাজির হতে দেরি করে ফেললে এবং সে মসজিদে এসে সালাতের রুকু না পেয়ে তার কোনো একটি অংশ পেলে অথচ সে সর্বদা সালাতের পাবন্দ তবুও সে জামা‘আত পেলো না বলে ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু তাকে নিয়্যাত ভালো ও ওযর থাকার দরুন জামা‘আতের সাওয়াব দেওয়া হবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوْءَهُ ثُمَّ رَاحَ فَوَجَدَ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا أَعْطَاهُ اللهُ جَلَّ وَعَزَّ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّاهَا وَحَضَرَهَا لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجْرِهِمْ شَيْئًا».
“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে মসজিদে গেলো অতঃপর দেখলো মানুষ সালাত পড়ে ফেলেছে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সালাত পড়ুয়াদের ন্যায় জামা‘আতের সাওয়াব দিয়ে দিবেন। এমনকি তাদের সাওয়াবে একটুও ঘাটতি করা হবে না”।
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا».
“যখন কোনো বান্দা রোগাক্রান্ত অথবা সফররত অবস্থায় থাকে তখন তার জন্য তার আমলনামায় মুক্বীম (নিজ এলাকা অথবা তেমন কোনো এলাকায় ইক্বামতের নিয়্যাতে অবস্থানরত অবস্থা) ও সুস্থ অবস্থার আমলের ন্যায় আমল লেখা হবে”।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তিনি বললেন:
«إِنَّ أَقْوَامًا بِالـْمَدِينَةِ خَلْفَنَا مَا سَلَكْنَا شِعْبًا وَلَا وَادِيًا إِلَّا وَهُمْ مَعَنَا فِيهِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ».
“কিছু সংখ্যক লোক এমন রয়েছে যাদেরকে আমরা মদিনায় রেখে এসেছি অথচ আমরা যে কোনো গিরি পথ ও উপত্যকায় গিয়েছিলাম তারা সেখানে আমাদের সাথেই ছিলো। তাদেরকে মদিনায় একমাত্র ওযরই আটকে রেখেছে”।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«إِنَّ بِالْـمَدِينَةِ أَقْوَامًا مَا سِرْتُمْ مَسِيرًا، وَلَا قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلَّا كَانُوا مَعَكُمْ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ! وَهُمْ بِالـْمَدِينَةِ؟ قَالَ: وَهُمْ بِالـْمَدِينَةِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ».
“মদিনায় এমন কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে; তোমরা যে পথ বা উপত্যকাই অতিক্রম করেছো তারা তোমাদের সাথেই ছিলো। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! তারা তো বস্তুতঃ মদিনায় রয়েছে অথচ তারা আমাদের সাথে থাকলো কি ভাবে? তিনি বললেন: তারা সত্যিই মদিনায়। একমাত্র ওযরই তাদেরকে সেখানে আটকে রেখেছে। তবে তারা মানসিকভাবে তথা আগ্রহ ও উৎসাহের দিক দিয়ে তোমাদের সাথেই রয়েছে”।
উক্ত হাদীসগুলো থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, কেউ কোনো শর’য়ী ওযরের কারণে কোনো সৎকর্ম করতে না পারলে তাকে উক্ত কর্ম সম্পাদনের সমপরিমাণই সাওয়াব দেওয়া হয়।
কেউ ইমাম সাহেবের সাথে প্রথম জামা‘আতে সালাত আদায় করতে না পারলে তার জন্য উক্ত মসজিদেই দ্বিতীয় জামা‘আত করা বৈধ:
একই মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত করার কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে যা নিম্নরূপ:
১. একই মসজিদে নিয়মিত দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। তথা প্রতি বেলায় কোনো মসজিদে দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। এমনটি করা বিদ‘আত।
২. কখনো কখনো কোনো মসজিদে দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। যা নিয়মিত নয়। তথা নিয়মিত ইমাম একটি জামা‘আত সম্পন্ন করে গেছেন। এ দিকে দু’ বা ততোধিক ব্যক্তি কোনো ওযরবশতঃ উক্ত জামা‘আতে হাজির হতে পারেনি। তখন তারা কি উক্ত মসজিদেই দ্বিতীয় জামা‘আত করতে পারবে? না কি নয়। তা নিয়েই আমাদের উক্ত আলোচনা।
কেউ কেউ বলেন: উক্ত মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত আর করা যাবে না। বরং তারা একাকী সালাত আদায় করবে। আর কেউ কেউ বলেন: তাদের জন্য দ্বিতীয় জামা‘আত করা জায়িয ও মুস্তাহাব। এটিই সঠিক মত। যা নিম্নে প্রমাণ সহ বর্ণিত হবে। ইনশাআল্লাহ।
৩. কোনো রাস্তা-ঘাটের মসজিদ। যেখানে কোনো নিয়মিত ইমাম নেই। সেখানে প্রতি বেলায় দু’ বা ততোধিক লোক ঢুকছে। আর সালাত পড়ে চলে যাচ্ছে। আবার দু’ বা ততোধিক লোক ঢুকছে। আর সালাত পড়ে চলে যাচ্ছে। এ জাতীয় মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত একেবারেই বৈধ। তাতে কোনো দ্বিমত নেই।
নিম্নে একই মসজিদে অনিয়মিত দ্বিতীয় জামা‘আত বৈধ হওয়ার প্রমাণ উল্লিখিত হয়েছে। যা উপরে বর্ণিত দ্বিতীয় পদ্ধতি।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে জোহরের সালাত আদায় করলেন। ইতিমধ্যে জনৈক সাহাবী মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি আমাদের সাথে জামা‘আতে উপস্থিত হলে না কেন? তখন তিনি কোনো একটি ওযর দেখিয়ে একাকী সালাত আদায় করতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلَى هَذَا فَيُصَلِّيَ مَعَهُ؟».
“এমন কি কেউ আছে যে এর ওপর সাদাকা করবে তথা এর সাথে সালাত পড়বে”?
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«أَيُّكُمْ يَتَّجِرُ عَلَى هَذَا؟ فَقَامَ رَجُلٌ فَصَلَّى مَعَهُ».
“এমন কি কেউ আছে যে এর সাথে ব্যবসা করবে তথা এর সাথে সালাত পড়বে? তখন জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার সাথে সালাত পড়লো”।
ইমাম শাওকানী রহ. বলেন: যিনি তাঁর সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ালেন তিনি ছিলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু।
উক্ত হাদীস থেকে দু’টি জিনিস সুস্পষ্ট। যার একটি হচ্ছে, কাউকে কখনো একাকীভাবে ওয়াক্তিয়া তথা তখনকার ফরয সালাত আদায় করতে দেখলে উক্ত ফরয সালাত কিংবা নফল সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তার সাথে যে কেউ দাঁড়াতে পারে। যদিও সে ইতোপূর্বে নিয়মিত জামা‘আতের সাথে উক্ত ফরয সালাত আদায় করে থাকে। তেমনিভাবে হাদীসটি একই মসজিদে অনিয়মিত দ্বিতীয় জামা‘আত জায়েয হওয়া প্রমাণ করে। জামা‘আতের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলোও দূর থেকে এর সমর্থন করে। কেউ যদি বলে, জামা‘আতের ফযীলতগুলো শুধু প্রথম জামা‘আতের সাথেই সীমাবদ্ধ তাহলে তাকে এ সংক্রান্ত অন্তত একটি বিশেষ প্রমাণ হলেও উল্লেখ করতে হবে।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা কিছু সংখ্যক লোককে সাথে নিয়ে একবার জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন মসজিদে আযান ও ইক্বামত দিয়ে দ্বিতীয় জামা‘আত আদায় করেন।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আলকামা, মাসরূক, আসওয়াদ, হাসান, ক্বাতাদাহ ও আত্বা রহ. তার এক বর্ণনায় উক্ত মত পোষণ করেন।
এদিকে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تُصَلُّوا صَلَاةً فِي يَوْمٍ مَرَّتَيْنِ».
“একই দিনে একই সালাত দু’ বার পড়া যাবে না”।
তা থেকে উদ্দেশ্য একই দিনে একই ফরয সালাত ফরযের নিয়্যাতে দু’ বার পড়া। একই ফরয সালাত দ্বিতীয়বার নফলের নিয়্যাতে পড়া কখনো এর বিরোধী নয়।
একবার কোনো ফরয সালাত একাকী আদায় করলে তা দ্বিতীয় বার জামা‘আতের সাথে নফলের নিয়্যাতে আদায় করা যায়:
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
«كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كَانَتْ عَلَيْكَ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا أَوْ يُمِيتُوْنَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا؟ قَالَ: قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِيْ؟ قَالَ: صَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ نَافِلَةٌ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَلاَ تَقُلْ: إِنِّيْ قَدْ صَلَّيْتُ فَلاَ اُصَلِّيْ».
