বাড়ি
সম্বন্ধে
যোগাযোগ
ধরন
Introducing Islam
Muhammad (PBUH)
Women in Islam
Misconceptions
Scientific Miracles
Jesus (PBUH) in Islam
Comparative Religions
The Existence of God
Why I became a Muslim!
For New Muslim
Purpose of Life
About Quran & Hadith
Fatwa (Q&A)
Morals & Ethics
Doctrine & Sects
The Hereafter
Biographies & Scholars
Transactions & Worship
Major Sins & Acts of Shirk
Jurisprudence
For Children
Arabic and it's science
ভাষাসমূহ
English
- English
Arabic
- اللغة العربية
Chinese
- 中文
Russian
- Русский
Deutsch
- Deutsch
French
- Français
Spanish
- Español
Portuguese
- Português
Greek
- Ελληνικά
Italian
- Italiano
Romanian
- Română
Japanese
- 日本語
Turkish
- Türkçe
Hindi
- हिन्दी
Thai
- ไทย
Ukrainian
- Украïнська
Urdu
- اردو
Filipino
- Tagalog
Nepali
- नेपाली
Dutch
- Nederlands
Polish
- Polski
Swedish
- Svenska
Sinhalese
- සිංහල
Bosnian
- Bosanski
Swahili
- Kiswahili
Persian
- فارسى
Albanian
- Shqip
Czech
- Čeština
Korean
- 한국어
Hebrew
- עברית
Bengali
- বাংলা ভাষা
Vietnamese
- tiếng Việt
Malay
- Bahasa Melayu
Danish
- Dansk
Finnish
- suomi
Norwegian
- norsk
Armenian
- Հայերեն
Estonian
- Eesti
Tamil
- தமிழ் மொழி
Telugu
- తెలుగు
Slovak
- Slovenčina
Macedonian
- македонски
Uzbek
- Ўзбек
Bulgarian
- български
hungarian
- magyar
Indonesian
- Indonesian
Icelandic
- íslenska
Georgian
- ქართული
Mongolian
- Mongɣol
Hausa
- Hausa
Latvian
- latviešu
Lithuanian
- lietuvių
Yoruba
- Yoruba
Malayalam - Malabar
- മലയാളം
Burmese
- myanma
Amharic
- አማርኛ
Azerbaijani
- Azərbaycanca
Kurdish
- کوردی
Somali
- Af-Soomaali
Uyghur
- ئۇيغۇر تىلى
Sindhi
- سنڌي
Pashto
- پښتو
Comorian
- Comorian
Tajik
- Тоҷикӣ
Fula
- Fulani - Peul
Flata
- Falatia
Malagasy
- Malagasy
Chechen
- Chechen
N'ko Bambara
- Bamanankan
Brahui
- Brahui
Catalan
- català
Lingala
- Lingala
Kannada
- ಕನ್ನಡ
Maranao Iranon
- Mëranaw
Luganda
- Luganda
Afaan Oromoo
- Oromoo
Tigrinya
- ትግርኛ
Kirghiz - Kyrgyz
- Кыргызча
Turkmani
- Türkmen dili
Khmer Campodian
- ភាសាខ្មែរ
Circassian
- Circassian
Chewa
- Chichewa - Nyanja
Slovenian
- Slovenščina
Avar - Awari
- МагIарул мацI
Kazakh
- Қазақ тілі
Soninke
- Soninke
Tatar
- Татарча
Maldivian
- Maldivi - divehi
Serbian
- Српски
Wolof
- Wolof
Tamazight
- Tamazight
Romani Gipsy
- Romani ćhib
Zulu
- isiZulu
Rohingya
- Ruáingga
Belarusian
- беларуская
Visayan
- Bisayan - Bisaya
Kalagan
- Kalagan
Yakan
- Yakan
Tausug
- Bahasa Sūg
Maguindanao
- Maguindanao
Cham
- Cham
Sepedi
- Sepedi - Sesotho
Samal
- Samal
Papiamento
- Papiamento
Kashmiri
- कॉशुर كأشُر kạ̄šur
Tibetan
- Tibetan
Bashkir
- Башҡорт теле
Kinyarwanda
- Kinyarwanda
Croatian
- hrvatski
Mandar
- Mandar
Afrikanns
- Afrikanns
Afar
- Qafár af
Jola
- Jóola - Diola
Kurmanji
- Kurmancî
Ossetian
- Иронау
Mauritian
- Kreol Morisien
Esperanto
- Esperanto
Igbo
- Asụsụ Igbo
Xhosa
- isiXhosa
Karachay-Balkar
- Къарачай-Малкъ
Kanuri
- Kanuri
Bassa
- Bissa - Mbene
Marathi
- Marāţhī
Gujarati
- Gujarātī
Assamese
- অসমীয়া
Nuer
- Nuer - Naadh
Dinka/Bor
- Dinka/Bor
Shilluk/Chollo
- Shilluk/Dhøg Cøllø
Akan
- Akan/Twi/Fante
Ingush
- ГІалгІай мотт
Shona
- chiShona
Maltese
- Malti
Mossi
- Mõõré
Bambara
- Bamanan
Balochi
- بلوچی
Mandinka
- Mandi'nka kango
Sotho
- Sesotho
Nzema
- Nzima
Fante dialect of Akan
- Fanti
Mouskoun
- Mouskoun
Dagbani
- Dagbanli
Lusoga
- Soga
Luhya
- Luhiya
Gonja
- Gonja
বাড়ি
বই
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও বেপর্দা প্রসঙ্গে মুমিন নারীদের জন্য কতিপয় নির্দেশনা
বই
টিভি
রেডিও
প্রবন্ধ
Fatawas
কুরআন
ভিডিও
অডিও
লেখক
অ্যাপস
ওয়েবসাইট
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও বেপর্দা প্রসঙ্গে মুমিন নারীদের জন্য কতিপয় নির্দেশনা
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও বেপর্দা প্রসঙ্গে মুমিন নারীদের জন্য কতিপয় নির্দেশনা: এটি একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ। যাতে নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন ও বেপর্দা চলা সম্পর্কে বিবিধ উপদেশ ও বিধি-বিধান স্থান পেয়েছে।
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও বেপর্দা প্রসঙ্গে মুমিন নারীদের জন্য কতিপয় নির্দেশনা
توجيهات للمؤمنات حول التبرج و السفور
< بنغالي >
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
الشيخ محمد بن صالح العثيمين
অনুবাদক: ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ترجمة: د/ محمد أمين الإسلام
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও বেপর্দা প্রসঙ্গে মুমিন নারীদের জন্য কতিপয় নির্দেশনা
بسم الله الرحمن الرحيم
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁর নিকট তাওবা করি। আর আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না, আর তিনি যাকে পথহারা করেন, কেউ তাকে পথ দেখাতে পারবে না। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। তাঁকে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত পূর্ববর্তী সময়ের মাঝে পাঠিয়েছেন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। অতঃপর তিনি রিসালাত তথা বার্তা (Message) পৌঁছে দিয়েছেন, আমানত যথাযথভাবে আদায় করেছেন, উম্মতের কল্যাণ কামনায় উপদেশ দিয়েছেন এবং মৃত্যু আসার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর পথে যথাযথভাবে জিহাদ করেছেন। সুতরাং তাঁর ওপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর এবং কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যারা তাঁদেরকে যথাযথভাবে অনুসরণ করবে, তাদের ওপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হউক।
অতঃপর....
আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় এ সাক্ষাৎ থেকে খুব সহজেই আমি এবং যিনি বা যারা আমার কথাগুলো শুনেছেন অথবা পাঠ করেছেন -তাদের প্রত্যাশিত ফায়দা হাসিলের কারণে আমি বিশেষভাবে আনন্দিত। আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট আবেদন করছি -তিনি যাতে আমাদের সকল আমলকে নির্ভেজালভাবে তাঁর উদ্দেশ্যে ও তাঁর মর্জি মাফিক বানিয়ে দেন; কিন্তু আমি ভালো মনে করছি যে, বিষয়বস্তুর ভিতরে প্রবেশ করার পূর্বে এমন কিছু কথা উপস্থাপন করব, যা এ অবস্থার জন্য যথাযথ হবে ইনশাআল্লাহ। আর তা হলো,
হে প্রিয় ভাইসব! আপনারা জানেন যে, আমাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার প্রদত্ত নি‘আমতরাজির মধ্যে সবচেয়ে বড় নি‘আমত হলো, তিনি আমাদেরকে এ দীন তথা দীন ইসলামের পথ দেখিয়েছেন, যা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সঠিক দীন। কারণ, তিনি এ দীনের মাধ্যমে প্রত্যেক হকের অধিকারীকে তার হক দিয়ে দিয়েছেন আর প্রত্যেক মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার মর্যাদার আসনে বসিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং তিনি ইবাদতের অবস্থানে ইবাদাতকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন আল্লাহর জন্য, যিনি এক, যাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ﴾ [البينة: ٥]
“আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে”। [সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৫] কারণ, তিনি একমাত্র স্রষ্টা। সুতরাং ইবাদাত একমাত্র তাঁর জন্য হওয়াটাই আবশ্যক, আর তিনি হলেন প্রিয়, আপন মহিমায় মহীয়ান। ফলে সকল নিয়ত ও আমল আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হওয়া আবশ্যক। আর সৃষ্টির সাথে লেনদেন ও আচার-আচরণ প্রসঙ্গে তিনি প্রত্যেক হকদারকে তার হক বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। সুতরাং স্বীয় নাফসের কিছু হক বা অধিকার রয়েছে, ওয়াজিব হলো সে অধিকার তাকে দিয়ে দেওয়া। আর পরিবার-পরিজনের কিছু অধিকার রয়েছে, ওয়াজিব হলো তা তাদেরকে দিয়ে দেওয়া। আর সঙ্গী-সাথীদেরও কিছু অধিকার রয়েছে, ওয়াজিব হলো তাদেরকে তা থেকে বঞ্চিত না করা। আর আমাদের মাঝে ও আমরা ভিন্ন অন্যদের মাঝে সংঘটিত চুক্তিসমূহের ব্যাপারে তিনি আমাদেরকে তা পূরণ করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং তা ভঙ্গ ও খিয়ানত করার ব্যাপারে নিষেধ করেন। সুতরাং ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ আমাদের দীন এমন এক দীন, যা সংক্ষেপে ও বিস্তারিতভাবে যাবতীয় উত্তম চরিত্র অবলম্বনের নির্দেশ প্রদান করে এবং সংক্ষেপে ও বিস্তারিতভাবে যাবতীয় মন্দ ও খারাপ চরিত্র থেকে নিষেধ করে। সুতরাং যে ব্যক্তি ইসলাম সম্পর্কে যথাযথভাবে চিন্তা-গবেষণা করবে, সে ব্যক্তি তাকে সর্বোত্তম দীন ও সুদৃঢ় মজবুত জীবন বিধান হিসেবে পাবে, আরও পাবে তাকে সকল যুগ-যমানা ও স্থানের জন্য যোগ্য ও যথোপযুক্ত দীন হিসেবে। আর এ দীন তার অনুসারীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে গৌরব, সম্মান ও মর্যাদার বিষয় এবং সৌভাগ্যের জামিনদার। আর এর দ্বারাই বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হবে, আর যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে, সে যেন ইসলামের প্রারম্ভিক কালের ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টি দেয়, যখন মুসলিমগণ বাহ্যিক ও ভিতরগত উভয়ভাবেই মুসলিম ছিলেন অথচ দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করতে পারে নি এবং আল্লাহর ব্যাপারেও কোনো প্রতারণা বা অহমিকা তাদেরকে প্রতারিত করতে পারে নি। অতএব, আমাদের জন্য আবশ্যকীয় করণীয় হলো আমরা আল্লাহর শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব এ জন্য যে, তিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এ মহামূল্যবান সরল সঠিক দীনের মাধ্যমে, আর আমরা এ মহান নি‘আমতকে বেঁধে রাখব নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, সে অনুযায়ী বাহ্যিকভাবে ও অভ্যন্তরীণভাবে এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে আমল করার মাধ্যমে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَإِن تَتَوَلَّوۡاْ يَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمۡ ثُمَّ لَا يَكُونُوٓاْ أَمۡثَٰلَكُم ٣٨﴾ [محمد: ٣٨]
“আর যদি তোমরা বিমুখ হও, তবে তিনি তোমাদের ছাড়া অন্য সম্প্রদায়কে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন, তারপর তারা তোমাদের মত হবে না”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৮]
সুতরাং দীনের মতো নি‘আমতের যখন শুকরিয়া আদায় করা হবে, তখন তা স্থায়ী হবে এবং বৃদ্ধি পাবে। আর যদি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা না হয়, তাহলে তা (দীন) বিলীন ও বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং তার পরিবর্তে কুফুরী, বিদ‘আত ও পথভ্রষ্টতার লক্ষণ দেখা দেবে; আর বুদ্ধিমান ব্যক্তি অনুমান ও অনুধাবন করতে পারে যেমনিভাবে শান্তি ও নিরাপত্তার মতো নি‘আমতের শুকরিয়া যখন আদায় করা হয় না, তখন তাকে ভয়-শঙ্কা দ্বারা পরিবর্তন করে দেওয়া হয় এবং রিযিকের মতো নি‘আমতের শুকরিয়া যখন আদায় করা হয় না, তখন তাকে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ দ্বারা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়, ঠিক তেমনিভাবে যখন দীনের মতো নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় করা না হয়, তখন সেই নি‘আমতকে ‘কুফুরী’ দ্বারা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। আর ইসলাম ঐ ব্যক্তির নিকট সবচেয়ে প্রিয়, যে নিজেকে তার সাথে সম্পৃক্ত করে। সুতরাং যখন এমন মানুষ পাওয়া না যাবে, যারা তাদের প্রতি প্রদত্ত আল্লাহর নি‘আমতের কদর বা মর্যাদা বুঝতে পারবে, তাকে দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরবে এবং তাকে নি‘আমত মনে করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তা তাদের থেকে গুটিয়ে নিবেন। অতঃপর অচিরেই তা তাদের নিকট থেকে অন্যদের নিকট চলে যাবে।
সুতরাং হে ভাইসব! আমি আপনাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি সকল কাজে ন্যায়নীতি অবলম্বন করার এবং সকল বিষয় বা কাজে তুলনামূলক পর্যালোচনার, আর সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া বিষয়ে হুকুম বা সিদ্ধান্ত দেওয়ার উপদেশ দিচ্ছি। আর পর্যালোচনায় সমান হয়ে গেলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বিধান করার উপদেশ দিচ্ছি, আর এটা একটি বড় ধরনের নিয়ম-নীতি। বুদ্ধিমান ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো আল্লাহর দিকে তার চলার ক্ষেত্রে এবং আল্লাহর বান্দাগণের সাথে চালচলন ও আচরণের ক্ষেত্রে সে নীতির অনুসরণ করা, যাতে সে ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে। আর আল্লাহ তা‘আলা ন্যায়নীতিবান লোকদেরকে ভালোবাসেন। আর তোমাদের ওপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো, তোমাদের নিকট যে আমানত রাখা হয়েছে, তোমরা তা যথাযথভাবে সম্পাদন কর। যেমন, প্রত্যেক মানুষ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব এমনভাবে পালন করবে, যা তার নিকট দাবি করা হবে, কোনো প্রকার কম-বেশি না করে। সুতরাং যে ব্যক্তি তার আমানতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে, সে ব্যক্তি লাভবান ও সফলকাম হবে, আর যে ব্যক্তি সেক্ষেত্রে ভুল করবে, সে হবে হতভাগ্য ও ক্ষতিগ্রস্ত।
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বান্দাগণকে সংশোধন করতে চাইবে এবং তাদেরকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করার ইচ্ছা করবে, তার ওপর আবশ্যক হলো নিয়তকে একনিষ্ঠ ও নির্ভেজাল করা এবং আমলকে পরিশুদ্ধ করা। সুতরাং যখন নিয়ত পরিষ্কার হবে এবং কল্যাণসমূহ ও তা অর্জনের সর্বোত্তম পদ্ধতি সম্পর্কে ইজতিহাদ (গবেষণা) ও চিন্তাভাবনা করার মাধ্যমে আমল পরিশুদ্ধ হবে, যখন সে ইখলাস (একনিষ্ঠতা) এবং সংস্কার ও সংশোধনের ক্ষেত্রে ইজতিহাদ -এ দু’টি বিষয় দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হবে, তখন সকল জিনিস পরিশুদ্ধ হবে এবং সকল কাজ যথাযথভাবে সুসম্পন্ন হবে। আর যখন ‘ইখলাস’ অথবা ‘ইজতিহাদ’ এ দু’টি বিষয়ের কোনো একটির ঘাটতি হবে, তখন এর সমপরিমাণে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। আর আল্লাহর বান্দাগণকে দাওয়াত দেওয়ার সময় অন্যতম একটি হিকমত বা তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, অন্যের কাজগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেবে সহানুভূতি ও কল্যাণকামিতার দৃষ্টিতে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যাকে রক্ষা করেন সে ব্যতীত প্রত্যেকেই অনিবার্যভাবে ভুল করে; কিন্তু এটা হিকমতের অন্তর্ভুক্ত নয় যে, মানুষ শুধু ভুল-ত্রুটির দিকটাই দেখবে এবং নির্ভুল ও সঠিক দিকটি পাশ কাটিয়ে যাবে; বরং সে (ভুল ও সঠিক) দু’টি দিকই দেখবে এবং উভয়ের মাঝে তুলনামূলক পর্যালোচনা করবে, তারপর সে ভুল সংশোধন করার ব্যাপারে চেষ্টা করবে। কারণ, মুমিনগণ একটি প্রাসাদের মতো, যার এক অংশ অপর অংশকে মজবুতভাবে বেঁধে রাখে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’টি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে বলেন:
«لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً ، إنْ سَخط مِنْهَا خُلُقاً، رَضِيَ مِنْهَا خُلُقاً آخَرَ».
“কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা পোষণ না করে। কারণ, যদি তার কোনো একটি স্বভাব তার কাছে অপছন্দ হয়, তবে তার অন্য আরেকটি স্বভাব-চরিত্র তার কাছে পছন্দ হতে পারে।”
কখনও কখনও আপনার দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, আপনার সাথী ভুল করেছে। আর যখন আপনি তা ভালোভাবে পর্যালোচনা করবেন, তখন আপনার নিকট পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, সে ভুল করে নি। সুতরাং একনিষ্ঠতাসহ ও ভালো উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিষয় ও কাজের ব্যাপারে পর্যালোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করাটা সে বিষয় বা কাজের শুদ্ধতা ও সফলতার অন্যতম উপায়।
অতএব, হে আমার ভাই! হিকমত সম্পর্কে জানুন এবং হিকমতের (প্রজ্ঞার) নীতি অনুসরণ করুন, আর প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা বুঝিয়ে দিন এবং প্রত্যেক কাজের উপযুক্ত স্বীকৃতি প্রদান করুন। প্রত্যেক মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার মর্যাদার স্বীকৃতি দিন আর এটাই হলো হিকমত বা প্রজ্ঞা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَمَن يُؤۡتَ ٱلۡحِكۡمَةَ فَقَدۡ أُوتِيَ خَيۡرٗا كَثِيرٗاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٢٦٩﴾ [البقرة: ٢٦٩]
“আর যাকে হিকমত প্রদান করা হয় তাকে তো প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। আর বিবেকবানরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৬৯]
হে ভাইসব!
আল্লাহ তা‘আলার নিকট উপকৃত হওয়ার আবেদন সংবলিত এ ভূমিকার পরে আমরা আমাদের নির্ধারিত আলোচনার দিকে ধাবিত হচ্ছি এবং বলছি:
আপনাদের অনেকের নিকট এটা স্পষ্ট যে, ইসলামের পূর্বে নারীকে পরিত্যক্ত সম্পদ বলে গণ্য করা হত এবং তাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হত। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِٱلۡأُنثَىٰ ظَلَّ وَجۡهُهُۥ مُسۡوَدّٗا وَهُوَ كَظِيمٞ ٥٨ يَتَوَٰرَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ مِن سُوٓءِ مَا بُشِّرَ بِهِۦٓۚ أَيُمۡسِكُهُۥ عَلَىٰ هُونٍ أَمۡ يَدُسُّهُۥ فِي ٱلتُّرَابِۗ أَلَا سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ٥٩﴾ [النحل: ٥٨، ٥٩]
“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল মলিন হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তার গ্লানির কারণে সে নিজ সম্প্রদায় থেকে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে, হীনতা সত্ত্বেও সে ওকে রেখে দিবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে! সাবধান! ওরা যা সিদ্ধান্ত করে তা কত নিকৃষ্ট”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৮–৫৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَإِذَا ٱلۡمَوۡءُۥدَةُ سُئِلَتۡ ٨ بِأَيِّ ذَنۢبٖ قُتِلَتۡ ٩﴾ [التكوير: ٨، ٩]
“আর যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল”। [সূরা আত-তাকবীর, আয়াত: ৮–৯]
আর জোর-যবরদস্তি করে তার (নারীর) উত্তরাধিকার বা মালিকানা লাভ করা হত, অতঃপর ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ ﴾ [النساء: ١٩]
“হে ঈমানদারগণ! যবরদস্তি করে নারীদের উত্তরাধিকারী হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]
আর নারী কোনো সম্পদের উত্তরাধিকারী হত না, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে মীরাসের অধিকার প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন:
﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنۡهُ أَوۡ كَثُرَۚ نَصِيبٗا مَّفۡرُوضٗا ٧﴾ [النساء: ٧]
“পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, সেটা অল্পই হোক বা বেশিই হোক, এক নির্ধারিত অংশ”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭]
আর নারী ও তার অবস্থা দেখাশুনা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে আল-কুরআনের বহু বক্তব্য এসেছে; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾ [البقرة: ٢٢٨]
“আর নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের ওপর পুরুষদের”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾ [النساء: ١٩]
“আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا».
“তোমরা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের নসীহত গ্রহণ কর।”
তিনি আরও বলেন:
«الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ».
“দুনিয়া হচ্ছে উপভোগের বস্তু। আর দুনিয়ার উপভোগের বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো পূণ্যবতী স্ত্রী।”
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো: আমাদের কোনো ব্যক্তির ওপর তার স্ত্রীর কী অধিকার আছে? জবাবে তিনি বললেন:
«أن تُطعِمَها إِذا طَعِمتَ، وتكسوَها إِذا اكْتَسَيتَ، ولا تضرِبِ الوجهَ ، ولا تُقبِّحْ، ولا تَهْجُرْ إِلا في البيت».
“তুমি যখন আহার করবে, তখন তাকেও আহার করাবে, আর তুমি যখন বস্ত্র পরিধান করবে, তখন তাকেও পরিধান করাবে। আর তার চেহারা তথা মুখমণ্ডলে প্রহার করো না, আর অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ো না এবং ঘরের মধ্যে ছাড়া তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।”
আর ইসলাম নারীর যত্নে এবং তার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় যা নিয়ে এসেছে, তার অন্যতম হলো তাকে উত্তম চরিত্র অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া, আর উত্তম চরিত্র মানে ঐ চরিত্র, যা দিয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে; লজ্জার চরিত্র, যাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের অঙ্গ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাকে ঈমানের অন্যতম একটি শাখা বলে উল্লেখ করেছেন। আর কেউই এটা অস্বীকার করবে না যে, শরী‘আত প্রবর্তকের পক্ষ থেকে এবং সামাজিকভাবে লজ্জাশীলতার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে নারীর শালীনতা রক্ষার জন্য এবং সে লজ্জাকে তার চারিত্রিক ভূষণ হিসেবে গ্রহণ করবে, যা তাকে ফিতনার জায়গা ও সন্দেহপূর্ণ স্থানসমূহ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।
আর কোনো সন্দেহ নেই যে, তার চেহারা ও আকর্ষণীয় স্থানসমূহ ঢেকে রাখার দ্বারা তার পর্দা পালনের বিষয়টি তার জন্য বড় ধরনের শালীনতা ও জীবনের অলংকার, যার মধ্যে রয়েছে তার ব্যক্তিত্বের সুরক্ষা এবং ফিতনা-ফাসাদ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করার ব্যবস্থা। আর যেই পর্দা নারীর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সে তা এমনভাবে গ্রহণ করবে, যাতে সে তার স্বামী ও একান্ত আপন (মাহরাম) লোক ছাড়া অন্যান্য পুরুষদের থেকে তার গোটা শরীরকে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করবে। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَ﴾ [الاحزاب: ٥٩]
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
‘জিলবাব’ (الجلباب) হলো এমন বোরকা বা প্রশস্ত চাদর, যা গোটা দেহকে আচ্ছাদিত করে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তিনি তার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীগণকে বলে দেন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়, যাতে তাদের চেহারা ও বুকের উপরিভাগ ঢেকে যায়।
আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র দলীলসমূহ এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিচার-বিবেচনা ও মানদণ্ড প্রমাণ করে যে, এমনসব অপরিচিত বা পরপুরুষ থেকে নারী কর্তৃক তার চেহারা ঢেকে রাখাটা বাধ্যতামূলক, যারা তার মাহরাম কেউ নন অথবা তার স্বামীও নন। আর কোনো বিবেকবান ব্যক্তি সন্দেহ পোষণ করে না যে, যখন নারীর ওপর তার মাথা ঢেকে রাখা ও তার পদযুগল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক, যখন তার সজোরে পদচারণা না করাটা ওয়াজিব, যেভাবে করলে তার গোপন সৌন্দর্য, পায়ের অলংকার ইত্যাদি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার অধিক সম্ভবনা থাকে, তখন মুখমণ্ডল ঢেকে রাখাটা তো আরও অনেক জোরালোভাবেই ওয়াজিব ও বাধ্যতামূলক, আর এটা এ জন্য যে, তার মাথার চুলসমূহ থেকে কিছু চুল অথবা তার পদযুগলের নখসমূহ থেকে কোনো একটি নখ প্রকাশ হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অর্জিত ফিতনার চেয়ে চেহারা খোলার কারণে অর্জিত ফিতনার বিষয়টি আরও অনেক বেশি ভয়াবহ। আর যখন বুদ্ধিমান মুমিন ব্যক্তি এ শরী‘আত এবং তার বিধিবিধান ও তাৎপর্য সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবে, তখন পরিষ্কার হয়ে যাবে -এটা অসম্ভব যে, নারীকে (প্রথমে) মাথা, গর্দান, বাহু, পা ও পায়ের পাতা ঢেকে রাখার ব্যাপারে বাধ্য করা হবে, অথচ নারীর জন্য বৈধ করে দেওয়া হবে তার দুই হাতের তালু প্রকাশ করাকে এবং তার মুখমণ্ডল প্রকাশ করাকে, যা সৌন্দর্য ও রূপমাধুর্যে ভরপুর। কারণ, এটা হিকমত পরিপন্থী। আর আজকের এ যুগে মানুষের মাঝে (নারীর) চেহারা ঢেকে রাখার ব্যাপারে যে অবহেলা দেখা যাচ্ছে, যা এমন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে যে, নারী অপরাপর বিষয়গুলোকেও অবহেলা করা শুরু করেছে। যেমন, নারী কর্তৃক তার মাথা, গর্দান, বক্ষ ও দুই বাহু খোলা রাখা এবং কোনো ইসলামী দেশে বাজারে বাজারে তার বেপরোয়া চলাফেরা করা ইত্যাদি ইত্যাদি... বিষয়ে যে ব্যক্তি চিন্তা-ভাবনা করবেন, তিনি নিশ্চিতভাবেই জানতে ও বুঝতে পারবেন, হিকমত বা প্রজ্ঞার দাবি হলো, নারীগণ কর্তৃক অবশ্যই তাদের চেহারাগুলো ঢেকে রাখতে হবে।
অতএব, হে নারী! তোমার অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হলো, তুমি মহান আল্লাহকে ভয় করবে এবং তোমার ওপর ফরয করা পর্দা যথাযথভাবে পালন করবে, স্বামী ও মাহরাম পুরুষ ব্যতীত অন্যান্যদের থেকে সমস্ত শরীর ঢেকে রাখবে, যে ব্যবস্থাপনার সাথে কোনো ফিতনার আশঙ্কা নেই। আর যখন আমরা পরপুরুষের উদ্দেশ্যে নারীর বেপর্দা ও মুখ খুলে রাখার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করব, তখন আমরা সে বিষয়টিকে বহু ফিতনা-ফাসাদের উদ্দীপক হিসেবে দেখতে পাব। আর যদি তাতে কোনো কল্যাণ ও উপকার আছে বলে ঠিক করা হয়, তাহলে তা ফিতনা-ফাসাদের তুলনায় খুবই নগণ্য। সে সব ফিতনা-ফাসাদ ও গোলযোগের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় নিম্নরূপ:
১. ফিতনা বা সম্মোহন: কারণ, নারী যখন তার চেহারা খুলে ফেলবে, তখন তার কারণে পুরুষগণ ফিতনার শিকার হবে, বিশেষ করে যদি সে যুবতী বা রূপসী হয় অথবা সে যদি এমন কিছু করে, যা তার চেহারাকে সুন্দর ও লাবণ্যময়ী এবং উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়ভাবে দৃশ্যমান করে তুলে। আর এটা অনিষ্টতা, খারাপ পরিবেশ ও ফাসাদ সৃষ্টি অন্যতম বড় একটি কারণ।
২. নারীর লজ্জা-শরমের অবসান, যা ঈমানের অঙ্গ এবং তার স্বভাব-প্রকৃতির অন্যতম দাবি: কারণ, নারী হলো লজ্জা-শরমের ব্যাপারে দৃষ্টান্ত পেশ করার জায়গা। যেমন বলা হয়: ‘আমি অন্তঃপুরে অবস্থানরত কুমারী থেকে লজ্জা অনুভব করি।’ আর নারীর লজ্জা চলে যাওয়া মানে তার ঈমানের ব্যাপারে ঘাটতি হওয়া এবং এমন স্বভাব-প্রকৃতির গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাওয়া, যে স্বভাব-প্রকৃতির ওপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
৩. তার সাথে পুরুষদের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠা এবং তাদের কর্তৃক তার পিছনে লাগা: বিশেষ করে সে যখন সুন্দরী হয় এবং তার পক্ষ থেকে যখন তোষামোদ, হাসাহাসি ও রসিকতা জাতীয় আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যেমনটি সাধারণত অধিকাংশ বেপর্দা নারীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, আর বলা হয়ে থাকে, প্রথমে দেখা, তারপর সালাম বিনিময়, তারপর কথা, তারপর প্রতিশ্রুতি, তারপর একান্ত সাক্ষাৎ। আর শয়তান তো আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় চলমান। সুতরাং অনেক কথা, হাসি ও আনন্দ আছে, যা নারীর সাথে পুরুষের মনের সম্পর্ক এবং পুরুষের সাথে নারীর মনের সম্পর্ক গড়ে ওঠাকে আবশ্যক করে তুলে, অতঃপর এর ফলে এমন খারাপী ও নষ্টামীর সূচনা হয়, যা প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট এর থেকে নিরাপত্তা চাই।
৪. পুরুষদের সাথে নারীদের অবাধ মেলামেশা: কারণ, চেহারা খুলে রাখা এবং বেপর্দা অবস্থায় চলাফেরা করার ব্যাপারে নারী যখন নিজেকে পুরুষদের সমান মনে করে, তখন সে পুরুষদের সাথে ধাক্কাধাক্কি ও ঘষাঘষি করা থেকে লজ্জা ও অপমান বোধ করে না, আর এর মধ্যে বড় ধরনের ফিতনা ও প্রচুর পরিমাণে পাপের ব্যাপার রয়েছে।
০ আর আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, এ মুসলিম জাতির অনেক দল ও গোষ্ঠী তাদের সামনে আসা প্রতিটি রীতিনীতি, প্রথা এবং বিশেষ ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতাকে গ্রহণ করে নেয় সে ব্যাপারে শরী‘আত ও যুক্তির নিরিখে কোনোরূপ ইতস্তত ও চিন্তা-ভাবনা না করেই। অথচ তাদের দায়িত্ব হলো, তারা সেগুলোর ব্যাপারে খতিয়ে দেখবে যে, তা আল্লাহর বিধানের পরিপন্থী কিনা? তারপর যখন সেগুলো আল্লাহর বিধানের পরিপন্থী হবে, তখন তারা সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং সেগুলো থেকে বেঁচে থাকবে, যেমনিভাবে সুস্থ শরীর রোগজীবাণুকে প্রত্যাখ্যান করে। অতঃপর তাদের যেসব মুসলিম ভাইগণ কোনো রকম চিন্তা-ভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই তাদের সমাজে এসব শরী‘আত বিরোধী কাজ উপস্থাপন ও আমদানি করেছে, তাদের মধ্য থেকে যে বা যারা এসব কাজে জড়িত হবে, তারা তাদেরকে উপদেশ দিবে। আর এটাই হলো মুমিনের প্রকৃত স্বরূপ যে, তিনি হবেন শক্তিশালী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, অনুসরণীয়, অনুসরণকারী নয়। আবার তিনি হবেন সৎব্যক্তি, সংশোধনকারী, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী ও সূক্ষ্মভাবে চিন্তাভাবনাকারী। আর যখন আমাদের নিকট আসা এসব রীতিনীতি, প্রথা এবং বিশেষ ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতা শরী‘আত বিরোধী না হবে, তখন আমাদের জন্য উচিত হবে, বর্তমানে, ভবিষ্যতে, নিকটতম ভবিষ্যতে ও সুদূর ভবিষ্যতে তার ফলাফল কী হবে, সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা। কারণ, কখনও কখনও বর্তমান কালে তার অনুভবযোগ্য (নেতিবাচক) প্রভাব থাকে না, কিন্তু ভবিষ্যতে তার অপেক্ষমান প্রভাব থাকতে পারে। আর যখন আমরা এ দৃষ্টিভঙ্গিটি চালু করব এবং এ লাইনে পথ চলব, তখন এর অর্থ হবে, আল্লাহ তা‘আলার অনুমোদনক্রমে আমরা বুদ্ধিমত্তার ওপর ভিত্তি করে এবং সঠিক ও যথাযথ নির্দেশনা বা দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই পথ চলছি।
আর আপনি অনেক যুবতী নারীকে তার ঘর থেকে বাজারের উদ্দেশ্যে যৌন উত্তেজক আকর্ষণীয় পোশাক পরিধান করে বের হতে দেখতে পাবেন, হয় সে পোশাকটি খাট অথবা লম্বা, যার উপরে একটি খাট বা লম্বা আবা (ঢিলা জামা) ছাড়া আর কিছুই থাকে না, কখনও তা বাতাসে খুলে ফেলে, আবার কখনও কখনও সে নিজেই ইচ্ছা করে খুলে ফেলে। আবার দেখতে পাবেন, সে বের হয় এমন ওড়না পরিধান করে, যার দ্বারা সে তার চেহারাকে ঢেকে নেয়; কিন্তু সে ওড়নাটি কখনও কখনও এমন পাতলা হয়, যা তার চেহারার রং সম্পর্কে বলে দেয়, আবার কখনও কখনও সে ওড়নাটিকে তার চেহারার ওপর এমনভাবে শক্ত করে বেঁধে নেয়, যা তার নাক ও গালের মতো চেহারার উঁচু স্থানগুলোর পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য-প্রস্থ প্রকাশ করে দেয়। আবার কখনও বের হয় পরিধেয় স্বর্ণের অলংকার পরিধান করা অবস্থায়, অতঃপর সে তার বাহুদ্বয় উন্মুক্ত করে দেয়, যাতে অলংকার প্রকাশ হয়ে যায়, আর মনে হয় যেন সে জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলে: তোমরা আমার শরীরে বিদ্যমান দৃশ্য দেখতে থাক!
