দল, সংগঠন, ইমারত ও বায়‘আত সম্পর্কে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের বক্তব্য

দল, সংগঠন, ইমারত ও বায়‘আত সম্পর্কে মুসলিমদের মধ্যে অনেক ভুল ও বিভ্রান্তি রয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে উক্ত বিষয়সমূহে সত্যনিষ্ঠ আলেমগণের মতামত তুলে ধরা হয়েছে।

اسم الكتاب: فتاوى العلماء حول الحزبية والإمارة والبيعة


تأليف: عبد العليم بن كوثر
نبذة مختصرة: كتاب باللغة البنغالية فيه استعراض لأقوال العلماء المحققين حول قضية الحزبية والإمارة والبيعة.

দল, সংগঠন, ইমারত ও বায়‘আত সম্পর্কে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের বক্তব্য

[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]



সংকলন ও পরিমার্জনে 
আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার

অনুবাদ : আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া2014 - 1436  ﴿فتاوى العلماء حول الحزبية والإمارة والبيعة﴾« باللغة البنغالية »
جمع وترتيب 
عبد العليم بن كوثرترجمة: عبد العليم بن كوثر
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا


2014 - 1436  
অনুবাদকের কথা
যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি গোটা মুমিন সম্প্রদায়কে পরস্পরের ভাই হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর উপর, যিনি গোটা মুসলিম উম্মাহকে একটি দেহের সাথে তুলনা করেছেন। ইসলাম মুসলিমদেরকে এমন অটুট বাঁধনে বেঁধেছে, কোনো দল, জামা‘আত বা সংগঠনের পক্ষে কখনই তার ধারেকাছে যাওয়াও সম্ভব নয়। ইসলামে ইসলামী ভ্রাতৃত্বই মিত্রতা ও শত্রুতা পোষণের মানদণ্ড। চিনুক বা না চিনুক একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। মহান আল্লাহ বলেন,﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَ أَخَوَيۡكُمۡۚ ﴾ [الحجرات: ١٠]  ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও’ (আল-হুজুরাত ১০)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পারস্পরিক ভালবাসা, দয়ার্দ্রতা এবং সহানুভূতিশীলতার ক্ষেত্রে গোটা মুমিন সম্প্রদায় একটি দেহের মত। দেহের একটি অঙ্গ ব্যথিত হলে তার জন্য পুরো দেহ ব্যথা অনুভব করে’ (মুসলিম, হা/২৫৮৬)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘মুমিনরা নির্মিত ভবনের মত, যার একাংশ অন্য অংশের সাথে শক্তভাবে গাঁথা’ (বুখারী, হা/৬০২৬)। এমনকি একজন মুসলিম যদি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে এবং অপরজন পশ্চিম পান্তে থাকে, তথাপিও তারা পরস্পর বন্ধু। সুফিয়ান ছাওরী বলেন, ‘পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থানকারী আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের দু’জন ব্যক্তির সংবাদ যদি তোমার কাছে পৌঁছে, তাহলে তাদের উভয়ের নিকট তুমি সালাম পাঠাও এবং তাদের জন্য দো‘আ কর। আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকদের সংখ্যা কতই না কম!’( ) এই হচ্ছে মুসলিম উম্মাহ্‌র পরস্পরের মধ্যে গভীর সম্পর্কের ইলাহী ব্যবস্থাপনা। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত না হয়ে একতাবদ্ধভাবে থাকতে বলেছেন এবং একতাবদ্ধ হওয়ার মানদণ্ডও বাৎলে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,  ﴿ وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ ﴾ [ال عمران: ١٠٣]  ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান ১০৩)। উক্ত আয়াতে একতাবদ্ধ হওয়ার মানদণ্ড হিসাবে আল্লাহ্‌র রজ্জু তথা কুরআন ও হাদীছের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সঠিক আক্বীদার বাইরে গিয়ে একতাবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ দলাদলি ও বিভক্তির নিন্দা করে বলেন,  ﴿ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٥ ﴾ [ال عمران: ١٠٥]  ‘আর তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং বিরোধ করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি’ (আলে ইমরান ১০৫)। অন্য আয়াতে এসেছে,   ﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍۚ ﴾ [الانعام: ١٥٩]  ‘নিশ্চয়ই যারা নিজেদের ধর্মকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই’ (আল-আন‘আম ১৫৯)।কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহ আজ শতধাবিভক্ত জাতিতে পরিণত হয়েছে। আমরা মুসলিম উম্মাহ বলতে আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতকে বুঝাচ্ছি। কারণ এই লেখায় আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বাইরের ভ্রান্ত ফেরক্বাগুলি আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। এখানে একটি কথা বলে রাখতে চাই, আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন নামে অভিহিত হয়েছে। যেমন, আত-ত্বয়েফাহ আল-মানছূরাহ, আল-ফেরক্বাহ আন-নাজিয়াহ, আহলুল হাদীছ, আছহাবুল হাদীছ, আহলুল আছার, সুন্নী ইত্যাদি। এই ব্যাপক অর্থে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের প্রকৃত অনুসারীদের উপরও এসব নাম প্রযোজ্য হবে। তবে প্রসিদ্ধ চার ইমামের কোনো একজনের অনুসারী যদি তার ইমামের আক্বীদা গ্রহণ না করে ভ্রান্ত ভিন্ন কোনো আক্বীদা গ্রহণ করে, তাহলে সে তার দায়িত্ব বহন করবে। অনুরূপভাবে এসব নামে গঠিত কোনো সংগঠন যদি কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নিঃস্বার্থ অনুসারী হয়ে থাকে, তাহলে তারাও আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে। তবে আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত বলতে কস্মিনকালেও নির্দিষ্ট কোনো দল, মাযহাব বা জামা‘আতকে বুঝাবে না। কেউ কুরআন-হাদীছ ও সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি থেকে সরে গেলে সে আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে না; সে যে যুগের, যে দেশের, যে মাযহাবের বা যে দলেরই হোক না কেন। অনুরূপভাবে কোনো দল যদি নিজেদেরকে ‘আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’ নামে নামকরণ করে হরহামেশা আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নীতি বিরোধী কাজ করে এবং নানামুখী শির্ক-বিদ‘আতই তাদের সাধনা হয়, তাহলে এই নামকরণ তাদের বিন্দুমাত্র উপকারে আসবে না; বরং তারা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।উল্লেখ্য যে, নিজেদেরকে আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত দাবী করা সত্ত্বেও উপরিউক্ত নামগুলির প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ করা, সেগুলো সম্পর্কে বিষোদগার করা এবং নিজেদের ক্ষেত্রে সেগুলোর প্রয়োগকে অস্বীকার করা যেমন মহা অন্যায়; তেমনি সেগুলোকে গুটিকয়েক মানুষ নিয়ে গঠিত কোনো দল, মাযহাব বা জামা‘আতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার অপচেষ্টাও কম অন্যায় নয়। মূলতঃ সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী এই দুই পক্ষ উল্লেখিত পরিভাষাগুলো অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে। আর তা না হলে কোনো হীন স্বার্থে তারা সেগুলো না বুঝার ভান করেছে।হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীছে ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ বলতে আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতকে বুঝানো হয়েছে। আরেক অর্থে, গোটা মুসলিম উম্মাহ যখন একজন খলীফার হাতে বায়‘আত করবে, তখন তাদেরকেও ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ বলা হবে এবং তাদের বায়‘আতকৃত খলীফাকে বলা হবে ‘ইমামুল মুসলিমীন’ বা ‘খলীফাতুল মুসলিমীন’। উক্ত হাদীছে ফেৎনা এবং দলাদলির সময় একজন মুসলিমের করণীয়ও বলে দেওয়া হয়েছে। আর তা হচ্ছে, ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ এবং তাদের খলীফার সাথে থাকা। আর মুসলিম খলীফার অবর্তমানে যাবতীয় দলাদলি ছেড়ে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ আঁকড়ে ধরে থাকা। হাদীছটির অন্য বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তিনবার বলেছিলেন, ‘হে হুযায়ফা! তুমি কুরআন শিখবে এবং তা মেনে চলবে’ (আবু দাঊদ, হা/৪২৪৬)। হাদীছে উল্লেখিত ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ কথাটি নির্দিষ্ট কোনো দল বা সংগঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যর্থ প্রয়াস চালালে তা হবে মহা অন্যায়। যেমনটি কোনো কোনো মুসলিম দেশে আজ ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ নামধারী ভুঁইফোড় সংকীর্ণ দলের জন্ম হয়েছে, যারা ব্যাপক অর্থবোধক এ পরিভাষাটিকে নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে দ্বিধা করছে না। যাহোক, যে ব্যক্তি সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি অনুযায়ী কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ বুঝবে এবং তদ্‌নুযায়ী আমল করবে, সে-ই আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, পৃথিবীর যে প্রান্তেই তার অবস্থান হোক না কেন। এমনকি গভীর জঙ্গলে একাকী অবস্থানকারী ব্যক্তিও যদি নিঃস্বার্থভাবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মেনে চলে, সেও আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত হবে। মনে রাখতে হবে, প্রচলিত সংগঠনগুলির মত আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে কাউকে কোনো নেতার অনুমতির প্রয়োজন হয় না এবং কোনো সদস্য ফরম বা ভর্তি ফরমও পূরণ করতে হয় না। প্রয়োজন হয় না কোনো আমীর বা নেতার হাতে বায়‘আতের ও শপথ বাক্য পাঠের। শুধুমাত্র সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি অনুযায়ী নিঃশর্তভাবে কুরআন-হাদীছ মেনে চললেই হয়।বড় আফসোসের কথা হচ্ছে, খোদ আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকেরাই এই মহান অর্থ অনুধাবনে চরম ব্যর্থ হচ্ছে এবং আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের বেশ অভাবও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটি মুসলিম উম্মাহ্‌র বিভক্তির অন্যতম কারণও বটে।যাহোক, কারো কারো মতে, যরূরী প্রয়োজনে সাংগঠনিকভাবে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অতীব যরূরী কয়েকটি বিষয়ের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবেঃ (১) সংগঠনে কুরআন-হাদীছ ও সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি পরিপন্থী কোনো কার্যক্রম থাকবে না। (২) সংগঠনে বায়‘আত, শপথ, অঙ্গীকার বা এজাতীয় কোনো কিছু থাকবে না। কারণ, বায়‘আত মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা এবং দেশের সরকারের সাথে নির্দিষ্ট; কোনো সংস্থা, সংগঠন, দল বা জামা‘আতের নেতার জন্য তা আদৌ বৈধ নয়। (৩) ঈমানী মহান ও প্রশস্ত ভ্রাতৃত্বের গণ্ডিকে সাংগঠনিক সংকীর্ণ ভ্রাতৃত্বের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করার অপচেষ্টা থেকে দূরে থাকতে হবে। (৪) সংগঠনের ভেতরের এবং বাইরের সকল মুসলিম ভাইয়ের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা থাকতে হবে, একে অন্যের দোষত্রুটি না বলে ভাল দিকগুলি বলতে হবে এবং কারো মধ্যে বিদ্যমান ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের জন্য হিকমতের সাথে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। (৫) সংগঠনকে দা‘ওয়াতের একটি মাধ্যমের বাইরে অন্য কিছু মনে করা যাবে না; সংগঠন কখনই হক-বাতিলের মানদণ্ড বিবেচিত হবে না। (৬) মানুষকে সংগঠনের পতাকাতলে আহ্বান না জানিয়ে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের শীতল ছায়াতলে আহ্বান জানাতে হবে।আমার ছোট্ট গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে যে, কোনো সংগঠনকে দা‘ওয়াতী কার্যক্রমের একটি মাধ্যমের বাইরে অন্য কিছু প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই মাধ্যম এক সময় পরিণত হয় মূল লক্ষ্যে, শুরু হয় দলের প্রতি অন্ধভক্তি এবং অন্যদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও অভক্তি। সংগঠনে থাকলে অসৎ মানুষটিও হয়ে যায় দুধে ধোয়া; কিন্তু সংগঠনের বাইরে চলে গেলে সোনার মানুষটিও পরিণত হয় নিকৃষ্ট ব্যক্তিত্বে। এই মিত্রতা ও শত্রুতার মানদণ্ড হয় কেবল দলীয় গণ্ডি; এখানে আক্বীদা, আমল, পরহেযগারিতা ও যোগ্যতার কোনো মূল্য থাকে না। প্রসঙ্গক্রমে পাকিস্তানের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে; সেখানকার ছহীহ আক্বীদায় বিশ্বাসের দাবীদার কয়েকটি সংগঠনের মধ্যে সম্পর্কের এতবেশী টানাপড়েন হয়েছে যে, একটি সংগঠন তাদের সাপ্তাহিক পত্রিকায় তাদের মজলিসে শূরার সিদ্ধান্তানুযায়ী বাকী তিনটি সংগঠন এবং সেগুলোর কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে বলেছে, তাদেরকে কোনো প্রোগ্রামে ডাকা হবে না এবং তাদের কারো কারো সাথে কোনো প্রকার সহযোগিতার পথ খোলা থাকবে না।( ) এই যদি হয় সঠিক আক্বীদা পোষণকারী সংগঠনের অবস্থা, তাহলে অন্যদের অবস্থা কি হতে পারে! মূলতঃ সারা দুনিয়ার সব সংগঠনের অবস্থা প্রায় একই!সংগঠন যেহেতু দা‘ওয়াতের একটি মাধ্যমের বাইরে অন্য কিছু নয়, সেহেতু প্রত্যেকটি দাঈর সেখানে যোগ দেওয়াও অপরিহার্য নয়। বরং একজন দাঈ তার সাধ্যানুযায়ী দা‘ওয়াতের যে কোনো বৈধ মাধ্যমে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম চালাতে পারেন। তবে দাঈদের মধ্যে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা একান্ত কাম্য। নানামুখী দা‘ওয়াতী কার্যক্রমে পরস্পর পরস্পরকে আহ্বান করতে হবে এবং আহ্বানে সাড়া দিতে হবে। মনে কারো প্রতি হিংসার আশ্রয় দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, ইসলামে কোনো বৈধ কাজ করতে গিয়ে কোনো হারাম কাজ করা নিষেধ। কিন্তু সংগঠন নামক এই বৈধ মাধ্যমটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে একজন ব্যক্তি কাবীরা গোনাহ করতেও দ্বিধাবোধ করছে না; সেখানে চলছে কাঁদা ছোড়াছুড়ি, চলছে মরা ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ! অতএব, নির্দিষ্ট কোনো দল বা সংগঠনের শিকলে নিজেকে বন্দী না করে যেসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের আক্বীদা ছহীহ, তাদের সবাইকে ভালকাজে সহযোগিতা করা ভাল; পক্ষান্তরে তাদের দোষত্রুটি ও মন্দ দিকগুলি সংশোধনের জন্য তাদেরকে নছীহত করা উচিৎ।বিভিন্ন দল, জামা‘আত ও সংগঠনের বৈধতা কতটুকু এবং সেগুলো সম্পর্কে একজন মুসলিমের ভূমিকা কি হবে তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হওয়া দরকার। শায়খ ছালেহ আল-ফাওযানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যুবক এবং সাধারণ মানুষদেরকে দলাদলি ও বিভক্তি সম্পর্কে সতর্ক করা ওলামায়ে কেরামের জন্য জায়েয আছে কি? জবাবে তিনি বলেছিলেন, যুবক এবং সাধারণ মানুষদেরকে নিষিদ্ধ দলাদলি থেকে সতর্ক করা যরূরী। তা হলে মানুষ জাগ্রত জ্ঞান সহকারে থাকতে পারবে। কেননা আজ সাধারণ মানুষও হক মনে করে কিছু কিছু দলের ধোঁকায় পড়ে যাচ্ছে। আর আমরা যদি দলাদলি এবং বিভক্তির ভয়াবহতা মানুষদেরকে না বলি, তাহলে তাদের মধ্যে ভ্রষ্টতা প্রবেশ করবে। শিক্ষিত সমাজের চেয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ভয়টা আরো বেশী। কেননা উলামায়ে কেরাম চুপ থাকলে সাধারণ মানুষ মনে করবে, এটিই হচ্ছে হক।( ) এই সংকলনে আমরা বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন এবং ইমারত ও বায়‘আত সম্পর্কে প্রসিদ্ধ কয়েকজন আলেমের বক্তব্য তুলে ধরলাম। সংকলনটির কিছু কিছু প্রশ্ন প্রায় একই। কিন্তু প্রশ্নগুলি বিভিন্ন আলেমের কাছে উপস্থাপিত হওয়ায় এবং পুনরাবৃত্ত একটি প্রশ্নে যে বাড়তি জ্ঞানের কথা রয়েছে, তা ঐ একই ধরনের অন্য প্রশ্নে না হওয়ায় আমরা সেগুলো ছাড়িনি। তাছাড়া একই প্রশ্নের জবাবে একাধিক আলেমের দৃষ্টিভঙ্গি জানাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।মহান আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং আমাদের নিয়্যত পরিচ্ছন্ন করে দিন। আমীন!