“তুমি তখন কি করবে? যখন তোমার ওপর এমন সকল আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে। যারা সময় মতো সালাত না পড়ে সালাতকে সত্যিকারার্থে নির্জীব করে দিবে। তিনি বলেন: তখন আমি বললাম: আপনি তখন আমাকে কি করার নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বলেন: তুমি সময় মতো নিজের সালাতটুকু পড়ে নিবে। অতঃপর তুমি আবার তাদেরকে উক্ত সালাত জামা‘আতে পড়তে দেখলে তা দ্বিতীয়বার পড়ে নিবে যা তোমার জন্য নফল হিসেবেই বিবেচিত হবে। তুমি কখনো এমন বলবে না যে, আমি তো উক্ত সালাত একবার পড়ে ফেলেছি। তাই আর পড়বো না”।
ইয়াযীদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজ করতে গিয়েছিলাম। তখন আমি তাঁর সাথে মাস্জিদুল-খাইফে ফজরের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে যখন তিনি মানুষের দিকে ফিরলেন তখন তিনি দু’ জন ব্যক্তিকে সবার পেছনে মসজিদের এক কোনায় সালাত না পড়ে বসে থাকতে দেখলেন। তখন তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন: এদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসো। অতঃপর তাদেরকে ভয়ার্তাবস্থায় তাঁর কাছে নিয়ে আসা হলে তিনি তাদেরকে বললেন: তোমরা আমাদের সাথে সালাত পড়লে না কেন? তারা বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো ইতোপূর্বে নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে এসেছি। তখন তিনি বললেন:
«فَلَا تَفْعَلَا؛ إِذَا صَلَّيْتُمَا فِي رِحَالِكُمَا، ثُمَّ أَتَيْتُمَا مَسْجِدَ جَمَاعَةٍ، فَصَلِّيَا مَعَهُمْ ؛ فَإِنَّهَا لَكُمَا نَافِلَةٌ».
“তোমরা কখনো আর এমন করো না। তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে থাকলে অতঃপর মসজিদে আসলে সবার সাথে আবার মসজিদে সালাত পড়বে। যা তোমাদের জন্য নফল হবে”।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«لَا تَفْعَلُوا، إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فِي رَحْلِهِ، ثُمَّ أَدْرَكَ الْإِمَامَ وَلَمْ يُصَلِّ، فَلْيُصَلِّ مَعَهُ؛ فَإِنَّهَا لَهُ نَافِلَةٌ».
“তোমরা কখনো আর এমন করো না। তোমাদের কেউ নিজ ঘরে সালাত পড়ে থাকলে অতঃপর (মসজিদে এসে) আবারো ইমাম সাহেবকে উক্ত সালাত না পড়াবস্থায় পেলে সে যেন তার সাথে আবার সালাতটুকু পড়ে নেয়। যা তার জন্য নফল হবে”।
মিহজান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। আর ইতিমধ্যে সালাতের আযান হয়ে গেলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে উঠে গিয়ে সালাত পড়ে আবার ফিরে আসলেন অথচ আমি সেখানেই বসে ছিলাম। তাঁর সাথে আমি সালাত আদায় করতে যাই নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ أَلَسْتَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ؟ قَالَ: بَلَى، وَلَكِنِّي كُنْتُ قَدْ صَلَّيْتُ فِي أَهْلِي، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا جِئْتَ فَصَلِّ مَعَ النَّاسِ، وَاِنْ كُنْتَ قَدْ صَلَّيْتَ».
“তুমি কেন আমাদের সাথে সালাত পড়লে না? তুমি কি মুসলমান নও? মিহজান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি নিশ্চয় মুসলিম। তবে আমি ঘরে সালাত পড়ে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি যখন (মসজিদে) আসবে তখন মানুষের সাথে সালাত পড়বে। যদিও ইতোপূর্বে সালাত পড়ে থাকো”।
উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّهَا سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ بَعْدِيْ أُمَرَاءُ، تَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنِ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا، حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا، فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! أُصَلِّي مَعَهُمْ؟ قَالَ: نَعَمْ، اِنْ شِئْتَ».
“অচিরেই আমার মৃত্যুর পর তোমাদের ওপর এমন কিছু আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে যাদেরকে দুনিয়ার প্রচুর ঝামেলাময় কর্মকান্ড সময় মতো সালাত পড়া থেকে বিরত রাখবে। এমনকি কখনো কখনো সালাতের সঠিক সময়টুকুও পার হয়ে যাবে। তখন তোমরা সময় মতো সালাত পড়ে নিবে। জনৈক ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি পরবর্তীতে উক্ত সালাত তাদের সাথে আবার পড়বো? হ্যাঁ। তোমার যদি মনে চায়”।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«كَيْفَ بِكُمْ إِذَا أَتَتْ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ، يُصَلُّونَ الصَّلَاةَ لِغَيْرِ مِيقَاتِهَا؟!، قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي؟ إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ! قَالَ: صَلِّ الصَّلَاةَ لِمِيقَاتِهَا وَاجْعَلْ صَلَاتَكَ مَعَهُمْ سُبْحَةً».
“তোমরা তখন কি করবে? যখন তোমাদের ওপর এমন কিছু আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে। যারা অসময়ে সালাত পড়বে। আমি বললাম: তখন আপনি আমাকে কি করার নির্দেশ দিচ্ছেন? হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি সময় মতো নিজের সালাতটুকু পড়ে নাও এবং তাদের সাথে যে সালাত পড়বে তা হবে তোমার জন্য নফল”।
কেউ ইমাম সাহেবের সাথে পুরো সালাত না পেলে যতটুকু পেয়েছে তা পড়ে নিবে। যা তার শুরু সালাত বলেই বিবেচিত হবে। আর বাকি অংশটুকু সে সালামের পর পুরো করে নিবে:
মুগীরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা তাবুক যুদ্ধে থাকাবস্থায় ফজরের সালাতের কিছু পূর্বে আমি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষজন থেকে একটু দূরে সরে গেলাম। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠ থেকে নেমে প্রস্রাব করলেন। অতঃপর আমি ঘটি থেকে তাঁর হাতে পানি প্রবাহিত করলে তিনি সর্বপ্রথম তাঁর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করেন। এরপর তাঁর মুখমন্ডল ধৌত করেন। অতঃপর তিনি তাঁর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত খুলতে চাইলে তা না পেরে তিনি হাত দু’টো জুববার নিচ থেকে বের করলেন। এরপর তিনি হাত দু’টো কনুই পর্যন্ত ধুলে এবং মাথা ও মোজা মাসেহ করলে আমি ও তিনি উটে সাওয়ার হলাম। আমরা সবার নিকট পৌঁছুলে দেখলাম, আব্দুর রহ্মান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাত পড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে ফজরের এক রাকাত সালাত শেষ হয়ে গেলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সাথে সারিবদ্ধ হয়ে আব্দুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুর পেছনে দ্বিতীয় রাকাত আদায় করলেন। আব্দুর রহ্মান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাম ফিরালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকি সালাত পুরো করার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। এ দিকে মুসলমানরা হতভম্ব হয়ে বার বার “সুব্হানাল্লাহ” “সুব্হানাল্লাহ” বলতে লাগলো। কারণ, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগেই তাদের সালাত শেষ করে ফেলেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে তাদেরকে বললেন:
«قَــدْ أَصَبْتُـمْ أَوْ قَدْ اَحْسَنْتُـمْ».
“তোমরা ঠিক করেছো কিংবা ভালো করেছো”।
উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের পর বাকি সালাতটুকু পুরো করলেন থেকে বুঝা যায় তাঁর পূর্বের সালাতটুকু তাঁর শুরু সালাত ছিলো। নিম্নোক্ত হাদীসও এর প্রমাণ বহন করে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا سَمِعْتُمْ الْإِقَامَـةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ، وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ، وَلاَ تُسْرِعُوا، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا».