বড় ধরনের ফিতনা ও কঠিন পরীক্ষা: শক্তিশালী সুগন্ধযুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করে অনেক নারী বের হয়, যেসব পুরুষের অন্তরে ব্যাধি আছে এমন প্রতিটি ব্যক্তিই এর দ্বারা সম্মোহন ও উন্মত্ততার শিকার হবে অথচ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وإِن المرأة إِذا استَعطَرَتْ فمرَّت بالمجلس فهي كذا وكذا يعني: زانية».
“আর নারী যখন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, তারপর মাজলিস বা সমাবেশের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করবে, তখন সে এরকম এরকম, অর্থাৎ সে ব্যভিচারিনী।”
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«إِذَا خَرَجَتْ إِحْدَاكُنَّ إِلَى الْمسجدِ , فَلَا تَمَسَّ طِيبًا».
“যখন তোমাদের নারীদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হবে, তখন সে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে”।
সে তার ঘর থেকে বের হয় এবং হাট-বাজারে তীব্র গতিতে হাঁটাহাঁটি করে, যেমনিভাবে অধিক শক্তিশালী বা অনুরূপ পুরুষগণ হাঁটাহাঁটি করে, মনে হয় যেন তার (ঐ নারীর) উদ্দেশ্য হলো, মানুষ তার শক্তি ও উদ্যম সম্পর্কে জানবে। আর সে তার বান্ধবীর সঙ্গে হাঁটে এমনভাবে, সে তার সাথে উচ্চস্বরে হাসি-ঠাট্টা করে এবং দৃশ্যমানভাবে সে তার সাথে ঠেলাঠেলি ও ধাক্কাধাক্কি করে, আর কেনাকাটা করার জন্য দোকানদারের নিকট এমনভাবে দাঁড়ায় যে, তার দুই হাত ও বাহুদ্বয় উন্মুক্ত থাকে, আবার কখনও কখনও সে দোকানদারের সাথে রসিকতা করে এবং দোকানদারও তার সাথে রসিকতা ও হাসি-ঠাট্টা করে। আর নারীদের একটি অংশ ইত্যাদি ধরনের যেসব আচরণ করে, সেগুলো ফিতনা, মহাবিপদ ও অস্বাভাবিক আচরণের অন্যতম কারণ, যা ইসলামের নির্দেশনা ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং মুসলিম জাতির নিয়ম-নীতির বহির্ভূত।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর স্ত্রীগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, অথচ তারা ছিলেন আদর্শের মূর্তপ্রতীক, তিনি বলেন:
﴿ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لَا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ مَسَاجِدَ اللَّهِ، وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ».
“তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মাসজিদসমূহে যেতে বাধা প্রদান করো না, তবে তাদের জন্য তাদের ঘরসমূহে অবস্থান করাটাই অধিক উত্তম।” (তাদের ঘরসমূহ) তাদের জন্য কিসের চেয়ে উত্তম? আল্লাহর মাসজিদসমূহ থেকে, সুতরাং বাজারের উদ্দেশ্যে তাদের বের হওয়ার বিষয়টি কেমন হবে? আর এ বিশুদ্ধ হাদীসটি অবশ্যই প্রমাণ করে যে, পুরুষ ব্যক্তির জন্য নারীকে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হওয়া থেকে নিষেধ করা বৈধ, এ ব্যাপারে নিষেধ করাতে তার কোনো গুনাহ হবে না এবং তাতে কোনো সমস্যাও নেই, তবে মসজিদ ছাড়া (অর্থাৎ মসজিদে যেতে বাধা দেওয়া বৈধ হবে না)। আর তাকে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়ানো থেকে এবং বেপর্দায় চলাফেরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা থেকে নিষেধ করার কাজটি তার জন্য ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) এবং তাকে এর জন্য কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে। কেননা, বৃদ্ধা নারীর জন্য যখন সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়ানো নিষিদ্ধ, তখন যুবতী নারীর জন্য তা কিভাবে বৈধ হবে, যে নারী ফিতনার কেন্দ্রবিন্দু ...? আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَٱلۡقَوَٰعِدُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ ٱلَّٰتِي لَا يَرۡجُونَ نِكَاحٗا فَلَيۡسَ عَلَيۡهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۢ بِزِينَةٖۖ وَأَن يَسۡتَعۡفِفۡنَ خَيۡرٞ لَّهُنَّۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ٦٠﴾ [النور: ٦٠]
“আর বৃদ্ধা নারীরা, যারা বিয়ের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের বহির্বাস খুলে রাখে। তবে এ থেকে তাদের বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আন-নুর, আয়াত: ৬০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ﴾ [النور: ٣١]
“আর তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে”। [সূরা আন-নুর, আয়াত: ৩১] আর তা হলো নূপুর জাতীয় অলঙ্কার, যা সে তার পায়ের মধ্যে পরিধান করে এবং তার কাপড় দিয়ে তা গোপন করে রাখে, অতঃপর যখন সে যমীনের ওপর তার পা দ্বারা সজোরে আঘাত করে, তখন তার আওয়াজ শুনা যায়। সুতরাং নারী কর্তৃক যখন এমন কাজ করা নিষিদ্ধ, যে কাজ করলে তার পায়ের গোপন সৌন্দর্য সম্পর্কে জানা যায়, তখন সে নারীর বিষয়টি কেমন হওয়া দরকার, যে তার বাহুকে উন্মুক্ত করে রাখে, যেখানে তার হাতের সৌন্দর্য প্রদর্শিত হয়?!
নিশ্চয় শোনার ফিতনার চেয়ে দেখার ফিতনার বিষয়টি অনেক ভয়ঙ্কর। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صِنْفَانِ مِنْ أهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا: قَومٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأذْنَابِ البَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ ، رُؤُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ البُخْتِ المائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الجَنَّةَ، وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا، وإنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكذَا».
“জাহান্নামীদের এমন দু’টি দল রয়েছে, যাদেরকে আমি দেখি নি; তাদের এক দলের হাতে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তারা তা দিয়ে লোকদেরকে মারবে। আর এক দল হবে নারীদের, তাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ দেখাবে, গর্বের সাথে নৃত্যের ভঙ্গিতে বাহু দুলিয়ে পথ চলবে, বুখতী উটের উঁচু কুঁজের মতো করে খোপা বাঁধবে, এসব নারী কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না, অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে।”
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন যে, তারা হচ্ছে «كَاسِيَاتٌ» (পোশাক পরিহিতা), অর্থাৎ তাদের শরীরে পোশাক আছে; কিন্তু তারা «عَارِيَاتٌ» (উলঙ্গ)। কারণ, এ পোশাক শরীর ঢাকে না, হয় পাতলা হওয়ার কারণে অথবা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে অথবা ছোট-খাট হওয়ার কারণে। «مَائِلاَتٌ» তারা সত্যের পথ থেকে বিচ্যূত, «مُمِيلاَتٌ» নিজের কুকর্মগুলো অন্য মানুষের নিকট প্রকাশকারিনী; «رُؤُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ البُخْتِ المائِلَةِ» অর্থাৎ তারা এমনভাবে তাদের চুল বা অন্য কিছু পেঁচিয়ে খোপা বাঁধে, যা শেষ পর্যন্ত দেখতে বুখতী উটের কুঁজের মতো বড় ও উঁচু মনে হয়।
হে ভাইসব!