 (১) শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ  তিনি বলেন, ‘কারো অধিকার নেই যে, সে উম্মতের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামব্যতীত অন্য কাউকে খাঁড়া করে তার পথে মানুষকে আহ্বান করবে এবং সেই পথকে কোনো মুসলিমের সাথে আন্তরিক সুসম্পর্ক গড়া বা না গড়ার মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করবে। অনুরূপভাবে তার জন্য এটাও বৈধ নয় যে, সে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য এবং যেসব বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ্‌র ‘ইজমা’ হয়েছে, সেগুলো ব্যতীত অন্য কোনো বক্তব্যের জন্ম দিয়ে তাকে কোনো মুসলিমের সাথে আন্তরিক সুসম্পর্ক গড়া বা না গড়ার মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করবে। বরং এটি বিদ‘আতীদের কাজ, যারা উম্মতের জন্য কোনো ব্যক্তি বা বক্তব্যকে দাঁড় করিয়ে তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে; ফলে তারা এই সৃষ্ট বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে মিত্রতা বা শত্রুতা পোষণ করে’।  মানুষদের মধ্যে দলাদলি সৃষ্টি করা এবং তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের জন্ম দেয় এমন কোনো কাজ করা কোনো শিক্ষকের উচিৎ নয়। বরং তারা সবাই ভাই ভাই হয়ে থাকবে এবং পরস্পরে সৎ ও তাক্বওয়ার কাজে সহযোগিতা করবে। মহান আল্লাহ বলেন,﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ﴾ [المائ‍دة: ٢]  ‘সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে তোমরা একে অন্যের সাহায্য কর। আর পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যের সহায়তা করো না’ (আল-মায়েদাহ ২)। অনুরূপভাবে কোনো শিক্ষকের এটাও উচিৎ নয় যে, সে কারো পক্ষ থেকে মানুষদের অঙ্গীকার গ্রহণ করবে এমর্মে যে, সে যা-ই চাইবে, তা-ই সমর্থন করতে হবে এবং সে যার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে, তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, অনুরূপভাবে সে যার সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, তার সাথে শত্রুতা পোষণ করতে হবে। বরং যে ব্যক্তি এমনটি করবে, সে চেঙ্গিস খানদের মত, যারা কেবল তাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে, যারা তাদেরকে সমর্থন করে, পক্ষান্তরে যারা তাদের সমর্থন করে না, তাদেরকে শত্রু গণ্য করে। মনে রাখতে হবে, তাদের এবং তাদের অনুসারীদের উপর আল্লাহ ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর আনুগত্যের অঙ্গীকার রয়েছে।( ) যে ব্যক্তি কাউকে দাঁড় করিয়ে তার সমর্থনকে কেন্দ্র করে কারো সাথে সুসম্পর্ক গড়ে বা শত্রুতা পোষণ করে, সে নিম্নোক্ত আয়াতের আওতায় পড়ে যাবে, ﴿ مِنَ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗاۖ ﴾ [الروم: ٣٢]  ‘যারা স্বীয় ধর্মকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে’ (আর-রূম ৩২)।( ) যদি তারা (কোনো দল) আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর নির্দেশনার মধ্যে কোনো কিছু বৃদ্ধি করে বা কম করে, যেমন: কেউ তাদের দলে প্রবেশ করলে হক-বাতিলের তোয়াক্কা না করে তার পক্ষাবলম্বন করা, পক্ষান্তরে কেউ তাদের দলে প্রবেশ না করলে সে হকের উপরে থাকুক কিংবা বাতিলের উপরে থাকুক তাকে প্রত্যাখ্যান করা। বস্তুত: এটিই হচ্ছে সেই বিভক্তি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার নিন্দা করেছেন। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল জামা‘আতবদ্ধভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে পারস্পরিক মতপার্থক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে তাঁরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পারস্পরিক সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যের সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন।( ) (২) মুক্বীম অবস্থায় ‘ইমারত’ বিষয়ক বিধি-বিধান সম্পর্কে সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের ফৎওয়া প্রশ্ন: মুক্বীম অবস্থায় ‘ইমারত’ বা কাউকে আমীর বানানো জায়েয আছে কি? অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত যে, তিনজন সফর অবস্থায় থাকলে তাদের একজন তাদের ‘আমীর’ হবে; উক্ত হাদীছের আলোকে মুক্বীম অবস্থায় কোনো দেশে কোনো দলের ‘আমীর’ হওয়া জায়েয হবে কি?উত্তর: আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিনজন যখন সফরে বের হবে, তখন তাদের একজনকে তাদের আমীর বানাবে’ (আবূ দাঊদ, সনদ ‘হাসান’)। উক্ত হাদীছ দ্বারা সফর অবস্থায় আমীর বানানোর বিষয়টি প্রমাণিত হয়। সুতরাং মুক্বীম অবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান বা তাঁর নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি আমীর হবে।( ) প্রশ্ন: বিভিন্ন ইসলামী দলের উত্থান হয়েছে এবং হচ্ছে, দা‘ওয়াতী ক্ষেত্রে যাদের পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন এবং তারা সবাই সর্বোচ্চ নেতৃত্বের আসনটি অলংকৃত করতে চায়- এক্ষণে উক্ত ইসলামী দলসমূহের উত্থানের ব্যাখ্যা আমরা কিভাবে করতে পারি? তারা কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর নিম্নোক্ত হাদীছের আওতায় পড়বে? ‘আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি ব্যতীত তাদের সবাই জাহান্নামে যাবে’। কিভাবে আমরা বিভিন্ন দল যেমন: ইখওয়ানী, খালাফী, সালাফী, তাকফীর ওয়া হিজরা, তাবলীগী, ছূফী ইত্যাদির মধ্যে সমন্বয় সাধন করব?উত্তর: আল্লাহ্‌র দ্বীন একটিই এবং সেদিকে আহ্বানের পদ্ধতিও একটিই। সুতরাং যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর পদ্ধতির উপর চলবে, সে-ই সঠিক কাজটি করবে। আল্লাহই একক তাওফীক্বদাতা।( ) প্রশ্ন: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র, আমাকে সর্বদা বিভিন্ন মতবাদ এবং দলের মধ্যে বসবাস করতে হয়। তাদের সবাই নিজের দলকে শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করে নিজেদের সহযোগী সদস্য বাড়ানোর কাজে ব্যস্ত থাকে। যেমন: ‘জামা‘আতুল ইখওয়ান’, ‘তাবলীগ জামা‘আত (যারা ৪০ দিন, ৪ মাস চিল্লায় বের হয়)’, ‘জামা‘আতু আনছারিস-সুন্নাহ’, আব্দুল হামীদ ছাহেবের ‘জামা‘আহ ইছলাহিইয়াহ’ ইত্যাদি। এক্ষণে আমাদেরকে সঠিক পথটি বাৎলে দিবেন বলে আশা করছি।উত্তর: নির্দিষ্টভাবে কোনো জামা‘আতের পক্ষাবলম্বন না করে হক ও দলীলভিত্তিক বিষয়কে আঁকড়ে ধরে থাকা তোমার জন্য যরূরী। তবে কোনো দল সালাফে ছালেহীনের অনুসৃত ছহীহ আক্বীদার সংরক্ষক হলে তাদেরকে সহযোগিতা করা যেতে পারে। যাহোক, তোমার কর্তব্য হচ্ছে, কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ্‌র প্রতি আমল করা এবং যাবতীয় বিদ‘আত ও কুসংস্কার বর্জন করে চলা। আল্লাহ তাওফীক্ব দান করুন।( ) প্রশ্ন: বর্তমান বিদ্যমান বিভিন্ন দল ও জামা‘আত, যেমন: ‘ইখওয়ানী’, ‘তাবলীগী’, ‘আনছারুস-সুন্নাহ’, ‘জাম্‌ইয়্যাহ শার্‌ইয়্যাহ’, ‘সালাফী’, ‘তাকফীর ওয়াল হিজরা’, যেগুলি বর্তমানে মিশরে রয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এসব দলের ক্ষেত্রে একজন মুসলিমের কি ধরনের ভূমিকা হতে পারে? এসব দলের ক্ষেত্রে কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুরাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটি প্রযোজ্য হবে? ‘গাছের শিকড় কামড়ে ধরে হলেও মৃত্যু অবধি তুমি উক্ত দলগুলির সবই পরিত্যাগ করে চলবে’। (ছহীহ মুসলিম)উত্তর: প্রশ্নে উল্লেখিত দলগুলির প্রত্যেকটিতে কিছু হকও আছে, কিছু বাতিলও আছে, অনুরূপভাবে আছে কিছু ভুল-ভ্রান্তি, আবার আছে কিছু সঠিক দিক। ঐসব দলগুলির কোনো কোনটি অন্যগুলির তুলনায় হকের অধিকতর নিকটবর্তী এবং অধিকতর কল্যাণময়। সেজন্য আপনার উচিৎ, প্রত্যেকটি দলকে তাদের সাথে বিদ্যমান হকের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা; আর বাতিল ও ভুল-ভ্রান্তির ক্ষেত্রে তাদেরকে নছীহত করা। যেসব বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, সেগুলো পরিত্যাগ কর। আর যেসব বিষয়ে তোমার সন্দেহ না হয়, সেগুলো গ্রহণ কর। আল্লাহই একক তাওফীক্বদাতা।( ) প্রশ্ন: মুসলিমদেরকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দেওয়া এবং তাদের ঐক্য বিনষ্ট করা সত্ত্বেও কি প্রত্যেকটি মুসলিমের কোনো না কোনো ইসলামী দলে থাকা এবং সেই দলের ‘আমীরে জামা‘আত’ থাকা যরূরী?উত্তর: প্রত্যেক মুসলিমের কথা, কাজে ও বিশ্বাসে পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহ্‌র বক্তব্যকে অনুসরণ করে চলা উচিৎ। অনুরূপভাবে তার কর্তব্য হচ্ছে, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালবাসা বা তাকে ঘৃণা করা এবং কেবলমাত্র তাঁর খুশীর জন্যই কারো সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা বা তার সাথে শত্রুতা পোষণ করা।( ) (৩) জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী প্রশ্ন: হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটির ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেনঃ ‘তাঁরা রাসূলকে কল্যাণ বিষয়ে প্রশ্ন করতেন, কিন্তু আমি কিসে অকল্যাণ আছে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম...’। উক্ত হাদীছ থেকে বর্তমানের ইসলামী জামা‘আতসমূহ সম্বন্ধে কি ইঙ্গিত পাওয়া যায়? বর্তমান সালাফী আন্দোলনের সংগঠন সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?উত্তর: যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর রাসূলের প্রতি। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুরাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর হাদীছটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে। আর তা হচ্ছে, মুসলিমদের দলে দলে বিভক্ত হওয়া আদৌ বৈধ নয়; বরং তাদেরকে একটিমাত্র ইমারতের অধীনে এবং সেই ইমারতের খলীফার তত্ত্বাবধায়নে একক জামা‘আত হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু যদি কখনও এমন হয় যে, মুসলিমরা দলমত নির্বিশেষে একক খলীফার বায়‘আত করে একক জামা‘আত হয়ে থাকতে পারছে না, তাহলে সেক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর অনুসরণ প্রিয় কোনো মুসলিমের নির্দিষ্ট কোনো একটি দলে যোগদান করা বৈধ নয়। বিশেষ করে যখন প্রত্যেকটি দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত থাকবে আর দাবী করবে যে, তার একজন নির্দিষ্ট আমীর রয়েছে এবং ঐ আমীরের দলে দলভুক্ত সবাইকে তাঁর কাছে বায়‘আত করতে হবে। আর যখন এই বায়‘আতকে ‘বায়‘আতে কুবরা’ বা সর্ববৃহৎ বায়‘আত গণ্য করা হবে, তখন বিষয়টি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে। মনে রাখতে হবে, ‘বায়‘আতে কুবরা’ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা ছাড়া অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। বিষয়টি তখন আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে, যখন প্রত্যেকটি জামা‘আতের একজন করে বায়‘আত গ্রহণকারী আমীর থাকেন এবং তার অনুসারীরা উক্ত বায়‘আতের শর্তাবলী এমনভাবে মেনে চলে যে, তাদের কারো জন্য অন্য কারো মতামত গ্রহণের বৈধতা থাকে না। আমি অন্য কোনো আমীরের কথা বললাম না, কারণ আমীর কথাটি বললে অন্তত: নামের ক্ষেত্রে হলেও আমরা যেন তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করলাম। সেজন্য আমি আমীর না বলে অন্য কোনো ব্যক্তি বা আলেমের কথা বললাম। অর্থাৎ তাদের দলভুক্ত নয় এমন কোনো ব্যক্তি বা আলেমের সাথে দলীল-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাদের জন্য তাঁর মতামত গ্রহণের সুযোগ থাকে না। অতএব, দলগুলির অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে সেগুলোতে যোগদান করা কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়; বরং তাকে একাকী থাকতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে, তার যেসব ভাই পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্‌র অনুসরণে আগ্রহী, সে তাদের থেকে দূরে থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন,﴿وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١١٩ ﴾ [التوبة: ١١٩]  ‘আর তোমরা সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তাওবাহ ১১৯)। অর্থাৎ সত্যবাদী যেই হোক না কেন এবং যেখানেই হোক না কেন তাদের সাথে থাক। সেকারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর হাদীছে দলাদলির প্রত্যেকটি দলকে পরিত্যাগের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও উম্মতে মুহাম্মাদীকে নিম্নোক্ত হাদীছে সুসংবাদ প্রদান করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি জনগোষ্ঠী হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে; তাদের বিরোধীরা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না’। উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছ এবং হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর হাদীছে স্ববিরোধী কোনো বক্তব্য নেই। কেননা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর হাদীছে একদিকে যেমন দলাদলি করতে নিষেধ করা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি কুরআন ও সুন্নাহ্‌র অনুসারী সত্যবাদী মুমিনদের সাথে থাকতে বলা হয়েছে এবং তাদেরকে একক কোনো ব্যক্তির অন্ধ অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এই একক ব্যক্তি যদি দলমত নির্বিশেষে গোটা মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক বায়‘আতকৃত ইমাম হন, তাহলে তাঁর অনুসরণ করা যরূরী। মনে রাখতে হবে, মুসলিম উম্মাহ যদি একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির হাতে বায়‘আত করে, তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। আমার ধারণা মতে, দলাদলি সৃষ্টিকারীরা যদি ভয়াবহ সেই বিষয়টি জানত, তাহলে দলাদলি থেকে পশ্চাদ্‌ধাবন করত এবং হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর হাদীছের বক্তব্য অনুযায়ী তারা কাউকে তাদের ‘আমীর’ হিসাবে গ্রহণ করত না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একই সময়ে দু’জন খলীফার বায়‘আত সংঘটিত হলে শেষের জনকে তোমরা হত্যা কর’। অতএব, গোটা মুসলিম উম্মাহকে পরিচালনার জন্য একক খলীফা তৈরী পর্যন্ত তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে এবং অপেক্ষার এই সময়ে তাদের জন্য কোনক্রমেই ভিন্ন ভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন আমীর বা দলপ্রধান নির্ধারণ ও তাঁর হাতে বায়‘আত বৈধ হবে না। কারণ এই বায়‘আত মুসলিমদের বিভক্তি ও দলাদলিকে আরো বৃদ্ধি করবে। আমি বিভক্তি সৃষ্টির কথা না বলে বিভক্তি বৃদ্ধির কথা বললাম একারণে যে, দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলিমরা ইতোমধ্যে দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিভক্তির পরে প্রত্যেকটি দল যদি তাদের আলাদা আলাদা দলীয় প্রধান নির্ধারণ করে, তাহলে এই নেতৃত্ব উম্মতের মধ্যে বিভক্তি আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করবে। মহান আল্লাহ বলেন,﴿وَلَا تَنَٰزَعُواْ فَتَفۡشَلُواْ وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡۖ ﴾ [الانفال: ٤٦]  ‘তোমরা পরস্পরে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। অন্যথায়, তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হবে’ (আল-আনফাল ৪৬)। তবে মুসলিম উম্মাহ্‌র প্রত্যেককে তার সাধ্যানুযায়ী সর্বজন স্বীকৃত একক খলীফা তৈরীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর এটিই হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটির অর্থ। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার কাঁধে বায়‘আত না থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, তার জাহেলী মৃত্যু হবে’। দলাদলি সৃষ্টিকারীদের মধ্যে বহু সংখ্যক মানুষ এই হাদীছটি ভুল বুঝে থাকে। তারা মনে করে, প্রত্যেকটি মুসলিমের কাঁধে কারো না কারো বায়‘আত অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু হাদীছটির মর্মার্থ তা নয়; বরং এর অর্থ দু’টিঃ (১) গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা থাকলে কোনো মুসলিমের জন্য তাঁর বায়‘আত পরিত্যাগ করে জামা‘আত থেকে পৃথক থাকা বৈধ নয়। আর এই বায়‘আত পরিত্যাগ করে কারো মৃত্যু হলে তার মৃত্যুকে জাহেলী মৃত্যু গণ্য করা হবে। (২) যদি মুসলিমদের মধ্যে এমন খলীফা না থাকে, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই এমন খলীফা তৈরীর চেষ্টা করতে হবে, সবাই যার বায়‘আত করবে। এটিই হচ্ছে হাদীছের দ্বিতীয় অর্থ। হাদীছটির দ্বিতীয় এই অর্থকে কিছু ‘ফিক্বহী ক্বায়েদা’ সমর্থন করে। যেমন: مَا لَا يَتِمُّ الْوَاجِبُ إلَّا بِهِ فَهُوَ وَاجِبٌ ‘যা ছাড়া ওয়াজিব বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, সেটিও ওয়াজিব’। বুঝা গেল, মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা থাকা ওয়াজিব। এই খলীফা না থাকলে তাঁকে তৈরীর চেষ্টা করাও ওয়াজিব। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ্‌র এমন ইমাম না থাকলে তাদের দলে দলে বিভক্ত হয়ে থাকা ঠিক নয়। কেননা এই দলাদলি তাদের বিভক্তিকে আরো বৃদ্ধি করবে। সেজন্য আমার মতে, যারা কোনো দল বা সংগঠনের দিকে মানুষকে দা‘ওয়াত দেয়, তাদের এই দা‘ওয়াতের উদ্দেশ্য যদি হয় সংগঠন বা দল গঠন, যেসব দলের মূলনীতি ও শর্তসমূহ অন্যান্য সংগঠনের অনেক মূলনীতি থেকে ভিন্ন, তাহলে এই হাদীছে তা থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। তবে মুসলিমদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতে এবং তদ্‌নুযায়ী আমলের জন্য তাদেরকে সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে; বরং তা অপরিহার্য বিষয়। কেননা মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা তৈরীর জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে মানুষকে আগে দ্বীনের জ্ঞানে জ্ঞানী করে তুলতে হবে। অন্যথায় চূড়ান্ত এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে না।( ) প্রশ্ন: আন্দোলনধর্মী সংঘবদ্ধ দা‘ওয়াতী কার্যক্রম যদি সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি এবং সুবিন্যস্ত পরিকল্পনার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি? উত্তর: বর্তমান প্রচলিত সংগঠন এবং প্রচলিত সুবিন্যস্ত দা‘ওয়াতী কার্যক্রমে আমরা বিশ্বাস করি না। কেননা সংগঠন মুসলিমদেরকে তাদের দ্বীনী দায়িত্ব পালনে অক্ষম করে ফেলে। উল্লেখ্য যে, التنظيم ‘আত-তানযীম’ শব্দটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়; প্রথমত: এটি ব্যাপক অর্থে গোপন কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে। দ্বিতীয়ত: সংক্ষিপ্ত পরিসরে এটি তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ, আরবী ব্যকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ে মুসলিমদেরকে পাঠদানের সুবিন্যস্ত বন্দোবস্তকে বুঝায়। তবে এই ধরনের প্রশ্নে সাধারণতঃ দ্বিতীয় অর্থটি উদ্দেশ্য নয়; বরং দলাদলি সম্পর্কে জানতে চাওয়াই এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য। বর্তমানে বিভিন্ন জামা‘আত ও সংগঠনের অবস্থা হচ্ছে, তারা পরস্পরে বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করছে, প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন কর্মপদ্ধতি ও মূলনীতি রয়েছে এবং প্রত্যেকটি জামা‘আতের পৃথক পৃথক অনুসরণীয় দলপ্রধান রয়েছেন। মনে রাখতে হবে, ইসলামের সাথে এসব সংগঠনের কোনই সম্পর্ক নেই। এমনিতেই আমরা দলাদলির মধ্যে বসবাস করছি, এর পরে যদি আমরা আবার নতুন নতুন দল গঠন করি, তাহলে এর মানে হচ্ছে আমরা দলাদলি ও মতানৈক্যের পরিমণ্ডল আরো লম্বা করলাম। সেজন্য আমরা প্রচলিত এসব সাংগঠনিক কার্যক্রমকে সমর্থন করি না।এখানে আমি একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যে বিষয়ে বিশেষ করে ভাল মনের অনেক মানুষ সজাগ নন; বর্তমান ইসলামী বিশ্বে বিপ্লব ও জাগরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা ২০/৩০ বছর আগে ছিল না। আমার মত বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষেরা বলতে পারবেন যে, আগে এসব ছিল না। বর্তমান এই জাগরণের সাথে একই ধাঁচে যুক্ত হয়েছে কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি ও কর্মপদ্ধতির দিকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান। ইদানীং শেষোক্ত দা‘ওয়াতের ব্যাপক সাড়া পড়েছে এবং অন্যান্য দলের লোকেরা মনে করছে, দেশ এখন সালাফী দা‘ওয়াতের দখলে। সেকারণে প্রচলিত সালাফী দা‘ওয়াত এখন ‘সালাফী’ নাম দিয়ে বিভিন্ন দল গঠনের সুযোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সালাফী দা‘ওয়াত এসব দলাদলির অনেক ঊর্ধ্বে। সালাফে ছালেহীন কি এমন দলাদলির সৃষ্টি করেছিলেন?! কখনই না। এসব দলাদলি তো দূরের কথা তারা এমনকি রাজনৈতিক দলাদলিতেও বিশ্বাসী ছিলেন না। এসব দলাদলি ইসলাম পরিপন্থী। মহান আল্লাহ বলেন,     ﴿ وَلَا تَكُونُواْ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٣١ مِنَ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗاۖ كُلُّ حِزۡبِۢ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ ٣٢ ﴾ [الروم: ٣١،  ٣٢]  ‘আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত’ (আর-রূম ৩১-৩২)। সত্যিকার অর্থে এটিই হচ্ছে বর্তমান দলাদলির বাস্তব চিত্র। আমার মতে, কোনো দলের সাথে ‘সালাফী’ শব্দটির ব্যবহার বিদ‘আতের সাথে ‘ইসলামী’ শব্দটি ব্যবহারের মত। যাহোক, সালাফী দা‘ওয়াতে বিশ্বাসীদের মন কাড়ার জন্য এখন এই শব্দটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ প্রকৃত সালাফী দা‘ওয়াত কখনই কোনো প্রকার দলাদলি সমর্থন করে না, যদিও বিশ্ব সেরা মানুষটিও সেই দলাদলির পুরোধা হন।কেউ দলাদলির দিকে আহ্বান করলেই বুঝতে হবে, সে সরল-সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হতে শুরু করেছে। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবায়ে কেরামের সাথে বসা অবস্থায় ছিলেন। এমন সময় তিনি মাটির উপর সোজা একটি দাগ টেনে নিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন,﴿ وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ﴾ [الانعام: ١٥٣]  ‘নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথেই চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে’ (আল-আন‘আম ১৫৩)। অতঃপর সোজা দাগটির পাশে ছোট ছোট আরো কিছু দাগ টেনে বললেন, ‘এই সোজা দাগটিই হচ্ছে আল্লাহ্‌র পথ এবং এর দু’পাশের দাগগুলি এমন পথ, যেগুলির প্রত্যেকটির শেষ প্রান্তে শয়তান রয়েছে। সে মানুষদেরকে তার দিকে ডাকছে’। সরল-সোজা পথটির আশপাশের পথগুলি শুধুমাত্র প্রাচীন ছূফীদের পথ নয়; বরং আধুনিক নতুন নতুন দলগুলিও উক্ত পথের অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে বিভ্রান্ত যেসব পথের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর কোনো কোনোটি আগে ভিন্ন আক্বীদা পোষণ করত এবং রাজনীতির সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। যেমন: মু‘তাযিলা, মুরজিয়া ইত্যাদি। আবার সেসব দলের কোনো কোনটি সরাসরি রাজনৈতিক দল ছিল। যেমন: খারেজী মতবাদ, যার মূলনীতিই হচ্ছে মুসলিম সরকারের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ। পরিশেষে বলব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট ছোট যেসব পথের কথা বলেছেন, সেগুলো তাঁর আঁকা সোজা পথের বাইরের সব পথ, মত ও পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করে।