“তোমরা যখন ইক্বামত শুনবে তখনই সালাতের দিকে রওয়ানা করবে। চলার সময় প্রশান্তি ও ভদ্রতা বজায় রাখবে। দৌড়ে যাবে না। অতঃপর যা পাবে তাই ইমামের সাথে পড়ে নিবে। আর বাকিটুকু পুরো করে নিবে”।
কোনো কোনো বর্ণনায় فَاقْضُوْا শব্দ থাকলেও তা থেকে কোনো কাজ সম্পাদন করার অর্থই বুঝতে হবে। কোনো ছেড়ে যাওয়া কাজ হুবহু করার অর্থ নয়। তাহলে সবগুলো বর্ণনার মাঝে একটা সামঞ্জস্য সাধিত হবে।
মসজিদে এসে ইমাম সাহেবকে যে অবস্থায়ই পাবে সে অবস্থায়ই তাঁর সাথে সালাতে শরীক হবে। আগের রাক্’আতের সাজ্দাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত এমনিতেই দাঁড়িয়ে থাকবে না:
আলী ও মুআয রাদিয়াল্লাহ আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ الصَّلَاةَ، وَالْإِمَامُ عَلَى حَالٍ، فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الْإِمَامُ».
“তোমাদের কেউ যখন জামা‘আতের সালাতে উপস্থিত হয়। আর সে দেখতে পাচ্ছে, ইমাম সাহেব কোনো এক অবস্থায় রয়েছেন। তখন সে তাই করবে যা ইমাম সাহেব করছেন”।
তবে কোনো রাকাতের রুকু’ পেলেই উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। নতুবা নয় যা ইতোপূর্বে বিস্তারিত উল্লেখ হয়েছে।
কাউকে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে বাধা দেওয়া যাবে না:
কেউ কেউ নিজ প্রাইভেট ড্রাইভার কিংবা দোকানের কর্মচারীদেরকে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে বাধা দিয়ে থাকে। তা করা কোনোভাবেই তার জন্য জায়িয নয়। কারণ, জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব এবং তা আল্লাহ তা‘আলার একান্ত অধিকার তথা আনুগত্যও বটে। আর এ কথা জানা যে, আল্লাহ তা‘আলার অধিকার ও আনুগত্য সবার অধিকার ও আনুগত্যের ওপর। তাই আল্লাহ তা‘আলার অধিকার খর্ব করার সাধ্য কারোর নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ﴾ [المائدة: ٢]
“তোমরা নেক ও আল্লাহ্ভীরুতার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো। গুনাহ ও হঠকারিতার কাজে কাউকে সহযোগিতা করো না। সর্বদা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কঠিন শাস্তিদাতা”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ২]
জামা‘আতের কাতার সোজা করা সুন্নাত কিংবা ওয়াজিব:
জামা‘আতের কাতার সোজা করা সুন্নাত। তবে কেউ কেউ তা ওয়াজিব বলেও মত ব্যক্ত করেছেন।
নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত আমাদের কাতারগুলো সোজা করতেন যেন তিনি তীর সোজা করছেন। যতক্ষণ না তিনি বুঝলেন, আমারা ব্যাপারটি বুঝে ফেলেছি। একদা তিনি সালাতের তাকবীর দিবেন দিবেন এমতাবস্থায় দেখলেন, জনৈক সাহাবীর ছাতি অন্যদের তুলনায় একটু সামনের দিকে বের হয়ে আছে তখন তিনি সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ».
“তোমরা সালাতের কাতারগুলো সোজা করবে। নয় তো আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মাঝে ভিন্নতা সৃষ্টি করবেন”।
রুকু, সাজদাহ, উঠা-বসা ইত্যাদিতে ইমাম সাহেবের আগে যাওয়া, সাথে সাথে যাওয়া অথবা অনেক পরে যাওয়া চলবে না। বরং যে কোনো কাজ ইমাম সাহেবের একটু পরেই করতে হবে।
“ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে পুরোপুরি রুকুতে চলে যাবেন তখন মুক্তাদিগণ রুকু করতে অগ্রসর হবেন। তেমনিভাবে ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে সাজদাহ’র জন্য জমিনে কপাল ঠেকাবেন তখনই মুক্তাদিগণ তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবেন। ইমাম সাহেবের আগে, বহু পরে ও সমানতালে কোনো রুকন আদায় করা যাবে না”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَمَا يَخْشَى الَّذِيْ يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ أَوْ يُحَوِّلَ صُوْرَتَهُ صُوْرَةَ حِمَارٍ ».
“ঐ ব্যক্তি কি ভয় পাচ্ছে না যে ইমাম সাহেবের পূর্বেই রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে নেয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তরিত করবেন অথবা তার গঠনকে গাধার গঠনে পরিণত করবেন”।
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الإِمَامُ يَرْكَعُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ».
“ইমাম সাহেব তোমাদের আগেই রুকু করবেন এবং তোমাদের আগেই রুকু থেকে মাথা উঠাবেন”।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تَسْبِقُوْنِيْ بِالرُّكُوْعِ وَلاَ بِالسُّجُوْدِ وَلاَ بِالْقِيَامِ وَلاَ بِالْقُعُوْدِ وَلاَ بِالاِنْصِرَافِ».
“তোমরা আমার আগে রুকু, সাজদাহ, উঠা-বসা ও সালাম আদায় করো না”।
আব্দুল্লাহ ইবন মাস’ঊদ্ ও আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা একদা রুকন আদায়ে ইমামের অগ্রবর্তী জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
«لاَ وَحْدَكَ صَلَّيْتَ وَلاَ بِإِمَامِكَ اِقْتَدَيْتَ».
“(তোমার সালাতই হয় নি) না তুমি একা সালাত পড়লে। না ইমাম সাহেবের সাথে পড়লে”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَلاَتُكَبِّرُوْا حَتَّى يُكَبِّرَ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَلاَ تَرْكَعُوْا حَتَّى يَرْكَعَ».
“মূলতঃ ইমাম সাহেব হচ্ছেন অনুসরণীয়। তাই তিনি তাকবীর সমাপ্ত করলে তোমরা তাকবীর বলবে। তোমরা কখনো তাকবীর বলবে না যতক্ষণ না তিনি তাকবীর বলেন। তিনি রুকুতে চলে গেলেই তোমরা রুকু শুরু করবে। তোমরা রুকু করবে না যতক্ষণ না তিনি রুকু করেন”।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا كَبَّرَ الإِمَامُ فَكَبِّرُوْا وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ وَقَاْلَ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَارْفَعُوْا وَقُوْلُوْا رَبَّنَا وَلَكَ الْـحَمْدُ وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوْا».