নিশ্চয় বড় ধরনের অন্যায় ও মহাবিপদ হলো পুরুষদের সাথে নারীগণের মেশামেশি এবং তাদের সাথে ধাক্কাধাক্কি ও ঘষাঘষি করা। আর এ অবস্থা বিরাজমান অধিকাংশ বাজার ও শপিং মলে, আর এটা শরী‘আত পরিপন্থী এবং পূর্ববর্তী সৎব্যক্তিগণের হিদায়াত ও নির্দেশনার বিপরীত। কারণ, কোনো একদিন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ থেকে বের হলেন, এমতাবস্থায় দেখা গেল নারীগণ পুরুষদের সাথে মিশে গেছে, তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«اسْتَأْخِرْنَ، فَإِنَّهُ لَيْسَ لَكُنَّ أَنْ تَحْقُقْنَ الطَّرِيقَ، عَلَيْكُنَّ بِحَافَاتِ الطَّرِيقِ». فَكَانَتِ الْمَرْأَةُ تَلْتَصِقُ بِالْجِدَارِ حَتَّى إِنَّ ثَوْبَهَا لَيَتَعَلَّقُ بِالْجِدَارِ مِنْ لُصُوقِهَا بِهِ».
“(হে নারীগণ) তোমরা অপেক্ষা কর এবং পরে আস। কারণ, রাস্তার মধ্যখান দিয়ে চলার অধিকার তোমাদের নেই। তোমাদের জন্য আবশ্যক হলো রাস্তার পাশ দিয়ে চলাচল করা। তারপর নারী এমনভাবে দেয়াল ঘেষে চলতে লাগল, শেষ পর্যন্ত দেয়াল সংলগ্ন হওয়ার কারণে তার কাপড় দেয়ালের সাথে ঝুলে থাকত।”
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের সাথে নারীগণের মিশে যাওয়ার প্রশ্নে খুব সতর্ক করেছেন, এমনকি ইবাদাতের স্থানগুলোতে পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে সাবধান করেছেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন:
«خَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا».
“নারীদের সর্বোত্তম সারি বা কাতার হলো শেষ কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের প্রথম কাতার।”
আর নারীগণের শেষ কাতার উত্তম হওয়ার একমাত্র কারণ হলো পুরুষদের থেকে তা দূরে হওয়ার কারণে এবং তাদের (নারীদের) জন্য তাদের সাথে মিশে যাওয়া ও তাদেরকে দেখার সুযোগ না থাকার কারণে। আর এর মধ্যে নারীকে পুরুষগণ ও তাদের সাথে তার মিশে যাওয়া থেকে দূরে রাখার জন্য শরী‘আতের আন্তরিকতার ওপর সুস্পষ্ট দলীল রয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। সুতরাং আমাদের নারীদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা হলো, তারা তাদের ঘরের মধ্যে অবস্থান করবে, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩] আর তারা বাজার বা মেলার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হবে না, আর প্রথম দিকে এটা তাদের জন্য কষ্টকর মনে হবে; কিন্তু স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এতে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য তা সহজ বা হালকা হয়ে যাবে। ফলে তারা হয়ে যাবে পর্দানশিন, লজ্জবতী ও ঘরের শোভা। আর পুরুষ দায়িত্বশীল ও প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের জন্য আবশ্যক হলো এ বিষয়টি উপলব্ধি করা এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর যে দায়িত্ব ও আমানত বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন, তা যথাযথভাবে পালন করা, যাতে আল্লাহ তাদের সকল কর্মকাণ্ডকে সংশোধন করে দেন এবং তাদেরকে ফিতনা থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [التحريم: ٦]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম, কঠোরস্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদেশপ্রাপ্ত হয় তা-ই করে”। [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬]
হে নারীদের আইনানুগ অভিভাবক ভাইসব!
কিছু সংখ্যক মানুষের নিকট ব্যাপক প্রচলন ও সহজ হয়ে গেছে যে, তারা তাদের কন্যাদেরকে ছোট-খাট পোশাক পরিধান করায়, অথবা এমন সংকীর্ণ বা আঁটসাঁট পোশাক পরিধানের ব্যবস্থা করে দেয়, যা শরীরের জোড়া বা ভাঁজগুলো পরিষ্কার করে দেয়, অথবা এমন হালকা-পাতলা পোশাক পরিধান করায়, যা শরীরের রং-এর কথা বলে দেয়, আর নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি তার কন্যাদেরকে এ জাতীয় পোশাক পরিধান করায় অথবা তাদের এ জাতীয় পোশাক পরিধানের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয়, সে তো তাদেরকে জাহান্নামের অধিবাসীদের পোশাকই পরিধান করায়, যেমনিভাবে এ বিষয়টি সহীহভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, যে হাদীসটির আলোচনা পূর্বেও হয়েছে, তিনি বলেছেন:
«صِنْفَانِ مِنْ أهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا: قَومٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأذْنَابِ البَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ، رُؤُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ البُخْتِ المائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الجَنَّةَ، وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا، وإنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكذَا».
“জাহান্নামীদের এমন দু’টি দল রয়েছে, যাদেরকে আমি দেখি নি; তাদের এক দলের হাতে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তারা তা দিয়ে লোকদেরকে মারবে। আর এক দল হবে নারীদের, তাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ দেখাবে, গর্বের সাথে নৃত্যের ভঙ্গিতে বাহু দুলিয়ে পথ চলবে, বুখতী উটের উঁচু কুঁজের মতো করে খোপা বাঁধবে, এসব নারী কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না, অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে।”
অতএব, হে মুসলিম পিতা! আপনার কলিজার টুকরা মেয়েটি জাহান্নামের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হউক -এতে কি আপনি রাজি আছেন?
আপনি কি পছন্দ করবেন যে, আপনি তাকে এমন পোশাক পরিধান করাবেন, যার কারণে সে নির্লজ্জ হয়ে যাবে, অথচ লজ্জা হলো ঈমানের অঙ্গ?
আপনি কি আপনার মেয়েকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করবেন, যেমনিভাবে আপনি বিক্রয়ের পণ্যকে সুন্দর চাকচিক্যপূর্ণ আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করেন, যার প্রতি প্রত্যেক নিকৃষ্ট দুষ্ট ব্যক্তির দৃষ্টি আকৃষ্ট থাকে?
আপনি কি চাইবেন যে, আপনি আপনার পূর্ববর্তীগণের কুরআন ও সুন্নাহর শিষ্টাচারপূর্ণ স্বভাব-চরিত্র ও ঐতিহ্য থেকে বের হয়ে এমন এক জাতির স্বভাব-চরিত্র অনুসরণের দিকে ধাবিত হবেন, যারা ইহুদী, খ্রিষ্টান, মূর্তিপূজক ও স্বভাব-প্রকৃতি পূজারীগণের নিকট থেকে তা গ্রহণ করেছে?
আপনারা জানেন না যে, এসব সম্প্রদায় এমন, যারা ডুবে গেছে এ নকল সভ্যতার মধ্যে এবং তারা এসব নগ্ন পোশাক পরিধান করেছে।
সাবধান! আপনারা জেনে রাখবেন যে, তারা এখন তার নিষ্ঠুর নিষ্পেষণ ও মারাত্মক পরিণতির কারণে আর্তনাদ করছে এবং তার তার পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি কামনা করছে। কারণ, তার তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে বুঝতে পেরেছে এবং তার বিষফল লাভ করেছে, আর তারা যে পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা এক খারপ গন্তব্যস্থল এবং তারা যা অর্জন করেছে তা এক মন্দ ফল।
হে ভাইসব! আমরা যখন এ পোশাকের ব্যাপারে আপত্তি তুলব না বা তার প্রতিরোধ করব না এবং তার থেকে আমাদের মেয়েদেরকে বিরত রাখব না, তখন নিশ্চিতভাবে তা আমাদের দেশে ছড়িয়ে যাবে এবং সৎ ও নষ্ট উভয়কে গ্রাস করবে, যেমনটি হয় আগুনের ক্ষেত্রে। যদি আপনি তাকে শুরুতেই নিভিয়ে দেন, তাহলে আপনি তাকে শেষ করে দিলেন এবং তার থেকে মুক্তি পেয়ে গেলেন, আর যদি আপনি তাকে ছেড়ে দেন, তাহলে তা ছড়িয়ে যাবে এবং তার চারি পাশে যা আছে সব জালিয়ে দেবে বা গিলে ফেলবে, অথচ আপনি তা প্রতিরোধ করতে পরবেন না এবং পরক্ষণে আপনি তার থেকে পালিয়েও বাঁচতে পারবেন না। কারণ, ততক্ষণে তা আপনার শক্তি ও সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে। আর কোনো কোনো মানুষ কতগুলো ভুল ও অযৌক্তিক ওজর দেখানো ও ছুতা খোঁজার কাজে লেগে থাকে, তারা বলে: তাদের (নারীদের) পরনে তো বড় লম্বা পাজামা আছে (সমস্যা কী?), কিন্তু এ যুক্তিটি সঠিক নয়। কারণ, এ পাজামাগুলো সংকীর্ণ আঁটসাঁট, যা ঊরু ও নিতম্বের (পাছার) আয়তন ও পরিমাপ পুরাপুরিভাবে স্পষ্ট করে দেয় এবং তার গ্রন্থি বা জোড়াগুলো একটা একটা করে আলাদাভাবে প্রকাশ করে দেয়, আর যদি মেয়েটি হালকা-পাতলা বা মোটা হয়, এসব পোশাক তাও স্পষ্ট করে দেয়। আর এসব কিছু এমন বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, যা নারীর সাথে পঙ্কিল ও দুষ্ট লোকের সম্পর্ককে আবশ্যক করে এবং তাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর আওতাভুক্ত করে নেয়, যেখানে তিনি বলেছেন:
«... وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ... ».