যদি কেউ বলে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব দলের প্রয়োজন রয়েছে। জবাবে আমরা বলব, শরী‘আত বিরোধী কোনো কাজ করে কোনো প্রকার কল্যাণ সাধন সম্ভব নয়। তাছাড়া এসব মুসলিমদেরকে দলে-উপদলে বিভক্ত করে ফেলছে, প্রত্যেকটি দল নিজের মূলনীতি নিয়ে খুশী থাকছে।( ) প্রশ্ন: মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৎকাজে এবং পরহেযগারিতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে ‘সংঘবদ্ধ দা‘ওয়াতী কাজ’-এর সঠিক ব্যাখ্যা কি হবে? কেননা কেউ কেউ মনে করেন, এক্ষেত্রে অবশ্যই নেতৃত্ব এবং আনুগত্য থাকতে হবে আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার আমীরের অবাধ্য হল, সে স্বয়ং আমার অবাধ্য হল’।উত্তর: উল্লেখিত হাদীছটি ‘ছহীহ’। এর অর্থ হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর খলীফা কর্তৃক নিযুক্ত আমীরের অনুসরণ করা ওয়াজিব। প্রশ্নকারী হাদীছটিকে যে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, তা সঠিক নয়; বরং হাদীছটি গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমরা যেন মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা তৈরীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই, যিনি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্‌র আলোকে আমাদেরকে পরিচালিত করবেন। যাহোক, মুসলিম উম্মাহ্‌র একক খলীফা যদি আমাদের উপরে কাউকে আমীর হিসাবে নিযুক্ত করেন, তাহলে তার অনুসরণ করা ওয়াজিব।... ( )তিনি হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত ফেতনা সম্পর্কিত হাদীছটি উল্লেখ করার পর বলেন, ‘হাদীছটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হাদীছটিতে বর্তমান মুসলিমদের বাস্তব চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কারণ আজ একদিকে যেমন মুসলিম উম্মাহ্‌র প্রতিষ্ঠিত জামা‘আত ও খলীফা নেই, অন্যদিকে তেমনি তারা চিন্তা-চেতনা, কর্মপদ্ধতি ও মূলনীতির ক্ষেত্রে শতধাবিভক্ত হয়ে গেছে। হাদীছটির বক্তব্য অনুযায়ী, কোনো মুসলিম এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে সে কোনো দল, জামা‘আত বা সংগঠনে যোগদান করবে না। অর্থাৎ যেহেতু এমন জামা‘আত বর্তমানে নেই, যাদের নেতৃত্বে গোটা মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক বায়‘আতকৃত একক খলীফা থাকার কথা, সেহেতু অন্য কোনো জামা‘আতে যোগ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই’।( )(৪) সঊদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী আব্দুল আযীয ইবনে বায প্রশ্ন: সূদানের মুতাওয়াক্কিল ইবনে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের সূদানে একটি জামা‘আত আছে, যারা মানুষকে সালাফী দা‘ওয়াত দেয়। তবে তাদের একজন প্রধান আমীর ও অনেকগুলি সাধারণ আমীর রয়েছেন এবং তারা তাদের সদস্যদেরকে প্রধান আমীরের অনুসরণ করতে বাধ্য করে। এমনকি ইজতেহাদী বিষয়েও তাদেরকে তার অনুসরণে বাধ্য করা হয়। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানিয়ে বাধিত করবেন।উত্তর: এমন সংগঠন বা দা‘ওয়াতী কাজের এমন পদ্ধতির কোনো শরঈ ভিত্তি আছে বলে আমার জানা নেই। প্রশ্নে ইমারত বা নেতৃত্বের যে কথাটি বলা হয়েছে, তা শুধুমাত্র মুসলিম সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; সৎকাজে যার অনুসরণ করতে হবে, অসৎকাজে নয়।  কোনো দল কর্তৃক কাউকে আমীর বানিয়ে তার অনুসরণ করা মারাত্মক ভুল। কাউকে সৎকাজে ছাড়া অনুসরণ করা যাবে না। কোনো বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হলে বিবাদীয় বিষয় কুরআন ও সুন্নাহ্‌র দিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,  ﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ﴾ [النساء: ٥٩]  ‘অতঃপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক’ (আন-নিসা ৫৯)। সুতরাং বিভিন্ন জামা‘আত ও মাযহাবের অনুসারীদের উচিৎ বিবাদীয় যে কোনো বিষয়কে কুরআন ও সুন্নাহ্‌র দিকে ফিরিয়ে দেওয়া। কারো জন্য বৈধ নয় যে, সে কাউকে ফায়ছালাকারী নিযুক্ত করে হক-বাতিল সবকিছুতে তার অনুসরণ করে চলবে; বরং কুরআন ও সুন্নাহকে চূড়ান্ত ফায়ছালাকারী হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।( ) প্রশ্ন: মুতাওয়াক্কিল বলেন, বর্তমান মুসলিম দেশসমূহে বিভিন্ন জামা‘আত ও সংগঠনের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে মতভেদ ও অমিলেরও কমতি নেই। এমনকি এক পক্ষ অপর পক্ষকে পথভ্রষ্ট ভাবতেও দ্বিধা করে না। এমতাবস্থায় উলামায়ে কেরামের ভূমিকা কি হতে পারে? হক তুলে ধরার জন্য এই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করা কি আপনি যথোপযুক্ত মনে করেন না? কারণ মুসলিম জাতির জন্য এসব মতভেদ ও বিভক্তির ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।উত্তর: উলামায়ে কেরামের উচিৎ আসল বাস্তবতা তুলে ধরা, প্রত্যেকটি জামা‘আত ও সংগঠনের সাথে আলোচনা করা এবং সবাইকে আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত সরল পথে চলার নছীহত করা। যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে এবং ব্যক্তি স্বার্থে বা অন্য কোনো কারণে নিজের একগুঁয়েমি বজায় রাখবে, তার বিষয়টি জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া এবং তাদেরকে তার থেকে সতর্ক করা অপরিহার্য। তাহলে যারা তার সম্পর্কে জানে না, তারা তার থেকে দূরে থাকতে পারবে। ফলে সে কাউকে আল্লাহ নির্দেশিত সরল পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।( ) প্রশ্ন: বিভ্রান্ত দলগুলির ক্ষেত্রে দা‘ঈদের ভূমিকা বিষয়ে আপনার নছীহত কি? যেসব যুবক দ্বীনী দল হিসাবে পরিচিত বিভিন্ন দলে যোগদানের মন্ত্রে প্রভাবিত, তাদের ব্যাপারে আপনার বিশেষ নছীহত কামনা করছি।উত্তর: আমরা আমাদের সকল ভাইকে প্রজ্ঞা, সদুপদেশ এবং সদ্ভাবে তর্কের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র পথে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নছীহত করছি। দা‘ওয়াতী এই সার্বজনীন পদ্ধতি বিদ‘আতী ও বিভ্রান্ত দলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। সুতরাং মুমিন ব্যক্তি কোনো বিদ‘আত দেখলে অবশ্যই সে সাধ্যানুযায়ী শরঈ পদ্ধতিতে তার বিরোধিতা করবে। আর দ্বীনের ভেতরে মানুষ যেসব নতুন নতুন বিষয়ের সৃষ্টি করে দ্বীনের সাথে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, সেগুলোই বিদ‘আত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করে, যা তার মধ্যে নেই, তা-ই প্রত্যাখ্যাত’। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল, যার প্রতি আমাদের নির্দেশনা নেই, তা-ই প্রত্যাখ্যাত’। বিদ‘আতের কিছু উদাহরণ হচ্ছে: রাফেযী মতবাদ, মু‘তাযিলা মতবাদ, মুরজিয়া মতবাদ, খারেজী মতবাদ, মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান উদযাপন, কবরের উপর ঘর-বাড়ি-গম্বুজ ইত্যাদি নির্মাণ, কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ। যাহোক, যারা বিদ‘আত করবে, তাদেরকে নছীহত করতে হবে, কল্যাণের পথে তাদেরকে আহ্বান করতে হবে এবং শর‘ঈ দলীল-প্রমাণ দিয়ে তাদের সৃষ্ট বিদ‘আতের বিরোধিতা করতে হবে। সাথে সাথে তাদের অজানা হকের কথাটি তাদেরকে বিনম্রভাবে, সুন্দর পদ্ধতিতে এবং স্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা শিখিয়ে দিতে হবে। তা হলে তারা হয়তো হক কবূল করবে। বর্তমানে সৃষ্ট বিভিন্ন নতুন দলে যোগদানের বিষয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে, এসব দলাদলি পরিহার করে কুরআন ও সুন্নাহ্‌র পথে পরিচালিত হওয়া সবার জন্য যরূরী। এক্ষেত্রে সবাই পরস্পরকে একনিষ্ঠভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। আর এ পদ্ধতিতে তারা আল্লাহ্‌র দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন,    ﴿ أَلَآ إِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٢٢ ﴾ [المجادلة: ٢٢]  ‘জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম’ (আল-মুজাদালাহ ২২)। তিনি তাদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী তুলে ধরে বলেন,﴿ لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ ﴾ [المجادلة: ٢٢]  ‘যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না’ (আল-মুজাদালাহ ২২)। অন্যত্র তিনি আরো বলেন,   ﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ وَفِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ حَقّٞ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ ١٩ ﴾ [الذاريات: ١٥،  ١٩]  ‘আল্লাহভীরুরা জান্নাতে ও প্রস্রবণে থাকবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের পালনকর্তা যা তাদেরকে দেবেন, তারা তা গ্রহণ করবে। নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ, তারা রাতের খুব সামান্য অংশে ঘুমাত, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং তাদের ধন-সম্পদে যাচনাকারী ও বঞ্চিতের অধিকার ছিল’ (আয-যারিয়াত ১৫-১৯)। এগুলিই হচ্ছে আল্লাহ্‌র দলের সদস্যদের বৈশিষ্ট্য; তারা কুরআন-সুন্নাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষাবলম্বন করে না। কুরআন-সুন্নাহ্‌র দিকে মানুষকে দা‘ওয়াত দেওয়া এবং ছাহাবায়ে কেরাম, সালাফে ছালেহীন ও তাদের অনুসারীদের পথে চলা ছাড়া তারা অন্য কোনো দলে যোগদান করে না।আল্লাহ্‌র দলের লোকেরা অন্যান্য সকল দল ও সংগঠনের লোকদেরকে নছীহত করে এবং তারা তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এবং তাদের  মধ্যে বিবাদীয় বিষয়কে এতদুভয়ের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। তারা বলে কুরআন-সুন্নাহ উভয়ের সাথে অথবা যে কোনো একটির সাথে যা মিলে যাবে, তা-ই হক। পক্ষান্তরে যা মিলবে না, তা পরিহার করা অপরিহার্য। এই শাশ্বত মূলনীতি জামা‘আতুল ইখওয়ান, আনছারুস-সুন্নাহ, জাম্‌ইয়াহ শারইয়াহ, তাবলীগ জামা‘আত অথবা ইসলামের দিকে সম্বন্ধিত অন্য যে কোনো দল বা সংগঠনের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। উপরিউক্ত মূলনীতির মাধ্যমে সবার সংঘবদ্ধ এবং একক দলে পরিণত হওয়া সম্ভব, যে একক দল আল্লাহ্‌র দল তথা ‘আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলবে। মনে রাখতে হবে, শরী‘আত বিরোধী বিষয়ে কোনো দল বা সংগঠনের অন্ধভক্তি দেখানো বৈধ নয়।( ) প্রশ্ন: যুবকদের ইসলামের উপর প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য মুসলিম দেশসমূহে যেসব ইসলামী দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোকে কি ইতিবাচক গণ্য করা যাবে?উত্তর: ইসলামী দলগুলিতে মুসলিমদের জন্য কল্যাণ আছে। তবে প্রত্যেকটি দলকে দলীলসহ হক প্রকাশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতে হবে এবং পরস্পরে বিরোধপূর্ণ আচরণ পরিহার করতে হবে; বরং সবাইকে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে এবং একে অপরকে ভালবাসতে হবে। অনুরূপভাবে একে অপরকে নছীহত করবে এবং অপরের ভাল দিকগুলি প্রচার করতে হবে আর মন্দ দিকগুলি পরিহারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কুরআন ও হাদীছের দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার শর্তে এসব ইসলামী দল থাকতে কোনো বাধা নেই।( ) প্রশ্ন: বিভিন্ন দলে দলভুক্ত যুবকদের ব্যাপারে আপনার নছীহত কি?উত্তর: এসব যুবকের হকের পথ তালাশ করা এবং তদ্‌নুযায়ী চলা উচিৎ। যেসব বিষয়ে তাদের সমস্যা হবে, সেসব বিষয়ে উলামায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করে সমাধান জেনে নিবে। অনুরূপভাবে মুসলিমদের উপকার সাধিত হবে এমন বিষয়ে শর‘ঈ দলীলের ভেতরে থেকে অন্যান্য দলের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা উচিৎ। পারস্পরির সহযোগিতা হতে হবে সুন্দর কথা ও উত্তম পদ্ধতিতে; কঠোরতা ও ঠাট্টা-বিদ্রুপের মাধ্যমে নয়। যুবকদেরকে আমি আরো বলব, সালাফে ছালেহীন তথা ছাহাবায়ে কেরাম ও তাঁদের অনুসারীগণ যেন তাদের আদর্শ হন এবং হক যেন হয় তাদের দলীল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম যে আক্বীদার উপর চলেছেন, তা যেন হয় তাদের ব্রতী।( )
 (৫) আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ আল-উছায়মীন প্রশ্ন: সূদানে অনেকগুলি দল আছে, যেগুলির কোনো কোনো দল একজন করে দলীয় ‘আমীর’ নির্ধারণ করে এবং তাঁর অনুসরণ অপরিহার্য গণ্য করে। এই ইমারতের হুকুম কি? উল্লেখ্য যে, তারা এই ইমারতকে সফর অবস্থার ইমারতের উপর কিয়াস করে।উত্তর: সফরের ইমারতের দলীল পাওয়া যায়। কিন্তু মুক্বীম অবস্থায় নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষের আমীর নির্বাচনের প্রমাণে কোনো দলীল পাওয়া যায় না; বরং এই ইমারত মুসলিমদের দলাদলি ও বিভক্তি অবধারিত করে দেয়। মুসলিমদের উচিৎ, সবাই এক হয়ে যাওয়া। প্রত্যেক দলের ভিন্ন ভিন্ন আমীর নিম্নোক্ত আয়াতটির পরিপন্থী:   ﴿ وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ ﴾ [ال عمران: ١٠٣]  ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান ১০৩)।( )রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার আমীরের পক্ষ থেকে অপছন্দনীয় কিছু পাবে, সে ধৈর্য্য ধারণ করবে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে সামান্য পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যু বরণ করবে, তার মৃত্যু হবে জাহেলী মৃত্যু’। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, হাদীছে রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে বলা হয়েছে। নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে মিলেঝুলে থাকলে গোটা জাতি একক জাতিতে পরিণত হতে পারবে। পক্ষান্তরে জাতি যদি রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে বিরোধ করে প্রত্যেকটি দল পৃথক পৃথক অনুসরণীয় নেতা বানিয়ে নেয়, তাহলে জাতি বিভক্ত হয়ে যাবে। সুতরাং যারা একজনকে আমীর বানিয়ে তার হাতে বায়‘আত করে তার অনুসরণ করে চলে, তাদের একাজ মারাত্মক ভুল প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয়; বরং তাদের একাজ এক দিক বিবেচনায় যেমন বিদ‘আত, তেমনি অন্যদিক বিবেচনায় তা সরকারের বিরোধিতার শামিল।তবে সফর অবস্থায় আমীর নির্বাচনের বিষয়টি ভিন্ন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন তিনজন সফরে বের হবে, তখন তারা তাদের একজনকে আমীর বানাবে’। হাদীছটিতে ইমারত বলতে বিশেষ ইমারতের কথা বলা হয়েছে।...আমি আবারও বলছি, মুক্বীম অবস্থায় আমীর হিসাবে কারো বায়‘আত গ্রহণ করে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের মত তার অনুসরণ করা বিদ‘আত।( ) প্রশ্ন: ইসলামে জামা‘আতের গুরুত্ব কতটুকু? কোনো মুসলিমের নির্দিষ্ট কোনো জামা‘আতে যোগদান করা কি শর্ত?উত্তর: ইসলামে জামা‘আত হচ্ছে দ্বীনের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জামা‘আত সম্পর্কে বলেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী থাকবে। তাদের বিরোধীরা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি কিয়ামত এসে যাবে, তবুও তারা ঐরূপই থাকবে’। হাদীছটিতে উল্লেখিত এই জামা‘আতের সাথেই সবার থাকা উচিৎ।তবে দলাদলির জামা‘আত, যে হক বা বাতিলের তোয়াক্কা না করে যে কোনো মূল্যে নিজের মতামতের বিজয় কামনা করে, সেই জামা‘আতে যোগদান করা জায়েয নয়। কেননা এই ধরনের দলে যোগ দেওয়া মুসলিম জামা‘আত থেকে বের হয়ে দলাদলিতে যোগ দেওয়ার শামিল। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍۚ إِنَّمَآ أَمۡرُهُمۡ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ١٥٩ ﴾ [الانعام: ١٥٩]  ‘নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয় আল্লাহ তা‘আয়ালার নিকট সমর্পিত’ (আল-আন‘আম ১৫৯)। তিনি অন্যত্র বলেন,﴿ ۞شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ كَبُرَ عَلَى ٱلۡمُشۡرِكِينَ مَا تَدۡعُوهُمۡ إِلَيۡهِۚ ٱللَّهُ يَجۡتَبِيٓ إِلَيۡهِ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِيٓ إِلَيۡهِ مَن يُنِيبُ ١٣ ﴾ [الشورا: ١٣]  ‘তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারণ করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না’ (আশ-শূরা ১৩)। তিনি অন্যত্র আরো বলেন,﴿ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٥ ﴾ [ال عمران: ١٠٥]  ‘আর তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং বিরোধ করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি’ (আলে ইমরান ১০৫)।একটি কথা বলা ভাল, ইসলামী দলগুলি যদি সত্যিকার অর্থে ইসলামের বিজয় চায়, তাহলে পরস্পরে বিচ্ছিন্ন না হয়ে তাদের শুধুমাত্র একটি দলে সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ, যে দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের পথের দল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এই উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে যাবে এবং একটি ছাড়া সবগুলিই জাহান্নামে যাবে। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! জান্নাতী সেই দল কোন্‌টি? তিনি বললেন, যে আমার এবং আমার ছাহাবার পথে থাকবে’। এই দলগুলি মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে এবং তাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে শত্রুতা। এমনকি একজন আরেক জনকে যম শত্রু মনে করে; অথচ তারা সবাই মুসলিম এবং সবাই তার নিজের দ্বারা ইসলামের বিজয় কামনা করে। কিন্তু এত বিরোধ আর বিভক্তি নিয়ে ইসলামের বিজয় কি করে সম্ভব?! যাহোক, আমি আমার ভাইদের প্রতি হকের উপর এক হয়ে যাওয়ার এবং কুরআন ও আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে যেয়ে বিরোধের সমস্ত দিক পরিহার করার আহ্বান জানাই।দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলিম যুবকেরা আজ এই বিভক্তির শিকারে পরিণত হয়েছে। কারণ তারা একেক জন একেক দলে যোগ দিয়ে পরস্পর পরস্পরকে গালাগালি ও নিন্দা করে, যা মুসলিম যুবকদের জাগরণে চরম বাধা। যাহোক, আমি আবারও মুসলিমদেরকে দলাদলি পরিহার করার নছীহত করছি। আমি মনে করি, গোটা মুসলিম উম্মাহকে পরস্পরে বিচ্ছিন্ন না হয়ে এক হয়ে যাওয়া উচিৎ। প্রত্যেকটি দল অন্যান্য দলের বিপরীতে নতুন নাম দিয়ে আরেকটি দল গঠন করা উচিৎ নয়।( )তিনি ‘হিল্‌ইয়াতু ত্বলিবিল ইল্‌ম’ পুস্তিকার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘দলীয় ভিত্তির উপর কোনো প্রকার মিত্রতা ও শত্রুতা চলবে না’ শিরোনামের মধ্যে বলেন, এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, দ্বীনী শিক্ষার প্রত্যেকটি শিক্ষানবিশকে সর্বপ্রকার দলাদলিমুক্ত থাকতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো দলের উপর ভিত্তি করে মিত্রতা বা বৈরীতা গড়ে তোলা যাবে না। মনে রাখতে হবে, নিঃসন্দেহে এটি সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি বিরোধী। সালাফে ছালেহীনের নিকট কোনো প্রকার দলাদলি ছিল না, তাঁরা সবাই একটিমাত্র দলের অন্তুর্ভুক্ত ছিলেন, তাঁরা সবাই নিম্নোক্ত আয়াতের ভাষ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, ﴿هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ﴾ [الحج: ٧٨]  ‘তিনিই তোমাদের নাম মুসলিম রেখেছেন’ (আল-হজ্জ ৭৮)। অতএব, কুরআন ও সুন্নাহ্‌র বক্তব্যের বাইরে অন্য কোনো কিছুর উপর ভিত্তি করে দলাদলি, মিত্রতা ও বৈরীতা চলবে না। দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট একটি দলের সাথে জড়িত, ফলে সে ঐ দলের মূলনীতি সমর্থন করে চলে এবং তার সমর্থনের পক্ষে এমন কিছু দলীল পেশ করে, যা কখনই তার পক্ষে নয়; বরং তার বিপক্ষের দলীল হতে পারে। দলীয় কর্মপদ্ধতি ও মূলনীতি সমর্থন না করার কারণে এমনকি তার নিকটতম মানুষটিকেও পথভ্রষ্ট গণ্য করতে সে ইতস্তত বোধ করে না। সে বলে, তুমি আমার পথে না চললে তুমি আমার বিরোধী।…অতএব, ইসলামে কোনো প্রকার দলাদলি চলবে না। মুসলিমদের দলাদলির কারণে আজ বিভিন্ন পথের জন্ম হয়েছে এবং মুসলিম উম্মাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আজ তারা পরস্পরকে পথভ্রষ্ট গণ্য করছে এবং তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করছে।( ) প্রশ্ন: কুরআন ও হাদীছের কোথাও কি দল সৃষ্টির প্রমাণ মিলে?উত্তর: কুরআন ও হাদীছে দল তৈরীর প্রমাণ মিলা তো দূরের কথা; বরং এতদুভয়ে দলাদলির কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍۚ إِنَّمَآ أَمۡرُهُمۡ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ١٥٩ ﴾ [الانعام: ١٥٩]  ‘নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি তাদেরকে তাদের আমলের হিসাব দিয়ে দিবেন’ (আল-আন‘আম ১৫৯)। তিনি অন্যত্র বলেন,﴿كُلُّ حِزۡبِۢ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ ٥٣ ﴾ [المؤمنون: ٥٣]  ‘প্রত্যেক দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত’ (আল-মুমিনূন ৫৩)। নিঃসন্দেহে এসব দলাদলি আল্লাহ্‌র নির্দেশের পরিপন্থী। তিনি এরশাদ করেন, ﴿ إِنَّ هَٰذِهِۦٓ أُمَّتُكُمۡ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ وَأَنَا۠ رَبُّكُمۡ فَٱعۡبُدُونِ ٩٢ ﴾ [الانبياء: ٩٢]  ‘তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, আমারই ইবাদত কর’ (আল-আম্বিয়া ৯২)।এসব দলাদলির ফলাফলও কল্যাণকর নয়। কেননা প্রত্যেকটি দল অপর পক্ষকে নানাভাবে গালাগালি করে থাকে। প্রশ্ন: কেউ কেউ বলে, কোনো দল বা সংগঠনের অধীনে না থাকলে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম শক্তিশালী হয় না। এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?উত্তর: এ ধারণা সঠিক নয়: বরং কুরআন ও হাদীছের অধীনে থেকে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর চার খলীফার নীতি অনুসরণ করে চললে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম আরো বেশী বেগবান হবে।( ) প্রশ্ন: বর্তমান ইসলামী বিশ্বে আমরা লক্ষ্য করছি যে, বহু দল ইসলামের পথে মানুষকে আহ্বান করছে এবং প্রত্যেকেই বলছে, আমি সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি অনুসরণ করে চলছি এবং আমার সাথেই রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ। এক্ষণে, এসব দল সম্পর্কে আমাদের ভূমিকা কি হবে? এসব দলের আমীরগণের মধ্যে যে কোনো একজনের হাতে বায়‘আত করার বিধান কি?উত্তর: যেসব দল দাবী করছে যে, তারা হকের উপরে আছে, তাদের সম্পর্কে মন্তব্য করা খুবই সহজ। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করব, হক কাকে বলে? জবাব, পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ সমর্থিত বক্তব্যই হচ্ছে হক। যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে মুমিন, কুরআন ও সুন্নাহ্‌র দিকে প্রত্যাবর্তন করলে তার যাবতীয় দ্বন্দ্ব নিরসন হওয়া সম্ভব। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, কোনো কিছুই তার উপকারে আসবে না। মহান আল্লাহ বলেন,﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ﴾ [النساء: ٥٩]  ‘অতঃপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক’ (আন-নিসা ৫৯)। সুতরাং এসব জামা‘আতের লোকজনদের আমরা বলব, তোমরা একতাবদ্ধ হয়ে যাও; প্রত্যেকেই তার প্রবৃত্তির পূজা ছেড়ে দাও এবং কুরআন-সুন্নাহ্‌র বক্তব্যকে আঁকড়ে ধরার পাকাপোক্ত নিয়্যত কর।...