“যখন ইমাম সাহেব তাকবীর সমাপ্ত করবেন তখন তোমরা তাকবীর বলবে। আর যখন তিনি রুকুতে চলে যাবেন তখন তোমরা রুকু শুরু করবে। আর যখন তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে “সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবেন তখন তোমরা রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে “রাববানা ওয়া লাকাল হাম্দ” বলবে। আর যখন তিনি সাজদায় যাবেন তখন তোমরা সাজদাহ শুরু করবে”।
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا انْحَطَّ لِلسُّجُوْدِ لاَ يَحْنِيْ أَحَدٌ ظَهْرَهُ حَتَّى يَضَعَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَبْهَتَهُ عَلَى الأَرْضِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামযখন সাজদাহ’র জন্য ঝুঁকে পড়তেন তখনো আমাদের কেউ নিজ পৃষ্ঠদেশ বাঁকা করতো না যতক্ষণ না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামনিজ কপাল জমিনে রাখতেন”।
মুসল্লীদের কাতারগুলোর পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে একই জামা‘আতে সালাত আদায়ের বিধান:
মূলতঃ উক্ত মাসআলার তিনটি দিক হতে পারে। অন্য কথায় বলা যেতে পারে, কেউ জামা‘আতে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলো, সামনের কাতারগুলো পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তখন সে নিম্নোক্ত তিনটি কাজের যে কোনো একটি করতে পারে:
ক. সে মুসল্লীদের কাতারগুলোর পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে উক্ত ইমামের পেছনেই সালাত পড়বে।
খ. সামনের কাতার থেকে কাউকে টেনে নিয়ে ভিন্ন আরেকটি কাতার বানিয়ে সালাত পড়বে।
গ. ইমাম সাহেবের ডান পার্শ্বে গিয়ে তাঁর সাথেই কাতার বানিয়ে সালাত পড়বে।
এ দিকগুলো হচ্ছে যদি সে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে চায়। আর যদি সে জামা‘আতে সালাত না পড়ে একাকী পড়তে চায় তা হলে তা হবে চতুর্থ আরেকটি দিক।
উক্ত চারটি দিকের প্রথমটিই হচ্ছে সঠিক মত। কারণ, লোকটির ওপর ছিলো মূলতঃ দু’টি ওয়াজিব। তার একটি হচ্ছে জামা‘আতে সালাত পড়া। অপরটি হচ্ছে জামা‘আতে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো। যখন তার জন্য দ্বিতীয়টি করা সম্ভবপর নয় তখন সে শুধু প্রথমটিই করবে। যেমন: কোনো মহিলা একাকী হলে তাকেও কাতারগুলোর পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
ﭽ ﮧ ﮨ ﮩ ﮪﭼ
“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করো”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬]
বাকি তিনটি দিকের কোনোটি করা তার জন্য কোনোভাবেই সঠিক নয়। কারণ, দ্বিতীয়টি তথা সামনের কাতার থেকে কাউকে টেনে নিয়ে ভিন্ন আরেকটি কাতার বানিয়ে সালাত আদায় করতে গেলে নিম্নোক্ত তিনটি সমস্যা দেখা দিবে:
১. আগের কাতার থেকে একটি লোককে পেছনে টেনে নেয়ার কারণে তাতে একটি খালিস্থান সৃষ্টি হবে। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ কাতার পুরা করা ও তাতে কোনো খালি জায়গা না রাখা বিরোধী। যা কখনো চলতে দেওয়া যায় না।
২. উক্ত লোকটিকে একটি ভালো জায়গা থেকে তার চাইতে মানে নিম্ন এমন একটি জায়গায় নেওয়া হলো। যা করা সত্যিই অনুচিত।
৩. উক্ত লোকটিকে পেছনে টেনে নেওয়ার দরুন তার সালাতের মনোযোগে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করা হলো। যা করাও সত্যিই অনুচিত।
তৃতীয় দিক তথা ইমাম সাহেবের ডান পার্শ্বে গিয়ে তাঁর সাথেই কাতার বানিয়ে সালাত পড়াও সঠিক নয়। কারণ, ইমাম সাহেবকে তো স্থানের দিক দিয়েও তাঁর মুসল্লীদের তুলনায় একটু বিশেষ অবস্থানে থাকা উচিৎ। যেমনিভাবে তিনি সালাতের যে কোনো মৌখিক যিকির ও কাজে অন্যান্যদের তুলনায় কিছুটা অগ্রবর্তী রয়েছেন। এ দিকে কোনো মুসল্লী তাঁর সাথে পাশাপাশি দাঁড়ালে তাঁর আর স্থানগত কোনো বিশেষত্ব থাকে না।
চতুর্থ দিক তথা এমতাবস্থায় জামা‘আতে সালাত না পড়ে একাকী পড়া তাও কোনোভাবেই সঠিক নয়। কারণ, লোকটির ওপর মূলতঃ রয়েছে দু’টি ওয়াজিব। যার একটি হচ্ছে জামা‘আতে সালাত পড়া। অপরটি হচ্ছে জামা‘আতে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো। যখন তার জন্য দ্বিতীয়টি করা সম্ভবপর নয় তখন সে শুধু প্রথমটিই করবে। দ্বিতীয়টি করতে পারছে না বলে প্রথমটিও সে বাদ দিবে তা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়।
ইমাম সাহেবের বরাবর পেছন থেকেই জামা‘আতের কাতারগুলো শুরু করতে হয়:
জামা‘আতের যে কোনো কাতার ইমাম সাহেবের বরাবর পেছন থেকেই শুরু করতে হয়। প্রথমে ডান দিকে অতঃপর বাম দিকে। এভাবেই যে কোনো কাতার পুরা করতে হয়। কারণ, ইমাম সাহেবই তো হচ্ছেন জামা‘আতের কেন্দ্র বিন্দু। এ দিকে কাতারের ডান দিকের ফযীলত তো রয়েছেই।
কেউ কেউ আবার কাতারের ডান দিকের একেবারে শেষাংশ থেকে কাতার শুরু করে। তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
মসজিদে ঢুকে তাতে দাঁড়ানোর কোনো জায়গা না পেলে যা করতে হয়:
মসজিদের ভেতরের জায়গা যখন শেষ হয়ে যায় তখন বাকি মুসল্লীদের জন্য মসজিদের বাহির থেকেই মসজিদের ভেতরকার ইমামের পেছনে ইক্তিদা করে তাঁর সাথেই জামা‘আতে সালাত পড়া জায়িয। তখন তারা সুবিধে মতো মসজিদের পেছনে, ডানে বা বাঁয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে তারা কখনোই ইমামের সামনের দিকে দাঁড়াবে না। এমতাবস্থায় ইমামকে দেখতে পাওয়ার কোনো শর্ত নেই। এমনকি এমতাবস্থায় মসজিদ ও মুসল্লীদের মাঝে কোনো রাস্তা, দেওয়াল বা পানির নালা থাকলেও কোনো অসুবিধে নেই। যখন তারা ইমাম সাহেবের আওয়াজ যে কোনোভাবে নিজ কানে শুনতে পাচ্ছে।
ইমাম সাহেবকে শেষ বৈঠকে পেলে যা করতে হয়:
যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পায় যে, ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকে রয়েছেন। এ দিকে সে নিশ্চিত যে, তার পক্ষে দ্বিতীয় জামা‘আতে সালাত পড়া সম্ভব। তা হলে সে দ্বিতীয় জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষা করবে। কারণ, অন্ততপক্ষে এক রাক’আত না পেলে জামা‘আত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয় না। আর যদি সে নিশ্চিত নয় যে, সে দ্বিতীয় জামা‘আতে সালাত আদায় করতে পারবে তা হলে সে শেষ বৈঠকেই ইমাম সাহেবের সাথে জামা‘আতে যোগ দিবে। কারণ, সালাতের কিছু অংশ জামা‘আতের সাথে পাওয়া তা একেবারে না পাওয়ার চাইতে অনেকটা ভালো।
আর যদি এমন হয় যে, সে দ্বিতীয় জামা‘আত পাবে না বলে প্রথম জামা‘আতের শেষ বৈঠকে ইমাম সাহেবের সাথে যোগ দিয়েছে অথচ এ দিকে দ্বিতীয় জামা‘আত শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্বিরাত বা তাকবীর ধ্বনি সে শুনতে পাচ্ছে। তখন সে উক্ত একাকী সালাত ছেড়ে দিয়ে জামা‘আতে শরীক হতে পারে কিংবা নফলের নিয়্যাতে দু’ রাকাত আদায় করে সে জামা‘আতে যোগ দিবে অথবা একাকী সালাত চালিয়ে যাবে।
মসজিদে ঢুকে ইমাম সাহেবকে রুকু’ অবস্থায় পেলে যা করতে হয়:
কেউ মসজিদে প্রবেশ করে ইমাম সাহেবকে রুকু’ অবস্থায় পেলে সে তাকবীরাতুল-ইহরাম বলে দ্রুত রুকু’তে চলে যাবে। কারণ, তখন তার জন্য রুকু’র তাকবীর বলা সুন্নাত। ওয়াজিব নয়। তবে সে যদি রুকু’র তাকবীর বলারও সুযোগ পায় তাহলে তা হবে তার জন্য অতি উত্তম।
এমন পরিস্থিতিতে নিম্নে বর্ণিত তিনটি অবস্থার কোনো একটি ঘটতে পারে:
১. সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে উঠার আগেই সে তাঁর সাথে রুকু’ পেয়েছে। তখন সে উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে এবং এমতাবস্থায় সূরা ফাতিহা পড়ার বাধ্যবাধকতা আর তার ওপর থাকবে না।
২. সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, সে রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে উঠে গিয়েছেন। তখন সে উক্ত রাকাত পায় নি বলে ধরে নেওয়া হবে এবং তাকে উক্ত রাকাত কাযা করতে হবে।