“...আর এক দল হবে নারীদের, তাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ দেখাবে...।”
আবার কোনো কোনো মানুষ বলে: এ মেয়েটি তো ছোট, সে পর্দার বিধানের আওতায় নেই এবং এ জাতীয় পোশাক পরিধান করা তার জন্য বৈধ, আর এ মেয়েটি যখন ছোট অবস্থায় তা পরিধান করবে, তখন তাকে বড় অবস্থায়ও তা পরিধানে অভ্যস্ত করে তুলবে। আর যখন সে ছোট থাকা অবস্থায় তা পরিধান করবে, তখন তার লজ্জা-শরম চলে যাবে এবং তার জন্য তার ঊরু ও পা উদোম করাটাকে মামুলী ব্যাপার মনে হবে। কারণ, এসব স্থান শরীরের অংশবিশেষ, যখন তা প্রথম থেকেই ঢাকা থাকবে, তখন নারী তার বয়স কালে তা উন্মুক্ত করার বিষয়টিকে সমীহ করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে, আর যখন তা প্রথম থেকেই খোলা-মেলা থাকবে, তখন পরবর্তী সময়ে তা খোলা রাখার ব্যাপারে তার মনের কাছে বড় কিছু মনে হবে না। আর এটা স্বভাবগত ও নিশ্চিতভবে জানা বিষয় যে, মানুষ যখন কোনো কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন তা তার জন্য সহজ হয়ে যায় যেমনটি আমরা এখন লক্ষ্য করি যে, এসব পোশাক এমন সব বড় বড় মেয়েরা পরিধান করে, যাদের ওপর পর্দা করা বাধ্যতামূলক। কেননা মেয়ে যখন পরিণত বয়সে উপনীত হবে, তখন তার প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হবে এবং পুরুষ ব্যক্তির মন তাকে দেখতে চাইবে। সুতরাং সে এ বয়সে পর্দা মেনে চলবে। তাবে‘ঈগণের অন্যতম ইমাম যুহরী রহ. বলেন:
«لا يَصْلُحُ النَّظَرُ إِلَى شَىْءٍ مِنْهُنَّ مِمَّنْ يُشْتَهَى النَّظَرُ إِلَيْهِ ، وَإِنْ كَانَتْ صَغِيرَةً».
“অপ্রাপ্ত বয়স্কা হলেও এসব মেয়েদের এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে তাকানো বৈধ হবে না, যা দেখলে লোভ সৃষ্টি হতে পারে।”
কিন্তু কিভাবে আমরা এ জাতীয় পোশাকসমূহ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব? আমরা এতে সক্ষম হব, প্রতিটি মানুষ কর্তৃক বিবেক-বুদ্ধি ও ইনসাফের দৃষ্টিতে এসব পোশাকের উপকারিতা (বাস্তবে এগুলোর মধ্যে কোনো উপকারিতা নেই) ও ক্ষতিসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার দ্বারা। সুতরাং যখন সে তার ক্ষতিসমূহের ব্যাপারে নিশ্চিত হবে, তখন সে তার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনকে তা পরিধান করা থেকে নিষেধ করবে, যাদেরকে নিষেধ করতে সে সক্ষম হবে, আর তার ভাইদেরকে তার থেকে সতর্ক করবে এবং ছোট্ট মেয়েদের মনে তার কুৎসিত দিকগুলো তুলে ধরবে। আর তাদের নিকট তার নোংরা ও খারাপ দিকগুলো বর্ণনা করবে, যাতে তাদের মনে এসব পোশাকের ব্যাপারে অপছন্দ ও ঘৃণার বিষয়টি পুঞ্জীভূত হয়, এমনকি শেষ পর্যন্ত যে এ জাতীয় পোশাক পরিধান করবে তারা তাকে দোষী বলে মনে করবে।
হে ভাইসব!
নারীদের সমস্যাটি একটি ভয়াবহ সমস্যায় রূপ নিয়েছে, এ সমস্যাকে অবজ্ঞা করা অথবা তার ব্যাপারে চুপ থাকা উচিৎ হবে না। কারণ, এটাকে যদি এভাবেই চলতে দেওয়া হয়, তাহলে অচিরেই রাষ্ট্র ও রষ্ট্রের নাগরকিগণ ভয়ানকভাবে তার অশুভ পরিণতির শিকার হবে। সুতরাং রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্র ও তার নাগরিকগণের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কি অনুধাবন করেন না যে, তাদের প্রত্যেকেরই তার পরিবার বা অধীনস্থদের ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে, তিনি কি তার স্ত্রী, কন্যা, বোন ও তার নিকটাত্মীয় নারীদেরকে উপদেশ দিতে সক্ষম নন, যেমনটি করেছেন সূরা আন-নূর নাযিল হওয়ার সময় আনাসার (পুরুষ) সাহাবীগণ? তারা যা করেছেন, তার আলোচনা খুব শীঘ্রই আসছে। অতঃপর তিনি কি তার (অধীনস্থ) নারীদেরকে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করতে পারেন না এবং যখন (প্রয়োজনের কারণে) বের হবে, তখন কি তিনি তাকে সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে অথবা সুগন্ধি ব্যবহার না করে বের হওয়ার ব্যাপারে বাধ্য করতে পারেন না? অতঃপর যার অধ্যয়নরত কন্যা অথবা বোন অথবা নিকটাত্মীয় কেউ আছে, তিনি কি তাদেরকে ছাত্রীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা, তাদেরকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করা এবং তাদেরকে মন্দকাজ থেকে, হাট-বাজরে ঘুরাফেরা ও সুন্দর সাজে বের হওয়া হওয়া থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে তাদেরকে উৎসাহিত করতে পারেন না? নিশ্চয় এ সব কিছুই সম্ভব ও সহজ হবে তখন, যখন মানুষ তার রবকে (প্রতিপালককে) বিশ্বাস করবে, তার নিয়তকে নির্ভেজাল ও একনিষ্ঠ করবে এবং সিদ্ধান্তকে দৃঢ়-মজবুত করবে।
হে ভাইসব! এগুলো হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক তাঁর কিতাবের মধ্যে বর্ণিত নির্দেশনা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র মধ্যে বর্ণিত দৃষ্টিভঙ্গি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦﴾ [الاحزاب: ٣٦]
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ের ফয়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোনো (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল, সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩﴾ [النساء: ٦٩]
“আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ), শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন -তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١﴾ [النور: ٣٠، ٣١]
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে -এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে, আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা সাধারণত প্রকাশ থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অংগ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। [সূরা আন-নুর, আয়াত: ৩০–৩১]
এগুলো হলো ইসলামের নির্দেশনা ও দৃষ্টিভঙ্গি। ইসলামের অনুসারীগণের নিয়ম-পদ্ধতি সম্পর্কে উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনাহা বলেন:
«لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ :﴿يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ﴾ [الاحزاب: ٥٩]، خَرَجَ نِسَاءُ الْأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رؤوسهن الْغِرْبَانَ مِنَ السكينةِ، وعليهنَّ مِنْ أَكْيِسَةٍ سُودٍ يَلْبَسْنَهَا».
“যখন ﴿يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ﴾ “তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯] এ আয়াতটি নাযিল হলো, তখন আনসারদের নারীগণ বাইরে বের হওয়ার সময় তাদের মাথা এমনভাবে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলত, মনে হয় যেন তাদের মাথার উপর কাক স্থির হয়ে বসে আছে।”
আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
«ما رأيت أفضل من نساء الأنصار أشد تصديقا لكتاب الله ولا إيمانا بالتنزيل ، لقد أنزلت سورة النور: ﴿وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ﴾ [النور: ٣١] فانقلب الرجال يتلون عليهن ما أنزل الله إليهم ، يتلو الرجل على امرأته وابنته وأخته ، وعلى كل ذي قرابته ، فما منهن امرأة ، إلا قامت إلى مرطها المرحل فاعتجرت به تصديقا ، وإيمانا بما أنزل الله في كتابه».