তবে রাষ্ট্রপ্রধান বা দেশের সরকার ছাড়া অন্য কারো হাতে বায়‘আত করা বৈধ নয়। কেননা আমরা যদি প্রত্যেকের পৃথক পৃথক বায়‘আতের কথা বলি, তাহলে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত আমীর সৃষ্টি হবে। মূলত: এটিই হচ্ছে বিভক্তি।কোনো দেশে ইসলামী বিধান চালু থাকলে, সেখানে অন্য কারো হাতে বায়‘আত জায়েয নেই। তবে কোনো দেশের সরকার যদি আল্লাহ্‌র বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা না করে, তাহলে তার কয়েকটি অবস্থা হতে পারেঃ সরকারের কিছু কিছু কর্মকাণ্ড কখনো কুফরী হতে পারে, কখনো যুলম হতে পারে, আবার কখনো ফাসেক্বীও হতে পারে। কুরআন-হাদীছের আলোকে যখন স্পষ্ট প্রমাণিত হবে যে, কোনো দেশের সরকার স্পষ্ট কুফরীতে অনঢ় রয়েছে, তাহলে আমাদেরকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। তবে তার মোকাবেলায় নামা যাবে না এবং শক্তি প্রয়োগ করে তার বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না। তার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করলে তা হবে শরী‘আত ও হিকমত পরিপন্থী। আর সে কারণে মক্কায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিহাদের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। কেননা সে সময় তাঁর এমন কোনো শক্তি ছিল না, যার মাধ্যমে তিনি মক্কার মুশরিকদেরকে মক্কা থেকে বের দিতে পারবেন বা তাদেরকে হত্যা করতে পারবেন। সুতরাং সরকারের অস্ত্র-শস্ত্রের তুলনায় যাদের কোনো অস্ত্র নেই বললেই চলে এবং যাদের সংখ্যা নিতান্তই কম, তাদের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যাওয়া হিকমত পরিপন্থী বৈ কিছুই নয়।...সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার জন্য হাদীছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের কথা বলা হয়েছে; আর তা হচ্ছে, ব্যক্তিকে নিজেই সরকারের কুফরীর বিষয়টি স্বচক্ষে দেখতে হবে, অন্যের কাছ থেকে শুনলে চলবে না। কারণ অনেক সময় মিথ্যা প্রচার করা হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, তার ভেতরে কুফরী অবশ্যই থাকতে হবে; ফাসেক্বী নয়। সে যদি বড় ধরনের ফাসেক্বীও করে বসে, তথাপিও তার বিরুদ্ধে মাঠে নামা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি সে যেনা করে বা মদ পান করে অথবা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মাঠে নামা যাবে না। তবে সে যদি কারো রক্ত হালাল মনে করে তাকে হত্যা করে, তাহলে সেক্ষেত্রে হুকুম আলাদা হবে। হাদীছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের কথা বলা হয়েছে; তা হচ্ছে, সরকারের কুফরী স্পষ্ট হতে হবে, যেখানে কোনো প্রকার ব্যাখ্যার অবকাশ থাকবে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সরকারের কুফরীর ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ্‌র স্পষ্ট দলীল থাকতে হবে, এখানে কিয়াসী দলীল চলবে না।এই হচ্ছে চারটি শর্ত। সরকারের বিপক্ষে মাঠে নামার পঞ্চম শর্ত হচ্ছে, শক্তি ও সামর্থ্য থাকা। শেষোক্ত এই শর্তটি যে কোনো ওয়াজিবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ বলেন,﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦]  ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না’ (আল-বাক্বারাহ ২৮৬)। তিনি অন্যত্র বলেন,﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ ﴾ [التغابن: ١٦]  ‘অতএব, তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর’ (আত-তাগাবুন ১৬)।এক্ষণে, যেসব ভাই তাদের দৃষ্টিতে তাদের ইসলামী সরকার নেই মনে করে বিভিন্ন দল গঠন করে প্রত্যেকটি দলের একজন করে আমীর নির্ধারণ করতে চায়, আমি তাদেরকে বলব, এটি তোমাদের মারাত্মক ভুল, প্রত্যেকটি দলের আলাদা আলাদা আমীর বানিয়ে মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে দেওয়া তোমাদের জন্য আদৌ বৈধ নয়। বরং যে সরকারকে হটানোর সবগুলি শর্ত পাওয়া যায়, তাকে হটানোর জন্য তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা করতে হবে।( )
 (৬) সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ ছালেহ আল-ফাওযান মুহতারাম শায়খ বলেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় দা‘ওয়াত দেওয়া ওয়াজিব। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ ﴾ [النحل: ١٢٥]  ‘আপনি আপনার পালনকর্তার পথের দিকে দা‘ওয়াত দিন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে এবং উত্তমরূপে উপদেশ শুনিয়ে’ (আন-নাহ্‌ল ১২৫)। তবে মুসলিমদের পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এবং অন্যকে হক মনে না করে শুধুমাত্র নিজেকে হক মনে করা দা‘ওয়াতের কোনো পদ্ধতি ও মূলনীতি হতে পারে না। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন দলের বাস্তব চিত্র তা-ই। যাহোক, যে মুসলিমের জ্ঞান ও সামর্থ্য আছে, তার উপর কর্তব্য হচ্ছে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জ্ঞান সহকারে মানুষকে আল্লাহ্‌র পথে ডাকা এবং অন্যদেরকে সহযোগিতা করা। তবে যেন এমন না হয় যে, প্রত্যেকটি জামা‘আতের নিজেদের জন্য আলাদা নিয়মনীতি নির্দিষ্ট  করে নেয়, যা অন্য জামা‘আতের বিরোধী। বরং গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌র জন্য উচিত একটিমাত্র নিয়মনীতি থাকা, সবাই পারস্পরিক সহযোগিতা করা এবং একে অন্যের সাথে পরামর্শ করে চলা। বিভিন্ন দল এবং ভিন্ন ভিন্ন পথ ও মত সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা এগুলি মুসলিম ঐক্য ধ্বংস করে এবং মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করে, যেমনটি মুসলিম ও অমুসলিম দেশে বিভিন্ন দলের মধ্যে আজ এই বাস্তব চিত্র দেখা যাচ্ছে। সুতরাং দা‘ওয়াতী ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দল গঠন করার কোনো প্রয়োজনই নেই; বরং এক্ষেত্রে যরূরী বিষয় হচ্ছে, যার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আছে, সে একাকী হলেও মানুষকে আল্লাহ্‌র পথে দা‘ওয়াত দিবে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে থাকলেও দাঈদের দা‘ওয়াতী মূলনীতি এক এবং হকের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।( )
(৭) সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ বকর আবু যায়েদ( )তিনি বায়‘আত সম্পর্কে বলেন, ‘আহলুল হাল্ ওয়াল আক্বদ’( ) কর্তৃক মনোনীত মুসলিম সরকারের বায়‘আত ছাড়া ইসলামে দ্বিতীয় কোনো বায়‘আত নেই। আজ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলে যেসব বায়‘আত দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর শর‘ঈ কোনো ভিত্তি নেই। কুরআন ও হাদীছে এগুলির ভিত্তি থাকা তো দূরের কথা, এমনকি কোনো ছাহাবী বা তাবে‘ঈর আমল থেকেও এর সপক্ষে  কোনো প্রমাণ মিলে না। সুতরাং এগুলির সবই বিদ‘আতী বায়‘আত আর প্রত্যেকটি বিদ‘আতই পথভ্রষ্ট।যেসব বায়‘আতের শর‘ঈ কোনো ভিত্তি নেই, সেগুলো ভঙ্গ করলে কোনো দোষ নেই; বরং সেসব বায়‘আত সম্পন্ন হলেই পাপ হবে। কেননা এসব বায়‘আতের একদিকে যেমন শর‘ঈ কোনো ভিত্তি নেই, অন্যদিকে তেমনি সেগুলোর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে বিভক্তি ও দলাদলির সৃষ্টি হয় এবং তাদের মধ্যে ফেৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে। উপরন্তু একজনকে আরেক জনের উপর ক্ষেপিয়ে তোলা হয়। অতএব, বায়‘আত, শপথ, চুক্তি বা অন্য যে নামই দেওয়া হোক না কেন এসব বায়‘আত শরী‘আতের গণ্ডির বাইরে।( )তিনি অন্যত্র বলেন, দল বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, একই দেশে অনেকগুলি দল পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলির অন্তরালে রয়েছে অসংখ্য বায়‘আত, চুক্তি আর শপথ। প্রত্যেকটি দল অন্যদের তোয়াক্কা না করে তার নিজস্ব মতবাদের দিকে আহ্বান করছে। সে কারণে তাদের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষিত মুসলিম জামা‘আতের শাশ্বত মূলনীতি ‘আমি এবং আমার ছাহাবীরা যে পথে আছে’ বিনষ্ট হচ্ছে। এভাবে মুসলিম উম্মাহ আজ বিভিন্ন বায়‘আতের খপ্পরে পড়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। যুবকেরা আজ গোলক-ধাঁধায় পড়ে যাচ্ছে যে, কোন্‌ দলে তারা যোগ দিবে, কোন্‌ সংগঠন প্রধানের হাতেইবা বায়‘আত করবে?! কারণ বায়‘আত এমন শপথ ও অঙ্গীকার, যা ‘অলা ও বারা’ অর্থাৎ শত্রুতা ও মিত্রতা পোষণ অবধারিত করে।( )তিনি অন্যত্র বলেন, ইসলামে কোনো প্রকার যোজন বা বিয়োজন ঘটিয়ে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো নামে বা রসম-রেওয়াজে মৈত্রীচুক্তি সম্পাদন করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে নির্দিষ্ট কোনো দলের অধীনে থেকে অন্যদেরকে বাদ দিয়ে কিছু সংখ্যক মানুষের সাথে মিত্রতা গড়ে তোলাও বৈধ নয়। সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো পদ্ধতিতে ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’( )-এর সাথে থাকতে হবে। অতএব, আল্লাহ্‌র কিছু নির্দেশনা বাদ দিয়ে কিছু নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কোনো দল প্রতিষ্ঠিত হলে, অন্যদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজ দলের সমর্থকদের সাথে মিত্রতা পোষণের মূলনীতির উপর ভিত্তি করে কোনো দল প্রতিষ্ঠিত হলে, কোনো দেশের অধিবাসীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মূলনীতি তথা আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় তাদের সম্পূর্ণ বা আংশিক বিরোধিতায় ভিন্ন কোনো নামে কোনো দল গড়ে উঠলে এগুলি হারাম বলে বিবেচিত হবে।( )আল্লামা বকর আবু যায়েদ দলাদলির অনেকগুলি লক্ষণ এবং ক্ষতির দিক উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর কয়েকটি নীচে তুলে ধরা হলোঃ• বিভিন্ন ইসলামী দলকে বাহ্যতঃ দা‘ওয়াতী সুসংগঠিত মাধ্যম মনে হলেও বেশীর ক্ষেত্রে সেগুলো মুসলিম উম্মাহ্‌র দেহে অদ্ভূত এক আকৃতিতে পরিণত হয়েছে। তাদের সবার ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে, রয়েছে দ্বীনী কার্যক্রমের নির্দিষ্ট কেন্দ্র, যেসব কেন্দ্র অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফৎওয়া জারী করছে। অন্যদিকে এসব দল কখনো কখনো ব্যক্তিগত ক্ষমতা জোরদারেরও চেষ্টা করছে। এছাড়া সম্পদ সংগ্রহ এবং বিভিন্ন ক্ষমতার মসনদ দখলের বিষয়টিতো রয়েছেই।• দলাদলি করলে ইসলামকে নির্দিষ্ট একটি পরিমণ্ডলে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে দলের লোকজন শুধুমাত্র দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতেই ইসলামকে দেখে। আর যে কোনো দল নির্দিষ্ট ব্যক্তি, নির্দিষ্ট নেতৃত্ব এবং নির্দিষ্ট মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেকারণে যে কোনো দল সাধারণত নবুঅতী আলোর খুব সামান্য পরিমাণই ধারণ করে থাকে।• যে কোনো দল নিজেকে নির্দিষ্ট কোড, সংকীর্ণ নাম ও উপনামের মধ্যে বন্দী করে ফেলে। ফলে সে নির্দিষ্ট প্রতীক নিয়ে সবার চেয়ে ব্যতিক্রম থাকতে চায়। সেকারণে সে নীচের আয়াতে কারীমায় বর্ণিত ব্যাপক অর্থ বোধক নাম থেকে বঞ্চিত হয়  ﴿ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِين﴾ [الحج: ٧٨]  ‘তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম’ (আল-হাজ্জ ৭৮)।• দলাদলি দলের অভিমতের প্রতি আত্মসমর্পণের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উক্ত অভিমত প্রচার-প্রসারে ব্রতী হয়। পাশাপাশি দলাদলি দলের সমালোচনার পথ বন্ধ করে দেয়। এই কঠিন বাস্তবতা ইসলামী দা‘ওয়াতের পরিপন্থী।• দলাদলিতে নেতৃত্ব দলীয় চিন্তা-চেতনা, কর্মপদ্ধতি এবং মূলনীতির উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। ফলে দলাদলি দলীয় লোকজনকে মূল লক্ষ্য দা‘ওয়াতী কার্যক্রমের সৈনিক না বানিয়ে নেতৃত্বের সৈনিক বানায়। সেকারণে দলাদলি ব্যক্তির সেবা করে, দা‘ওয়াতের নয়।• বিভিন্ন দল আল্লাহ্‌র রাস্তায় দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বেড়ী পরে ফেলে। সেকারণে দ্বীনের দা‘ওয়াত দিতে গিয়ে দা‘ঈকে দলীয় কার্ড বহন করতে হয়। দলীয় কার্ড না থাকলে অন্ততঃ তাকে দলের সদস্য হতে হয়। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতি অনুযায়ী আল্লাহ্‌র পথের দা‘ঈ হওয়ার জন্য ইসলাম দা‘ঈকে দুই কালিমার সাক্ষ্য প্রদান এবং ইসলাম প্রচারকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। দলাদলির গণ্ডিতে প্রবেশের কোনো শর্তই ইসলাম আরোপ করেনি; বরং সকল দলাদলির ঊর্ধ্বে থাকতে বলা হয়েছে।• দলাদলি মুসলিম উম্মাহ্‌র যুবকদের অন্তরে দলীয় চিন্তাধারা এবং আল্লাহ্‌র পথে দা‘ওয়াতের মধ্যকার সুদৃঢ় সম্পর্কের অবান্তর চিন্তার বীজ বপন করেছে। অর্থাৎ দল ছাড়া দা‘ওয়াতী কার্যক্রম সম্ভব নয় মর্মে একটি বিশ্বাস তাদের অন্তরে সৃষ্টি করেছে।এক্ষণে একটি প্রশ্ন রয়ে যায়, যার কোনো জবাব নেই; প্রশ্নটি হচ্ছে, একজন মুসলিম কোন্‌ দলে যোগ দিবে? এখানে আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত তরীকায় এবং ইসলামের ব্যাপক অর্থ বোধক পদ্ধতিতে আল্লাহ্‌র পথে দা‘ওয়াত দেওয়া কি বেশী ভাল নাকি দলীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ থেকে দলের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিতে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করা বেশী উত্তম?( )
 (৮) ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ মুক্ববিল ইবনে হাদী আল-ওয়াদে‘ঈ( ) প্রশ্ন: দিনে দিনে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যারা কর্ম পদ্ধতি, দা‘ওয়াতী মূলনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরস্পরে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী। আর হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, হক জামা‘আত হবে একটিই। এক্ষণে প্রশ্ন হচ্ছে, এসব দল ও সংগঠনের হুকুম কি?উত্তর: এসব দল ও সংগঠনের ব্যাপারে শরীআতের হুকুম হচ্ছে, এগুলি হারাম এবং বিদ‘আত। সেজন্য এগুলি থেকে দূরে থেকে কিতাব ও সুন্নাহ্‌র দিকে দা‘ওয়াত দেওয়া একজন মুসলিমের কর্তব্য। তবে কেউ যেন কিছুতেই ধারণা না করে যে, আমরা কোনো মুসলিমকে ইসলামের জন্য একাকী কাজ করতে বলছি; বরং আমরা একজন মুসলিমকে আরব-অনারব, সাদা-কালো সকল মুসলিমের সাথে কাজ করতে বলছি। কারণ দলবদ্ধভাবে কাজ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ﴾ [المائ‍دة: ٢]  ‘সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না’ (আল-মায়েদাহ ২)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন, পারস্পরিক ভালবাসা, দয়ার্দ্রতা এবং সহানুভূতিশীলতার ক্ষেত্রে গোটা মুমিন সম্প্রদায় একটি দেহের মত। দেহের একটি অঙ্গ ব্যথিত হলে তার জন্য পুরো দেহ ব্যথা অনুভব করে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ‘আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ’ যদি তাদের দা‘ওয়াতী দায়িত্ব যথারীতি পালন করে, তাহলে এতসব দলাদলি পানিতে লবণ গলে যাওয়ার মত গলে যাবে। কেননা এসব দলাদলি ধোঁকার উপর প্রতিষ্ঠিত।( ) প্রশ্ন: দা‘ওয়াতের মহান উদ্দেশ্যে মুক্বীম অবস্থায় কাউকে ‘আমীর’ বানানোর ব্যাপারে আপনার মতামত কি?উত্তর: মুক্বীম অবস্থায় মুসলিম খলীফা বা তাঁর নিযুক্ত আমীর ও গভর্ণর ছাড়া অন্য কাউকে আমীর বানানো প্রমাণিত নয়। কিন্তু বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে খেলা শুরু হয়ে গেছে; ফলে তিন জনের একটি গ্রুপ থাকলে তাদেরও একজন ‘আমীরুল মুমিনীন’ সেজে বসে থাকছে। নিঃসন্দেহে এটি বিদ‘আত, যা মুসলিম ঐক্যকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।( ) প্রশ্ন: বর্তমান যুব সমাজে ব্যাপক আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে, তারা বলছে, কেউ কেউ বায়‘আতকে বৈধ মনে করে, আবার কেউ কেউ বৈধ মনে করে না। এক্ষণে প্রশ্ন হচ্চে, বায়‘আত কি? বায়‘আতের শর্ত কি? আমাদের কি কারো হাতে বায়‘আত গ্রহণ যরূরী?উত্তর: কুরাইশ বংশের কোনো ব্যক্তিকে ‘আহলুল হাল্ ওয়াল আক্বদ’ নির্বাচন করলে অথবা তিনি নিজে খলীফা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে তার হাতে বায়‘আত করা ওয়াজিব। কুরাইশ বংশের বাইরে যদি কেউ খলীফা হয়ে জনগণের কাছ থেকে বায়‘আত তলব করে, তাহলে তার হাতেও বায়‘আত করতে হবে। তবে যেসব দল ও সংগঠন মুসলিমদেরকে বিভক্ত করেছে, তাদের ঐক্য ও শক্তি বিনষ্ট করেছে, তাদের বায়‘আত গ্রহণতো দূরের কথা, বরং তাদের এই দলাদলির বিরোধিতা করতে হবে। আমরা আগেই বলেছি, মুসলিমদেরকে দলে দলে বিভক্ত করে ফেলা বর্তমান সময়ের একটি নিকৃষ্ট বিদ‘আত। সেকারণে তাদের বায়‘আতও বিদ‘আত।যদি কেউ প্রশ্ন করে, নিম্নোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বায়‘আতের প্রশংসা করেছেন:﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ ٱللَّهَ يَدُ ٱللَّهِ فَوۡقَ أَيۡدِيهِمۡۚ ﴾ [الفتح: ١٠]   ‘যারা আপনার কাছে বায়‘আত করে, তারা তো আল্লাহর কাছেই বায়‘আত করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর’ (আল-ফাত্‌হ ১০); তাহলে আপনারা কিভাবে বায়‘আতকে বিদ‘আত বলছেন? জবাবে বলব, উক্ত আয়াতে উল্লেখিত বায়‘আত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং কুরাইশ বংশের খলীফার জন্য নির্দিষ্ট। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার কাঁধে বায়‘আত না থাকা অবস্থায় মারা যাবে, তার মৃত্যু হবে জাহেলী মৃত্যু’। উক্ত হাদীছে উল্লেখিত বায়‘আতও কুরাইশ বংশের খলীফা বা ক্ষমতায় চলে আসা অন্য যে কোনো খলীফার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ অন্য বংশের কেউ ক্ষমতায় চলে আসলে যদি তার বায়‘আত গ্রহণ না করা হয়, তাহলে মুসলিমদের রক্তের হেফাযত সম্ভব হবে না। অতএব, যে ব্যক্তি মানুষকে এসব বায়‘আতের দা‘ওয়াত দেয়, তার বিরোধিতা করতে হবে; যে বায়‘আত থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে, তার বিরোধিতা নয়।যদি কেউ বলে, নিম্নোক্ত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়‘আতের কথা বলেছেন, ‘যখন তিন জন সফরে বের হবে, তখন তারা তাদের একজনকে আমীর বানাবে’। জবাব হচ্ছে, এই বায়‘আত সফর অবস্থার সাথে নির্দিষ্ট। ...সেকারণে বিভিন্ন জামা‘আতের আমীরদের বায়‘আত বর্তমান যুগের একটি অন্যতম বিদ‘আত। প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবকে যখন প্রহার করা হয়েছিল, বিখ্যাত ছাহাবী আনাস ইবনে মালেককে যখন হাজ্জাজ অপমান করতে চেয়েছিল, ইমাম মালেককে যখন প্রহার করা হয়েছিল, ইমাম শাফেঈকে যখন লোহার বেড়ী পরিয়ে হাযির করা হয়েছিল, ইমাম বুখারীকে যখন নিশাপুর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তখন বায়‘আত কোথায় ছিল? এভাবে আমাদের মুসলিম উম্মাহ্‌র স্বনামধন্য বহু আলেমে দ্বীনকে প্রহার করা হয়েছিল, তাদেরকে জেল-যুলম ভোগ করতে হয়েছিল এবং তাদেরকে নানাভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এতদ্‌সত্ত্বেও তারা মানুষকে বায়‘আতের দা‘ওয়াত দেননি। অতএব, এসব বায়‘আত বর্তমান যুগের বিদ‘আত ছাড়া আর কিছুই নয়।( )
(৯) সিরিয়ার প্রসিদ্ধ আলেম শায়খ আদনান ইবনে মুহাম্মাদ আল-আরউর( )বৈধ ঐক্যবদ্ধতা এবং নিষিদ্ধ দলাদলির মধ্যে পার্থক্য: যেহেতু পারস্পরিক সহযোগিতা শরী‘আতে বৈধ; বরং ওয়াজিব। আর পারস্পরিক এই সহযোগিতার জন্য কখনো কখনো দলবদ্ধ হওয়ার এবং দলবদ্ধ লোকগুলিকে পরিচালনার প্রয়োজন পড়ে, সেহেতু এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেরে মধ্যে তালগোল পাকিয়ে গেছে। ফলে তারা বৈধ ঐক্যবদ্ধতা এবং নিষিদ্ধ দলাদলিকে একাকার করে ফেলেছে। তারা নিষিদ্ধ দলাদলির বৈধতা প্রমাণ করতে গিয়ে বৈধ ঐক্যবদ্ধতার পক্ষের দলীলগুলিকে পেশ করেছে। যেমন: মহান আল্লাহ বলেন,﴿ ۞وَمَا كَانَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةٗۚ فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ ١٢٢ ﴾ [التوبة: ١٢٢]        ‘তাদের প্রত্যেকটি বড় দল হতে এক একটি ছোট দল দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের জন্য এবং ফিরে এসে নিজ কওমকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য কেন বের হলো না, যাতে তারা (আল্লাহ্‌র আযাব থেকে) বেঁচে থাকতে পারে’ (আত-তাওবাহ ১২২)। তিনি অন্যত্র বলেন,﴿ وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ ﴾ [ال عمران: ١٠٤]    ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ, যারা কল্যাণের পথে মানুষকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। (আলে ইমরান ১০৪)।বস্তুত এসব দলীল কস্মিনকালেও দলাদলি বৈধ করে না; বরং সৎকাজ ও কল্যাণের ব্যাপারে দলবদ্ধ হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি প্রমাণ করে। মনে রাখতে হবে, নতুন নতুন দল ও সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা, যেগুলির রয়েছে বিশেষ নিয়ম-শৃংখলা, বিশেষ সভা-সম্মেলন এবং নিজস্ব নানান সব সিদ্ধান্ত আর তাদের ও অন্য মুসলিমদের মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধকতার নানা দেওয়াল; সেগুলোর মধ্যে এবং সৎকাজের ব্যাপারে সংঘবদ্ধ হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে ঢের তফাৎ। কারণ বৈধ ঐক্যবদ্ধতা বিশেষ কোনো নিয়ম-শৃংখলার মাধ্যমে অন্যান্য মুসলিম থেকে আলাদা হয়ে যায় না এবং ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ ও তাদের মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে না। নীচে বৈধ ঐক্যবদ্ধতা এবং নিষিদ্ধ দলাদলির মধ্যে কতিপয় পার্থক্য তুলে ধরা হলোঃপ্রথম পার্থক্য: বৈধ ঐক্যবদ্ধতার পক্ষের লোকজনের মৌলিক বিষয় হচ্ছে দলীল, যে কোনো বিষয়ে সবকিছুর উপর দলীলটাই তাদের কাছে প্রাধান্য পায়।পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ দলাদলির ক্ষেত্রে দল বা দলপ্রধানের অন্ধভক্তিই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এসব দলের লোকজনদের নিকট শর‘ঈ দলীল এবং দল ও দলপ্রধানের নির্দেশনা একাকার হয়ে যায়। সেজন্য দলীয় নির্দেশনা বিনষ্ট এবং দলপ্রধানের গোঁমর ফাঁস হওয়ার ভয়ে তারা অনেক ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ্‌র বক্তব্য এবং সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি প্রত্যাখ্যান করে চলে।দ্বিতীয় পার্থক্য: বৈধ ঐক্যবদ্ধতা শরী‘আতের মূলনীতির নিরীখে গোটা মুমিন সম্প্রদায়ের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। এই ঐক্যবদ্ধতা মুমিনদের মাঝে কোনো প্রকার বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে না।পক্ষান্তরে, অন্যান্য মুমিনদের বাদ দিয়ে দলাদলির লোকদের নিজেদের মধ্যে এক বিশেষ সম্প্রীতি গড়ে উঠে। শুধু তাই নয়; বরং তারা দলাদলিকেই আন্তরিকতা সৃষ্টি এবং শত্রুতা পোষণের মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করে। সেজন্য তাদের নিকটে মুমিনরা পরস্পরে মিত্র না হয়ে দলের লোকজন হয় পরস্পরের মিত্র।তৃতীয় পার্থক্য: বৈধ ঐক্যবদ্ধতার কারণে তাদের মধ্যে এবং অন্যান্য মুসলিমদের মধ্যে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতার দেওয়াল রচিত হয় না; বরং এই ঐক্যবদ্ধতার মহান উদ্দেশ্যই হচ্ছে সুবিন্যস্তভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত করা।পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ দলাদলির ক্ষেত্রে দলের লোকজনদের মধ্যে এবং অন্যান্য মুসলিমদের মধ্যে রচিত হয় পার্থক্যের দেওয়াল ও সীমারেখা। সেজন্য তাদের সাথে কাজ করতে চাইলে অনুমতি ছাড়া সম্ভব হয় না। আবার তাদের দল থেকে বের হয়ে আসতে চাইলেও অনুমতি নিতে হয়, অন্যথায় বহিষ্কৃত হয়ে চলে আসতে হয়।চতুর্থ পার্থক্য: বৈধ ঐক্যবদ্ধতা নির্দিষ্ট যরূরী কোনো প্রয়োজনের তাকীদে হয়ে থাকে। যেমন: মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মসজিদ নির্মাণ, কূপ খনন, মুসলিমদের বিশেষ তত্ত্বাবধান ইত্যাদি।পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ দলাদলির ক্ষেত্রে প্রত্যেকে নিজের দলকে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম মনে করে। সে আরো মনে করে, তার দল স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং মুখাপেক্ষীহীন।পঞ্চম পার্থক্য: মুসলিমদের বিশেষ কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতাস্বরূপ বৈধ ঐক্যবদ্ধতা হয়ে থাকে। সেজন্য এই ঐক্যবদ্ধ লোকগুলি পরস্পর পরস্পরের সহযোগী হয়ে থাকে। তারা একে অন্যকে সাহায্য করে এবং একে অন্যের দ্বারা শক্তি সঞ্চার করে; ঠিক যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনরা নির্মিত ভবনের মত, যার একাংশ অন্য অংশের সাথে শক্তভাবে গাঁথা’।পক্ষান্তরে দলাদলির লোকেরা পরস্পর সহযোগী না হয়ে বিবদমান হয়, সহানুভূতিশীল না হয়ে হানাহানিতে মত্ত থাকে। ‘এসব দল যেন পরস্পর সতীনের মত’।ষষ্ঠ পার্থক্য: বৈধ ঐক্যবদ্ধতার লোকগুলি অন্যদের বাদ দিয়ে তাদের নিজেদের বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য আছে বলে মনে করে না; বরং তারা মুসলিম উম্মাহ্‌রই অংশ এবং মুসলিম উম্মাহ্‌র খেদমতেই নিয়োজিত।পক্ষান্তরে, দলীয় লোকেরা অন্যদের বাদ দিয়ে শুধু নিজেদেরকে উম্মত মনে করে। কোনো কোন দলের লোকেরা নিজেদেরকে মুসলিম উম্মাহ মনে না করে মুসলিমদের একটি জামা‘আত মনে করলেও তারা নিজেদেরকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ভাবে। তবে যেসব দলের লোকেরা নিজেদেরকে মুসলিম উম্মাহ মনে করে, তারা স্পষ্ট পথভ্রষ্ট এবং তাদের এহেন বিশ্বাস ভয়ানক বিপদই বটে।সপ্তম পার্থক্য: সর্বদা বৈধ ঐক্যবদ্ধতার লোকজনদের প্রত্যাবর্তনস্থল হয় কুরআন-সুন্নাহ, সালাফে ছালেহীনের সরল পথ হয় তাদের পথ এবং শরী‘আতের বিজ্ঞ আলেমগণ যেখানকারই হোক না কেন তাঁরাই হন তাদের নেতা।পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ দলাদলির লোকদের ক্ষেত্রে দলাদলিই হয় তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল এবং দলের নেতারাই হয় তাদের নেতা।মোদ্দাকথা: বৈধ ঐক্যবদ্ধতা মুসলিমদের পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি এবং একতা বৃদ্ধি করে। ফলে তারা মুসলিম উম্মাহ্‌র খেদমতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।কিন্তু নিষিদ্ধ দলাদলি মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে বিভক্তি, অন্ধভক্তি, হানাহানি, দুর্বলতা এবং ব্যর্থতা বৃদ্ধি করে। কারণ তারা মুসলিমদের কাতারে বিভিন্ন দলের জন্ম দেয়। প্রত্যেকটি দল নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ জ্ঞান করে, নিজের যা আছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে এবং অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে।( )তিনি শপথ, চুক্তি ও অঙ্গীকার সম্পর্কে বলেন, …রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামে নতুন কোনো চুক্তি নেই। জাহেলী যুগের ভাল চুক্তিগুলিকে ইসলাম আরো সুদৃঢ় করেছে (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫২৯)। উক্ত হাদীছে নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর নির্দিষ্ট কতিপয় শর্তের উপরে অন্যদেরকে বাদ দিয়ে সংঘবদ্ধ হওয়াকে চুক্তি (হিল্‌ফ) বলা হয়েছে। এসব চুক্তি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে চুক্তিতে অংশগ্রহণকারীদের কল্যাণ বয়ে আনে। জাহেলী যুগে দেখা যেত, কিছু লোক অন্যদেরকে বাদ দিয়ে নিজেরা একত্রিত হত এবং অত্যাচারিত ও অসহায়কে সাহায্যের জন্য শপথ ও চুক্তি করত। যেমন: হিলফুল ফুযূল। কিন্তু পরবর্তীতে ইসলাম এসব চুক্তি হারাম করে।কেউ প্রশ্ন করতে পারে, ভালকাজের একটি চুক্তিকে ইসলাম কিভাবে হারাম করতে পারে?! এর জবাব হাদীছের দ্বিতীয়াংশে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘জাহেলী যুগের ভাল চুক্তিগুলিকে ইসলাম আরো সুদৃঢ় করেছে’। অর্থাৎ জাহেলী যুগে যেসব ভাল চুক্তি ছিল, ইসলাম সেগুলোর চেয়েও উত্তম জিনিস নিয়ে এসেছে। তা হচ্ছে, গোটা মুসলিম উম্মাহ যেহেতু ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মহান চুক্তির সদস্য, সেহেতু সেখানে ডানে-বামে, গোপনে বা প্রকাশ্যে আর কোনো চুক্তির আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা অন্যান্য সব চুক্তি মুসলিম উম্মাহকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলে এবং তাদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষের আগুন প্রজ্জ্বলিত করে। দ্বিতীয়তঃ যেহেতু মুমিন সম্প্রদায় সবাই ইসলামের রশি ধরে কল্যাণের পথে একটিমাত্র চুক্তিতে একটিমাত্র উম্মতে পরিণত হয়েছে, সেহেতু এখানে অন্য কোনো চুক্তির প্রয়োজন আছে কি?! অতএব, যে ব্যক্তি অন্যান্য চুক্তির আহ্বান জানাবে –যদিও তা কল্যাণের উপর হয়-, সে মুসিলম উম্মাহকে বিভক্ত করে ফেলবে। মহান আল্লাহ বলেন,﴿وَإِنَّ هَٰذِهِۦٓ أُمَّتُكُمۡ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ وَأَنَا۠ رَبُّكُمۡ فَٱتَّقُونِ ٥٢ فَتَقَطَّعُوٓاْ أَمۡرَهُم بَيۡنَهُمۡ زُبُرٗاۖ كُلُّ حِزۡبِۢ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ ٥٣ ﴾ [المؤمنون: ٥٢،  ٥٣]      ‘তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; একই ধর্মে তো বিশ্বাসী সবাই এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা আমাকেই ভয় কর। অতঃপর মানুষ তাদের বিষয়কে বহুধা বিভক্ত করে দিয়েছে। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত হচ্ছে’। (আল-মুমিনূন ৫২-৫৩)( )
(১০) আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান আল-গুদাইয়ান( )এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ইতিপূর্বে এ দেশে (সঊদী আরব) সংগঠন নামে কোনো কিছুই ছিল না। কিন্তু বিভিন্ন দেশ থেকে যখন বিভিন্ন পেশার মানুষ আসা শুরু হলো, তখন তারা নিজ নিজ দেশে বিদ্যমান সংগঠনগুলি এখানে প্রতিষ্ঠা করল। জামা‘আতে ইসলামী, তাবলীগ জামা‘আতসহ অসংখ্য সংগঠন রয়েছে, যারা মানুষদের নিজ সংগঠনে যোগদানের আশা করে। অন্যদিকে, তারা লোকদের অন্য সংগঠনে যোগদানকে হারাম গণ্য করে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকেই নিজ সংগঠনকে হক মনে করে এবং অন্য সংগঠনকে বিভ্রান্ত বলে ধারণা করে। এক্ষণে প্রশ্ন হলো, হক কয়টি? উত্তরে বলব, হক একটি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের বিভক্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সকলেই জাহান্নামে যাবে’। ছাহাবীগণ উক্ত নাজাতপ্রাপ্ত দল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাদের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘যারা আমি ও আমার ছাহাবীরা আজ যে পথে আছি, সে পথে পরিচালিত হবে’।প্রত্যেকটি সংগঠন স্বতন্ত্রভাবে কর্মপদ্ধতি ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে এবং প্রত্যেকটি সংগঠনের একজন করে দলপ্রধান নিযুক্ত হয় আর দলপ্রধান তার কর্মীদের কাছ থেকে বায়‘আত গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, সংগঠনের কর্মীরা কেবলমাত্র নিজেদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। এভাবে প্রত্যেকটি দল প্রতিপক্ষের সাথে শত্রুতা পোষণ করে চলে। এক্ষণে, এ দলাদলিকে আমরা কি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত বলব? কখনই না, এটি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। কারণ, দ্বীন একটি, হক একটি এবং আমরা একই নবীর উম্মত। মহান আল্লাহ বলেন,﴿ كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ﴾ [ال عمران: ١١٠]   ‘তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত’ (আলে ইমরান ১১০)। উক্ত আয়াতে তিনি বলেননি যে, তোমরা বিভক্ত জাতি; বরং বলেছেন, সর্বোত্তম জাতি। মূলতঃ এ সংগঠনগুলি এদেশে এসে এখানকার পরিবেশ নষ্ট করেছে। তারা বিশেষভাবে যুবকদেরকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছে। যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, তাদেরকে তারা টার্গেট করে না; বরং মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের প্রধান টার্গেট। ইদানীং মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও জামা‘আতে ইসলামী ও তাবলীগ জামা‘আতের লোকেরা তাদের দা‘ওয়াতী কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রশ্ন হল, এমন প্রেক্ষাপটে একজন মুসলিম কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেখানো পথ অনুসরণ করবে নাকি মিসরী ও ভারতীয় ব্যক্তিদ্বয়ের সাথে থাকবে? আমি বলব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেখানো পথ অনুসরণ কর, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে আঁকড়ে ধর এবং কোনো মাসআলায় জটিলতা দেখা দিলে আলেমদেরকে জিজ্ঞেস কর।( )
(১১) মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ( )প্রশ্ন: প্রচলিত বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের কোনো একটিতে যোগ দেওয়া কি একজন মুসলিমের উপর আবশ্যকীয়?উত্তর: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতিটি কথা ও কাজের অনুসরণ করা আবশ্যকীয় নয়। বরং তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য সকলের কথা গ্রহণীয় ও বর্জনীয়। ইমাম মালেক (রহঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববরের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘এ ক্ববরের অধিবাসী ব্যতীত পৃথিবীর সকল ব্যক্তির কথা গ্রহণীয় ও বর্জনীয়’। অর্থাৎ শুধুমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিটি কথাই গ্রহণীয়। আর নির্দিষ্ট কোনো দল বা সংগঠনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আমি বলব, মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল উম্মতকে জামা‘আতবদ্ধভাবে জীবন যাপন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জামা‘আতের সাথে আল্লাহর হাত থাকে’ (তিরমিযী, হা/ ২১৬৭, শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমাদের উপর জামা‘আতবদ্ধ থাকা ফরয করা হল। কেননা নেকড়ে বাঘ একাকী দূরে অবস্থানকারী ছাগলকে খেয়ে ফেলে’ (নাসাঈ, হা/৮৪৭, শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ‘হাসান’ বলেছেন)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘শয়তান একক ব্যক্তির সঙ্গে থাকে এবং সে দু’জন থেকে দূরে থাকে’ (তিরমিযী, হা/২১৬৫, শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন)। এছাড়া এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ, আল্লাহর পথে দা‘ওয়াত, শার‘ঈ জ্ঞানার্জন, হক ও ধৈর্য্যের উপদেশ ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর আনুগত্যের ক্ষেত্রে প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির একে অপরকে সহযোগিতা করা নিঃসন্দেহে শরীআ‘তসম্মত কাজ। আর একতাবদ্ধভাবে এসব কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে শয়তানের কবল থেকে রক্ষা করতে পারে, যা উপরোল্লেখিত হাদীছসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়। সংঘবদ্ধভাবে এসব কাজ সম্পাদ মহান আল্লাহ্‌র নিম্নোক্ত বাণীর আওতায়ও পড়ে:﴿ وَٱلۡعَصۡرِ ١ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ ٢ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [العصر: ١،  ٣]   ‘সময়ের কসম! নিশ্চয়ই মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ব্যতীত, যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে এবং পরস্পরকে হক ও ধৈর্য্যের উপদেশ দিয়েছে’ (আল-আছর)।তবে কোনো দল বা সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা বলতে যদি তার প্রতি অন্ধভক্তি ও গোঁড়ামি বুঝায়, অর্থাৎ সে যে সংগঠন করে, সেটিই একমাত্র হকের উপর আছে, পক্ষান্তরে অন্যগুলি ভ্রান্তির মধ্যে আছে বলে মনে করে এবং শুধুমাত্র নিজ সংগঠনের কর্মীদের সাথে আন্তরিকতা বজায় রেখে চলে, আর অন্যদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, তাহলে এটি একদিকে যেমন মহা অন্যায় এবং যুলম। অন্যদিকে তেমনি এগুলি দ্বারা উম্মতের মধ্যে বিভক্তি এবং দুর্বলতা সৃষ্টি ব্যতীত আর কিছুই হয় না। সেজন্য প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির উচিৎ, সকল মুমিন ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা বজায় রেখে চলা। মহান আল্লাহ বলেন,﴿ إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ﴾ [المائ‍دة: ٥٥]   ‘তোমাদের বন্ধুতো আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনগণ’ (আল-মায়েদাহ ৫৫)। তিনি আরো বলেন, ﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ ﴾ [الحجرات: ١٠]            ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই’ (আল-হুজুরাত ১০)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই’। অতএব, আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতির সাথে ঐক্যমত পোষণকারী দল, জামা‘আত বা সংগঠনগুলির কোনো একটির মধ্যে হক সীমাবদ্ধ বলে মনে করা যাবে না। আল্লাহর পথে দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজন। প্রত্যেকটি মুমিন অন্যান্য মুমিনের সাথে বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা বজায় রেখে চলবে। নিকটের হোক বা দূরের হোক সৎকাজে একে অপরকে সহযোগিতা করবে এবং অন্যায় কাজে সহযোগিতা থেকে বিরত থাকবে।( )
 (১২) আলী ইবনে হাসান ইবনে আব্দুল হামীদ আল-হালাবী আল-আছারী( )শায়খ আলী আল-হালাবী বায়‘আত সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বায়‘আত সম্পর্কে অনেকগুলি সংশয় এবং সেগুলোর জবাব দিয়েছেন। নীচে আমাদের বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত পঞ্চম সংশয়টির বঙ্গানুবাদ করা হলঃপঞ্চম সংশয়ঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিন জন সফরে বের হলে তারা তাদের একজনকে আমীর হিসাবে নিযুক্ত করবে’। উক্ত হাদীছে সফর অবস্থায় আমীর নিযুক্ত করার অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়েছে। সফর অবস্থায় যদি এই বিধান বলবৎ থাকে, তাহলে আল্লাহর পথে দা‘ওয়াতী ক্ষেত্রে মুক্বীম অবস্থায় আমীর নিযুক্ত করে শপথ ও বায়‘আত গ্রহণ ওয়াজিব হওয়া অধিকতর যুক্তিসঙ্গত নয় কি?জবাবঃ ১. সফর অবস্থায় আমীর নিযুক্তের ক্ষেত্রে স্পষ্ট দলীল (نص) এসেছে। কিন্তু মুক্বীম অবস্থায় আমীর নিযুক্তের ক্ষেত্রে কোনো দলীল নেই। আর এখানে ‘কারণ’ (علة) এক না হওয়ায় সফর অবস্থার উপর মুক্বীম অবস্থার ক্বিয়াস গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া ক্বিয়াস করা মুজতাহিদ আলেমগণের জন্যই শোভা পায়, অন্য কারো জন্য নয়।২. সফরে নিযুক্ত আমীরের ‘ইমারত’ সফর শেষ হওয়ার সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মুক্বীম অবস্থা এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কেননা সেখানে সর্বদা পূর্ণ আনুগত্য বজায় রাখতে হয়।৩. সফরে আমীর নিযুক্তকরণে উপকার ছাড়া বিন্দুমাত্র ক্ষতির আশংকা নেই। কিন্তু মুক্বীম অবস্থায় আমীর নিযুক্ত করলে তা মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও ফাসাদ সৃষ্টি করে। সুতরাং উভয় অবস্থার মধ্যে কোনো তুলনাই চলে না।৪. যদি কিছু মানুষ মদ পানকারী ও যেনাকারী উপর শরী‘আতের ‘হদ্দ’ কার্যকর করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে কি সেটি গ্রহণযোগ্য হবে? কখনই না। কারণ, শুধুমাত্র রাষ্ট্রের শাসক শরী‘আতের ‘হদ্দ’ কার্যকর করতে পারেন। অতএব, এখানে যেমন রাষ্ট্রের শাসকের উপর অন্য কাউকে ক্বিয়াস করা অগ্রহণযোগ্য, তেমনিভাবে সফর অবস্থায় আমীর নিযুক্তের উপর মুক্বীম অবস্থায় আমীর নিযুক্তের বিষয়টি ক্বিয়াস করাও অগ্রহণযোগ্য।৫. সফর অবস্থায় নিযুক্ত আমীরের আনুগত্য সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়; বরং সফরের সঠিক ব্যবস্থাপনা সহ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এখানে পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য প্রযোজ্য নয়।৬. মুক্বীম অবস্থার বায়‘আতকে যদি শপথ ও অঙ্গীকার বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে বলব, এমনকি এসব শপথ ও অঙ্গীকারও আমাদের সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি নয়। বরং তাঁদের অবস্থান ছিল এর সম্পূর্ণ উল্টো। হাফেয আবু নু‘আইম তাঁর ‘হিল্‌ইয়াতুল আউলিয়াহ’ গ্রন্থে (২/২০৪) মুতাররিফ ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে ছহীহ সনদে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা যায়েদ ইবনে ছওহানের নিকট আসলে তিনি আব্দুল্লাহকে ডেকে বলতেন, তাদেরকে সম্মান কর এবং তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার কর। কারণ, দু’টি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা যায়: ১. তার শাস্তির ভয় ২. জান্নাত লাভের প্রত্যাশা। অতঃপর অন্য একদিন তাঁর নিকট এসে দেখলাম তারা একটি কাগজে বেশ কিছু কথা লিখেছে। কথাগুলি এভাবে সাজানো ছিলঃ ‘মহান আল্লাহ আমাদের প্রভূ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নবী, কুরআন আমাদের আদর্শ। যে আমাদের সাথে থাকবে, সে আমাদেরই একজন এবং আমরা তাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করব। পক্ষান্তরে যে আমাদের বিরোধিতা করবে, আমরা তার সাথে শত্রুতা পোষণ করব। আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকব, আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকব’। কাগজটি উপস্থিত প্রত্যেক ব্যক্তিকে দিয়ে জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল, ‘তুমি কি এর প্রতি সম্মতি প্রদান করছ’?....অতঃপর কাগজটি আমার নিকট পৌঁছলে আমাকে একই কথা জিজ্ঞেস করা হলো। আমি বললাম, না, আমি সম্মতি প্রদান করছি না। তখন যায়েদ ইবনে ছওহান বললেন, এ বালককে আরো অবকাশ দাও, হয়তো সে তার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসবে। তারপর তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি তোমার সপক্ষে যুক্তি পেশ কর। আমি বললাম, মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে আমার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন, আমি সে অঙ্গীকার ব্যতীত অন্য কারো কাছে কস্মিনকালেও নতুন কোনো অঙ্গীকার করব না। আমি একথা বলার পর সকলেই তাদের অবস্থান থেকে ফিরে আসলেন, কেউই আর কাগজে লেখা কথাগুলির প্রতি অঙ্গীকারে সম্মত হলেন না। তারা আনুমানিক ৩০ জন ছিলেন।বর্ণনাটি উল্লেখ করার পর শায়খ আলী আল-আছারী বলেন, লক্ষ্য করুন, হক গ্রহণ এবং হকের কাছে আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রে তাঁদের কি চমৎকার ভূমিকা এবং অবস্থান। দেখুন, যে বিষয়টি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয় এবং যেটি উম্মতের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে সেটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে হক মনে হলেও তাঁরা কি সহজে সেটিকে বর্জন করতেন। ( )তিনি বিভিন্ন সংগঠন এবং তাতে যোগদান প্রসঙ্গে বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, এসব সংগঠন, আন্দোলন এবং দল ‘জামা‘আতুল মুসলিমীনের’ অন্তর্ভুক্ত; তবে সেগুলো ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ নয়। তেমনিভাবে যিনি কোনো ইসলামী সংগঠন বা আন্দোলনে যোগ দিবেন না, তিনি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন বিবেচিত হবেন না এবং তার মৃত্যু জাহেলী মৃত্যু গণ্য করা হবে না।( )
(১৩) শায়খ ছালেহ ইবনে মুহাম্মাদ আল-লুহায়দান( )প্রশ্নঃ বর্তমান যুগে অনেক ইসলামী সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের ক্ষেত্রে মুসলিম যুবকদের ভুমিকা কি হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?উত্তরঃ ইসলামের প্রথম বালা-মুছীবতই ছিল মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তি ও দলাদলি সৃষ্টির। কেননা সকল মুসলিম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরবর্তী দুই খলীফার যুগে এক জামা‘আতেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু উছমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর আমলে কিছু সংখ্যক লোক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় দূরীকরণের খোঁড়া অজুহাত দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মাঠে নামে। আর এটিই ছিল ইসলামের প্রথম গোলযোগ, যার ফলে মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয় এবং ফিৎনা সৃষ্টিকারী দা‘ঈদের পথ উন্মুক্ত হয়।সকল মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত মিলিয়ে এক দল হয়ে থাকতে হবে। কোনো মুসলিমের জন্য কোনো দল, জামা‘আত বা সংগঠনে যোগ দেওয়া শোভনীয় নয়। এটিই হচ্ছে আল্লাহ নির্দেশিত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত সরল সঠিক পথ। এ সোজা পথ ছেড়ে এখানে সেখানে যোগ দেওয়ার অর্থই হলো নিজেকে এমন পথে পরিচালিত করা, যার শেষ গন্তব্য ধ্বংস বৈ কিছুই নয়। সেজন্য যুব সমাজের প্রতি আমার নছীহত হলো, তারা শর‘ঈ জ্ঞান অর্জন করবে এবং কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে যোগ্য ও অভিজ্ঞ উলামায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করবে।( )