৩. সে এ ব্যাপারে সন্দিহান যে, সে ইমাম সাহেবকে রুকু’তে পেয়েছে না কি পায়নি। এমতাবস্থায় সে যে দিকে তার মন বেশি ধাবিত হয় তাই ধরে নিবে। যদি তার প্রবল ধারণা হয় যে, সে ইমাম সাহেবকে রুকু’তেই পেয়েছে তাহলে সে উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নিবে। আর যদি এ ব্যাপারে তার প্রবল ধারণা হয় যে, সে ইমাম সাহেবকে রুকু’তে পায়নি তাহলে সে উক্ত রাকাত পায়নি বলে ধরে নিবে। এমতাবস্থায় যদি সালাতের কোনো অংশ তার ছুটে গিয়ে থাকে তা হলে সে এ জন্য সালামের পর দু’টি সাহু সাজ্দাহ দিবে। আর যদি সালাতের কোনো অংশ তার না ছুটে থাকে। তথা উক্ত রাকাতটি যদি সে সালাতের প্রথম রাকাত হয়ে থাকে। আর এ দিকে তার প্রবল ধারণা হলো যে, সে রাকাতটি পেয়েছে তাহলে তাকে আর কোনো সাহু সাজদাহ দিতে হবে না। কারণ, তার সালাত তখন তার ইমাম সাহেবের সালাতের সাথে পুরাপুরি সম্পৃক্ত। আর ইমাম সাহেব তাঁর মুক্তাদির অন্যান্য সকল সাহু সাজ্দাহ বহন করে থাকেন যদি তাঁর মুক্তাদির সালাতের কোনো রুকন না ছুটে থাকে। আর যদি রাকাত পাওয়া না পাওয়া নিয়ে তার সন্দেহ হয় এবং তার মন কোনো দিকে প্রবলভাবে ধাবিত হয় না। তা হলে সে রুকু’ পায় নি বলেই ধরে নিবে। কারণ, তখন তার ব্যাপারে এটিই নিশ্চিত এবং এটিই স্বাভাবিক। আর তখন সে সন্দেহের জন্য সালামের আগে দু’টি সাহু সাজদাহ দিবে।
এখানে একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। আর তা হচ্ছে এই যে, কেউ কেউ মসজিদে ঢুকে ইমাম সাহেবকে রুকু’ অবস্থায় পেলে সে উচ্চ স্বরে ঘন ঘন গলাখাঁকারি দেয় যেন ইমাম সাহেব তার জন্য রুকু’তে আরেকটু দেরি করেন অথবা বলে:
إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন”। আবার বা কেউ কেউ জমিনে খুব জোরে পদক্ষেপণ করে নিজের উপস্থিতি জানা ন দেয়। উক্ত কর্মকান্ডগুলো কখনো করা ঠিক নয়। কারণ, তা ইমাম সাহেব ও অন্যান্য মুক্তাদিদেরকে বিরক্ত করার শামিল।
কেউ জামা‘আতের সাথে ছুটে যাওয়া বাকি সালাত একা পড়তে গেলে ইমাম সাহেবের সুত্রাহ আর তার জন্য সুত্রাহ থাকে না:
ইমাম সাহেবের সালাম ফেরানোর পর কোনো মুক্তাদি তার ছুটে যাওয়া সালাত আদায় করতে গিয়ে একা হয়ে গেলে তার সামনে দিয়ে কেউ চলা-ফেরা করতে পারবে না। কারণ, তখন আর ইমাম সাহেবের পূর্বেকার সুত্রাহ বা আড় তার জন্য সুত্রাহ বা আড় হিসেবে বাকি থাকে না। তখন সে একা বলেই বিবেচিত। তাই কেউ তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে গেলে সে তাকে যথাসাধ্য প্রতিহত করবে।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ إِلَىْ شَيْءٍ يَسْتُرُهُ مِنَ النَّاسِ فَأَرَادَ أَحَدٌ أَنْ يَجْتَازَ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلْيَـدْفَعْهُ، فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ، فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ».
“তোমাদের কেউ কোনো বস্তুর আড়ালে সালাত পড়াবস্থায় তার সম্মুখ দিয়ে কোনো ব্যক্তি অতিক্রম করতে চাইলে তাকে অবশ্যই প্রতিহত করবে। তাতেও সে নিশ্চেষ্ট না হলে তাকে শক্তি প্রয়োগে বাধা দিবে। কারণ, সে হচ্ছে শয়তান”।
কোন ইমাম সাহেব তাঁর নিজ মসজিদে এবং কোনো ঘরের মালিক তার ঘরে ইমামতির সর্বোচ্চ অধিকারী:
কোন ইমাম সাহেব তাঁর নিজ মসজিদে যেখানে তিনি নিয়মিত ইমাম হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন এবং কোনো ঘরের মালিক তাঁর নিজ ঘরে যেখানে কিছু সংখ্যক লোক তাঁর সাক্ষাতে এসেছে সেখানে সালাতের কোনো জামা‘আত প্রতিষ্ঠিত হলে তিনিই তখন ইমামতির সর্বোচ্চ অধিকারী। যদি তিনি ভালোভাবে ক্বিরাত পড়তে পারেন এবং সালাতের প্রয়োজনীয় বিধি-বিধানও জানেন। তবে তিনি কাউকে ইমামতির জন্য অনুমতি দিলে সে ইমামতি করতে পারে। আর যদি ঘরের মালিক অথবা নিয়মিত ইমামের চাইতে সাক্ষাৎকারী কেউ ভালো ক্বিরাত পড়তে পারেন তাহলে তখন তাঁকেই ইমামতির জন্য সুযোগ দেওয়া উচিৎ।
আবু মাসঊদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوْا فِيْ السُّنَّةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإِنْ كَانُوا فِيْ الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ سِلْمًا وَفِيْ رِوَايَةٍ: سِنًّا، وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ وَلَا يَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إِلَّا بِاِذْنِهِ».
“কোনো সম্প্রদায়ের ইমামতি তাদের মধ্যে যিনি কুরআন ভালোভাবে পড়তে পারেন তিনিই করবেন। যদি তারা সবাই সমভাবেই কুর’আন ভালোভাবে পড়তে পারে তাহলে তাদের মধ্যে হাদীস সম্পর্কে যিনি বেশি জানেন তিনিই তাদের ইমামতি করবেন। আর যদি তারা সবাই হাদীস সম্পর্কে সমজ্ঞান রাখে তাহলে তাদের মধ্যে যিনি সবার আগে হিজরত করেছেন তিনিই তাদের ইমামতি করবেন। আর যদি তারা সবাই সমসময়ে হিজরত করে থাকে তাহলে তাদের মধ্যে যাঁর বয়স বেশি তিনিই তাদের ইমামতি করবেন। কেউ কারোর অধীনস্থ এলাকায় তার অনুমতি ছাড়া ইমামতি করবে না এবং কেউ অন্যের ঘরে তার সম্মানজনক বসার জায়গায় তার অনুমতি ছাড়া বসবে না”।
যে ইমাম ভালোভাবে ক্বিরাত পড়তে পারেন না তাঁর ব্যাপারে যা করণীয়:
কোনো ইমাম সাহেব যদি ক্বিরাতে এমন ভুল করেন যে, যাতে আয়াতের মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটে বিশেষ করে তা যদি সূরা ফাতিহার মধ্যেই হয়ে থাকে তাহলে যে কোনোভাবে তাঁর পরিবর্তন আবশ্যক। আর যদি তিনি এমন ভুল করেন না যা আয়াতের মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটায় তাহলে তাঁর পেছনে সালাত পড়া যাবে। তবে তার ক্বিরাত আরো শুদ্ধ ও সুন্দর করার জন্য তাঁর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ দিকে কোনো ইমাম সাহেব যদি ক্বিরাত পড়তে গিয়ে হঠাৎ এমন কোনো ভুল করে ফেলেন যাতে আয়াতের মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটে তাহলে তাঁকে পেছন থেকে যে কোনো মুক্তাদি উক্ত জায়গাটুকু স্মরণ করিয়ে দিবে। তবে হঠাৎ যে কোনো সামান্য ভুল যা অর্থের কোনো পরিবর্তন ঘটায় না তা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে কোনো ইমাম সাহেবকে বার বার বিরক্ত করা ঠিক নয়। কারণ, এতে করে তিনি একেবারে অস্থির হয়ে সম্পূর্ণরূপে ক্বিরাতটুকুও ভুলে যেতে পারেন। তখন আর তাঁর পক্ষে ক্বিরাত চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিদ‘আতী ইমামের পেছনে সালাত আদায়ের বিধান:
কোনো এলাকায় আহলে সুন্নাত ওয়াল-জামা‘আতপন্থী ভালো ইমাম পাওয়া গেলে সেখানকার কোনো বিদ‘আতীর পেছনে জামা‘আতে সালাত আদায়ের প্রশ্নই আসে না। তবে যদি কোনো এলাকায় এমন কোনো ভালো ইমাম না থাকে তাহলে সেখানকার বিদ‘আতী ইমামকেই কুরআন ও সহীহ হাদীসের দৃষ্টিতে কোনো ভালো আলিম দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ‘আত সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝাতে হবে। যদি সে উক্ত নসীহত গ্রহণ করে বিদ‘আতগুলো ছেড়ে দেয় তাহলে তার পেছনে সালাত পড়া যাবে। আর যদি সে উক্ত নসীহত গ্রহণ না করে এবং তার বিদ‘আতটিও হচ্ছে কুফরি বিদ‘আত যেমনঃ সে বিপদাপদে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যকে ডাকে অথবা সে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য কোনো পশু জবাই ও মানত করে তাহলে তার পেছনে সালাত পড়া কোনোভাবেই জায়িয হবে না এবং বস্তুতঃ সে ইমাম হওয়ারও উপযুক্ত নয়। আর যদি তার বিদ‘আতটি কুফরি পর্যায়ের না হয়ে থাকে যেমন: সালাতে নিয়্যাত উচ্চারণের বিদ‘আত তাহলে তার পেছনে সালাত পড়া যাবে ঠিকই তবে তাকে সাধ্যমতো তা বুঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