“আল্লাহর কিতাবের প্রতি প্রচণ্ড সমর্থন ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমি আনসার নারীদের চেয়ে উত্তম আর কাউকে দেখিনি। সূরা আন-নূরের আয়াত নাযিল হল: ﴿وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ﴾ “আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে”। অতঃপর পুরুষগণ আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর যা নাযিল করেছেন, তা তাদের (নারীদের) নিকট তিলাওয়াত করতে থাকে, পুরুষ ব্যক্তি তার স্ত্রী, কন্যা, বোন ও প্রত্যেক নিকটাত্মীয়কে তা তিলাওয়াত করে শুনায়। অতঃপর যে কোনো নারীই তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে যা নাযিল করেছেন, তার প্রতি তার সমর্থন ও ঈমানের কারণে সে ওড়না পরিধান করত।”
অতএব, হে ভাই সকল! আমরা কি এসব ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করব না এবং ইসলামের অনুসারীদের জবীন-পদ্ধতি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করব না? আমরা কি মহান আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করব না?
আর আমরা কি সে সম্পর্কে উপলব্ধি করব না, ইসলামের অনুসরণকারীদের নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধাচরণ করে অনেক নারী যেসব কর্মকাণ্ডে নিমজ্জিত হয়েছে এবং আমরা কি তাদেরকে সুস্থ নিয়ম-নীতির অনুসরণ করতে ও সরল সঠিক পথে চলতে বাধ্য করব না, যাতে আমাদের সমাজটি নারী ও পুরুষের মধ্যে ইবাদাত ও নৈতিক চরিত্রের ক্ষেত্রে একটি ইসলামী সমাজে পরিণত হতে পারে?
আর যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না, তারা যেন আপনাদেরকে প্রতারিত করতে না পারে। কারণ, এ ধরনের রূপসজ্জা এবং ছোট ও সংকীর্ণ পোশাকগুলো তৈরি করা হয় তাদের অনুকরণ করার জন্য। কেননা, আপনাদের শত্রুগণ জানে যে, তারা যদি আপনাদেরকে কুফরীর দিকে আহ্বান করে, তাহলে আপনারা কুফরী করবেন না; আর তারা যদি আপনাদেরকে শির্কের দিকে আহ্বান করে, তাহলে আপনারা শির্ক করবেন না; কিন্তু তারা আপনাদের ব্যাপারে আশাবাদি যে, তারা অন্যভাবে আপনাদের নৈতিক চরিত্র ও দীনকে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যেমন, ছোট ও তুচ্ছ গুনাহগুলোকে তারা আপনাদের চোখে তুচ্ছ করে উপস্থাপন করবে, তারপর আপনারাও সেগুলোকে তুচ্ছ মনে করবেন এবং সেসব অপরাধে জড়িয়ে যাবেন, শেষ পর্যন্ত তা আপনাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إن الشيطان قد يئس أن تعبدوا الأصنام فى أرض العرب, ولكنه سيرضى منكم بدون ذلك بالمحقرات وهى الموبقات يوم القيامة».
“তোমরা আরব ভূ-খণ্ডে মূর্তিপূজা করবে -শয়তান অন্তত এ ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে; কিন্তু সে এটা ছাড়া অচিরেই তোমাদের নিকট থেকে তুচ্ছ বা ছোট ছোট পাপকর্মের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠবে, আর এ তুচ্ছ অপরাধগুলো কিয়ামতের দিনে ধ্বংসের কারণ হয়ে দেখা দিবে।”
অতএব, হে ভাইসব! আপনাদের শত্রুগণ আপনাদের জন্য যা পেশ করবে, তার দ্বারা আপনারা প্রতারিত হবেন না। সুতরাং হয় আপনাদের দীনের মধ্যে এমন দৃঢ়তা ও কঠোরতা থাকতে হবে, যার ওপর ভিত্তি করে শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে, আর আপনাদের মধ্যে ইসলামী ব্যক্তিত্বের শক্তি রয়েছে, সুতরাং আপনারা তাদের অনুসরণ করবেন না এবং তাদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না; বরং আপনারা আপনাদের পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিগণ যে নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তা আঁকড়ে ধরুন, ফলে আপনারা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করতে পারবেন। আর যদি বিষয়টি তার বিপরীত হয় (আমরা আল্লাহর নিকট শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি) অর্থাৎ দীনের মধ্যে নমনীয়তা আসে, ব্যক্তিত্বের মধ্যে দুর্বলতা আসে এবং উত্থানের সামনে পতন আসে, তাহলে আপনারা অলাভজনক ব্যবসাতেই ফিরে আসলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قُلۡ إِنَّ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ وَأَهۡلِيهِمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ أَلَا ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡخُسۡرَانُ ٱلۡمُبِينُ ١٥﴾ [الزمر: ١٥]
“বলুন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা কিয়ামতের দিন নিজেদের ও নিজেদের পরিজনবর্গের ক্ষতিসাধন করে। জেনে রাখ, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১৫]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من تشبه بقوم فهو منهم».
“যে ব্যক্তি কোনো জাতি বা গোষ্ঠী’র অনুসরণ করে, তবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।” কারণ, আমরা যখন প্রতিটি নতুন বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হব এবং আমরা ভিন্ন অন্যদের প্রথা ও রীতিনীতি থেকে আমাদের নিকট উপস্থাপিত প্রতিটি বিষয়কে যখন আমরা অনুসরণ করে চলব, তখন আমাদের জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে তাদের অনুকরণে সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়া, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা প্রায়শ তাদের ভ্রষ্টতা, চরিত্র, আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার অনুসরণ করে বসব। সুতরাং ব্যক্তি মাত্রই উচিৎ হলো তার পরিবার-পরিজন যে নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে তা সুরক্ষার ব্যবস্থা করা, তবে তা যখন শরী‘আত পরিপন্থী হবে তখন ভিন্ন কথা। আর মুসলিম ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) হলো তার দীনকে নিয়ে গর্ববোধ ও গৌরব করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সরল-সঠিক দীনের যে সীমারেখা এঁকে দিয়েছেন তার মাঝে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার জন্য যা অনুমোদন করেছেন, সে তার মধ্যে বৃদ্ধি করবে না এবং তার থেকে কমতিও করবে না; তার জন্য আরও আবশ্যক হলো, সে তার কাজের ভিত রচনা করবে আনুগত্য ও অনুসরণের ওপর, বিদ‘আতের ওপর নয়, ইখলাস বা নির্ভেজাল একনিষ্ঠতার ওপর, শির্কের ওপর নয় এবং দয়াময় আল্লাহ যা পছন্দ করেন তার ওপর, শয়তান যা পছন্দ করে তার ওপর নয়। আর মুসলিম ব্যক্তির জন্য আরও উচিৎ হলো চরিত্রহীন বা নির্বোধ না হওয়া; বরং তার উচিত হলো, সে তার ব্যক্তিত্বকে আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আতের দাবির আলোক গড়ে তুলবে, ফলে তা দুনিয়ার জীবনে ও পরকালে তার জন্য সম্মান ও মর্যাদা বয়ে আনবে।
আর এ জন্যই তো আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাঁর সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে সত্যকে সত্য বলে দেখিয়ে দেন এবং আমাদেরকে তার অনুসরণ করার তাওফীক দান করেন, আর বাতিলকে বাতিল বলে দেখিয়ে দেন এবং আমাদেরকে তার থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করেন। আর তিনি যেন আমাদেরকে সঠিক পথ প্রাপ্তদের পথপ্রদর্শক এবং সৎকর্মশীলদের পরিচালক বানিয়ে দেন, আর তিনি যেন আমাদের অন্তরসমূহকে ইলম (শিক্ষা) ও ঈমান দ্বারা আলোকিত করে দেন এবং আমরা যা শিখেছি তিনি যেন তাকে আমাদের জন্য খারাপ পরিণতির কারণ বানিয়ে না দেন। আর তিনি যেন আন্তরিকভাবে তাঁর উদ্দেশ্য তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করেন, আর তাঁর নিকট আরও নিবেদন করছি, তিনি যেন এ উম্মাত থেকে এমন একটি প্রজন্ম তৈরি করে দেন, যারা আল্লাহর বিধিবিধান সম্পর্কে জ্ঞানী হবেন, আল্লাহর নির্ধারিত সীমানার রক্ষণাবেক্ষকারী হবেন, আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নকারী হবেন এবং আল্লাহর বান্দাগণের পথপ্রদর্শক হবেন, আর তিনি তো হলেন উদার হস্তে দানশীল, মহানুভব।
و الحمد لله رب العالمين، و صلى و سلّم على نبينا محمد و على آله و صحبه أجمعين.
“আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য নিবেদিত, যিনি জগতসমূহের রব। সালাতা ও সালাম বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবীগণের ওপর”।
সমাপ্ত
ডাউনলোড
পিডিএফ
শব্দ
বই সম্পর্কে
লেখক
:
Muhammad ibn Saleh al-Othaimeen
প্রকাশক
:
www.islamhouse.com
বিভাগ
:
Women in Islam
সহজলভ্য
Indonesian
tiếng Việt
বাংলা ভাষা
mute
Update Required
To play the media you will need to either update your browser to a recent version or update your
Flash plugin
.
© কপিরাইট
ইসলাম ভূমি أرض الإسلام
। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত 2017