(১৪) শায়খ রবী ইবনে হাদী আল-মাদখালী( )প্রশ্নঃ কেউ কেউ মনে করেন, সংগঠন ছাড়া সালাফী দা‘ওয়াত প্রসার লাভ সম্ভব নয়। আবার কেউ কেউ এ মতের বিরোধিতা করেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানিয়ে বাধিত করবেন?উত্তরঃ সালাফে ছালেহীনের অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে সার্বিক কল্যাণ। পক্ষান্তরে পরবর্তীদের সৃষ্ট বিদ‘আত অনুসরণের মধ্যে রয়েছে সার্বিক অকল্যাণ। সালাফে ছালেহীন দ্বীন প্রচার করেছেন এবং সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যকে সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ব জয় করেছেন। তারা নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জিহাদ করেছেন এবং বিজয় লাভ করেছেন; কোনো সংগঠনের মাধ্যমে নয়। পরবর্তীতে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী আলেমগণ মসজিদে মসজিদে দারস প্রদানের মাধ্যমে শর‘ঈ জ্ঞানের পতাকা উত্তোলন করেছেন। এভাবে আলেম-উলামার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অনেক ছাত্র তৈরি হয়েছে, যারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ নির্দেশিত একক পথের উপর পরিচালিত হয়েছেন। ফলে তাঁদের প্রচেষ্টার ফলাফল এসব সংগঠনের চেয়ে অনেক গুণ ভাল প্রমাণিত হয়েছে; যেখানে আলেম-উলামা তৈরিতো দূরের কথা এসব সংগঠন একজন মানসম্পন্ন ছাত্রও তৈরি করতে পারেনি। আমরা এখানে শায়খ মুক্ববিলকে দৃষ্টান্ত হিসাবে উপস্থাপন করতে পারি, যিনি এসমস্ত সংগঠন ও কর্মপদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলে তিনি ছাত্রদেরকে শর‘ঈ জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে তিনি ছাত্রদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছেন এবং এক ঝাঁক আলেম তৈরী করতে পেরেছেন, যারা নিজ নিজ দেশে ফিরে দা‘ওয়াতী কাজ করেছেন এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপরে একটি সুন্দর প্রজন্ম তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন।পক্ষান্তরে সারা দুনিয়ায় ছড়ানো-ছিটানো প্রচলিত এসব সংগঠন আমাদেরকে কি উপহার দিয়েছে? কয়জন আলেম তৈরি করতে পেরেছে? কিছুই করতে পারেনি। অথচ এই দুর্বল ও নিঃস্ব মানুষটি ইখলাছ এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা দ্বারা এমন কিছু করতে সক্ষম হয়েছেন, যার ১০০ ভাগের এক ভাগও তারা করতে পারেনি। তারা পেরেছে শুধু দলাদলি ও বিভক্তি সৃষ্টি করতে। নিজ সংগঠনের কর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন এবং অন্যদের সাথে শত্রুতা পোষণের মাধ্যমে কিছু কিছু দেশের সালাফীদেরকে টুকরো টুকরো করে ভাগ করতে পেরেছে। ইসলামকে বিপদগ্রস্ত করেছে, সালাফী পরিচয় দিয়ে সালাফী মূলনীতির বারোটা বাজিয়েছে এবং সালাফীদেরকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, চাঁদা উঠিয়ে মুসলিমদের পকেট খালি করে তারা সূদান, সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া , পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের সালাফীদের উপর আক্রমণ করছে এবং বিভিন্ন উপায়ে সালাফী মূলনীতিকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। মূলতঃ তারা শুধু ভালোভাবে আক্রমণ করতে পারে। কিন্তু সালাফে ছালেহীনের আদর্শের উপর কাউকে গড়ে তুলতে পারে না। এক্ষেত্রে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সুতরাং আমি আলেমদের উদ্দেশ্যে বলব, যাকে আল্লাহ দ্বীনের জ্ঞান দান করেছেন, সে কোনো মসজিদে সৎ ও দ্বীনি জ্ঞানার্জনে আগ্রহী ছাত্রদেরকে শিক্ষাদান করুন। আমি মনে করি, আপনারা যদি দশজন আলেম তৈরি করতে পারেন, তাহলে তা হাযার হাযার সংগঠন এবং তাদের তৈরি হাযার হাযার  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের থেকে বহুগুণে ভাল।( )
(১৫) শায়খ মুহাম্মাদ আমান ইবনে আলী আল-জামী( )বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠন ও দলে যোগদান সম্পর্কে বেশী বেশী প্রশ্ন হতে দেখা যায়। অবশ্য আমাদের যুবসমাজ যখন এ সমস্ত সংগঠনগুলির পক্ষে বিপক্ষে অবস্থানের ক্ষেত্রে গোলকধাঁধায় পড়বে, তখন তাদের এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার অধিকার আছে। কারণ, এসব সংগঠন ও দলাদলি নবাবিষ্কৃত এবং বিদ‘আত। মূলতঃ বিভিন্ন জামা‘আত না থেকে একটিমাত্র জামা‘আত থাকবে। সেজন্য আমাদের সালাফে ছালেহীনের সময়ে এতোসব জামা‘আত ছিল না। বরং তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রেখে যাওয়া একমাত্র জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পথের উপর রেখে যাচ্ছি। যে ব্যক্তি এ পথ থেকে বিচ্যুত হবে, সে ধ্বংস হবে’। স্বচ্ছ ও সরল এপথ কোনো দ্বীনের জ্ঞানপিপাসুর অজানা নয়। তবে যারা ইসলাম ধর্ম নিয়ে গবেষণা করে না, সালাফে ছালেহীনের ইতিহাস জানে না এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনীত দ্বীনের মর্মার্থ উপলদ্ধি করে না, শুধুমাত্র তাদের নিকটই এপথ অস্পষ্ট। যে ব্যক্তির ইসলাম  সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা আছে, প্রচলিত সংগঠনগুলি যে নবাবিষ্কৃত, সে ব্যাপারে তার বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার কথা নয়। তবে যার জ্ঞানের স্বল্পতা রয়েছে, যে নিজের প্রবৃত্তির কাছে হার মেনেছে এবং বিহরাগত কোনো কিছু দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যার বিবেক-বুদ্ধি পরিবর্তন হয়েছে, শুধুমাত্র সে এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করতে পারে।( )
(১৬) শায়খ উছমান মুহাম্মাদ আল-খামীস( )শায়খ উছমান আল-খামীসকে প্রচলিত ইসলামী সংগঠনগুলির কোনো একটির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, প্রচলিত ইসলামী সংগঠনগুলির কোনো একটির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া অপরিহার্য নয়; বরং তোমার উপর কর্তব্য হলো, সালাফী আক্বীদা পোষণ করা এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী আঁকড়ে ধরা। যদি তোমার কোনো মুসলিম ভাইকে এ পথ থেকে সরে যেতে দেখ, তাহলে তাকে ফিরে আসার নছীহত কর এবং তার জন্য দু‘আ কর।( )
(১৭) শায়খ ইবরাহীম ইবনে আমের আর-রুহায়লী( )প্রশ্নঃ মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে অগণিত সংগঠন ও দলের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এমনকি সেখানে আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল-জামা‘আতের আক্বীদা পোষণকারীদের মধ্যেও বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে। এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সংগঠন ও তার আমীর বা সভাপতির প্রতি অন্ধভক্তি ও গোঁড়ামী করে থাকে। প্রশ্ন হলো, এসমস্ত সংগঠনে যোগদানের হুকুম কি? এবং এসব দলাদলি থেকে বাঁচার উপায় কি? উত্তরঃ কোনো সংগঠন, দল বা প্রতিষ্ঠানে যোগদান বা তার সাথে সংশ্লিষ্টতা ও সম্পৃক্ততা দুই প্রকারঃ এক. সাধারণ সংশ্লিষ্টতা, যেমনঃ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যালয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোনো একটি দেশের সাথে সংশ্লিষ্টতা। এই প্রকার সংশ্লিষ্টতা স্বাভাবিক এবং বৈধ। কারণ এর উপর ভিত্তি করে ‘অলা ও বারা’ (মিত্রতা ও শত্রুতা) কিংবা গোঁড়ামী সৃষ্টি হয় না। বরং মানুষের বিভিন্ন বিষয়কে সুশৃংখলিত করার জন্য এসব সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন রয়েছে। তেমনিভাবে কোনো দেশে যদি নিয়ম থাকে যে, কোনো সংস্থার অধীনে ছাড়া একাকী দা‘ওয়াতী কাজ করা যাবে না, তাহলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কোনো একটি সংস্থার অধীনে দা‘ওয়াতী কাজে বাধা নেই। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে, এর উপর ভিত্তি করে যেন ‘অলা ও বারা’ না হয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ সংস্থার অধীনে থাকবে, তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি এ সংস্থার বাইরে থাকবে, তার সাথে শত্রুতা পোষণ করবে। কারণ, প্রত্যেক দা‘ঈকে এ সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে এমনটি নয়। যে ব্যক্তি এর সাথে সম্পৃক্ত হতে চাইবে, সে সম্পৃক্ত হবে। পক্ষান্তরে, যে এর সাথে সম্পৃক্ত না হয়ে মসজিদে দারস দিতে চায়, সে তা পারবে, তাতে কোনো বাধা নেই। দুই. ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে এরূপ বলা যে, এটিই আহলুস-সুন্নাহ্‌র সংগঠন; সুতরাং যে এই সংগঠনে আসবে, সে সুন্নী। আর যে এখানে আসবে না, সে বিরোধী এবং বিদ‘আতী। সংগঠনের অবস্থা এরূপ হলে তাতে যোগ দেওয়া হারাম। কোনো সংগঠনের উপর ভিত্তি করে যদি ‘অলা ও বারা’ প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে কারো জন্য তাতে যোগ দেওয়া আদৌ বৈধ নয়, ঐ সংগঠনের প্রধান যত বড় বিদ্বানই হোক না কেন।আর অন্ধভক্তির ব্যাপারে বলব, অন্ধভক্তি শুধুমাত্র সংগঠনের সাথে নির্দিষ্ট নয়। কিছু মানুষ মনে করে, সংগঠন বন্ধ হয়ে গেলে অন্ধভক্তি বন্ধ হয়ে যাবে। এটি ভুল ধারণা। কারণ, সংগঠনের অন্ধভক্তি ও গোঁড়ামী ছাড়াও রয়েছে নির্দিষ্ট আলেমের বিষয়ে গোঁড়ামী, বইয়ের গোঁড়ামী, বংশের গোঁড়ামী ইত্যাদি। সুতরাং গোঁড়ামীর দোহায় দিয়ে কোনো বৈধ জিনিষকে নিষিদ্ধ করা যাবে না। যাহোক, সকল প্রকারের গোঁড়ামী দূরীকরণের চেষ্টা করতে হবে। পরিশেষে বলব, সুশৃঙ্খলভাবে দা‘ওয়াতী কাজ করার স্বার্থে কেবল কোনো সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে এবং তার সাথে সম্পৃক্ত হতে কোনো বাধা নেই।( )
 (১৮) আবু মালেক আর-রেফাঈ আল-জুহানী( )  প্রশ্নঃ দা‘ওয়াতী ক্ষেত্রে ইমারত গঠনের ব্যাপারে আপনার মতামত কি?উত্তরঃ দা‘ওয়াতী ক্ষেত্রে ইমারত গঠন দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি। বরং সঠিক পদ্ধতি হলো, সুপরিচিত বিজ্ঞ আলেমগণ তাঁদের ছাত্রদের নিয়ে দা‘ওয়াতী কাজ সম্পাদন করবেন। যেমনঃ ইবনে তাইমিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, আলবানী, ইবনে বায, রবী আল-মাদখালী, আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, মুক্ববিল আল-ওয়াদে‘ঈ প্রমুখ আলেমগণ তাঁদের ছাত্রদেরকে যথারীতি দ্বীনী শিক্ষা দিয়েছেন এবং কেউ কেউ এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। আর তাঁদের ছাত্রগণ সারা দুনিয়ায় দা‘ওয়াত ছড়িয়ে দিয়েছেন। মূলতঃ এটিই হচ্ছে সালাফী দা‘ওয়াত। আমি আবারও বলছি, ইমারত গঠন করে দা‘ওয়াতী কাজ করা সুস্পষ্ট বিদ‘আত।( )
 (১৯) আল্লামা সা‘দ ইবনে আব্দুর রহমান আল-হুছাইন( )কোনো জামা‘আত, দল বা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা অথবা মহান আল্লাহ আমাদেরকে যে নামে বিশেষিত করেছেন, সেটি বাদ দিয়ে ভিন্ন কোনো নামে নিজেদেরকে বিশেষিত করে ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া অথবা কুরআন-হাদীছ ও ছাহাবায়ে কেরামের নীতির বাইরে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত বা আক্বীদা পোষণের মাধ্যমে নিজেদেরকে আলাদা করে ফেলা অথবা নির্দিষ্ট কোনো কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বা দলীয় আমীর নিযুক্ত করে তার হাতে বায়‘আত করার অনুমতি যেমন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের কোথাও নেই; তেমনি তা ছাহাবায়ে কেরামের জীবদ্দশাতেও কখনো ঘটেনি। আজ মুসলিমদের মধ্যে এরূপ ঘটার ফলে তাদের ঐক্যে ফাটল ধরেছে। ফলে সারা বিশ্বে তাদের যে শক্তি ও দাপট ছিল, তা তারা হারিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির দোহাই দিয়ে প্রত্যেকে নিজ নিজ সংগঠনের কর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে এবং তাদেরকে ভালবাসে। পক্ষান্তরে অন্য সংগঠনের কর্মীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে এবং তাদেরকে ঘৃণা করে। শুধু তাই নয়, একে অন্যের উপর মিথ্যা অপবাদ, গালিগালাজ, এমনকি হত্যা করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। তারা প্রত্যেকে নিজেদেরকে সাধু এবং অন্যদেরকে ভ্রান্ত বলে দাবি করছে। নিজেদের দলের জন্য খয়রাত সংগ্রহে লিপ্ত আছে, অথচ অন্যরা যাতে কিছুই না পায়, সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসব দলাদলি ও বিভক্তির মধ্যে কিভাবে মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হবে?!( )
(২০) শায়খ আবু উসামাহ সালীম ইবনে ‘ঈদ আল-হেলালী( )তিনি বলেন, এখনও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আল্লাহর পথে দা‘ওয়াতের  নামে গড়ে উঠা সংগঠনগুলি প্রত্যেকে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত আছে, অন্যদের দিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এমনকি কোনো কোনো সংগঠনের লোকেরা নিজেদের সংগঠনকে ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ এবং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাকে ‘ইমামুল মুসলিমীন’ বলে দাবি করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। ফলে তার হাতে বায়‘আত করাকে সকল মুসলিমদের উপর অপরিহার্য বলে মনে করে। কেউ কেউ মুসলিমদের সর্ববৃহৎ অংশকে (السواد الأعظم) কাফের বলে ফৎওয়া প্রদান করে। আবার কেউ কেউ নিজেদের দলকে মূল দল বলে আখ্যায়িত করে অন্যদেরকে এর পতাকা তলে সমবেত হওয়া অপরিহার্য বলে মনে করে।... মূলতঃ যেসব দল ইসলামের জন্য আজ কাজ করছে, তারা ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ নয়; বরং তারা ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’–এর একটি অংশ মাত্র। কেননা হাদীছে বর্ণিত ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ এবং তাদের ইমাম আজ নেই। হাদীছে ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ বলতে এমন জামা‘আতকে বুঝানো হয়েছে, যার অধীনে সারা দুনিয়ার সকল মুসলিম সুসংগঠিত হবে এবং তাদের একজন ইমাম বা খলীফা হবেন, যিনি আল্লাহ্‌র হুকুম বাস্তবায়ন করবেন। এরকম খলীফা আসলে তার হাতে বায়‘আত করা এবং তার অনুসরণ করা গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌র জন্য অপরিহার্য হয়ে যাবে। আর যেসব দল রাষ্ট্রীয় খেলাফত পুনরুদ্ধার করার কাজ করছে, তাদের উচিত, নিজেদের মধ্যকার সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা, নির্ভেজাল তাওহীদের পতাকাতলে সমবেত হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলা এবং নিজেদের দোষ-ত্রুটির জন্য পরস্পর পরস্পরকে নছীহত করা। অনুরূপভাবে একজন সাধারণ মুসলিমের উচিৎ, এসব দলের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া। ইসলামের হৃত গৌরব, শক্তি আর দাপট ফিরিয়ে আনার জন্য এসব দলের এক হয়ে যাওয়া উচিৎ। তাদের উচিৎ, কর্মীদেরকে হকমুখী করা এবং তাদের মধ্যে সকল মুসলিমকে ভালবাসার মত মানসিকতা তৈরী করা। তা হলেই মুসলিমদের বিভক্তি ও দুর্বলতা লোপ পাবে এবং তাদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের সকল বাধা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।অতএব, কোনো ব্যক্তি এসমস্ত সংগঠনের বাইরে থাকলে তাকে মুসলিম জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন বলা যাবে না। কেননা ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’-এর বৈশিষ্ট্য তাদের কারোর মধ্যেই নেই এবং এসব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের নিজেদেরকে ‘ইমাম’ বলে দাবি করার যোগ্যতাও নেই।( )
(২১) আবু মুহাম্মাদ আমীনুল্লাহ পেশোয়ারী( )মুহতারাম শায়খকে বিভিন্ন ইসলামী জামা‘আত, দল ও সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং সেগুলোতে যোগদান প্রসঙ্গে বারংবার প্রশ্ন করা হলে তিনি বিস্তারিত যে জবাব প্রদান করেন, তার কিছু অংশ নীচে তুলে ধরা হলঃতিনি হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত ফেতনা সম্পর্কিত হাদীছটি উল্লেখ করার পর বলেন, ‘অতএব, একজন মুসলিমের উচিৎ, তার প্রভূর ইবাদত করা এবং সাধ্যানুযায়ী এই ইবাদতের দিকে মানুষকে দা‘ওয়াত দেওয়া। কোনো সংগঠন বা দলে যোগ দেওয়া এবং কোনো দলের রুকন হওয়া তার জন্য সমীচীন নয়। তাকে যে মহান উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেদিকে মনোনিবেশ করা উচিৎ। আজ অনেক মানুষকে বলতে শুনি, এখন আমরা কি করতে পারি? আমি বলব, তোমাকে কেবল আল্লাহ্‌র ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব, তুমি সেকাজেই ব্রত থাক’।( )তিনি দলাদলি সৃষ্টির অনেকগুলি ক্ষতি উল্লেখ করেছেন, তন্মধ্যে কয়েকটি নীচে উল্লেখ করা হলোঃ১. দলাদলি কুরআন-হাদীছ বিরোধী। এসব দলাদলি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের সোনালী যুগে ছিল না; বরং সেগুলো পরবর্তীতে সৃষ্ট বিদ‘আত। সুতরাং তাঁরা যা করেছেন, আমাদেরকে তাই করতে হবে এবং তাঁরা যা বর্জন করেছেন, আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে।২. দলাদলি বান্দার ইখলাছে বিরূপ প্রভাব ফেলে। দলের একজন সদস্য সর্বদা নিজ দলের জয় কামনা করে; এক্ষেত্রে সে কিতাব ও সুন্নাহ্‌র বিরোধিতারও তোয়াক্কা করে না।৩. দলের প্রতি অন্ধভক্তি ও গোঁড়ামী অন্যান্য মুসলিমকে হেয় প্রতিপন্ন করতে শেখায়। সেজন্য দেখা যায়, দলের একজন অন্ধভক্ত তার দলের না হওয়ার কারণে বড় বড় আলেমের প্রচেষ্টাকে ছোট করে দেখে।৪. ধর্মীয় বিষয়াবলীর গুরুত্বের চাইতে তার কাছে দলীয় বিষয়াবলীর গুরুত্ব বড় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সে দলীয় সভা-সমাবেশ, সম্মেলন ইত্যাদিতে উপস্থিত হলেও জামা‘আতে ছালাত, ইলম অর্জন, সুন্নাতের অনুসরণ ইত্যাদি ধর্মীয় বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না।৫. দলাদলি করতে যেয়ে একজন দলপ্রধান বানিয়ে তাকে কেন্দ্র করে কারো সাথে মিত্রতা বা শত্রুতা গড়ে তোলা হয় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর মহব্বত দাবী করা হলেও আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এই একটি ক্ষতিই এসব দলাদলি থেকে দূরে থাকার জন্য যথেষ্ট।৬. দলাদলি অন্যায়ভাবে কারো নিন্দা-বদনাম আবার কারো সুনাম করতে শেখায়। সেজন্য একজন নিকৃষ্ট মানুষও যদি দলে যোগ দেয়, তাহলে তার প্রশংসার শেষ থাকে না। পক্ষান্তরে মর্যাদাবান কোনো মানুষও যদি দল ত্যাগ করে, তাহলে তিনি হয়ে নিকৃষ্ট মানুষ।৭. দলের সাথে সম্পৃক্ত না হওয়ার কারণে পরহেযগার ভালো আলেমের বক্তব্য পর্যন্ত শোনা হয় না। এমনকি দলীয় মাদরাসা-মসজিদে তাঁকে আল্লাহ্‌র পথে দা‘ওয়াত দেওয়ারও অনুমতি দেওয়া হয় না।৮. নির্দিষ্ট কোনো দলে সীমাবদ্ধ থাকলে সময় ও অর্থের অপচয় হয় এবং পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও উম্মতের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়।৯. সংগঠনের ব্যানারে দা‘ওয়াত দিলে দা‘ওয়াতের ফলাফল হয় খুব সংকীর্ণ। কেননা সংগঠনের সমর্থক ছাড়া আর কেউ এই দা‘ওয়াতে সাড়া দেয় না। পক্ষান্তরে বিদ‘আতী এসব বন্দীত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে দা‘ওয়াত দিলে যে কেউ তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে।১০. দলাদলির মাধ্যমে অনেক সময় শর‘ঈ দলীলের অপব্যাখ্যা করা হয়। কারণ আগে দলের মূলনীতি ও কর্মপদ্ধতি তৈরী করা হয়, তারপর এর পক্ষে শরী‘আতের এমন কিছু দলীল তালাশ করা হয়, যেগুলি তাদের পক্ষ সমর্থন করে না। ফলে তারা সেগুলো অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়।১১. দলাদলি ঈমানী মহান ভ্রাতৃত্বের পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমণ্ডলে সংকীর্ণ ভ্রাতৃত্বের জন্ম দেয়।( )
(২২) শায়খ আহমাদ ইবনে ইয়াহ্‌ইয়া আন-নাজমী( )মুক্বীম অবস্থায় আমীর মনোনয়ন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাদীছে যে আমীর নিযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, তা সফরের সাথে নির্দিষ্ট। মুক্বীম অবস্থায় রাষ্ট্রের মুসলিম শাসকই সবার জন্য যথেষ্ট। অন্য কোনো আমীর নিযুক্ত করা বৈধ নয়। কারণ, সেক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব ও ফাসাদ সৃষ্টি হবে। অতএব, যে ব্যক্তি বলবে, মুসলিম শাসক ছাড়া মুক্বীম অবস্থায় অন্য কোনো আমীর নিযুক্ত করা শরী‘আত সম্মত, তাকে তার পক্ষে দলীল পেশ করতে হবে। আর একথা সত্য যে, সে কস্মিনকালেও তার পক্ষের দলীল পাবে না।( )অন্যত্র তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আমীর নিযুক্তের অনুমতির বিষয়টি সফরের সাথে নির্দিষ্ট। যে ব্যক্তি বলবে, সফরে আমীর নিযুক্ত করা বৈধ হলে মুক্বীম অবস্থায় আমীর নিযু্ক্ত করাও বৈধ, সে মূর্খ; সে শরী‘আতের কিছুই জানে না। তার উচিৎ, মূর্খতা বাইরে প্রকাশ না করে লুকানোর চেষ্টা করা।( )বায়‘আত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বায়‘আত হচ্ছে মুসলিম শাসকের অধিকার। সুতরাং শাসক ছাড়া অন্য কেউ কারো নিকট থেকে বায়‘আত গ্রহণ করল, সে দ্বীনের মধ্যে নিন্দিত বিদ‘আত সৃষ্টি করল। আমরা যদি হক্কানী আলেমগণের জীবনীর দিকে দৃষ্টিপাত করি, তাহলে সহজেই বুঝতে পারব, তাঁরা দা‘ওয়াতী কাজ করতে গিয়ে কারো কাছ থেকে আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন নি। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব হিজরী ১২ শতাব্দীতে নাজদে দা‘ওয়াতী কাজ করেছেন। কিন্তু কারো কাছ থেকে আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন নি। তেমনিভাবে শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আল-ক্বার‘আবী সঊদী আরবের দক্ষিণাঞ্চলে দা‘ওয়াতী কাজ করেছেন। তিনিও কারো থেকে বায়‘আত নেন নি। আমরা যদি আরেকটু পূর্বে ফিরে যায়, তাহলে লক্ষ্য করব, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াও কারো কাছ থেকে বায়‘আত গ্রহণ করেন নি। অথচ মহান আল্লাহ তাঁদের সকলের দা‘ওয়াতে বরকত দান করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁরাই সালাফী দা‘ওয়াতের ধারক ও বাহক। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিদ‘আতীরা বিদ‘আত প্রচার করা থেকে বিরত হয় নি।( )প্রশ্নঃ যে সব দা‘ঈ দা‘ওয়াতের পদ্ধতিতে ভুল করেন, কিছু কিছু ছাত্র তাদের সমালোচনা করেন। তাদের এ সমালোচনা কি গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে?উত্তরঃ মহান আল্লাহ তাঁর নবীগণকে দা‘ওয়াতী ক্ষেত্রে যে পথ নির্দেশ দিয়েছেন, সকল দা‘ঈর উচিৎ, সে পথে পরিচালিত হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন,﴿ وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ فَمِنۡهُم مَّنۡ هَدَى ٱللَّهُ وَمِنۡهُم مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَيۡهِ ٱلضَّلَٰلَةُۚ فَسِيرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَٱنظُرُواْ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِينَ ٣٦ ﴾ [النحل: ٣٦]    ‘অবশ্যই আমরা প্রত্যেক উম্মতের নিকটেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই নির্দেশনা দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূত থেকে বেঁচে থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্য পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে’ (আন-নাহ্‌ল ৩৬)।মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকেও দা‘ওয়াতের পথ ও পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন,﴿ قُلۡ هَٰذِهِۦ سَبِيلِيٓ أَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا۠ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِيۖ وَسُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ١٠٨ ﴾ [يوسف: ١٠٨]   ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, ইহাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ আল্লাহর দিকে ডাকি জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আর আল্লাহ পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১০৮)।অতএব, কেউ যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদ্ধতি বাদ দিয়ে দা‘ওয়াতী ময়দানে অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করে, তাহলে উলামায়ে কেরামের উচিৎ, তার ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে সঠিক পদ্ধতি বলে দেওয়া। আর যে ব্যক্তি সঠিক পদ্ধতি জানার পরও ভুল ধরিয়ে দিবে না, সে গুনাহগার হবে। তবে কেউ ভুল ধরিয়ে দেওয়ার এ দায়িত্ব পালন করলে অন্য সবাই দায়মুক্ত হয় যাবে, অন্যদের আর গোনাহ হবে না। কিন্তু ভুল ধরিয়ে দিতে গিয়ে যদি কেউ অন্যদের সহযোগিতার প্রয়োজন মনে করে, তাহলে সকলের উচিত, তাকে সহযোগিতা করা। কেউ যদি মনে করে, যারা দা‘ওয়াতের পথ ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদ্ধতির বিরোধী কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করছে, তাদের ব্যপারে কথা বলতে যাওয়া উচিৎ নয়, তবে সে চরম ভুল করবে। এর মাধ্যমে সে আসলে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ, হক প্রচার এবং নেকী ও আল্লাহ ভীতির কাজে পরস্পর সহযোগিতা করাকে অকেজো করতে চায়। সে যদি অন্তর থেকে এটি নাও চায়, তবুও যারা চায়, সে তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছে। অতএব, তার উচিৎ, হকের পথে ফিরে আসা।( )