যাদুকর, শির্কী তাবিজদাতা ও গায়েবের দাবিদার ইমামের পেছনে সালাত আদায়ের বিধান:
যাদুকর, শির্কী তাবিজদাতা ও গায়েবের দাবিদার ইমামের পেছনে সালাত আদায় করা জায়িয নয়। কারণ, সে তো কাফির কিংবা মুশ্রিক। আর এ কথা তো সবারই জানা যে, কাফির কিংবা মুশরিকের পেছনে সালাত আদায় করা কোনোভাবেই জায়েয নয়।
ফাসিকের পেছনে সালাত আদায়ের বিধান:
কোনো ইমাম সাহেব যদি ধূমপান কিংবা দাঁড়ি মুণ্ডন করেন অথবা যে কোনো প্রকাশ্য গুনাহ করেন তখন তাঁকে অবশ্যই এ ব্যাপারে নসীহত করতে হবে। যদি তিনি উক্ত নসীহত গ্রহণ করেন তাহলে তো ভালোই। আর যদি তিনি উক্ত নসীহত গ্রহণ না করেন তাহলে সম্ভব হলে তথা ফিতনার কোনো ভয় না থাকলে তাকে ইমামতি থেকে বাদ দিতে হবে। তা না হলে তাঁর পেছনে সালাত না পড়ে অন্য কোনো নেককার ইমামের পেছনে সালাত পড়বে। যাতে তাঁর শিক্ষা হয়ে যায় এবং তিনি এমন কাজ থেকে বিরত হোন। আর যদি সে এলাকায় তেমন কোনো নেককার ইমাম না থাকে অথবা অন্য কারোর পেছনে সালাত আদায় করতে গেলে ফিতনার ভয় থাকে তা হলে তাঁর পেছনেই সালাত পড়বে। তখন শরী‘আতের সূত্র অনুযায়ী দু’টি ক্ষতির কমটিই গ্রহণ করতে হবে। যেমনিভাবে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ও অন্যান্য সালফে সালিহীনগণ সে যুগের হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের পেছনেই সালাত পড়েছেন অথচ সেই ছিলো তখনকার যুগের সব চাইতে বড়ো যালিম। আর তা ছিলো কেবল ফিতনা ও মহা দ্বন্দ্বের ভয়ে এবং মানুষের মধ্যকার সেই পূর্বের ঐক্যটুকু টেকানোর জন্যে।
সালাতের ক্বিরাত লম্বা বা খাটো হওয়ার মানদণ্ড:
বর্তমান যুগে ইমাম ও মুক্তাদির মাঝে ক্বিরাত খাটো ও লম্বা হওয়া নিয়ে মুসলিম বিশ্বের যে কোনো এলাকায় দ্বন্দ্ব-বিরোধ সর্বদা লেগেই থাকে। তাই এর আমূল নিরসন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত দিয়েই করতে হবে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্বিরাতই হবে খাটো ক্বিরাতের মানদন্ড। তবে কখনো কখনো কোনো ব্যাপক প্রয়োজনের কথা খেয়াল রেখে ক্বিরাতকে আরো খাটো করা যায়। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কখনো কখনো করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা ইমামদেরকে ক্বিরাত খাটো করতেই আদেশ করতেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামইরশাদ করেন:
«إِذَا أَمَّ أَحَدُكُمْ النَّاسَ فَلْيُخَفِّفْ، فَإِنَّ فِيهِمْ الصَّغِيرَ، وَالْكَبِيرَ، وَالضَّعِيفَ وَالـْمَرِيضَ، فَإِذَا صَلَّى وَحْدَهُ فَلْيُصَلِّ كَيْفَ شَاءَ».
“তোমাদের কেউ মানুষের ইমামতি করলে সে যেন খাটো ক্বিরাত পড়ে। কারণ, মানুষের মধ্যে ছোট-বড়ো, দুর্বল ও অসুস্থ সবই রয়েছে। তবে সে যদি একা সালাত পড়ে তাহলে সে নিজ ইচ্ছা মাফিক ক্বিরাত পড়বে”।
ক্বিরাত খাটো করার সর্ব প্রথম নির্দেশ আসে মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ব্যাপারে। কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে সালাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে তাদের ইমামতি করতেন। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ইশার সালাত পড়েছেন। তখন ইশার সালাত হতো প্রায় সূর্য ডুবার দু’ তিন ঘন্টা পর। অতঃপর তিনি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে সূরা বাক্বারাহ দিয়ে তাদের ইমামতি শুরু করলেন। এ দিকে জনৈক ব্যক্তি তা সহ্য করতে না পেরে তাঁর পেছন ছেড়ে একাকী সালাত পড়ে চলে গেলো। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু কে তা জানানো হলে তিনি তাকে মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করলেন। লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ব্যাপারটি জানালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
«أَتُرِيدُ أَنْ تَكُونَ فَتَّانًا يَا مُعَاذُ!، إِذَا أَمَمْتَ النَّاسَ فَاقْرَأْ بِالشَّمْسِ وَضُحَاهَا، وَسَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَاقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ، وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى».
“হে মু‘আয! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি কারতে চাও। যখন তুমি মানুষের ইমামতি করবে তখন “ওয়াশ-শামসি ওয়াদ্বোহাহা”, “সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল-আ‘লা”, ‘ইক্বরা’ বিস্মি রাব্বিকা” ও “ওয়াল্লাইলি ইযা ইয়াগ্শা” পড়বে”।
এ দিকে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِالتَّخْفِيفِ وَيَؤُمُّنَا بِالصَّافَّاتِ».
“রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ক্বিরাত খাটো করতে আদেশ করতেন অথচ এ দিকে তিনি সূরা স্বাফ্ফাত দিয়ে আমাদের ইমামতি করতেন”।
এ থেকে বুঝা যায়, সূরা সাফ্ফাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টিতে খাটো সূরা। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, যেন নাহ্ল, ইউসুফ ও তাওবাহ এর মতো বড়ো সূরা পড়া না হয়।
অন্য দিকে আবু বার্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ مَا بَيْنَ السِّتِّينَ إِلَى الْمِائَةِ ايَةً».
“রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে (মাঝারি পর্যায়ের) ষাট থেকে এক শত আয়াত পর্যন্ত পড়তেন”।
মাঝারি পর্যায়ের ষাট থেকে এক শত আয়াতের সূরা যেমন: আহযাব, ফুরক্বান, নামল, ‘আনকাবূত ইত্যাদি। এগুলো হচ্ছে ফজরের সালাতের স্বাভাবিক ক্বিরাত।
অতএব, কেউ যদি ফজরের সালাতে সূরা ক্বাফ থেকে সূরা মুর্সালাত পর্যন্ত যে কোনো সূরা পড়ে তখন সে বড়ো সূরা পড়েছে বলে তার সাথে কোনো ধরণের উচ্চবাচ্যই করা যাবে না। কারণ, এগুলো হচ্ছে মাঝারি পর্যায়ের ক্বিরাত, যা খাটো সূরা বলেই বিবেচিত।
নফল পড়ুয়ার পেছনে ফরয পড়ার বিধান:
আপনি তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত অথবা কোনো নফল সালাত পড়ছেন এমতাবস্থায় কেউ এসে আপনাকে ইমাম বানিয়ে আপনার পেছনেই তার ফরয সালাতটুকু অথবা উক্ত নফলই জামা‘আতে পড়তে শুরু করলো তখন আপনি তাকে সরিয়ে দেবেন না। বরং তখন আপনি তার ইমাম বলেই বিবেচিত হবেন। আপনি আপনার সালাতটুকু ইমাম হিসেবে উচ্চ তাক্বীরেই পড়বেন। অতঃপর আপনার সালাত শেষে সে তার বাকি সালাতটুকু নিজেই পড়ে নিবে।
উপরোক্ত মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইশার সালাতই তা জায়িয হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ইশার সালাত পড়ে আবার নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে তাদের ইশার সালাতের ইমামতি করতেন। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কোনো বাধা দেন নি।
এ দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কিছু সংখ্যক সাহাবীগণকে নিয়ে ভয়ের মুহূর্তে যোহরের সালাত দু’ রাকাত পড়ে সালাম ফিরালেন। অতঃপর তিনি আবার আরো কিছু সংখ্যক সাহাবীগণকে নিয়ে আরো দু’ রাকাত সালাত পড়ে সালাম ফিরান। এতে করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ বার যোহরের সালাত আদায় করলেন। তাঁর প্রথমকার সালাতটুকু ছিলো ফরয। আর দ্বিতীয়বারের সালাতটুকু ছিলো নফল। এতে বুঝা গেলো নফল পড়ুয়ার পেছনে ফরয সালাত পড়া যায়।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بِتُّ عِنْدَ خَالَتِيْ مَيْمُونَةَ بِنْتِ الْـحَارِثِ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهَا فِي لَيْلَتِهَا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيْ مِنْ اللَّيْلِ فَقُمْتُ أُصَلِّي مَعَهُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِرَأْسِيْ فَأَقَامَنِيْ عَنْ يَمِينِهِ».