 আরো বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুনঃ1- الدعوة إلى الله بين التجمع الحزبي والتعاون الشرعي، لفضيلة الشيخ/ علي بن حسن الحلبي الأثري.2- حكم الانتماء إلى الفرق والجماعات والأحزاب الإسلامية، للعلامة بكر أبي زيد.3- مفهوم أهل السنة والجماعة عند أهل السنة والجماعة، لفضيلة الشيخ/ ناصر العقل.4- الأجوبة المفيدة عن أسئلة المناهج الجديدة، لفضيلة الشيخ/ صالح بن فوزان الفوزان.5- الفتاوى الجلية عن المناهج الدعوية، لفضيلة الشيخ/ أحمد بن يحيى النجمي.6- المورد العذب الزلال فيما انتقد على بعض المناهج الدعوية من العقائد والأعمال، للمؤلف السابق.7- البيعة بين السنة والبدعة عند الجماعات الإسلامية، لفضيلة الشيخ/ علي بن حسن الحلبي الأثري.8- حقيقة الدعوة إلى الله، لصاحب المعالي/ سعد بن عبد الرحمن الحصيّن.9- فتاوى العلماء حول الدعوة والجماعات الإسلامية، لنخبة من العلماء.10- قمع المعاند وزجر الحاقد الحاسد، لأبي عبد الرحمن مقبل بن هادي الوادعي وغيرها.
নিম্নোক্ত ওয়েবসাইটগুলি ব্রাউস করুনঃhttp://www.4salaf.com/vb
http://www.ajurry.com/vb/forum.php
http://www.binbaz.org.sa/
http://www.albany.net/
http://www.ibnothaimeen.com/index.shtml
http://www.alfawzan.af.org.sa
http://alhalaby.com/tags-146.html