“আমি একদা আমার খালা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী মাইমূনাহ বিন্ত আল-হারিস-এর নিকট রাত্রি যাপন করেছি। সে রাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতাঁর ঘরেই ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরাত্রি বেলায় সালাত আদায় করতে উঠলে আমিও তাঁর সাথে সালাত আদায়ের জন্য উঠলাম। অতঃপর আমি তাঁর বাঁয়েই দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে আমার মাথা ধরে তাঁর ডানেই দাঁড় করিয়ে দিলেন”।
কোনো ইমাম সাহেব যদি তার অযু নষ্ট হওয়ার দরুন কোনো মাস্বূককে তথা যে ব্যক্তি ইমাম সাহেবের সাথে সালাতের শুরুর কিছু অংশ পায় নি তাকে ইমাম বানিয়ে দেন তখন বাকি মুসল্লীদের যা করণীয়:
সালাতের চতুর্থ রাকাতে জনৈক ইমাম সাহেবের অযু নষ্ট হয়ে যায় তখন তিনি এমন এক ব্যক্তিকে বাকি সালাতটুকু পড়ানোর দায়িত্ব দিলেন যে তাঁর সাথে তৃতীয় রাক্’আতে অংশ গ্রহণ করেছে তখন বাকিরা যারা ইমাম সাহেবের সাথে শুরু থেকেই সালাত পড়ছিলেন দ্বিতীয় ইমামের সাথে চতুর্থ রাকাত শেষ করে বসে থাকবেন যতক্ষণ না দ্বিতীয় ইমাম তাঁর সবটুকু সালাত শেষ করে। অতঃপর যখন তিনি তাঁর বাকি সালাতটুকু শেষ করে সালাম ফিরাবেন তখন বাকি মুসল্লীরাও তাঁর সাথে সালাম ফিরাবে। এর পূর্বে নয়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَلاَتُكَبِّرُوْا حَتَّى يُكَبِّرَ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَلاَ تَرْكَعُوْا حَتَّى يَرْكَعَ».
“ইমাম সাহেব হচ্ছেন অনুসরণীয়। তাই তিনি তাকবীর সমাপ্ত করলে তোমরা তাকবীর বলবে। তোমরা কখনো তাকবীর বলবে না যতক্ষণ না তিনি তাকবীর বলেন। তিনি রুকুতে চলে গেলেই তোমরা রুকু শুরু করবে। তোমরা রুকু করবে না যতক্ষণ না তিনি রুকু করেন”।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تَسْبِقُوْنِيْ بِالرُّكُوْعِ وَلاَ بِالسُّجُوْدِ وَلاَ بِالْقِيَامِ وَلاَ بِالْقُعُوْدِ وَلاَ بِالاِنْصِرَافِ».
“তোমরা আমার আগে রুকু, সাজদাহ, উঠা-বসা ও সালাম আদায় করো না”।
কোনো মুসাফির যে কোনো ইমাম সাহেবের সাথে চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতের শুধু শেষের দু’ রাকাত পেলে তার জন্য যা করণীয়:
তখন তার জন্য করণীয় হবে পূর্বের ছুটে যাওয়া বাকি দু’ রাকাত পড়ে সালাম ফিরানো। তখন সে নিজকে মুসাফির মনে করে উক্ত ইমামের সাথেই সালাম ফিরাবে না। কারণ, যখন সে উক্ত ইমামের পেছনেই সালাত আদায় করতে শুরু করলো তখন তাকে অবশ্যই তাঁর সাথে ছুটে যাওয়া বাকি সালাতটুকু আদায় করতে হবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا سَمِعْتُمْ الْإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ، وَعَلَيْـكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ، وَلاَ تُسْرِعُوا، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا».
“তোমরা যখন ইক্বামত শুনবে তখনই সালাতের দিকে রওয়ানা করবে। চলার সময় প্রশান্তি ও ভদ্রতা বজায় রাখবে। দৌড়ে যাবে না। অতঃপর যা পাবে তাই ইমামের সাথে পড়ে নিবে। আর বাকিটুকু পুরো করে নিবে”।
যে যে কারণে জামা‘আতে সালাত পড়া ছাড়া যায়:
শরী‘আতসম্মত এমন কিছু কারণ রয়েছে যার কোনো একটি পাওয়া গেলে তৎসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য জামা‘আতে সালাত পড়া বাধ্যতামূলক নয়। যা নিম্নরূপঃ
১. কোনো কঠিন রোগ অথবা শত্রুর মারাত্মক ভয় হলে:
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ سَمِعَ الـمُنَادِىَ بِالصَّلاَةِ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنِ اتِّبَاعِهِ عُذْرٌ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلاَةُ الَّتِيْ صَلَّى، قِيْلَ: وَمَا الْعُذْرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ: خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ».
“যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনের আযান শুনেও মসজিদে না গিয়ে ঘরে সালাত পড়লো অথচ তার নিকট মসজিদে উপস্থিত না হওয়ার শরঈ কোনো ওযর নেই তাহলে তার আদায়কৃত সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ওযর বলতে কি ধরণের ওযর বুঝাতে চাচ্ছেন? তিনি বললেনঃ ভয় অথবা রোগ”।
উক্ত হাদীসটিতে কবুল ও ওযরের ব্যাখ্যা চাওয়া ছাড়া তার বাকী অংশটুকু শুদ্ধ। তবে উক্ত ব্যাপার দু’টো ওযর তো বটেই।
২. অতি বৃষ্টি কিংবা কাদায় পা পিছলে যাওয়ার ভয় হলে:
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি একদা নিজ মুআয্যিনকে বলেন:
«إِذَا قُلْتَ: أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فَلاَ تَقُلْ: حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ قُلْ : صَلُّوا فِىْ بُيُوتِكُمْ، قَالَ: فَكَأَنَّ النَّاسَ اسْتَنْكَرُوْا ذَلِكَ، فَقَالَ : قَدْ فَعَلَ ذَا مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّىْ».
“যখন তুমি আযানের শব্দ “আশ্হাদু আন্না মু’হাম্মাদার-রাসূলুল্লাহ” (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল) বলবে তখন এর পরপরই “হাইয়া আলাস সালাহ” (সালাতের দিকে আসো) শব্দটি বলবে না। বরং বলবে: “সাল্লূ ফি বুয়ূতিকুম” (তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে নাও)। যখন তিনি বুঝতে পারলেন সাধারণ লোকজন তাঁর এ কথা মেনে নিতে পারছে না তখন তিনি বললেন: এ কাজটি শুধু আমিই করছি না বরং তা একদা করেছেন আমার চেয়েও অতি মহান ব্যক্তিত্ব তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।”
৩. ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন ঠাণ্ডা রাতে দমকা বায়ু প্রবাহিত হলে:
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা একদা দমকা বায়ুময় ঠান্ডা রাত্রিতে আযান দেওয়ার পর বললেন: “আলা স্বাল্লূ ফির-রিহাল” অর্থাৎ হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো। অতঃপর বললেন: আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টিময় ঠাণ্ডা রাত্রিতে মুআয্যিনকে নিম্নোক্ত কথাটি বলার আদেশ করতেন:
«أَلَا صَلُّوا فِيْ الرِّحَالِ».
“হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো”।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ مُؤَذِّنًا يُؤَذِّنُ، ثُمَّ يَقُولُ عَلَى إِثْرِهِ: أَلَا صَلُّوا فِيْ الرِّحَالِ فِي اللَّيْلَةِ الْبَارِدَةِ أَوْ الـْمَطِيرَةِ فِيْ السَّفَرِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাবস্থায় ঠান্ডা কিংবা বৃষ্টিময় রাত্রিতে মুআয্যিনকে আযান দেওয়ার পর এ কথা বলার আদেশ করতেন “আলা স্বাল্লূ ফির-রি’হাল” অর্থাৎ হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো”।
সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা একদা দমকা বায়ু ও বৃষ্টিময় ঠাণ্ডা রাত্রিতে আযান দেওয়ার পর বললেন: “আলা স্বাল্লূ ফি-রিহালিকুম” “আলা স্বাল্লূ ফির-রিহাল” অর্থাৎ হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো। হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো। অতঃপর বললেন: আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাবস্থায় বৃষ্টিময় ঠাণ্ডা রাত্রিতে মুআয্যিনকে নিম্নোক্ত কথাটি বলার আদেশ করতেন:
أَلَا صَلُّوا فِيْ رِحَالِكُمْ».
“হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ো”।
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে গেলে তখন সেখানে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«لِيُصَلِّ مَنْ شَاءَ مِنْكُمْ فِي رَحْلِهِ».
“তোমাদের কেউ ইচ্ছে করলে সে নিজ ঘরে সালাত আদায় করতে পারে”।
সর্বোত্তম নিয়ম হচ্ছে, পুরো আযানের পর বলবে:
«صَلُّوْا فِيْ بُيُوْتِكُمْ أَوْ صَلُّوْا فِيْ رِحَالِكُمْ».
“তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো”।
তবে এ শব্দগুলো “হাইয়া আলাস সালাহ” এর পরিবর্তে কিংবা তার পরপরই বলা যেতে পারে। যা উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়।
৪. খাবার উপস্থিত ও তা খাওয়ার প্রতি প্রচুর আগ্রহ অনুভূত হলে:
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ عَلَى الطَّعَامِ، فَلَا يَعْجَلْ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُ، وَإِنْ أُقِيمَتْ الصَّلَاةُ».
“তোমাদের কেউ খানা খেতে থাকলে সে যেন তা ছেড়ে দ্রুত উঠে না যায় যতক্ষণ না সে তা থেকে নিজ প্রয়োজন পুরো করে। যদিও ইতিমধ্যে সালাতের ইক্বামত হয়ে যায়”।’আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا وُضِعَ الْعَشَاءُ وَأُقِيمَتْ الصَّلَاةُ، فَابْدَءُوا بِالْعَشَاءِ».
“যখন রাতের খাবার উপস্থিত হয়ে যায় অথচ এ দিকে সালাতের ইক্বামত দেওয়া হয়েছে তখন রাতের খাবারই সর্বপ্রথম খেয়ে নাও”।
৫. মল-মূত্র ত্যাগের প্রচুর বেগ অনুভূত হলে:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ، وَلَا وَهُوَ يُدَافِعُهُ الْأَخْبَثَانِ».
“খাবার উপস্থিত ও তা খাওয়ার প্রতি প্রচুর আগ্রহ অনুভূত হলে তখন আর সে বেলার সালাত জামা‘আতে পড়তে হবে না। তেমনিভাবে মল-মূত্র ত্যাগের প্রচুর বেগ অনুভূত হলেও সে বেলার সালাত আর জামা‘আতে পড়তে হবে না”।
৬. কোনো নিকটতম ব্যক্তির মৃত্যু ও তার শেষ সাক্ষাৎ না পাওয়ার আশঙ্কা হলে:
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি একদা জানতে পারলেন যে, সা’ঈদ্ ইবন যায়েদ ইবন আমর ইবন নাউফাল মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছেন। তখন ছিলো জুমু‘আর দিন। তবুও তিনি সূর্য আকাশে অনেক দূর উঠে যাওয়ার পরও তাঁর সাক্ষাতের জন্য রওয়ানা হোন। তখন ছিলো জুমু‘আর সালাতের নিকটবর্তী সময়। অতএব তিনি আর সে দিনকার জুমু‘আর সালাত আদায় করতে পারেন নি।
আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مِنْ فِقْهِ الـْمَرْءِ إِقْبَالُهُ عَلَى حَاجَتِهِ حَتَّى يُقْبِلَ عَلَى صَلَاتِهِ، وَقَلْبُهُ فَارِغٌ».
“কোনো ব্যক্তির শরী‘আতের সত্যিকার বুঝ হচ্ছে এই যে, সে সর্বপ্রথম নিজ প্রয়োজনটুকু সেরে নিবে। অতঃপর সে সকল প্রয়োজনীয় কাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে অবসর হয়ে শুধুমাত্র সালাতেই মনোযোগ দিবে”।
উক্ত আলোচনা থেকে জানা গেলো যে, সর্বমোট আটটি কারণে জামা‘আতের সালাত ছাড়া যায়। যা সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
কোনো এমন রোগ যা মানুষকে দ্রুত দুর্বল ও অতি ব্যস্ত করে দেয়, জীবন, সম্পদ ও ইজ্জতের ভয়, অতি বৃষ্টি, পাঁক-কাদা, ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন ঠান্ডা রাতের দমকা বায়ু, খাবার উপস্থিত ও তা খাওয়ার প্রতি প্রচুর আগ্রহ, মল-মূত্র ত্যাগের প্রচুর বেগ ও কোনো নিকটতম ব্যক্তির মৃত্যু ও তার শেষ সাক্ষাৎ না পাওয়ার আশঙ্কা।
৭. সালাতের নিকটবর্তী সময়ে পিঁয়াজ বা রসুন জাতীয় দুর্গন্ধযুক্ত কোনো কিছু খেলে:
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَكْلِ الْبَصَلِ وَالْكُرَّاثِ فَغَلَبَتْنَا الْـحَاجَةُ فَأَكَلْنَا مِنْهَا فَقَالَ: مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ الْـمُنْتِنَةِ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا، فَإِنَّ الْـمَلَائِكَةَ تَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ الْاِنْسُ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিঁয়াজ ও কুর্রাস (দুর্গন্ধযুক্ত এক জাতীয় উদ্ভিদ) খেতে নিষেধ করেছেন। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: একদা আমরা প্রয়োজনের তাগিদে তা খেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: কেউ এ জাতীয় দুর্গন্ধযুক্ত উদ্ভিদ খেলে সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তীও না হয়। কারণ, ফিরিশতাগণ সে জিনিসেই কষ্ট পান যে জিনিসে কষ্ট পায় মানুষ”।
তবে প্রয়োজনে এগুলোকে ভালোভাবে সিদ্ধ করে কিংবা পাকিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা জুমু‘আর খুৎবায় এক পর্যায়ে বলেন:
«ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا النَّاسُ تَأْكُلُونَ شَجَرَتَيْنِ لَا أَرَاهُمَا إِلَّا خَبِيثَتَيْنِ هَذَا الْبَصَلَ وَالثُّومَ لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا وَجَدَ رِيحَهُمَا مِنْ الرَّجُلِ فِي الـْمَسْجِدِ أَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْبَقِيعِ فَمَنْ أَكَلَهُمَا فَلْيُمِتْهُمَا طَبْخًا».
“হে মানব সকল! তোমরা এমন দু’টি উদ্ভিদ খাচ্ছো যা আমি নিকৃষ্ট বলেই মনে করি। তা হলো: পিয়াজ ও রসুন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমন কাজও করতে দেখেছি যে, তিনি মসজিদে কারো থেকে এগুলোর দুর্গন্ধ পেলে তাকে বাকী’ কবরস্থানের দিকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। সুতরাং কেউ এগুলো খেলে সে যেন তা ভালোভাবে পাকিয়ে খায়”।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সর্বদা জামা‘আতে সালাত আদায়ের তাওফীক দিন। আমীন সুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল-আলামীন।
وَصَلَّى اللهُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ اَجْمَعِيْنَ
সমাপ্ত
জামা‘আতে সালাত আদায়: গ্রন্থটিতে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়ের তাৎপর্য, ফযীলত, আহকাম, উপকারিতা ও আদাবসমূহ দলীল-প্রমাণসহ বর্ণিত হয়েছে।