 সূচীপত্রঅনুবাদকের কথাশায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহমুক্বীম অবস্থায় ‘ইমারত’ বিষয়ক বিধি-বিধান সম্পর্কে সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের ফৎওয়াজগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানীসঊদী আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী আব্দুল আযীয ইবনে বায আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ আল-উছায়মীনসঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য ছালেহ ইবনে ফাওযান আল-ফাওযানসঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ বকর আবু যায়েদইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শায়খ মুক্ববিল ইবনে হাদী আল-ওয়াদেঈসিরিয়ার প্রসিদ্ধ আলেম শায়খ আদনান ইবনে মুহাম্মাদ আল-আরউরআল্লামাহ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান আল-গুদায়য়ানমুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদআলী ইবনে হাসান ইবনে আব্দুল হামীদ আল-হালাবী আল-আছারীশায়খ ছালেহ ইবনে মুহাম্মাদ আল-লুহায়দানশায়খ রবী ইবনে হাদী আল-মাদখালীশায়খ মুহাম্মাদ আমান ইবনে আলী আল-জামীশায়খ উছমান মুহাম্মাদ আল-খামীসশায়খ ইবরাহীম ইবনে আমের আর-রুহায়লীআবু মালেক আর-রেফাঈ আল-জুহানীআল্লামা সা‘দ ইবনে আব্দুর রহমান আল-হুছাইনশায়খ আবু উসামাহ সালীম ইবনে ঈদ আল-হেলালীআবু মুহাম্মাদ আমীনুল্লাহ পেশোয়ারীশায়খ আহমাদ ইবনে ইয়াহ্‌ইয়া আন-নাজমীসূচীপত্র


দল, সংগঠন, ইমারত ও বায়‘আত সম্পর্কে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের বক্তব্য

বই সম্পর্কে

লেখক :

عبد العليم بن كوثر

প্রকাশক :

www.islamhouse.com

বিভাগ :

Fatwa (Q&A)